ভুল শোধরান
লিখেছেন লিখেছেন সুন্দর তারকা ১১ মার্চ, ২০১৪, ১২:০৩:৫২ রাত
১
মেজাজটা সপ্তমে চড়ে গেল ইমনের। চেষ্টা করেও রুখতে তো পারলই না উপরন্তু কিছু কথা বেরিয়ে গেল মুখ থেকে।
কয়েকদিন ধরেই হাসপাতালে পড়ে আছে সে। দুলাভাইয়ের সাথে। ক্যান্সার। কেমোথেরাপি দেয়ার কথা ছিল কিন্তু হঠাৎ পেটে ব্যথ্যা শুরু হলে চিন্তায় পড়ে গেল ডাক্তার। পাঠাল আল্ট্রাসনো করতে। রেজাল্ট দেখেও সিদ্ধান্ত নিতে পারল না কি করবে। কেমোথেরাপি দিলে এপেনডিক্সে যদি কিছু ঘটে যায়! ফলে হাতে একটা উপায়ই বাকি থাকল, সার্জারি দিপার্টমেন্টে রেফার করা।
সেই রাফারিং নিয়েই যত ঝামেলা। আবেদন পত্র লিখে ডাক্তার বলল ফাইল নার্সকে দেখাতে, সেইই ঠিক করে দিবে কি করতে হবে।
ফাইল নিয়ে নার্স স্টেশনের দিকে এগোতেই সমস্যাটা চোখে পড়ল। যে নার্সটা বসে আছে তাকে কেমন জানি কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মনে হয়েছে তার কাছে। ফাইলটা ডেস্কের উপর রাখতেই নার্সের মুখ থেকে প্রথমেই যে শব্দটি বেরিয়ে এল তা হল, “ট্রান্সফার!”। কিন্তু উত্তরের অপেক্ষা না করেই ফাইলটা পাশে রেখে দিল।
ইমন বুঝল সে হয়তবা বুঝেনি কি করতে হবে। অপেক্ষা করতে লাগল অন্য নার্স আসার জন্য।
অন্য আরেকজন নার্স আসতেই তাকে ঐ নার্সটি ফাইল দিয়ে বলল, ‘দেখেন তো এটার ট্রান্সফার হবে মনে হয়’। আগে থেকেই রেগে থাকা নার্সটি ফাইলে একনজর চোখ বুলিয়েই বলে উঠল, ‘ট্রান্সফার! আদেশ কই! সিগনেচার কই! আদেশ আসবে, সিগনেচার আসবে তারপরেই না ট্রান্সফার হবে। এখানে তো কিছুই নেই’।
জোরে ফাইলটা পাঠিয়ে দিল ইমনের দিকে। কিছু বলারই সুযোগ পেল না সে। একজন তো ভূল বুঝলই আরেকজন ফাইলই ফেরত পাঠিয়ে দিল। শুনলই না কিছু। কিন্তু উপায় নেই ইমনের। জিজ্ঞাসা তাকে করতেই হবে ফাইল নিয়ে কি করবে সে!
জিজ্ঞাসা করার জন্য মুখ খুলতেই আবার সেই গরম কথা শুনতে হল। এবার আর সামলাতে পারল না ইমন। সরাসরি মুখের উপর বলে বসল, “ট্রান্সফারের কথা আপনাকে কে বলেছে? ফাইল নিয়ে আমি কোথায় যাব তাইই জিজ্ঞাসা করেছি! আজব!”
পাশে বসা আন্য নার্সের কাছে অসহ্য লাগল এই আচরন, “...আপনি আজব বলছেন কেন?”
ইমন বুঝল এটা ঝগড়া শুরু করার ইংগিত। এই ধরনের পরিস্থিতি তার কাছে নতুন কিছু নয়। কারও সাথে ঝগড়া শুরু করতে চাইলে তার বলা যে কোন একটা শব্দকে গায়ে লাগিয়ে ঐ শব্দ দিয়েই ঝগড়া শুরু করতে হয়। এড়িয়ে গেল ইমন।
“একটা কিছু জিজ্ঞাসা করলেই রেগে যায়...!” ফাইলটা নিয়ে সরে গেল ওখান থেকে।
দুলাভাইকে ঘুমাতে দেখে কিছু না বলে একাই ভাবতে থাকল। কি করা যায়! জানা হল না কি করতে হবে। আচ্ছা ফাইলটা একবার পড়ে দেখা যায় কি লিখা আছে ওতে। ফাইল পড়া শুরু করল সে। রেফারের আবেদনটা লিখা হয়েছে ‘ডিপার্টমেণ্ট অব সার্জারি’ বরারব। তাহলে প্রথমে ওখানে একবার খোজ নিয়ে দেখা যাক।
আবার সে এগিয়ে গেল নার্স স্টেশনের দিকে। এবার যা কিছু আসে ঠাণ্ডা মাথায় হজম করতে রাজি সে। ওরা তো সারাদিন একই কাজ করে প্রতিনিয়ত। একটু যে মিশে যাবে না কাজের মধ্যে তাতো হতেই পারে না।
নার্সের একেবারে কাছে গিয়ে একদম স্বাভাবিক কণ্ঠ্যে, যেন এর আগে কোনদিন কথাই হয়নি তার সাথে এইই প্রথম এমন একটা সুরে জিজ্ঞাসা করল,
‘সিস্টার, সার্জারী ডিপার্টমেন্টটা কোথায়?’
“দোতলায়”
সম্পূর্ণ জানা হল না কিন্তু নার্সের ঠাণ্ডা মাথায় নিচু মুখে উত্তর দিতে দেখে অবাকই হল সে।
২
তারপর সার্জারি ডিপার্টমেন্টে ঘোরাঘুরি, ফাইল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে হল অনেক। কিন্তু তার ঐ আচরনের কথা ভূলে যেতে পারল না সে।
একজন মানুষ যে অল্প বেতনে প্রতিনিয়ত সারাদিন একই কাজ করে যাচ্ছে অবিরতভাবে তার সাথে রাগারাগি করা কি ঠিক হল! সে নিজে তো এখন পর্যন্ত কোন কাজ প্রতিনিয়ত করতে পারেনি। এমনকি যে কাজগুলো তার পছন্দের সেগুলোও নয়।
সারাক্ষণ ভাবল সে। তার যে ভূল হয়েছে এই সিদ্ধান্তই নিল শেষে।
ঠিক আছে তাহলে কিভাবে এর প্রতিকার করা যায়। নার্সের সাথে নরম সূরে কথা বলার চেষ্টা করে কিংবা তার ভালমন্দ জিজ্ঞাসা করে! কিন্তু নাহ! এটা একটা অদ্ভূদ কাজ হবে। দেখা যাবে ভাল করতে গিয়ে নার্সদেরকে আরও রাগিয়ে দিয়েছে সে। আলাপচারিতায় সে যে দুর্বল।
কিন্তু এ ঘটনাকে এড়িয়ে যাওয়া বা লুকিয়ে যাওয়া যে ঠিক হবে না। তাতে ক্ষতির সম্ভাবনা আরও বেশী। উপরন্তু কিছু ক্ষেত্রে হয়ত দুলাভাইকে কোন ব্যাখ্যাই দেয়া যাবে না। এমনকি না জানা থাকার কারনে সে হয়ত বিপদেই পড়বে।
তাহলে কিভাবে এর সমাধান করা যায়। কোন উপায় না দেখে সে সিদ্ধান্ত নিল দুলাভাইকে সবকিছু বলে দিবে সে। তখন উনিই বুঝবেন কি করা যায়! দুলাভাইয়ের আচরনের সৌখিনতা আর সংরক্ষণশীলতা খারাপ লাগলেও একটা জিনিস তার ভাল লাগে। মানুষের সাথে মেশার আর বন্ধুত্ব তৈরির অদ্ভুদ একটা ক্ষমতা আছে তার।
আস্তে করে ডাক দিল ইমন,
: দুলাভাই, ফাইল দেখিয়ে এসেছি। ডাক্তার নোট নিয়েছে। এসে দেখে যাবে।
: ঠিক আছে।
: দুলাভাই একটা ঘটনা হয়েছে।
: কি হয়েছে?
: উম... আমি সিস্টারদের সাথে রাগারাগি করেছি...
: কি? কেন? কাদের সাথে?
: সিস্টারদের সাথে...
: সিস্টারদের সাথে রাগারাগি করতে গেলে কেন? কি হয়েছে?
: ফাইল নিয়ে একটা ঝামেলা...
: কি হয়েছে বল!
: একজনকে আপনার ফাইল দেখাতেই সে না বুঝে বলে উঠে, ‘ট্রান্সফার’। তার কথা শুনে আরেকজন ফাইলে দেখে ট্রান্সফারের কোন অর্ডার নেই। তখন রেগেমেগে সে আমাকে জিজ্ঞাসা করে ট্রান্সফারের অর্ডার কই? আমি তখন রেগে গিয়ে বলে বসি যে, আমি তো ট্রানফারের কথা বলিনি। আমি জানতে চাচ্ছিলাম ফাইল নিয়ে কি করব?... এই...
: রাগারাগি করা তোমার ঠিক হয়নি। ঠিক আছে এখন চুপ করে এখানে বস। কোন কথা বলবে না।
কথা বলার কোন ইচ্ছাই আর ইমনের অবশিষ্ঠ ছিল না তখন। চুপচাপ পাশের টুলটাতে বসে পড়ল ও। বরং দুলাভাইকে বিষয়টা বুঝে নিতেই ও খুশি হয়েছে। আজকাল যে কি হয়েছে ওর। একটুতেই রেগে যায় ও। এতে অবশ্য ভালই হয় যদি নিয়ন্ত্রণ না হারিয়ে ফেলে। কারন তখন আর আত্ববিশ্বাসের কোন ঘাটতি হয় না, কোন হতাশাও কাজ করে না আর মানুষের সাথে কথা বলতেও ওর কোন জড়তা থাকে না। জড়তা না থাকলেই যে ভালই হয়। কারন মানুষকে যে সবাই সদাপ্রফুল্ল দেখতে চায়।
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন