আধাঁরের আলো

লিখেছেন লিখেছেন আলোর আভা ০৩ অক্টোবর, ২০১৩, ০৯:৩৫:৪৯ রাত



মরিয়ম বেগম খুবই কষ্ট পেলেন উনি হয়ত ভাবেন নি এত তারা তারি মোনার ভিসা হবে।কারন আগের ছেলে মেয়ের বেলায় তো ২-৩ বছর করে সময় লেগেছে।এখন তো মেয়ে চলে যাবে। তিনটা ছেলে মেয়েই তো দূরে মোনাকে নিয়ে আমরা ভালই ছিলাম।মরিয়ম বেগম আরো চিন্তা করেন আমি কি কোন ভূল সিন্ধান্ত নিলাম, মোনার বয়স কম ওখানে যেয়ে ও যদি ভূল পথে চলে যায় তার জন্য গোনাহগার তো আমিই হব ।কিন্ত এখন তো আর ছেলে মেয়েদের বলতে পারবেন না যে মোনা যাবে না। ছেলে মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে তাদের সুন্দর ভবিষ্যতের কথা চিণ্তা করে তিনি নিজে শক্ত হন। উনি আড়ালে আড়ালে কাদেন আর যখনই সময় পান বিভিন্ন বিষয়ে মোনাকে পরামর্শ দেন।

মোনা সোনা তোমাকে বিদেশ পাঠাতে আমার খুবই কষ্ট হচ্ছে ,তারপরও তোমাকে আমি পাঠাচ্ছি সেটা টাকা পয়সার জন্য নয় তার এক মাত্র কারন আমরা বুড়ো হয়ে যাচ্ছি আমরা মারা গেলে তুমি এখানে একা হয়ে যাবে তখন তোমার খুব কষ্ট হবে ।আর ওখানে গেলে তুমি তোমার ভাই এর কাছে থাকলে তোমার কষ্ট কম হবে।আর ওখানে থাকলে তুমি তোমার বোন বা অন্য ভাই এর কাছে সহজে আসা যাওয়া করতে পারবা যেটা বাংলাদেশ থেকে এত সহজ না।

মারে, এই দুনিয়াটা ক্ষণস্থায়ী তুমি ইউরোপ,আমেরিকা আর বাংলাদেশে যেখানেই থাক তোমাকে মরতে হবে,কাজেই যে খানেই থাক আল্লাহকে ভয় করে চলবা,প্রতিটা কাজের আগে চিন্তা করবা এই কাজ করলে আল্লাহ খুশী হবে না অখুশী হবে।মনে রাখবা আল্লাহ সব খানেই আছেন আর সব কিছুই দেখেন।

তোমার বয়স কম দুনিয়ার রং তামশা,চাকচিক্য দেখে তোমার মনে লোভ আসতেই পারে।কিন্তু মা তুমি কোরআন ,হাদীস পর সেখানে বেহেস্তের রং তামশা,চাকচিক্যের যে বর্ণনা দেয়া আছে তা দুনিয়ার রং তামশা,চাকচিক্যের চেয়ে বেশী নয় কি? দুনিয়া তো ক্ষনস্থায়ী আর বেহেস্ত চিরস্থায়ী।কাজেই তুমি ক্ষনস্থায়ী আনন্দের জন্য চিরস্থায়ী আনন্দকে নষ্ট করে দিও না।

আমি তোমার মা আমি চাই তুমি শুধু তুমি না আমি চাই আমার সব সন্তানেরা দুনিয়াতে আরাম আয়েশে থাকুক তেমনি আমি এটাও চাই পরকালে যেন আমার সন্তানেরা আরাম আয়েশে থাকতে পারে।

আমি ইউরুপ,আমেরিকা সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি সেখানে মানুষ ভাল থাকতে চাইলে থাকতে পারে, তবে খারাপ হওয়ার সুযোগ বেশী ।কাজেই এটা তোমার উপর র্নিভর করবে তুমি ভাল থাকতে চাইলে থাকতে পারবা।আর তাদের খারাপ দিকের পাশাপাশি অনেক ভাল দিকও আছে,আশা করি তুমি তাদের ভাল দিকগুলো গ্রহন করবে আর খারাপ দিকগুলোকে ঘ্বণা করবে।

মোনা সোনা আরেকটা কথা মনে রাখবা এতদিন বাবা মায়ের বাড়ি মানে তোমার নিজের বাড়িতেই ছিলা এখানে তুমি যেরকম সাছন্দ্য বোধ করছ ।এখন ভাইয়ের বাড়িতে সেরকম নাও লাগতে পারে।বড়ভাই পিতার মত আর তোমার ভাবী সে তোমার রক্তের কেউ না হলেও সে তোমার ভাই এর স্ত্রী কাজেই তাদেরকে সন্মান করবা ও তাদের কথা মেনে চলবা।ভাই তো ভাইই, হয়ত তোমার ভাবীর অনেক কিছু তোমার পছন্দ হবে না,তোমারও অনেক কিছু তার পছন্দ হবে না । তাই তার কোন কথা বা আচরনে যদি তুমি কষ্ট পাও সেটা নিয়ে মন খারাপ করে থাকবা না। তোমার ভাই বা আমাদের কাছেও বলবা না।মনে রাখবা কোন মানুষই পারফেক্ট না ভাল-মন্দ সবার মাঝেই আছে।আর ওখানে তোমার আপন বলতে সেই।

এমনি করে মায়ের উপদেশ শুনতে শুনতে মোনার ভাই আদনান চলে আসে মোনাকে নিতে ।আদনান মোনার টিকিট ও নিয়ে আসছে ৭দিন পরেই মোনাকে নিয়ে চলে যাবে।

যাওয়ার সময় যত ঘনিয়ে আসছে মোনার বুকের ভিতর যেন কেমন করছে।মোনা ভাবে আমি কি আব্বু আম্মুকে ছেড়ে থাকতে পারব,আর আমার আব্বু আম্মু একা থাকবে কেমন করে, তাদের কে দেখবে এসব কথা মনে করে মোনার বুকটা ভার হয়ে আসে কিন্ত মোনা কাউকে কিছু বলতে পারে না।

আজকে রাত পোহালে সকালে মোনা চলে যাবে।বাড়িতে অনেক লোকজন আসছে ,মোনার নানী,খালারা, মামীরা ,ফুফুরা সবাই আসছে মোনাকে বিদায় জানাতে।মরিয়ম বেগম নিজ হাতে মোনার সবকিছু গুছিয়ে ল্যাগেজে ভরে ঠিক করে রাখেন যাতে সকালে আর কোন ঝামেলা না হয়।মোনার মা মোনাকে বলে মা তুমি এখন ঘুমাও অনেক বড় জার্নি তোমার কষ্ট হবে। মোনা তখন বলে মা আমি আজকে তোমার সাথে ঘুমাই বলে মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না।সারারাত মা মেয়ে কাররই ঘুম হয় না।সকাল বেলা মোনা আর কথা বলতে পারে না কিছু বলতে গেলেই তার কান্না চলে আসে।মরিয়ম বেগম আর জামান সাহেব ছেলে আদনানকে বলেন আল্লাহর উপর ভরষা করে মোনাকে আমরা তোমার কাছে দিলাম তোমরা ওকে দেকে রেখ ।আদনান বলে তোমরা কোন চিন্তা কর না ,আর তোমরা এদিকটা গুছিয়ে ফেল তোমারা ও চলে আস।বাবা মা আল্লাহ হাফেজ বলে মোনা ভাই এর হাত ধরে এয়ারপোর্টের ভিতর ঢুকে।এয়ারপোর্টের সব কাজ সেরে মোনা ভাই এর সাথে প্লেনে উঠে ।পাশা পাশি সিটে বসে মোনা ভাইকে শক্ত করে ধরে রাখে ।আদনান মোনাকে বলে আপুনি তুমি কি ভয় পাচ্ছ,মোনা কিছুইনা বলে আদনানকে আরো শক্ত করে ধরে ।প্লেন ছেড়ে দেয় আর মোনা চিৎকার করে উঠে ভাইয়া প্লেন তো ছেড়ে দিল আমি যাব না আমি আব্বু আম্মুকে ছেড়ে যাব না.......।

চলবে............

বিষয়: বিবিধ

২১১১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File