মামণির ডায়েরী-২
লিখেছেন লিখেছেন নিঝুমদ্বীপের রাজকন্যা ২৬ মে, ২০১৪, ০৩:৩১:১০ দুপুর
একটানা ফোনের শব্দে মহিমা বাধ্য হলো মায়াময় স্বপ্নের জগত ছিন্ন করে বেড়িয়ে আসতে। মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রাখতেই বান্ধবীর হাস্যজ্জ্বোল চেহারা দেখতে পেল। একবার ভাবলো ধরবে না ক্লান্ত হয়ে নিজেই থেমে যাবে মোবাইল একসময়। কিন্তু সে যে বিয়েতে যাচ্ছে না একথা জানানো উচিত। বিয়েতে যাবে না কথাটা শুনতেই অনেকটা আর্তনাদ করে উঠলো বান্ধবী নাইমা। কারণ জানতে চাইলে মহিমা জবাব দিলো, মামণি কখনোই এমন কোন কাজ করতো না যে কাজ নানাভাই অপছন্দ করতেন। ইনশাআল্লাহ আজ থেকে আমিও তাই এমন কোন কাজ করবো না যা বাবা অপছন্দ করেন। বান্ধবীকে বিদায় জানিয়ে আবারো মহিমা হাতে তুলে নিলো মামণির ডায়েরী। নানাভাইকে নিয়ে মামণির লেখা পড়ে নিজেকে অনেক পচা মেয়ে মনেহচ্ছে। সে সবসময় চেয়েছে মামণির মত হতে কিন্তু বাবার জন্য তো সে তেমন কিছুই করে না যেমন মামণি নানাভাইর জন্য করতো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো নয়টা বাজতে বিশ মিনিট বাকি আছে। বাবা নয়টায় রাতের খাবার খায়। আরেকবার ডায়েরীকে মৃদু আলিঙ্গন করে সযতনে টেবিলের উপর রেখে দ্রুত পায়ে রান্নাঘরের দিকে রওনা করলো।
রান্নাঘরে ঢুকে দাদুমণিকে দেখে সালাম দিয়ে মহিমা বলল, আজ বাবার জন্য খাবার আমি রান্না করবো দাদুমণি।
সালামের জবাব দিয়ে হাসিমুখে নাতনীর দিকে তাকালেন খাদিজা বেগম। বললেন, তোর বাবা খায় ঘাস, লতা-পাতা। এসবের আবার রান্না করার কি আছে?
মহিমা কপট রাগের ভান করে বলল, ভালো হবে না বলছি দাদুমণি আমার বাবা সম্পর্কে এমন কথা বললে।
এখন বুঝেছি এমনিতেই কি আর প্রবাদবাক্যে হয়েছে 'মার চেয়ে মাসীর দরদ বেশি'?
মহিমা হাসতে হাসতে বলল, মার চেয়ে মাসীর দরদ বেশি না হতে পারে। কিন্তু ছেলের জন্য মায়ের চেয়ে বাবার জন্য মেয়ের দরদ অবশ্যই বেশি।
হাসলেন খাদিজা বেগম। তাই তো দেখছি। কিন্তু হঠাৎ বাবার প্রতি মেয়ের এত দরদের কারণ কি?
বাবা আজ আমাকে মামণির একটা ডায়েরী দিয়েছে। যেটাতে মামণি নানাভাইর কথা লিখেছে। দাদুমণি আমিও মামণির মত মেয়ে হতে চাই। বাবার সবকিছু খেয়াল রাখতে চাই। জানো এক জায়গায় মামণি লিখেছে, “কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞেস করে তোমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি কোনটা? আমি এক মুহুর্ত দ্বিধা না করে বলি পৃথিবীতে আসার পর আমার বাবা যখন প্রথম আমাকে কোলে তুলে নিয়ে ছিলেন সেই মুহুর্তটা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্মৃতি। যদিও অসাধারণ এই স্মৃতিটি আমি ভিডিওতে দেখেছি। আর আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর কমপ্লিমেন্ট? বাবা যখন আমাকে কপালে আদর দিয়ে বলেছিলেন, মাশাআল্লাহ আজকের পর থেকে তো আমাকে কোনদিন আর আকাশের পানে তাকিয়ে পূর্ণিমা দেখতে হবে না। আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় কাজ? প্রতিদিন ফজরের নামাজ সেরে নিজ হাতে বাবার জন্য চা বানানো। অপছন্দ করি সেইসব কাজ যা বাবা অপছন্দ করেন।” আমিও এখন থেকে এভাবেই ভাবতে চাই দাদুমণি।
বিষাদের তীব্র একটা স্রোত বয়ে গেলো যেন খাদিজা বেগমের বুকের ভেতর দিয়ে। নাতনীর দিকে তাকিয়ে সামলে নিলেন নিজেকে। হেসে বললেন, তোর বাবার কাছে খোঁজ নিস তো আমাকে নিয়ে তোর মায়ের কোন ডায়েরী আছে কিনা। আমার সম্পর্কে কি কি বদনাম করে গিয়েছে জানতে ইচ্ছে করছে।
মহিমা হেসে বলল, আচ্ছা জিজ্ঞেস করবো বাবাকে। কিন্তু তোমার নামে বদনাম করবে কেন? তুমি কি মামণিকে জ্বালা-যন্ত্রনা দিতে?
খাদিজা বেগম হেসে বললেন, তোর মা এই বাড়িতে আসার পর সবাইকে জ্বালা-যন্ত্রনা দেয়া ছিল তার একচেটিয়া অধিকারে। একটা মুহুর্ত যদি কোথাও স্থির হয়ে বসতো মেয়েটা। যদিও বা বসতো মুখ চালু থাকতো। এত কথা যে কি করে বলতো। দুষ্টুমির বিশাল এক ভান্ডার ছিল মাথার মধ্যে। মাঝে মাঝে তোর বাবা কান ধরে তোর মামণিকে আমার কাছে দিয়ে যেত আর বলতো, মা তুমি যদি চাও আমি পাগল হয়ে না যাই তাহলে এই মেয়েকে কিছুক্ষণের জন্য দূরে রাখো আমার কাছ থেকে।
দাদুমণির চোখের কোণে আনন্দ ও বেদনার মিশ্র অশ্রু চিকচিক করতে দেখে মহিমার দু'চোখও জ্বালা করে উঠলো। দাদুমণিকে জড়িয়ে ধরে বলল, তুমি মামণিকে অনেক ভালোবাসো তাই না দাদুমণি?
খাদিজা বেগম হেসে বললেন, তোর মা যেদিন বৌ হয়ে এই বাড়িতে এসেছিল সেদিন বাড়ির সবার উদ্দেশ্য এক ভাষণ দিয়েছিল। বলেছিল, এই বাড়ির প্রতিটি সদস্যর কাছে আমি ওয়াদা করছি আমাকে ভালোবাসা ছাড়া কারো সামনে আর কোন অপশনই রাখবো না ইনশাআল্লাহ। সেই ওয়াদা তোর মা রেখেছিল। এই বাড়ির কারো সামনে ওকে ভালোবাসা ছাড়া আর কোন অপশনই রাখেনি।
মহিমা বলল, আলহামদুলিল্লাহ। দাদুমণি আমিও মামণির মত হতে চাই। তুমি আমাকে সাহায্য করবে?
নাতনীকে আদর করে খাদিজা বেগম বললেন, তোকে সাহায্য করার জন্য তো তোর মামণির ডায়েরী আছেই। এরপরও আমার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব আমি করবো ইনশাআল্লাহ।
জাযাকিল্লাহ দাদুমণি। এখন তাহলে আমাকে বাবার জন্য সালাদ কাটতে দাও।
হাত কেটে ফেলবি তুই।
ইনশাআল্লাহ কিছু হবে না। আমি খুব সাবধানে আস্তে আস্তে কাটবো। কিছুক্ষণ নীরবে কাজ করার পর মহিমা বলল, দাদুমণি মামণির গল্প বলো।
খাদিজা বেগম হেসে বললেন, জানিস আমাদের বাবা মানে তোর মামণির নানাভাই বলতেন, কেউ যদি আমার চার মেয়েকে একসাথে দেখতে চায় তাহলে আমার ছোট নাতনীকে দেখলেই হবে। ওর মধ্যে আমার বড়মেয়ের মায়া-মমতা, সংসারের প্রতি তীব্র আকর্ষণ আর অপরিসীম ধৈর্য্য আছে, মেঝো মেয়ের আদুরেপনা, বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতা আছে, সেঝো মেয়ের জেদ, পাগলামো মেশানো সরলতা আছে, ছোটমেয়ের উচ্ছ্বাস, আনন্দময়তা আর ভাবুকতা আছে। বাবা সত্যি কথাই বলতেন। তোর মামণি অন্যরকম একটি মেয়ে ছিল। আমাদের পরিবারে আর কোন মেয়েই তোর মামণির মত ছিলো না। ছোট্ট একটা মানুষ হয়েও পরিবারের সবার প্রতিটা বিষয় কিভাবে খেয়াল রাখতো সেটা এখনো আমার কাছে রহস্য। দেখিস তো ডায়েরীর কোথাও লিখে রেখে গিয়েছে কিনা সেই রহস্যের গোপন সূত্র। এখন তাড়াতাড়ি কর তোর বাবা এখনি খেতে চলে আসবে।
গল্প বাদ দিয়ে মা তার ছেলের জন্য আর মেয়ে তার বাবার জন্য তখন খাবার তৈরিতে মনোযোগ দিলো।
বিষয়: বিবিধ
১৪৪৯ বার পঠিত, ২৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/7094/imranh/46017#.U4Qs7vmSzoE
২ ---------------
৩ ---------------
এরপর পোস্ট পাবলিশ করতে হবে।
Youtube লিংক এর 'v=' এর পরের অংশটুকু কপি করতে হবে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন