সুপ্ত
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দর তারকা ১১ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:৪৩:১৯ দুপুর
(কাচা হাতের লেখা, আশা করি ভুলত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।)
১
: এই টাকাটা চালাতে পারবি? বলে পকেট থেকে দু’টুকরো করা ১০০ টাকার নোট বের করে দেখাল মারুফ।
: আরে, টাকার এই দশা কে করল?
: আমি না। সোহরাব চাচা।
: সোহরাব চাচা কেন তোর টাকা ছিড়তে গেল!
: আমিই বলেছি। প্রতিদিন ভাংতি চাই। বলে, হবে না। আজ বললাম, দু’টুকরো করে দিতে। করে দিয়েছে।
: বলিসনি কিছু তুই?
: বলব না, করে দেখাব। আমি নিশ্চিত, চাচার চোখে ঘৃণার সাথে আমি আরও কিছু দেখেছি।
২
(পাঁচ বছর পর)
: সংক্ষেপে বলি, আমাদের এতদিনের প্রচেষ্টার প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছি আমরা। আজ গাছ লাগিয়ে, খাচা দিয়ে ঢেকে দিয়ে, পানি ঢেলে, আল্লাহর কাছে দোয়া করেই আমাদের কাজ শেষ হবে। পেপে গাছের চারা, সুতরাং খাচা দিয়ে না ঢেকে উপায় নেই। চারা, খাচা রেডি করা হয়েছে, যোগাড় হয়েছে কোদালসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও। ডেকে আনা হয়েছে চারটি ভ্যান পুরো দিনের কন্ট্রাকে। রেডি আমরা পঁচিশ জনও।
তারপর পকেট থেকে কয়েকটি ছবি বের করে সামনে পাঠিয়ে দিয়ে বলল,
: এটা গ্রামের স্যাটেলাইট ইমেজ। যদিও এর কোন প্রয়োজন ছিলনা। গ্রামটা খুব ভালভাবেই চিনি আমরা। গ্রামের চারটি প্রবেশ পথ। চারটি প্রবেশ পথ দিয়ে চারটি ভ্যান ঢুকবে চারটি টিম সহ। টার্গেট মোট ১৫০টি বাড়িতে গাছ লাগানো। পুলিশী ঝামেলা এড়ানোর জন্য খুব তাড়াতাড়ি গাছ লাগিয়েই সরে পড়তে হবে এখান থেকে। তাই নতুন-পুরাতন সবাইকেই কাজে লাগানোর চিন্তা করা হয়েছে।
: সবাই আমরা সতর্ক থাকব। এই এলাকার আমরা ছাড়া থানার অন্যান্য এলাকার বাকি সবাই টহলে থাকবে রাস্তায়। খোজ-খবর রাখবে তারা পুলিশের গাড়ির গতিবিধির, আমরা যতক্ষন কাজে থাকব। প্রয়োজনীয় আরও কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, যোগাযোগও করা হয়েছে প্রভাবশালী কয়েকজনের সাথে। তারপরও যদি আমাদের কোন টিম গ্রেফতার হয়েও যায়, তবু আমরা বাকিরা কাজ শেষ করব। কোন প্রশ্ন?
কাজের পরিকল্পনা করা হয়েছে আরও পাঁচ মাস আগে। এক অনন্য প্রচেষ্টা হিসেবেই হাতে নেওয়া হয়েছে গাছ লাগানো কর্মসূচি। জমি নির্বাচন, গাছ বাছাই, বীজ সংগ্রহ দিয়ে শুরু হয়েছিল এই কাজ সবার পরামর্শ নিয়ে। এতদিন কোন ঝামেলা না হলেও এখন গাছ লাগানোর সময়ই আশংকা দেখা দিয়েছে।
পুরো পরিকল্পনার সবটুকুই কমবেশী জ্ঞাত আছে সবাই। ফলে প্রশ্ন থাকার কথা নয় কারো। শুধু ঘরের এক কোনে সূর্যমুখী ফুলের মত একটা হাত নড়তে দেখা গেল।
: সজীব, প্রশ্ন?
: ভাইয়া, আজ কি বার?
: আআজ..., রবিবারের ১১টা বেজে ২২ মিনিট ৩৯ সেকেণ্ড...
প্রশ্নটা করে হাতটা নামাতেই পাজরে কনুইয়ের গোতা খেল সজীব,
: আজেবাজে প্রশ্ন করিস কেন?
: আজেবাজে কই পাইলি? পুলিশের কথা শুনে কেউ ভয় পায় কিনা তাই আজকের বারটা মনে করিয়ে দিলাম!
৩
গ্রামের পূর্বপ্রান্তে নদীর কাছাকাছি চৌরাস্তার মোড়। ছোট্ট একটা বটগাছের তলে বাঁশ দিয়ে বানানো ছোট্ট একটা খাটলা। মধ্যদুপুরে এই গাছ সূর্য্যের আলো ঢাঁকতে পারে না। তাই সাধারনত কেউ এখানে বসতে আসে না।
ক্লান্ত শরীরে মাথা নিচু সামনে ঝুকে বসে আছে সে। ডান হাতে মোবাইল। হাতটা সোজা করে মোবাইলটা দূরে সরিয়ে রাখা, যে কোন মুহুর্তে কল আসতে পারে। বাম পা-টা ভাজ করে দেহের ভর ধরে রেখেছে আর ডান পাটা সোজা করে পিচ রাস্তার কিনারায় জমা হওয়া ইট-পিচের গুড়ো নেড়েচেড়ে খেলা করতেছে।
বাতাস আসছে নদীর দিক থেকে। নদীর ধারে নিচু জমিতে লাগানো কলাগাছ। তার উপর দিয়ে গরম হয়ে আসছে বাতাস সূর্য্যের তাপে। সেই গরম বাতাসের ঝাপটা এসে ঘুমঘুম ভাব ধরিয়ে দিচ্ছে। আলস্যে শরীরটা ঘুমিয়ে নিতে চাইছে কিছুক্ষণ। কিন্তু সুযোগ কই! ধুলো নিয়ে খেলতে থাকা পায়ের মতই মাথাটাও খেলছে কিছু অদ্ভুদ চিন্তায়।
‘একগাদা গাছগাছালি আর উচুনিচু জমিতে এই ছোট্ট মানুষের অবস্থান। ফলে চারপাশে সবসময়ই গাছগাছালিই দেখতে পায়। যদি মানুষগুলোকে আরও ছোট করে ঐ পিচ-ইটের টুকরাগুলোর মধ্যে ঢুকানো হয়, তবে চারপাশে কি দেখবে! ইয়া বড় বড় বিকট দর্শন কালো আর লাল বোল্ডার! ধারালো, নির্দিষ্ট কোন আকার নেই ওগুলোর। দেখতে গাছগাছালির মত সুন্দরও নয়। তার উপর আবার অস্থায়ী, ফলে যে কোন মুহুর্তে গড়িয়ে যেতে পারে। ভয়েই মরে যাবে যে কোন মানুষ হয়ত...’
মাথাটা ঝেড়ে দূরে সরিয়ে দিল চিন্তাগুলো, ‘যাহ, কি ভাবতেছি এসব...’। পিচ রাস্তার উপর জুতোর ঘর্ষণের খসখসে শব্দ শুনে মাথা উচু করল সে। দেখতে পেল সোহরাব চাচাকে।
: মন খারাপ নাঈম?
: নাহ, একটু ঘুমঘুম লাগছে?
: এই দুপুরে এখানে কেন?
: গাছ লাগিয়ে এলাম, আমাদের গ্রুপের কাজ শেষ হয়ে গেছে, ওদের জন্য অপেক্ষা করছি।
: ও, তোমাদের সেই প্রজেক্ট! কি অবস্থা অন্য সবার?
: প্রায় শেষ পর্যায়ে, হয়ত আর কিছুক্ষন লাগবে। সবাই ভাল আছে।
হাতের ছাতাটা গুছিয়ে নাঈমের পাশে বসল সোহরাব চাচা,
: চাচা এই গরমে এখানে বসছেন কেন?
: কেবল গোসল করে এলাম, কিছুক্ষন বসলে খারাপ লাগবে না।
একটু থেমে,
: তারপর অন্য কোন বিষয়?
: অন্য, কি বিষয় চাচা?
: দুপুর বেলা। গরমের ভিতরে একা একা মাথা নিচু করে বসে আছো! নিশ্চয়ই কোন কারন আছে!
: গ্রুপের কাজ শেষ, তাই চুপচাপ ওদের জন্য অপেক্ষা করছি আর চারপাশের খবর নিচ্ছি।
: চাইলে তুমি অন্য গ্রুপে যোগ দিতে পারতে, কিংবা টহল দলের সাথেও ঘুরে বেড়াতে পারতে। কিন্তু তা না করে এখানে একা একা...
নাঈমের দিকে তাকালো সোহরাব চাচা। বুঝলেন, বলতে দ্বিধা করছে।
: অনেক দিন আগে, দুই বন্ধুর সাথে গিয়েছিলাম আরেক বন্ধুর বাড়িতে। ছুটি ছিল হাতে। তাই ঘোরাঘুরি করা আরকি। আমরা যখন ওদের বাড়িতে পৌছায়, ওর আব্বু তখন বাড়িতে ছিল না। তো পরদিন দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর বসলেন আমাদের সাথে। অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করলেন। বললেনও অনেক কথা। বর্তমান পরিস্থিতি থেকে তার স্মৃতিতে তারপর সেখান থেকে তার অভিজ্ঞতা, তারপর তত্ত্বকথা। সে অনেক কথা। কথাগুলো অনেক ভাল লাগছিল। অন্তত প্রথম দিকে। একটা কথাও অপ্রয়োজনীয় ছিল না। কিন্তু কিছুক্ষন পর বিরক্তি এসে গেল। চাচাজানের কথা যেন আর ফুরোতেই চায় না। ধৈর্য্য ধরে বসে থাকলেও ভিতরে তখন চরম বিরক্ত আমরা সবাই।
: পরে অনেক ভাবলাম। কথাগুলো অনেক প্রয়োজনীয়, তবুও কেন আমরা বিরক্ত হলাম। কেনইবা চাচাজান বিষয়গুলো জানানোর জন্য এত ব্যতিব্যস্ত হল। আর কেন এত মূল্যবান কথাগুলো আবার ভুলে গেলাম।
: তারপর একসময় বুঝতে পারলাম, কথাগুলো আর ভাবনাগুলো চাচার আজকের একদিনের নয়। জীবনের হাজারো ঘটনার স্মৃতি আর অভিজ্ঞতার এক পুরু স্তর তৈরি করেছে তার মনে। ঐ সময় তিনি কাউকে না বলে ধৈর্য্য ধরে থেকেছেন কিন্তু আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কথাগুলো মানুষকে জানানোর জন্য। তা না হলে হয়ত হারিয়েই যাবে তা ইতিহাসের গহ্ববরে। না জেনে ভুলও হয়ত করে বসবে অনেকে। কিন্তু কি লাভ হল তাতে। আমরা ক’জন বিরক্ত হয়েও শুনলাম আবার ভুলেও গেলাম।
: যদি ঐ কথাগুলো তিনি ঐ সময়ই বলে ফেলতেন তার পাশের কাউকে তাহলে হয়ত তার মনটাও হালকা হত আর ছড়িয়েও যেত কথাগুলো। যদি প্রতিদিনের স্মৃতির ব্যাথাময় অংশগুলোকে যদি কেউ মুছে ফেলতে চায় ঐদিন ঘুমানোর পূর্বে তবে তা কারও কাছে বলে ফেলাই ভালো। অন্ততঃ আমি তাই মনে করি।
দীর্ঘ কথা শেষ করে সামনের দিকে তাকিয়েই রইলেন সোহরাব চাচা। নাঈম বুঝল, চাচার ইংগিতটা। ঘাড়টা একটু বাকা করে চাইলোও একবার। তারপর মাথাটা উচু করে নিশ্বাস ছাড়ল বড় করে। দূরে তাকিয়ে থেকে বলতে শুরু করলো কয়েকদিনের মনের কষ্টগুলো।
৪
: মানুষের সাথে মিশে কিছু ঘটনার মুখোমুখি হচ্ছি যা আসলে ইতিপূর্বের শোনা কোন ঘটনা, উপদেশের সাথে মিল খুজে পাচ্ছি না। হয়ত ব্যাপারগুলো স্বাভাবিক কিন্তু কি করব বুঝে উঠতে পারছি না ঠিকমত।
: প্রজেক্টের কাজের কিছু টাকার দায়িত্ব দিয়েছিলাম একটা ছেলেকে। মাঝে মধ্যে যা হাতে আসে জমা রাখতাম ওর কাছে। তারপর খোজখবর নেইনি অনেক দিন। একদিন খরচের জন্য প্রয়োজন পড়লে টাকা নিতে ওর কাছে গেলাম। ও ‘দিচ্ছি’ বলে বাড়ির ভিতরে চলে গেল। কিন্তু টাকা নিয়ে ফিরে আসার বদলে ফিরে এলো ওর দাদি। আস্তে করে জানালো যে, ‘ওতো টাকা খরচ করে ফেলেছে! দু’দিন সময় দাও, দিয়ে দেবে। ও তোমাকে বলতে লজ্জা পাচ্ছে, তাই আমাকে বলল।’ ‘টাকা খরচ করে ফেলেছে! তা আমাকে বললেই পারত। কই ও?’ তারপর ওকে ডেকে কবে ফেরত দিতে পারবে জেনে নিয়ে অন্য প্রসংগে কিছু কথাবার্তা বলে চলে এলাম। ফিরে আসার পরেই মনে হল যে, ওকে কেন ছেড়ে দিলাম। এটাতো সবার টাকা। এভাবে খরচ করে কেউ! কঠোরতা দেখালেই পারতাম। কিন্তু আবার মনে হল, ওতো সবকিছু জানেনা এখনও। তাছাড়া ভবিষ্যতে ও বড় কিছুও হতে পারে। আবার মনে হল, তাই বলে এইভাবে কেউ ছাড় দেয়! আমি কি ভুল করে ফেললাম না? যদি ওর পরিবর্তন না হয়? ব্যাপারটা আমার হাজারো দুর্বলতার খাতায় আরেকটা যোগ করল, কিনা, আসলেই আমি ঠিক কাজ করেছি এই নিয়ে একটা দ্বন্দে বারবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিলাম নিজের ভিতরে।
: কিছুদিন আগে আরেকটা ছেলের সাথে পরিচয় হল। অনেকটা জেদী আর একরোখা টাইপের। যা ভাল মনে করবে তা তার চাইই। হয়ত অস্থায়ীভাবে কোথাও গেছি একরাত থাকার জন্য, খাওয়া হবে কিনা তারও ঠিক নেই, কিন্তু, দাত ব্রাশ করার জন্য টুথপেস্ট তার চাইই। বালিশ না থাকলেও দুইটা না হলে তার ঘুম আসবে না। আমার কষ্ট হয় না, কিন্তু অন্য কেউ যদি একই দাবি করে বসে। সত্যিই বিপদে পড়ে যাব।
: অন্য আরেকজনকে দেখি সবসময় পরিস্কার থাকতে। স্বাভাবিক অবস্থায় পরিস্কার থাকতে দোষ নেই, বরং প্রয়োজনীয়। কিন্তু যদি হ্যাণ্ডশেক করার পরও হাত ধুয়ে পরিস্কার করে কেউ, কেমন লাগে। বাসে তার পাশের জন জানালা দিয়ে থুথু ফেলেছে দেখে টিস্যু দিয়ে মুছতে যায় তখন কেমন লাগে? একে যদি আমি আত্ববিশ্বাসের সাথে ওদের ভুল বলে ধরে নিতে পারতাম তাহলেও কষ্ট কম হত। কিন্তু মাঝে মাঝেই মনে করে বসি যে, আমিই হয়ত ভুল চিন্তা করছি। তবে এই আশাই আমাকে সান্তনা দেয় যে, একদিন ওরা আমার চেয়ে বড় হবে। ওদের ভিতরে আমি দেখতে পাই সেই প্রতিভাগুলো।
: সর্বশেষ, আজ সকালে কাজ শুরু করা আগে ব্রিফ শেষে জানতে চাই, কারও কোন প্রশ্ন আছে কিনা! একটা ছেলে হাত তুলে জানতে চাইল, আজ কি বার! যেখানে আমি ভয়ে আছি পুলিশ নিয়ে। হয়ত কেউ জানতে চাইবে, গ্রেফতার হলে কি করতে হবে, কি প্রশ্নের জবাবে কি বলতে হবে, মাটি খোড়ার যন্ত্রগুলোকে হয়ত অস্ত্র হিসেবে দেখিয়ে অস্ত্রের মামলায় ঢুকিয়ে দেবে পুলিশ, সেই ভয়ও আছে। সেখানে এই প্রশ্ন!
: জানি, ব্যাপারগুলো অত গভীর না। ধৈর্য্য ধরলে একদিন ফল দেবে। কিন্তু মাঝে মাঝে চিন্তা গুলো নিজেকে খুব একা বানিয়ে দেয়।
মাথা সেই সোজা করেই কথাগুলো শুনলেন সোহরাব চাচা,
: জীবনে কাজ করতে গেলে আসলেই অনেক অদ্ভুদ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, অনেক অদ্ভুদ মানুষের সাথে সাক্ষাৎ হয়। প্রতিটি মানুষের ঐ আচরনগুলোকে আলাদা করে হয়ত ব্যাখ্যা করা যায় না, কিন্তু আচরণের ধারাগুলোকে ব্যাখ্যা করা যায়।
: নাঈম, আমি তোমাকে উপদেশে দেয়া, কিংবা সান্তনা দেয়ার মত হয়ত কিছু বলতে পারব না। তবে তোমাকে আমি আমার কাহিনী শোনাতে পারি। আর তাছাড়া আমার কাহিনীটা আসলে তোমার কোন সমস্যার মতও না।
৫
: পাঁচ বছর আগে শহরে থাকতাম। একটা চায়ের দোকান ছিল। বয়স বেশী হয়ে যাওয়াতে ব্যাবসা ছেড়ে চায়ের দোকান দিয়েছিলাম। দোকান বলতে আরকি মানুষের সাথে বসে আড্ডা দেওয়া আর রাতে মুভি দেখাই টার্গেট ছিল। আমি ছিলাম এলাকার প্রভাবশালী মানুষ, তাই সবসময় চাইতামও তা প্রকাশ করতে। যাইহোক, তারপর শরীর ভেঙ্গে পড়াতে শহর ছেড়ে গ্রামে বসবাস করছি এখন।
: আমার দোকানের সামনে দিয়ে প্রতিদিন একটা ছেলে যাতায়াত করত। চেহারা সুন্দর। মুখে দাড়ি, কখনও পাঞ্জাবি পরে, কখনও ফুলহাতা শার্ট। দাড়ানোর ভিতরে একটা গাছাড়া ভাব। আমি ওকে শুধু দেখতামই। তেমন গুরুত্ব দিতাম না।
: কিন্তু একদিন দোকানের ভিতর ঢুকে হঠাৎ সালাম দিয়ে বসল সবার সামনে। সবার সাথে হাসাহাসিতে বাধ সাধতে বিরক্ত হয়ে গেলাম। তাকালাম ওর দিকে। পাঞ্জাবি আর মুখে দাড়ি দেখে বিরক্তির মাত্রা বেড়ে গেল আরও। ওর মুখে হাসিটা সেই বিরক্তিতে আগুন ধরিয়ে দিল যেন। উত্তর দিলামনা ওর সালামের। মুখ ঘুরিয়ে নিলাম।
: আমি ছোটবেলা থেকে মানুষ হয়েছি চাকচিক্যের ভিতরে। আব্বু এলাকার লিডার হওয়ার সুবাদে আমিও ছিলাম লীডার। ওয়েস্টার্ণ পোশাক পরিচ্ছদের প্রতি ঝোক ছিল প্রচণ্ড। বিশেষ করে ওদের শেভ করা শার্প ফেস আর সুস্পষ্ট কাঠামো অনেক ভালো লাগত। মনে হত ওরা কত বুদ্ধিমান, আর ওদের সন্তানগুলোও হয় সবসময় সুন্দর সুন্দর। কি ভালো নয় ওদের! অল্প বয়সে বুড়ো হয়ে যাওয়া আমাদের দেশের মানুষকে দেখলেই বিরক্তি লাগত। আর ঐ ছেলেটা পাঞ্জাবি আর দাড়ি পরে এসে সেই বিরক্তিতে যেন ঘি ঢেলে দিল। আমি তখনও বুঝিনি আমার যন্ত্রণার কেবল শুরু!
: পরের দিন সকালে সবেমাত্র দোকান খুলেছি, ঐ ছেলেটা এসে হাজির। ১০০ টাকার ভাংতি চায়। মাথা নাড়লাম, ‘হবে না’। পরদিন আবার এল। ‘১০০ টাকার ভাংতি’। ফিরিয়ে দিলাম। পরদিন আবার এল। তারপরের দিনও আবার। আসতেই থাকল। প্রতিদিন এসে সালাম দেয় আর ১০০ টাকার ভাংতি চায়।
: বিরক্ত হয়ে একদিন জানতে চাইলাম, ‘প্রতিদিন ১০০ টাকার ভাংতি কেন লাগে?’ বলল, ওর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করতে ১০০ টাকা খরচ হয়। তাই প্রতিদিনই সে ১০০ টাকা নিয়ে বের হয়। কিন্তু খুচরা না থাকলে গাড়ি ভাড়া দিতে সমস্যা হয়। তাই আমার কাছে আসে ভাংতি নিতে। আমি আবারও মাথা নাড়লাম, অর্থাৎ হবে না ফিরে যাও।
: ওকে ফিরিয়ে দিয়ে ভাবলাম, ও আর আসবে না। কিন্তু মনে জোর পেলাম না, নাছোড়বান্দা একটা। আমার আশংকায় সত্য হল, ও আবার এল। কিন্তু অন্যদিনের মত ভাংতি না চেয়ে বলে বসল, ‘চাচা টাকাটা দু’টুকরা করে দিন’। রাগ আর বিরক্তিতে হতভম্ভের মত তাকিয়ে রইলাম কিছুক্ষন ওর দিকে। কি বলব বুঝতে পারছিলাম না। শেষে একটা কুটবুদ্ধি ঢুকলো মাথায়। ‘দেই ওর টাকাটা ছিড়ে, দেখী কি করে!’ একটানে টাকাটা হাতে নিয়ে মাঝখান থেকে সুন্দর করে ছিড়ে দু’টুকরো করে দিলাম। ওকে রাগানোর জন্য অনেক সময় নিলাম টাকাটা ছিড়তে। তারপর ছেড়া অংশ দুটো ওর হাতে তুলে দিলাম। প্রথমে ও কিছুটা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইল টাকার দিকে, তারপর সবজান্তার মত আমার দিকে তাকালো। কেমন যেন অদ্ভুদ লাগল ওর চোখের দৃষ্টিটা আমার কাছে।
: পরদিন আবার এল। বলল, টাকাটা দুটুকরো করে দিতে। মনে মনে বললাম, ‘মজা পাইতেছ! ঠিক আছে দেখি কত একশ টাকার নোট আছে তোমার!’ তারপর আগের মতই দুটুকরো করে দিলাম টাকাটা। পরদিন আবার। তারপর দিন আবার। প্রতিদিনই ও আসতেই থাকলো আর আমি ওর ১০০ টাকার নোট দু’টুকরো করতে থাকলাম। একপ্রকার মজায় পেয়ে বসল আমার ওর টাকা ছেড়া। কিন্তু কতদিন!
একদিন আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
: আমাকে দিয়ে টাকা ছিড়িয়ে কি মজা পাও? ও বলল,
: মজা না আমি আসলে বুঝতে চাচ্ছিলাম, আপনার মাসিক আয় কত?
: আমার মাসিক আয়! আমার আয় দিয়ে কি হবে! আর কিভাবেই বা বুঝবে তা?
: আপনি এই ২০ দিনে ২০ টি ১০০ টাকার নোট ছিড়েছেন। যদি আপনার আয় এই ২০ দিনে ২০*১০০=২০০০ এর বেশী না হত তবে আপনি আমার ১০০ টাকার ২০ টি নোট ছিড়তে সাহস পেতেন না।
ওর কথা শুনে মাথায় আগুন ধরে গেল। একটানে ওর হাত থেকে ১০০ টাকার নোটটা নিলাম। তারপর দুইটানে চার টুকরো করে জিজ্ঞাসা করলাম,
: ১০০ টাকার নোট দু’টুকরো হলে ১০০ টাকা হিসাব কর। চার টুকরো হলে কত টাকা হিসেব করবে?
: ২০০ টাকা।
: গুড
এরপর ড্রয়ার থেকে কাচি বের করে ওর টাকাটা কুচি কুচি করে কাটলাম,
: এবার বল কত টাকা হিসেব করবে?
: ১০০০ টাকা
: না, ২০০০ টাকা হিসেব করবে।
বলে টুকরাগুলো ওর হাতের উপর দিয়ে দিলাম। কিন্তু দেখী ওর হাতের দিকে কোন খেয়াল নেই, আগের মতই সেই সবজান্তার দৃষ্টি নিয়ে দিকে তাকিয়ে আছে।
পরদিন আবার এল,
: প্রতিদিন কেন আমার কাছেই টাকা ভাঙাতে আস?
: আশেপাশে আর কোন দোকান নেই, কোথায় যাব!
: গোল্লায় যাও।
পরদিন আবার এল। কিন্তু এবার নরম সুরে বলল,
: চাচা, আজ সত্যি বিপদে পড়েছি। এই ৫০০ টাকাটা ভাঙ্গাতে পারিনি। যদি ভাঙ্গিয়ে দিতেন!
মনে মনে ভাবলাম, বেচারাকে বাগে পেয়েছি আজ। দেখি ৫০০ টাকার নোট ছিড়লে কেমন করে! তারপর ওর হাত থেকে ভাঙ্গিয়ে দেব বলে টাকাটা নিলাম, আর ছিড়ে দুটুকরো করে ফেরত দিলাম। ও শান্ত মুখে মাথা নিচু করে টাকাটা নিল।
টাকাটা ছেড়ার পর খারাপ লাগল। প্রতিদিন কতই বা আয় করি! এরপর ও যদি ১০০০ টাকার নোট নিয়ে আসে! ছিড়তে পারব! না পারলে তো, ও আমার দৈনিক আয় জেনেই যাবে।
আমার আশংকা সত্য করে ও পরদিন একটা ১০০০ টাকার নোট নিয়ে এসে ভাঙ্গতি চাইল। আর পারলাম না। নরম কণ্ঠে বললাম,
: পারব না বাবা, সকাল বেলা অত টাকা নেই এখানে।
: ব্যাপার না চাচা, আমি কখনও টাকা ভাংতির জন্য আপনার কাছে আসিনি।
: মানে...
কিন্তু জানার আর সুযোগ ছিল না তখন। ও দোকান থেকে বেরিয়ে গেছে।
পরদিন দোকানে এসে সালাম দিল। আগেই চিন্তা করে রেখেছিলাম ওর সাথে কথা বলব। শুরু করলাম নাম জিজ্ঞাসার মধ্য দিয়ে। জানতে পারলাম অনেক কিছুই। ওর নাম মারুফ। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। হলে সিট পায়নি তাই শহরে এসে থাকে। তারপর জানতে চাইলাম, ‘আমার পিছনে এভাবে লাগার কারন কি?’ ও প্রশ্নটা শুনে চোখ তুলে তাকাল আমার দিকে। তারপর যা বলল তা শুনে প্রথমবারের মত মাথাটা ঘুরে গেল আমার,
: প্রথম যখন আপনার দোকানে গিয়ে সালাম দিলাম, কিন্তু উত্তর দিলেননা তখন বুঝতে চেষ্টা করলাম কারনটা। তাই পরের দিন আবারও আসলাম তবে টাকা ভাঙ্গানোর ছলে। আপনি দিতে রাজি হলেন না। টাকাটা আপনি ভাংতি দিলেন না এই কারনে না যে, আপনার কাছে নেই। বরং তা এই কারনে যে, আমাকে আপনার পছন্দ হয়নি। যদি শুধু এতটুকুই দেখতাম তবে আর ফিরে আসতাম না। কিন্তু আমি আরও কিছু দেখেছিলাম,
: আমাকে ঘৃণা করেছিলেন এই কারনে যে, আমার আচরণ, পোষাক আপনার পছন্দ হয়নি। আপনি এই বেশভূষাকে অপছন্দ করেন এই কারনে যে, আপনি এটাকে উত্তম মনে করেন না। আপনি আমার সালামকে এই কারনে পছন্দ করেননি যে, সালামকে আপনি উত্তম মনে করেন না। ব্যাপারটা আপনার কোন লোভ, কিংবা দুর্বলতার সাথে সংশ্লিষ্ঠ নয়। একটা প্রতিদ্বন্দিতা, একটা সুপ্ত কল্যানাংখা থেকেই আপনি এই পোষাক, এই আচরনকে ঘৃণা করেন।
: যদি আমার এই ধারণাই সত্যি হয় তবে এর বিপরীত ধারণাও সঠিক। যদি আমি আপনাকে বোঝাতে পারি যে, আমার এই পোষাক, এই আচরণ যে, সংস্কৃতি থেকেই উৎসারিত হয়েছে সেটাই সবচেয়ে সবদিক থেকে ভালো, তবে আপনি সেটাই গ্রহন করবেন। আপনার প্রতিটি আচরণের পিছনেই আছে এক প্রকার যুক্তি। সুতরাং যুক্তির কাছে আপনি দুর্বল। আর যদি যুক্তি সঠিক হয় তবে সে মহাসত্যের সামনে আপনি উন্মুক্ত হয়ে পড়বেন।
৬
আমার ৫৫ বছর জীবনে যে কথা আমাকে কেউ বলেনি সে কথাগুলোই অবলীলায় বলে গেল ছেলেটা। যেভাবে আমাকে কেউ বোঝার চেষ্টা করেনি, এক দৃষ্টিতেই সেটা বুঝে নিয়েছে সে। সত্যিই আমি সারাজীবন লিডারগিরি করেছি কিন্তু কখনও লোভ করিনি। আমি ওয়েস্টার্ণ পোষাককে ভালবাসি এই কারনে যে, তা আমি নিজেদের জন্য ভালো মনে করতাম, ওদের আচরনের সপ্রতিভতাকে আমি পছন্দ করতাম এই কারণে যে, এতে অপ্রয়োজনীয় অনেক আবেগকে এড়িয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু আমি ওদের ধন সম্পদে কখনও লোভ করিনি। আমি শুধু চেয়েছিলাম আমরাও ওদের সাথে যেন পাল্লা দিতে পারি। কিন্তু ওদের সাথে পাল্লা দেয়ার জন্য ওদের ঐ আচরণগুলোকে মেনে নেয়া ছাড়া আমার সামনে বিকল্প কোন আচরন বর্তমান ছিলনা। আর তাইই আমি আমাদের দেশের এই সংস্কৃতিকে এত ঘৃণা করতাম।
আজ তার উপযুক্ত জবাব পেলাম। এই ছেলেটা আমাকে যেভাবে বুঝেছে চাকচিক্যের ঐ সমাজের কেউ আমাকে সেভাবে বুঝতে পারেনি। সুযোগ আর রইল, একে ছোট করে দেখার? আমাকে যে এইভাবে বুঝেছে সে নিশ্চয়ই না বুঝে ঐ সংস্কৃতিকে বেছে নেয়নি।
একের পর এক চিন্তার ধাক্কায় কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল না। তবুও জিজ্ঞাসা করলাম, সত্যিই তুমি তোমার এই দাড়ি, এই পোষাক আর সালামকে উত্তম মনে কর?
সে বলল, ‘আমি না আপনি নিজেই যাচাই করে দেখুন। সরাসরি এর উৎসমূল কোর’আনকে চ্যালেঞ্জ করুন। যুক্তির পর যুক্তি দিয়ে ঝাঝরা করার চেষ্টা করুন একে। তবে আমি শুধু এতটুকু বলতে পারি যে, আমরা পরিচালকের স্থলে থাকলে ওরাও চেষ্টা করত আমাদের সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে।’
ছেলেটার কথা শুনে অনেক ভাবলাম। তারপর পরদিন পাশের বাসার মৌলভির কাছে কুর’আন আনতে গেলাম। গিয়ে খেলাম এক খোচা। ‘এতদিন পর কুর’আন নিয়ে কি করব!’ গাধা একটা, জানেও না যে, যে কেউই কখনও ফিরতে চাইলে তাকে স্বাগতম জানাতে হয়। মনে হয় শুধু আরবিই পড়েছে কোর’আনের।
কিন্তু কোর’আন পড়তে গিয়ে পড়লাম আরেক বিপত্তিতে। আরবি জানি না। সেটা সমস্যা না। বাংলা আছে। প্রথম দিকের কয়েকটা আয়াত পড়ে চলে গেলাম একেবারে ভিতরে। সামনে পড়ল সূরা তওবা। পড়তে শুরু করলাম। কিন্তু কয়েকটা আয়াত পড়তেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। আসলে সূরা তওবাতে আল্লাহ অনেক কঠোরতা করেছেন। একজন নবীন পাঠক হিসেবে তা পড়তে গেলে কষ্ট পাওয়াটাই স্বাভাবিক।
পরদিন মারুফের সাথে দেখা করে বললাম,
: তুমি একনজর আমার মুখ দেখের পড়ে ফেলেছিলে আমার চরিত্রকে। দেখী তুমি কোর’আনের চরিত্র পড়তে কতটা উস্তাদ। বলে আমার সমস্যার কথা খুলে বললাম।
: আমি উস্তাদ না চাচা। তবে আমি আশা করি আল্লাহ আমাকে এমন পরীক্ষায় ফেলবেন না, যে পরীক্ষায় আমি পাশ করতে পারব না।
কোর’আন একটু একটু করে নাজিল হয়েছে আর পরে তা নির্দিষ্ট সূরাগুলোতে সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে। তাই যদি কেউ নাজিলের ক্রমানুসারে পড়তে যায় তবে একরকম হবে আবার সূরানুসারে পড়তে যায় তবে একরম হবে।
তবে আসল কথা হল, প্রয়োজনীয় মুহুর্তে নির্দিষ্ট বিষয়ে জানতে গেলে বিষয়সূচির সাহায্য নেয়া যেতে পারে। আমি আপনাকে কিছু সূরার নাম লিখে দিচ্ছি সেগুলো পড়ে দেখতে পারেন। তবে একটা বিষয় চাচা,
: একদম ফাকা মন নিয়ে পড়াটা জরুরী। সম্পূর্ণ নতুন কোন অসাধারন স্থানে গেলে মানুষ যেমন আগ্রহ নিয়ে তাকে দেখে সেইভাবে প্রতিটি কথাকেই আপনি প্রথম শুনতেছেন মনে করে পড়লে ভাল হবে। সত্য আর মিথ্যার মাঝে তৃতীয় কোন কিছু নেই। সুতরাং নিরপেক্ষতার ছদ্দাবরনে যা আপনার সামনে আসবে তা মিথ্যায়ই।
তারপর পড়তে শুরু করলাম সুযোগ সময় বেছে নিয়ে। পড়তে পড়তে বিচিত্র অনুভূতির সম্মুখীন হতে থাকলাম। কখনও মাটির সাথে মিশিয়ে দিল আমাকে, আবার কখনও সন্মানে ভরিয়ে দিল হৃদয়টাকে। কখনও শোনাল অনেকগুলো মিষ্টি সুসংবাদ। জীবনে অনেক ভুল করার কারনে ধমকও খাইলাম কিছু। নিয়ে গেল সাগরে, আসমানে, পাহাড়ে, অতীতে। তারপর একসময় ফেলেও দিল আমাকে বিচারের সামনে...
নাঈম তাকিয়ে দেখে সোহরাব চাচা আনমনা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সামলে নিল। তারপর ছাতাটা হাতে নিয়ে উঠে দাড়াল,
: নাঈম, আমি তোমাকে সম্পর্কের ব্যাপারে বড় কোন উপদেশ দিতে পারব না, তবে আমার মনে হয়, এতটা ঘনিষ্ঠ হওয়া ঠিক নয় যে, ছোট ছোট ব্যাপারগুলো সম্পর্ককে আঘাত করার সুযোগ পায় আবার এতটা দুরেও থাকা ঠিক নয় যেন তা সম্পর্কের অস্তিত্ত্বের জন্য হুমকিস্বরুপ হয়।
৭
(পাঁচদিন পর)
: আমরা গতদিন একটা গ্রামে গাছ লাগিয়ে শেষ করেছি। আজ এই গ্রামে গাছ লাগাব। একদিনের অভিজ্ঞতা মোটামুটি সবার আছে। পার্থক্য, গতদিন এই গ্রামের সবাই টহলে ছিল, আর আজ গাছ লাগাবে। অন্যদিকে ঐ গ্রামের ২৫ জন আজ টহলে থাকবে। সুতরাং নতুন কোন কিছু বলার নেই আমার মনে হয়। কোন কথা না থাকলে আমরা কাজ শুরু করতে পারি।
কথা বলে থামল নাঈম। একজন হাত তুলল,
: ভাইয়া, শুনেছি একজন আমাদের গাছ উপড়িয়ে ফেলেছে!
: উপড়িয়ে ফেলেছে! কেন? কে?
: গতদিন আমরা যাদের বাড়িতে তার মধ্যে স্থানীয় একজন লিডারও ছিল। আমরা যখন চারা লাগাই তখন সে বাড়িতে ছিল না। ভাবি ছিল। সুন্দর খাচা দিয়ে মোড়া পেপে গাছের চারাটা ভাবির অনেক পছন্দ হয়েছিল। দুদিন পানিও দিয়েছিল অনেক যত্ন করে। কিন্তু ভাইয়া এসে যখন জানতে পারল, গাছটা আমরা লাগিয়েছি, তখন চুপ করে বসে রইল অনেকক্ষন। তারপর এক লাথিতে উপড়ে ফেলল খাচাটা। দুহাতে পেপে চারাটা তুলে আছাড় দিল কয়েকটা। তারপর কুচি কুচি করে কেটে ছাইগাদায়...
: আলহামদুলিল্লাহ...
: কি হল ভাইয়া!
: এতদিন পরে একটা সুখবর শুনলাম।
: সুখবর! কিভাবে?
: লোকটা যদি স্বার্থবাদী হত তবে আমাদের পেপেগাছটা রেখেও দিত আবার আমাদের বিরোধীতাও করত। কিন্তু চারাটা উপড়ে ফেলাতে আমার মনে হয়েছে সে স্বার্থের কারনে আমাদের বিরোধীতা করেনা। সে ভালবাসে তার আদর্শকে।
বিষয়: বিবিধ
১৪১৮ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন