পার্থক্য

লিখেছেন লিখেছেন সুন্দর তারকা ২৪ নভেম্বর, ২০১৩, ০৩:৩২:০৩ দুপুর

গন্তব্য-যাত্রা শুরুর মধ্যবর্তী দুরুত্বে নদী। নদীতে সেতু নেই। ফেরিতে পার হয় গাড়িগুলো। লঞ্চের ব্যবস্থাও আছে। সেগুলো শুধুমাত্র যাত্রী পরিবহনের জন্য।

মাঝামাঝি দুরুত্বে হওয়াতে অনেকক্ষন বাসে বসে সবাই ক্লান্ত। প্রাকৃতিক কর্ম সারারও তাগাদা আছে। পরবর্তী সুযোগ অনেক দূরে। সুতরাং লাইনে হয়ে যায় টয়লেটের সামনে। পুরুষ আর নারীদের জন্য একটি করে টয়লেট।

আলাদা সারিতে সাড়িয়ে অপেক্ষা সুযোগের। কেউ নক করে বারবার। “তাড়াতাড়ি”। সবার পরের জন ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করতেছে। ছোট্ট একটি মেয়ে তার বাবার হাত ধরে এসেছে। সাথে ভাইয়া।

বাবা পুরুষ টয়লেটে লাইনে দাড়ান সামনের জনকে অনুরোধ করে, “ছোট মানুষ, অনেক কষ্ট হচ্ছে। একটু সুযোগ দিন।”

যুবকটির চেহারার অভিব্যক্তির কথা না হয় ভূলেই যায়। গীবত হবে শেষে। এক কথায় বলি, “আবর্জনার গলিতে যাতায়াতরত একজন প্রতিদিন যেমন মুখে পার হয়, সামর্থ্য থাকা সত্বেও পরিষ্কার করেনা। যেখানে ঘৃণায় বিরক্ত হওয়ার চেয়ে যেমন আছি তেমনই ভাবটা প্রবল।”

ছটফটানি মেয়েকে নিয়ে বাবা মহিলাদের লাইনে দাড় করিয়ে দিলেন। শেষ হল সামনের যুবকটির প্রয়োজন। সুযোগ আসল পরের জনের। দুজনে তারা একই রকম। কোন পার্থক্য নেই। দুজনই তারা মানুষ।

নিজের সুযোগ সামনে দেখে মনে তার ইচ্ছা জাগল তাঁকে নতুনভাবে ব্যবহার করার। নাড়া দিচ্ছিল পিছনের সামনে ঘটতে দেখা ছোট্ট ঘটনাটা। মুখ ঘুরিয়ে পিছনের লোকটির দিকে তাকাল। হাজার হলেও সুযোগটা তার। “ছোট মানুষ! দেই সুযোগটা! কি বলেন!” আস্তে আস্তে সম্মতি চাইল। মাথা নেড়ে সম্মতি দিল ছোট্ট একটা বিষয়ে।

সামনে দাঁড়িয়ে থাকা বাচ্চাটাকে বলল, “তোমার আব্বুকে ডাক”। নিজের ব্যাথা আর মেয়েটির অস্থিরতায় সামান্য আবেদনে ফেরা হতাশ লোকটি তাকাল যুবকটির দিকে তাকাল। একদম সমাজের ঝামেলা থেকে কোনভাবে বেঁচে থাকতে চাওয়া ভদ্রলোক লোকটি। মেয়েটির জন্য আবেদন করতেও তার অনেক কষ্ট হয়েছে। আবার কে ডাকে। একটু আশাও মনে জাগে।

কোন কথা নয়। শুধু হাতের ইশারায় সামনের টয়লেটের খুলে থাকা দরজা দেখিয়ে দিল। ইশারা বুঝল লোকটি। মেয়েকে টয়লেটে দিয়ে অত্যান্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সামনে হতাশ হওয়া বন্ধুর মত বলল, ধন্যবাদ ভাই।

ঘটনা শেষ। লাইন এখনও বাকি। মুখ খুলল, পিছনে যন্ত্রণা নিয়ে অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকা পরিণত লোকটি, “ভাই, সবাই যদি আপনার মত মানবিক চিন্তা করত তাহলে...”

“মানবিক চিন্তা সবার মধ্যেই আছে। বাহ্যিক অবস্থা, পারিপার্শ্বিকতা, চর্চা, অভ্যাস অনেক প্রভাব ফেলে আচরনের উপর। এই চাপে পড়ে ফুলটা সময়মত ফুটতে পারে না, বিকশিত হয়ে সমাজের অভ্যাসে পরিণত হতে পারে না।



বিষয়: বিবিধ

১৩৮৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File