ভালবাসা ও ভরসা
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দর তারকা ১৫ মার্চ, ২০১৪, ০৩:৩১:৪১ দুপুর
১
মজা করে ঘুরতে ঘুরতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল তার। মনের কোনে একটা চিনচিনে ব্যথ্যা বেজে উঠল যেন। অনেক দিন পরে পুরোনো অনেকগুলো ঘটনার স্মৃতি একসাথে মনের পর্দায় হঠাৎ করে ভেসে উঠলে যেমন হয়। স্মৃতিগুলিও কেমন যেন, বারবার শুধু মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে চায়। তার উপর আবার বর্তমানের কোন ঘটনার সাথে মিলে গেলে তো আর কথাই নেই।
বিজয় সারনী পার হয়ে আগারগাও। লেগুনায় আসা যায়। আগারগাওয়ের ভাড়া মিটিয়ে দিয়েছে সে অনেক আগে। ওখানে পৌছে লেগুনা থেকে নেমে রিকসায় করে যাওয়া যাবে। আপাতত এতটুকুই ছিল চিন্তাতে।
লেগুনা পৌছল আগারগাওতে। উঠে দাড়াল সে। কিন্তু একি লেগুনা তো শ্যামলীর দিকেই যাচ্ছে। তাহলে তো এই লেগুনাতেই কিছুদুর যাওয়া যায়। নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল তো শ্যামলী আর আগারগাওয়ের মাঝামাঝি কোন এক জায়গাতেই হবে। ফলে না উঠে বসেই থাকল।
ওর সংগী সেটা মেনে নিল না। সে জানে নামতে হবে আগারগাওতে। তারপর সেখান থেকে যেভাবে হোক যেতে হবে হাসপাতালে। ফলে, তাগাদা দিতে শুরু করল নামার জন্য। এক মুহুর্ত তাকিয়ে দেখল, তারপর এড়িয়ে গেল সে সংগীর তাগাদা। কারন গাড়ির এই শব্দের মধ্যে চেচামেচি করে কথা বলে ব্যাখ্যা করার চেয়ে চুপ থাকায় মনে হয় ভাল হবে।
কিন্তু সংগীটি তাগাদা দিয়েই চলল। আরেকটু অপেক্ষা করলেই হয়ত গাড়ির সবারই দৃষ্টি আকর্ষন করে ফেলবে। উপয়ান্তর না দেখে ঝামেলা এড়ানোর জন্য নেমে পড়তে হল। কিন্তু একটা ভূল হয়ে গেল তখন। কতদুর এসেছে আর তার জন্য কতদুর যেতে হবে তা বোঝা সম্ভবপর হল না। স্থান আর অবস্থানের একটা ধাধায় পড়ে গেল সে। আগে কখনও আসা হয়নি যে এই হাসপাতালে।
সকাল থেকে অনেকগুলো জায়গায় ঘোরাঘুরি করার পরিকল্পনা নিয়েই বেরিয়েছিল দুজনে। মানিকদি থেকে মহাখালী তারপর সর্বশেষ গন্তব্য আগারগাও নিউরোসায়েন্স হাসপাতাল। সেখানে একজনকে দেখেই বাসায় ফিরতে হবে।
২
আগে নামাজ পড়বে না হাসপাতাল খুজবে। মাগরিবের নামাজ। বেশীক্ষণ থাকবে না সময়। কিছুক্ষনের মধ্যেই সে তার ভিতরে কৃত আমলগুলো নিয়ে চলে যাবে। এক মূহুর্ত চিন্তা করে হাসপাতাল বাদ দিয়ে মসজিদে গেল ওরা।
তারপর বের হল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। খুজে বের করাই প্রধান সমস্যা। আর এসময়ই ঘটে ঘটনাটা। সে একা একাই চিন্তা করছিল হাসপাতালটা কোনদিকে হতে পারে। তারপর নিজের মনে একটা অবস্থান চিন্তা করে শ্যামলীর দিকে হাটতে শুরু করল।
"তুমি নিশ্চিত হাসপাতাল এই দিকে?"
মাথা নাড়ল। অর্থাৎ ‘না’।
"তাহলে কাউকে জিজ্ঞাসা কর।"
ইচ্ছা হল না জিজ্ঞাসা করতে। সে মোটামুটি নিশ্চিত কোনদিকে হবে। তাই এড়িয়ে গেল চুপচাপ। কিন্তু সঙ্গীকে সন্দেহে রাখা আর ওর সিরিয়াসনেস দেখতে ভালই লাগছিল তার। সর্বোচ্চ হলে ভূল হবে। সেক্ষেত্রে ফিরে আসবে আবার এদিকে।
কিন্তু আবারও তাগাদা। শেষমেষ এক দোকানদারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলঃ
‘নিউরোসায়েন্স হাসপাতালটা কোনদিকে?’
"সামনে গিয়ে ডাইনে রাস্তায়।"
তাহলে তো ঠিক পথেই যাচ্ছে তারা। সংগীকে বলতে চাইল। কিন্তু সম্ভব ছিল না। কারন তার সংগী তখন রাস্তার অন্য পাশে। রাস্তার ঐপাশে হাসপাতাল খুজতেছে। তাই শুধু মাথা দিয়ে শ্যামলীর দিকে ইশারা করল সে। বোঝাতে চাইল হাসপাতালটা এখনও ঐদিকেই।
কিছুদুর হাটার পর একটা মোড় পড়ল সামনে। ডাইনে চলে গেছে রাস্তা। রাস্তার মাঝে মিডিয়ানে অনেকগুলো সাইনবোর্ড। একটা সাইনবোর্ডে অস্পস্টভাবে হাসপাতেলের নামও দেখতে পেল সে। পেয়ে গেছে হাসপাতালের ঠিকানা। বলার জন্য রাস্তার অপর পাশের সংগীর দিকে তাকাল।
কিন্তু এরপর যা দেখল তাতেই তার মনটা খারাপ হয়ে গেল। তার সংগী একজন রিকসাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা করতে ব্যস্ত। কিন্তু কেন? সে তো চেষ্টা করেনি বা ভূল চেষ্টা করেছে তা নয়। কিন্তু তবু কেন তাকে বারবার তাগাদা দিচ্ছিল। ছোট্ট একটা দুঃখ ছুয়ে গেল মনকে। সে বারবার বলে তাকে ভালবাসে। কিন্তু কেন এমন আচরন! তাহলে কি তার কাজের উপর ভরসা পায় না!
অদ্ভুত টাইপের এক জুটি দুজনের, সায়েম আর জাবির। একজন সকল বিষয়ে খুবই গম্ভীর। আরেকজন তার পাশে গম্ভীর কেউ থাকলে ফাকি দিতে চেষ্টা করে। কিন্তু তা বাধ সাধেনি সম্পর্ক গড়তে। সম্পর্ক তো পরস্পরকে বোঝাবুঝির মাত্রার উপর নির্ভর করে, দুজনের মধ্যে পার্থক্য যতই থাকুক না কেন। সায়েম সুযোগ পেলেই বলে বসে, 'জাবির, আমি কিন্তু অনেক ভালবাসি তোমাকে।' তখন খুব ভাল লাগে শুনতে কিন্তু আবার যখনই এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়তে হয় তখন আবার মনটা খারাপ হয়ে যায়।
৩
ঘটনাগুলো আবার একবার করে মনের পর্দায় নিয় এল জাবির। জানা ছিল না লেগুনা মহাখালী থেকে আগারগাও দিয়ে শ্যমলীতে যায়। তাই সে ভাড়া দিয়েছিল আগারগাও পর্যন্ত। ব্যাখ্যা করা সম্ভব ছিল না ঐ তাড়াহুড়োর সময়ে।
লেগুনা আগারগাও থেকে ছেড়ে আসার কতটুকু সময় পরে নেমেছে তার উপর ভিত্তি করেই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল এখনও তারা হাসপাতাল পার হয়ে যায়নি। ফলে ওদের অবস্থান থেকে শ্যামলীর দিকেই হবে হাসপাতালটা।
এ এলাকায় ঘুরাঘুরি না করলেও অনেকবারই গেছে সে এর উপর দিয়ে। ফলে এলাকার স্থাপনাগুলো সম্পর্কে তার যতটুকু ধারনা হয়েছে তাতে সে ভাল করেই জানে, আগারগাও থেকে শ্যামলী যেতে হাসপাতালটা ডান হাতের দিকেই পড়বে ওটা। তাই কাউকে জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করেনি।
এই ছোটখাট চিন্তাটি ব্যাখ্যা করতে পারেনি জাবির। কারন কিছু ক্ষেত্রে এমন অবস্থা তৈরি হয় যে, অনেক ক্ষেত্রে নিজের সিদ্ধান্তের সম্ভাব্যতাকে পরীক্ষা করার জন্যই গোপন রাখতে হয় অনেক কথা। আর তাছাড়া এসময় পাওয়া না পাওয়ার এক দোদুল্যমান অবস্থায় পড়তে হয় মনের কাছে। একটু যে ভূল করে না কেউ তা তো নয়।
এরকম ঘটনা নতুন কিছু না তার জীবনে। সহপাঠিদের ভিতরে অনেকবারই ও দেখেছে এটা। তারই যেন পুনরাবৃত্তি ঘটল এইমাত্র। এরকম অনেক ঘটনার নিরব আঘাতে অনেক বারই জর্জরিত হয়েছে তার নরম মনটা। যে মন কখনও ইচ্ছাকৃতভাবে আঘাত দিতে চায়নি কাউকে।
৪
রিকসাওয়ালাকে জিজ্ঞাসা শেষ করে তাকাল সায়েম। দেখল জাবিরের মুখের অবস্থা। সন্দেহ হল যে, মেঘ জমেছে কিনা। কাছে এসে জিজ্ঞাসা করলঃ
"মন খারাপ তোমার?"
"হু" অস্বীকার করার কোন মানে হয় না।
"কি হয়েছে?"
"কিছুনা" ব্যাখ্যার পরিমান আরও বেড়ে গেছে তখন। এড়িয়ে গেলেই সুবিধা।
জানে সে কিছুক্ষনের মধ্যেই মনটা ভাল হয়ে যাবে তার। কারন দুজনের মাঝে এই সম্পর্কের মাঝে যে "আল্লাহর সন্তুষ্টি" নামক একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। আর তাছাড়া হয়ত সেইই ভূলটা করেছে ব্যাখ্যা না করে।
বিষয়: বিবিধ
১৩০৩ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দারুন্স
মন্তব্য করতে লগইন করুন