মহানুভবতা

লিখেছেন লিখেছেন সুন্দর তারকা ২৭ নভেম্বর, ২০১৩, ০৮:৪৪:৫৩ রাত

অনেক দিন আগের কথা। যশোর এম এম কলেজ। সরকারী দলের ছত্রছায়ার একদটি ছাত্র সংগঠন তখন বেপরোয়া। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা, উপরি আয় আর প্রভাব বিস্তারে খুবই তৎপরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল তাদের দিনগুলি। কিন্তু আলোর পথের অপর সংগঠনটি কি আর কাউকে পরোয়া করে। কি সহজ কি কঠিন সকল অবস্থায় তারা সমানে পরোয়াহীনভাবে পথ চলতে থাকে।



একদিন কিছু কারণে সংঘর্ষ বেঁধে গেল দুদলে। বহুদিন পরে একটা অনিযার্য একশনের গন্ধে সজীব হয়ে গেল পেশীগুলো। কিন্তু সংঘর্ষ এড়িয়ে চলা শান্তিপ্রিয় মানুষগুলোই তো সংঘর্ষের সময় দুধর্ষ হয়ে উঠে। নতুন এক সম্ভাবনা আর পাওয়ার আশায় খুশিতে দুচোয়ালের দাতগুলো মুখের শব্দহীন হাসিতে উকি দেয়। জীবনের সব পাওয়াকে একটি বড় পাওয়ার আশায় বিলিয়ে দেয়। সংঘর্ষ তারা চায়না কিন্তু পেলে খুশী হয়।

অপর দিকে কিছু সাময়িক সুবিধা আর হাতে হাতে লাভের আশায় জমা হওয়া কিছু মানুষ ভেবেছিল উড়ীয়ে দিবে ওদের। কিন্তু কাপুরুষের মত কিছু জনসমাগম দিয়ে শুধু উসকানিই দেয়া যায়। নিরীহ মানূষ আর নারীদের উপর নির্যাতন করা যায়। জীবনের প্রকৃত লড়াইয়ে ওরা একদম ব্যর্থ। চেয়েছিল জীবনটাকে আরাম দিয়ে ভরে দিবে কিছু নগদ পাওনা দিয়ে। কিন্তু ঐ জীবনটাকেই নিজের চোখের সামনে বিপদে দেখে সবকিছু পিছনে ফেলে পালাল ওরা। ফাঁকা হয়ে গেল ময়দান।

ঘেরাও হয়ে গেল ওদের এক দলনেতা। বহুদিন অনেক অত্যাচার করেছে সে। অনেক পাওনা বাকি রয়েছে তার। পাওনার কথা অজানা ছিল না কিছু যুবকের। শুরু হল হিসেব মিটিয়ে দেয়া। দাড়ান থেকে শুয়ে গেল সে। শোয়া অবস্থাতেও পিঠের উপর জমা হতে পাওনার দাগ। যুবকদের দলনেতা তখন অন্য স্থানে ব্যস্ত ছিলেন। হঠাৎ সঙ্ঘর্ষের অন্যস্থানে একটা জটলা দেখে এগিয়ে এলেন তিনি। মাটিতে পড়া একজন মার খাচ্ছে বুঝতে পারলেন। আরও বুঝতে পারলেন তার প্রতিপক্ষের কোন একজন নেতা সে।

সংগে সংগে তিনি থামাতে চেষ্টা করলেন যুবকদের। কিন্তু কজনকে থামাবেন আর কাকে থামাবেন। শক্তভাবে আবদ্ধ হাতের মুষ্টিগুলো। টানটান বুকের সিনা আর চোয়ালের মাংশপেশীগুলো। অবিশ্রান্ত সে বর্ষনের সামনে অসহায় মনে হল তার এই প্রচেষ্টাকে। কোণ উপায়ও দেখছেন না তিনি। কতক্ষনই বা আর টিকে থাকবে সে। অবশেষে তিনি নিজেকেই সপে দিলেন যুবকদের হাতে। প্রতিপক্ষ দলের একজনকে বাচানোর শেষ চেষ্টাস্বরূপ তিনি নিজেই শুয়ে পড়লেন তার শরীরের উপর।

আচমকা নিজেদের নেতাকে এভাবে লক্ষ্যবস্তু হয়ে যাওয়াতে থমকে গেল যুবকেরা। নিজের ভাইকে তো আর মারা যায় না। থেমে গেল তাদের মুষ্টি চালনা। ঢিল পড়ল বাহুতে। ঠাণ্ডা হয়ে গেল তাদের রক্তচক্ষুগুলো। বুঝতে পারল বেশী করে ফেলেছে তারা। লজ্জিত হয়ে গেল তাদের নেতার সামনে। শুধুমাত্র মহানুভবতার কারনেই প্রাণে বেঁচে গেল সেই ছাত্রনেতা। এই মহানুভবতা শুধুমাত্র আলোর পাখীরাই দেখিয়েছে এই দুনিয়াতে। শুধু তারাই দেখাতে পারে এই মহানুভবতা।

বিষয়: রাজনীতি

১১০০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File