মুখে সাদা দাড়ি হলেই তারে ভাল মানুষ কয়না, ভাল মানুষ হতি হলে অন্তর পরিশুদ্ধ হইতে হয়, বিশ্বাস না হইলে এইহানে গুথা মারিয়া দেখেন!
লিখেছেন লিখেছেন বেআক্কেল ২১ মে, ২০১৪, ১১:১৯:০৬ সকাল
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদার বিদায়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নিজের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত আর প্লট বাণিজ্যে অনিয়মের ব্যাপারে ব্যাপক ক্ষোভ ছিল ভবনে কর্মরত সবার মধ্যেই। আর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নিজের নামে ১০ কাঠার প্লট, গুলশান, উত্তরা, পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পে পরিচিতদের বেশ কিছু পস্নট বরাদ্দ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তবে নিয়মনীতি না মেনে একক ক্ষমতায় গুলশানের একটি আবাসিক প্লটকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দিলে রাজউক কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। আর রাজউক ভবনেও সৃষ্টি হয় ব্যাপক সমালোচনার। এ ছাড়া নিজের অনিয়ম আর দুর্নীতি ঢাকতে প্রভাবশালীদের মধ্যে বেশ কিছু পস্নট বিতরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা। যার ফলে পস্নট বরাদ্দের অনিয়মের জন্য ইতিমধ্যেই সাবেক পূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও নূরুল হুদা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। রাজউক কর্মকর্তাদের দাবি, নূরুল হুদা রাজউকে প্রায় ৫ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থেকে পস্নট বরাদ্দ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঠিকাদার কোম্পানিকে কাজ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩ নম্বর বোর্ড সভাটিতেও বেশ কয়েকটি পস্নট ও খ- জমি বরাদ্দ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।নিয়ম ভেঙে আবাসিক প্লটকে বাণিজ্যিকীকরণ : রাজউক সূত্রে জানা যায়, গুলশান ৯৩ নম্বর রোডের সিইএন (এ) ১৫/বি প্লটটি রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা নিয়মনীতি না মেনে নিজের একক ক্ষমতা খাটিয়ে আবাসিক থেকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ প্লটের মালিক আমাদের কাছে আবেদন করলে তা নিয়ম অনুসারে সম্ভব না হওয়ায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে চেয়ারম্যান তার একক ক্ষমতাবলে আবাসিক এ প্লটকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেন। এ নিয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কথা বলতে গেলে নূরুল হুদা তাদের ওপর ক্ষেপে যান। এ কাজটি করে দিয়ে নূরুল হুদা কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন এ কর্মকর্তা। নিজেকে সরকারের প্রভাবশালীদের আস্থাভাজন ব্যক্তি উল্লেখ করে নূরুল হুদা রাজউকে অনেকটা একক প্রভাব বিস্তার করেন। বড় প্রকল্প আর সিদ্ধান্ত ছিল সবই তার একার হাতে। তার পছন্দের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নিজের রুমে বসেই কাজ ভাগবাটোয়ার করেছেন বলে জানা যায়।শেষ বোর্ডে বরাদ্দের হিড়িক : রাজউক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ ৩ নম্বর বোর্ড সভাটি ছিল নূরুল হুদার দায়িত্বের সর্বশেষ বোর্ড সভা। সে সভার সভাপতি হিসেবে তিনি গুলশান ও পূর্বাচল প্রকল্পে একাধিক পস্নট বরাদ্দ দিয়েছেন। সভার কার্যপত্র ও সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শেষ বোর্ড সভায় বেশ কয়েকটি পস্নট ও খ- জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গুলশান আবাসিক এলাকার ৭১ নম্বর রাস্তা ও ১৫ নম্বর প্লটটির পূর্বপাশে ওয়াকওয়ে সংলগ্ন পতিত জমি কম বেশি ১ বিঘা ৩ কাঠা ৩ ছটাক ২৫ বর্গফুট প্লটটি কন্টিনেন্টাল হাসপাতাল লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা আবাসিক এলাকার ১১ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রাস্তার ৫ কাঠা আয়তনের ১৮ নম্বর প্লটের অতিরিক্ত আরও ২ কাঠা ৬ ছটাক খ- জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফেরদৌস আরা নামের এক মহিলার অনুকূলে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প আবাসিক এলাকার ১৬/এইচ নম্বর সেক্টর ১/বি ৩ কাঠার পরিবর্তে ৫ কাঠা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আবার মিসেস রেহেনা নামের আরেকজনকে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের ১৭/এফ সেক্টর ৪/এ তিন কাঠার পরিবর্তে এখনই বসবাসযোগ্য উত্তরা ১ম/২য় নিকুঞ্জ (দক্ষিণ) বিকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়। উত্তরা আবাসিক এলাকার ৯ নম্বর সেক্টরে ৫ ও ৬ নম্বর রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গায় ৪ কাঠার পস্নট সৃজন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুলশান আবাসিক এলাকার গুলশান এভিনিউ সি ডবিস্নউ এস (এ) ১০ এর ২৪ নম্বর রাস্তা সংলগ্ন সি ডবিস্নউ এস (এ) ২০ নম্বর পস্নটটি একত্রীকরণ করা হয়েছে। শুধু একটি বোর্ড সভায় এসব পস্নট ও খ- জমি বরাদ্দ দিয়ে নূরুল হুদা কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।নিজের নামেই ১০ কাঠা : নূরুল হুদা রাজউক চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নামে-বেনামে অনেক পস্নট বরাদ্দ নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে রাজউকের সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা যায়, নূরুল হুদা পূর্বাচল ৯ নম্বর সেক্টরের ১০৩ নম্বর রোডে ১০ কাঠা আয়তনের ১৯ নম্বর প্লটটি নিজের নামে বরাদ্দ নিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, নিজের নামে খাতা-পত্রে একটি পস্নট থাকলেও তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নামে আরও বেশ কিছু পস্নট বরাদ্দ নিয়েছেন। এসব বিষয় কম-বেশি রাজউকের সবারই জানা রয়েছে।রাজউক চেয়ারম্যানের পদত্যাগ নাটক : ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি ব্যবসায়ী ও সরকারদলীয় কয়েকজন সংসদ সদস্যের উপর ক্ষোভ দেখিয়ে রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদার ‘পদত্যাগ’ ছিল একটি নাটক মাত্র। সরকারের সহানুভূতি ও দেশবাসীর মনোযোগ আকর্ষণের জন্যই মূলত তিনি এ নাটক করেছেন বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। হঠাৎ করেই তার পদত্যাগ করা আবার একদিন পরেই তা প্রত্যাহার করা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছিল নানা প্রশ্ন। প্রথমে ফ্যাক্সযোগে এবং পরবর্তীতে বার্তা বাহকের মাধ্যমে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিবের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠান। পদত্যাগপত্রে তিনি নিজের শারীরিক অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এর একদিন পরেই ১৪ জানুয়ারি তিনি তার পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন। শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে নূরুল হুদার পদত্যাগ এবং ২৪ ঘণ্টা পরে তা প্রত্যাহার নিয়ে অনেকটা হাস্যরসের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর উত্তরার সরকারি আবাসন প্রকল্পের সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার কাজ নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাজউকের সাবেক এ চেয়ারম্যান। ওই প্রকল্পের কাজ পেতে দক্ষিণ কোরিয়ার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ডোঙ্গা এএইচ, দুবাইয়ের এসকর্ণ এবং বাংলাদেশের শিকদার রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ‘ডোঙ্গা-এসকর্ণ-শিকদার’ নামে যৌথভাবে দরপত্র জমা দিয়েছিল। পেছন থেকে এই যৌথ প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন দিয়েছিলেন সরকার-দলীয় এক এমপি। আর নূরুল হুদা অস্বীকৃতি জানিয়ে তার পছন্দের এক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে বায়না ধরেন। এ নিয়ে নূরুল হুদা তার এ পদত্যাগপত্র নাটক সাজিয়েছেন বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।যুগ্ম সচিবসহ তিনজনকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ : এদিকে রাজউকের পস্নট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে করা মামলায় অধিকতর তদন্তের স্বার্থে যুগ্ম-সচিবসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) বিষয়টি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন। গতকাল সকাল থেকে শুরু হয় এই জিজ্ঞাসাবাদ। চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব খিজির আহমেদ, রাজউকের সাবেক বোর্ড সদস্য নাজমুল হাই ও রাজউকের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমানকে। গত ১২ মে দুদক কার্যালয় থেকে তাদের এ তলবের নোটিস পাঠানো হয়। অন্যদিকে এই মামলায় গত ১১ মে রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হুদাসহ পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। এর আগে গত ২২ এপ্রিল সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব ড. শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে স্ত্রী, মা ও নিজের নামে পস্নট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি মামলা (নম্বর ৮, ৯, ১০) দায়ের করে দুদক। এ ছাড়াও রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদাকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি একই অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। সূত্র জানায়, ড. শওকত হোসেনকে নামে-বেনামে রাজউকের বিভিন্ন প্রকল্পে একাধিক পস্নট বরাদ্দ দিয়ে, পরবর্তীতে প্রতিটি প্লটের আকার পরিবর্তন করতে সহায়তা করার অভিযোগে রাজউকের চেয়ারম্যানসহ বোর্ডের ছয় কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদক। ওই সময় বোর্ডের সভাপতি ছিলেন রাজউকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদা, এ ছাড়া সদস্য ছিলেন, সদস্য (অর্থ) আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার, সদস্য (এস্টেট) আখতার হোসেন, সদস্য (উন্নয়ন) এম মাহবুবুল আলম, সদস্য (প্রশাসন ও ভূমি) নাজমুল হাই এবং সদস্য (পরিকল্পনা) আবদুল মান্নান। ওই বোর্ড সভায় পূর্ত সচিবের আবেদনটি সর্বসম্মতিক্রমে মঞ্জুর করা হয়। দুদক সূত্র জানায়, ড. খোন্দকার শওকত হোসেন ২০০১ সালে নিজের নামে সম্প্রসারিত উত্তরা প্রকল্পে ৩ কাঠার পস্নট বরাদ্দ নিয়ে ৫ কাঠায় রূপান্তরিত করেন। সেখান থেকে পরে ২ কাঠা বিক্রি করার পরেও ডেভেলপমেন্টের জন্য পুরো ৫ কাঠার আমমোক্তার প্রদান করেন। ২০০৪ সালে পূর্বাচল প্রকল্পে স্ত্রী ড. আয়েশা খানমের নামে সাড়ে ৭ কাঠার পস্নট বরাদ্দ নিয়ে প্রথমে ১০ কাঠা এবং পরে সাড়ে ১২ কাঠায় উন্নীত করেন। রাজউকের উত্তরা আবাসিক প্রকল্পে অভিনব কায়দায় তিনি মায়ের নামে নিয়েছেন ৩ কাঠার পস্নট এবং একই পন্থায় তিন কাঠার পস্নটকে ৫ কাঠায় উন্নীত করেন।এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে জানতে গতকাল রাতে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে নূরুল হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পস্নট বরাদ্দ বা এ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এর বাইরে গিয়ে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ আমাদের নেই।’ নিয়ম ভেঙে গুলশানের আবাসিক পস্নটকে বাণিজ্যিক পস্নট হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজউকের নীতিমালা অনুযায়ী চেয়ারম্যানের কিছু একক ক্ষমতা রয়েছে। সেই আলোকেই বোর্ডের সহায়তায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদার বিদায়ে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। নিজের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত আর প্লট বাণিজ্যে অনিয়মের ব্যাপারে ব্যাপক ক্ষোভ ছিল ভবনে কর্মরত সবার মধ্যেই। আর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নিজের নামে ১০ কাঠার প্লট, গুলশান, উত্তরা, পূর্বাচল ও ঝিলমিল প্রকল্পে পরিচিতদের বেশ কিছু পস্নট বরাদ্দ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। তবে নিয়মনীতি না মেনে একক ক্ষমতায় গুলশানের একটি আবাসিক প্লটকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দিলে রাজউক কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। আর রাজউক ভবনেও সৃষ্টি হয় ব্যাপক সমালোচনার। এ ছাড়া নিজের অনিয়ম আর দুর্নীতি ঢাকতে প্রভাবশালীদের মধ্যে বেশ কিছু পস্নট বিতরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা। যার ফলে পস্নট বরাদ্দের অনিয়মের জন্য ইতিমধ্যেই সাবেক পূর্ত প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও নূরুল হুদা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। রাজউক কর্মকর্তাদের দাবি, নূরুল হুদা রাজউকে প্রায় ৫ বছর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থেকে পস্নট বরাদ্দ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ঠিকাদার কোম্পানিকে কাজ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। সর্বশেষ চলতি বছরের ৩ নম্বর বোর্ড সভাটিতেও বেশ কয়েকটি পস্নট ও খ- জমি বরাদ্দ দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে।নিয়ম ভেঙে আবাসিক প্লটকে বাণিজ্যিকীকরণ : রাজউক সূত্রে জানা যায়, গুলশান ৯৩ নম্বর রোডের সিইএন (এ) ১৫/বি প্লটটি রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদা নিয়মনীতি না মেনে নিজের একক ক্ষমতা খাটিয়ে আবাসিক থেকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ প্লটের মালিক আমাদের কাছে আবেদন করলে তা নিয়ম অনুসারে সম্ভব না হওয়ায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে চেয়ারম্যান তার একক ক্ষমতাবলে আবাসিক এ প্লটকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুমতি দেন। এ নিয়ে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা কথা বলতে গেলে নূরুল হুদা তাদের ওপর ক্ষেপে যান। এ কাজটি করে দিয়ে নূরুল হুদা কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন এ কর্মকর্তা। নিজেকে সরকারের প্রভাবশালীদের আস্থাভাজন ব্যক্তি উল্লেখ করে নূরুল হুদা রাজউকে অনেকটা একক প্রভাব বিস্তার করেন। বড় প্রকল্প আর সিদ্ধান্ত ছিল সবই তার একার হাতে। তার পছন্দের ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে নিজের রুমে বসেই কাজ ভাগবাটোয়ার করেছেন বলে জানা যায়।শেষ বোর্ডে বরাদ্দের হিড়িক : রাজউক সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ ৩ নম্বর বোর্ড সভাটি ছিল নূরুল হুদার দায়িত্বের সর্বশেষ বোর্ড সভা। সে সভার সভাপতি হিসেবে তিনি গুলশান ও পূর্বাচল প্রকল্পে একাধিক পস্নট বরাদ্দ দিয়েছেন। সভার কার্যপত্র ও সিদ্ধান্তগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শেষ বোর্ড সভায় বেশ কয়েকটি পস্নট ও খ- জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গুলশান আবাসিক এলাকার ৭১ নম্বর রাস্তা ও ১৫ নম্বর প্লটটির পূর্বপাশে ওয়াকওয়ে সংলগ্ন পতিত জমি কম বেশি ১ বিঘা ৩ কাঠা ৩ ছটাক ২৫ বর্গফুট প্লটটি কন্টিনেন্টাল হাসপাতাল লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা আবাসিক এলাকার ১১ নম্বর সেক্টরের ১১ নম্বর রাস্তার ৫ কাঠা আয়তনের ১৮ নম্বর প্লটের অতিরিক্ত আরও ২ কাঠা ৬ ছটাক খ- জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফেরদৌস আরা নামের এক মহিলার অনুকূলে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্প আবাসিক এলাকার ১৬/এইচ নম্বর সেক্টর ১/বি ৩ কাঠার পরিবর্তে ৫ কাঠা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আবার মিসেস রেহেনা নামের আরেকজনকে উত্তরা তৃতীয় প্রকল্পের ১৭/এফ সেক্টর ৪/এ তিন কাঠার পরিবর্তে এখনই বসবাসযোগ্য উত্তরা ১ম/২য় নিকুঞ্জ (দক্ষিণ) বিকল্প বরাদ্দ দেওয়া হয়। উত্তরা আবাসিক এলাকার ৯ নম্বর সেক্টরে ৫ ও ৬ নম্বর রাস্তা সংলগ্ন খালি জায়গায় ৪ কাঠার পস্নট সৃজন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুলশান আবাসিক এলাকার গুলশান এভিনিউ সি ডবিস্নউ এস (এ) ১০ এর ২৪ নম্বর রাস্তা সংলগ্ন সি ডবিস্নউ এস (এ) ২০ নম্বর পস্নটটি একত্রীকরণ করা হয়েছে। শুধু একটি বোর্ড সভায় এসব পস্নট ও খ- জমি বরাদ্দ দিয়ে নূরুল হুদা কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন সংশ্লিষ্টরা।নিজের নামেই ১০ কাঠা : নূরুল হুদা রাজউক চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় নামে-বেনামে অনেক পস্নট বরাদ্দ নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে রাজউকের সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রে জানা যায়, নূরুল হুদা পূর্বাচল ৯ নম্বর সেক্টরের ১০৩ নম্বর রোডে ১০ কাঠা আয়তনের ১৯ নম্বর প্লটটি নিজের নামে বরাদ্দ নিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, নিজের নামে খাতা-পত্রে একটি পস্নট থাকলেও তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের নামে আরও বেশ কিছু পস্নট বরাদ্দ নিয়েছেন। এসব বিষয় কম-বেশি রাজউকের সবারই জানা রয়েছে।রাজউক চেয়ারম্যানের পদত্যাগ নাটক : ২০১৩ সালের ১৩ জানুয়ারি ব্যবসায়ী ও সরকারদলীয় কয়েকজন সংসদ সদস্যের উপর ক্ষোভ দেখিয়ে রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল হুদার ‘পদত্যাগ’ ছিল একটি নাটক মাত্র। সরকারের সহানুভূতি ও দেশবাসীর মনোযোগ আকর্ষণের জন্যই মূলত তিনি এ নাটক করেছেন বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা। হঠাৎ করেই তার পদত্যাগ করা আবার একদিন পরেই তা প্রত্যাহার করা নিয়ে জনমনে দেখা দিয়েছিল নানা প্রশ্ন। প্রথমে ফ্যাক্সযোগে এবং পরবর্তীতে বার্তা বাহকের মাধ্যমে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিবের কাছে তিনি পদত্যাগপত্র পাঠান। পদত্যাগপত্রে তিনি নিজের শারীরিক অসুস্থতার কারণে দায়িত্ব পালনে অপারগতার কথা উল্লেখ করেছিলেন। এর একদিন পরেই ১৪ জানুয়ারি তিনি তার পদত্যাগপত্র প্রত্যাহার করে নেন। শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে নূরুল হুদার পদত্যাগ এবং ২৪ ঘণ্টা পরে তা প্রত্যাহার নিয়ে অনেকটা হাস্যরসের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর উত্তরার সরকারি আবাসন প্রকল্পের সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার কাজ নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাজউকের সাবেক এ চেয়ারম্যান। ওই প্রকল্পের কাজ পেতে দক্ষিণ কোরিয়ার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ডোঙ্গা এএইচ, দুবাইয়ের এসকর্ণ এবং বাংলাদেশের শিকদার রিয়েল এস্টেট কোম্পানি ‘ডোঙ্গা-এসকর্ণ-শিকদার’ নামে যৌথভাবে দরপত্র জমা দিয়েছিল। পেছন থেকে এই যৌথ প্রতিষ্ঠানকে সমর্থন দিয়েছিলেন সরকার-দলীয় এক এমপি। আর নূরুল হুদা অস্বীকৃতি জানিয়ে তার পছন্দের এক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে বায়না ধরেন। এ নিয়ে নূরুল হুদা তার এ পদত্যাগপত্র নাটক সাজিয়েছেন বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।যুগ্ম সচিবসহ তিনজনকে দুদকে জিজ্ঞাসাবাদ : এদিকে রাজউকের পস্নট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে করা মামলায় অধিকতর তদন্তের স্বার্থে যুগ্ম-সচিবসহ তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) বিষয়টি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন। গতকাল সকাল থেকে শুরু হয় এই জিজ্ঞাসাবাদ। চলে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব খিজির আহমেদ, রাজউকের সাবেক বোর্ড সদস্য নাজমুল হাই ও রাজউকের সহকারী পরিচালক হাফিজুর রহমানকে। গত ১২ মে দুদক কার্যালয় থেকে তাদের এ তলবের নোটিস পাঠানো হয়। অন্যদিকে এই মামলায় গত ১১ মে রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হুদাসহ পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুদক। এর আগে গত ২২ এপ্রিল সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব ড. শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে স্ত্রী, মা ও নিজের নামে পস্নট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগে রাজধানীর মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি মামলা (নম্বর ৮, ৯, ১০) দায়ের করে দুদক। এ ছাড়াও রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদাকে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি একই অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। সূত্র জানায়, ড. শওকত হোসেনকে নামে-বেনামে রাজউকের বিভিন্ন প্রকল্পে একাধিক পস্নট বরাদ্দ দিয়ে, পরবর্তীতে প্রতিটি প্লটের আকার পরিবর্তন করতে সহায়তা করার অভিযোগে রাজউকের চেয়ারম্যানসহ বোর্ডের ছয় কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে দুদক। ওই সময় বোর্ডের সভাপতি ছিলেন রাজউকের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নূরুল হুদা, এ ছাড়া সদস্য ছিলেন, সদস্য (অর্থ) আনোয়ারুল ইসলাম সিকদার, সদস্য (এস্টেট) আখতার হোসেন, সদস্য (উন্নয়ন) এম মাহবুবুল আলম, সদস্য (প্রশাসন ও ভূমি) নাজমুল হাই এবং সদস্য (পরিকল্পনা) আবদুল মান্নান। ওই বোর্ড সভায় পূর্ত সচিবের আবেদনটি সর্বসম্মতিক্রমে মঞ্জুর করা হয়। দুদক সূত্র জানায়, ড. খোন্দকার শওকত হোসেন ২০০১ সালে নিজের নামে সম্প্রসারিত উত্তরা প্রকল্পে ৩ কাঠার পস্নট বরাদ্দ নিয়ে ৫ কাঠায় রূপান্তরিত করেন। সেখান থেকে পরে ২ কাঠা বিক্রি করার পরেও ডেভেলপমেন্টের জন্য পুরো ৫ কাঠার আমমোক্তার প্রদান করেন। ২০০৪ সালে পূর্বাচল প্রকল্পে স্ত্রী ড. আয়েশা খানমের নামে সাড়ে ৭ কাঠার পস্নট বরাদ্দ নিয়ে প্রথমে ১০ কাঠা এবং পরে সাড়ে ১২ কাঠায় উন্নীত করেন। রাজউকের উত্তরা আবাসিক প্রকল্পে অভিনব কায়দায় তিনি মায়ের নামে নিয়েছেন ৩ কাঠার পস্নট এবং একই পন্থায় তিন কাঠার পস্নটকে ৫ কাঠায় উন্নীত করেন।এসব অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে জানতে গতকাল রাতে টেলিফোনে যোগাযোগ করলে নূরুল হুদা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পস্নট বরাদ্দ বা এ সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এর বাইরে গিয়ে এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ আমাদের নেই।’ নিয়ম ভেঙে গুলশানের আবাসিক পস্নটকে বাণিজ্যিক পস্নট হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি প্রদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজউকের নীতিমালা অনুযায়ী চেয়ারম্যানের কিছু একক ক্ষমতা রয়েছে। সেই আলোকেই বোর্ডের সহায়তায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
অনিয়মের মহারাজা একজন নুরুল হুদা
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সেও যে একজন দেখতে শুনতে, ঈমান আখলাকে, স্বভাব চরিত্রে দ্বিতীয় শামিম মোহাম্মদ আফজল তা বুঝার আর বাকী রইলো না।
মন্তব্য করতে লগইন করুন