আধাঁরের আলো (৩য়পর্ব)
লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ০৬ অক্টোবর, ২০১৩, ১২:২৭:১৩ রাত
[img]ht মোনা কাঁদতে কাদতেই ভাই এর কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পরে।
আদনান প্রায় ৭ বছর আগে বিয়ের পরপরই স্ত্রী রাইমাকে নিয়ে ইউরুপ চলে আসে ।তাদের ৩ বছরের একটা ছেলে রাহী।এখনে আদনান ছোট খাট একটা কাপড়ের দোকান চালান আর রাইমা একটা ডে কেয়ারে জব করে ।দেশে তাদের তেমন টাকা পয়সা পাঠাতে হয় না ,তারা বেশ ভাল আছে ।নিজেদের কেনা ফ্লাট এ থাকেন গাড়ী ও আছে।ফ্লাট টা তাদের তুলনায় বেশ বড় ।৪বেড রুমের ডুপ্লেক্স ফ্লাট ।কেনার সময় ভবিষ্যতে সংসার বড় হবে এই চিন্তা করেই কিনেছেন।
তাদের মোখামুখি ফ্লাটে মধ্য বয়সী এক ইরাকী দম্পতি তাদের একমাত্র ছেলে কে নিয়ে বাস করে।স্বামী
আহনাফ রাশিদ ইন্জিনিয়ার জব করেন একটা নামী মোবাইল কোম্পানিতে,স্ত্রী আফরা আনজোম একজন গাইনোক্লজিস্ট এখান কার হাসপাতালে জব করে।ছেলে হাসিন রাশিদ বয়স ১১ ক্লাস ফাইব এ পড়ে।
আহনাফ ও আনজোম দুইজনের ই লেট ম্যারেজ ।আহনাফ ৪০বৎসর ও আনজোম ৩৮ বৎসর বয়সে বিবাহ বন্দনে আবদ্ধ হন,আর দুই বৎসর পরে হাসিন এর জন্ম।
আহনাফ ও আনজোম তারা মুসলিম দেশ থেকে এসেছে তারা মুসলিম হিসাবে গর্ব ও করে কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে তাদের জ্ঞান খুবই সীমিত।কারন তারা মায়ের কোলে চরে ইউরোপ এসেছে ।তখন এদেশে মুসলমানের সংখ্যা ছিল খুবই কম তাই ইসলাম সম্পর্কে জানার সুযোগ ও তেমন ছিল না।তাদের লাইফ ষ্টাইল অনেক টা ইউরোপীয়ানদের মতই যদিও তারা ইউরুপীয়ানদের মতো উৎশ্বংখল জীবন যাপন করে না।তারা ইসলামকে ভালবাসে ।এবং যারা ইসলামক আনুযায়ী চলার চেষ্টা করে তাদেরকে রেসপেক্ট করে।আর মানুষ বা প্রতিবেশী হিসাবে খুব ই ভাল।
আদনান রাইমাদের সাথে এই ফ্যামেলীর খুব ই ভাল সম্পর্ক।তারা ৫ বছর ধরে পাশাপাশি আছে।আর এটা এত ভাল যে বিদেশে সাধারণত এরকম দেখা যায় না।এখনে সবাই সবার নাম ধরে ডাকে।রাইমা আনজোমকে আন্টি ও রাইমার ছেলে রাহি দাদু বলে ডাকে।আবার আনজোমের ছেলে রাইমাকে বুবু ডাকে।েভাবে তারা দুতি ভিন্ন দেশের মানুষ হলেও মুসলমান হিসাবে তারা হয়ে যায় আত্বার আত্বীয়।
আদনান মোনার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে আপুমনি উঠ আমরা এখন নামব।
মোনা আমরা কি এসে গেছি ভাইয়া?
আদনান,না আমরা এখনে নেমে ৪ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে তারপর আমরা আরেকটা বিমানে উঠব।
মোনা বিমান থেকে নেমে ভাইয়ার পিছনে পিছনে এয়ারপোর্টের ভিতর ঢোকে আদনানকে জিঙ্গেস করে ভাইয়া এই জায়গার নাম কি?
আদনান ,এ জায়গার নাম দোহা ,এটা কাতারের রাজধানী। তার পর আডনান মোনা কে মহিলাদের টয়লেট ও অজুর জায়গা দেখিয়ে বলে তুমি ওখানে যাও আর আমি এই পাশের টায় যাচ্ছি তুমি আগে বের হলে ঠিক এখান টায় দাড়াবে।আমি আগে বের হলেও এখানে থাকব ওকে বলে দুইজন দুই দিকে ঢুকে।মোনা টয়লেট সেরে অজু করে বের হয়ে এসে দেখে তার ভাইয়া তার আগেই এসেছে ।আদনান মোনাকে নিয়ে মসজিদে যায় ও যোহুরের দুই রাকাত নামাজ পড়ে নেয়(কসর) নামাজ শেষে আব্বু আম্মুর কথা মনে করে মোনার চোখ দিয়ে পানি পরছে আদনান দেখে বলে আপুমনি তুমি কাদছ কেন?
মোনা তারা তারি চোখের পানি মুছে বলে না আমি কাদছি নাতো ।
আদনান, আপুমনি তোমার খিদা লাগছে চল আমরা কিছু খেয়ে নেই।তুমি তো বিমানে কিছু খাও নি।
মোনা,না ভাইয়া আমার খিদা লাগে নি ,আমি কিছু খাব না ।ওকে চল আমরা এই অনেক দোকান আছে আমরা ঘুরে দেখি ।তারা বিভিন্ন দোকানে ঘুড়ে মোনা শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে ,আদনান আপুমনি তোমার কোন কিছু কিনতে চাইলে বল ।মোনা না ভাইয়া আমি কিছু কিনব না।আদনান চিপস,কিছু চকলেট ও কোক কিনে মোনা কে বলে এগুলো খাও।
তারা আবার বিমানে বসে আদনান মোনাকে বলে আবার তুমি ঘুমাও ,তাহলেই আমরা চলে আসব।সত্যি সত্যি বিমানের দুলুনিতে মোনা ঘুমিয়ে পরে।এখানকার টাইম সন্ধ্যা ৬টায় মোনা বিমান থেকে নামে আর সব কিছু সেরে এয়ারপোর্ট থেকে বের হতে প্রায় ৭টা বেজে যায়। এয়ারপোর্ট থেকে বের হতেই দূর থেকে রাহী চিৎকার করে ডাকে ফুপ্পী এইতো আমি।মোনাও দৌড়ে যেয়ে রাহীকে কোলে তুলে নেয়।মোনা ভাবীকে সালাম দেয় ।তারা সবাই মিলে গাড়িতে গিয়ে বসে। গাড়িতে বসে ভাবীর সাথে মোনার অনেক কথা হয়।ভাবী মোনার কাছ থেকে বাড়ির সবার খোজ খবর নেন।কথা বলতে বলতেই তারা বাসায় এসে পৌছে ।গাড়ি থেকে নেমেই রাহী তার মাকে বলে মামমা আমি নানুকে বলে আসি ফুপ্পী আসছে।
ঘরে ঢুকে মোনা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না।সে কান্না শুরু করে ।মোনার ভাই ভাবী মোনাকে বুঝান মোনা ও কাদতে চায় না তবু মোনার চোখ দিয়ে পানি পরতেই থাকে।পাশের বাসা থেকে আনজোম ও হাসিন আসে রাহীর সাথে। হাসিন রাইমাকে জিঙ্গেস করে আমি তাকে কি বলব ,রাইমা বলে তুমি তাকে আপ্পি বলতে পার।মোনার চোখে পানি দেখে হাসিনের খুব খারাপ লাগে সে মোনার কাছে যেয়ে মোনার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে আপ্পি তুমি কাদছ কেন,রাহী ঝটপট বলে দেয় তুমি বঝ না কেন আমার ফুপ্পী তার মাম্মার জন্য কাদছে। হাসিন তারা তারি মোনাকে টেনে তার মায়ের কাছে নিয়ে বলে আজ থেকে আপ্পি তুমি আমার মাম্মাকে মাম্মা বলবে, আর আনজোম ও মোনাকে বুকে টেনে নেয়.......
চলবে......।
বিষয়: বিবিধ
১৫৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন