মামণির ডায়েরী-১
লিখেছেন লিখেছেন নিঝুমদ্বীপের রাজকন্যা ২৫ মে, ২০১৪, ০৮:৫১:০৯ রাত
বাবার রুমের দরজার কাছে এসে নক করতে গিয়েও আবার হাত সরিয়ে নিলো মহিমা। সে জানে এখন বাবার বিশ্রাম করার সময়। কিন্তু বাবার সাথে কথা বলাটাও খুব জরুরী। আগামী কাল তার এক বান্ধবীর খালামণির বিয়ে। ভেবেছিলো যাবে না কিন্তু সব বান্ধবীদের অনুরোধের কাছে তার ইচ্ছে ধোপে টেকেনি। যদিও বাবার অনুমতি ছাড়া কথা দেয়া যাবে না সেটা সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। বাবা ফেরার পর থেকেই বলতে চাচ্ছিলো বিষয়টা কিন্তু কেমন যেন দ্বিধা লাগছিলো। হৈচৈ একদমই পছন্দ করেন না বাবা। তাই কিভাবে নেবেন ঠিক বুঝতে পারছে না মহিমা। ঐদিকে ফোনের পর ফোন, ম্যাসেজের পর ম্যাসেজ দিয়েই যাচ্ছে বান্ধবীরা একজনের পর একজন। উফফ...এত অস্থির কেন এই মেয়েগুলো!
মোবাইল বন্ধ করে কিচেনে গিয়ে দু’কাপ কফি বানালো মহিমা। এতে কথা শুরু করতে সহজ হবে বাবার সাথে। এমনটা ঠিক নয় বাবাকে সে খুব ভয় পায়। বরং বাবা তার সবচেয়ে কাছের বন্ধুদের একজন। আসলে বাবা পছন্দ করেন না এমন কিছু কখনোই করেনি মহিমা। তাই বাবার অপছন্দনীয় জেনেও সেই ধরণের কিছু করার আবদার করতে অস্বস্থি বোধ করছে।
কফি নিয়ে বাবার রুমে নক করলো। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকলো। বাবাকে রুমে না দেখে বারান্দার উঁকি দিলো সে। সামনে বই খোলা কিন্তু বাবার দৃষ্টি আকাশে।
বেশ শব্দ করেই কফির মগ রাখলো মহিমা। বাবা তাকাতেই মিষ্টি করে হেসে মহিমা বলল, আসসালামু আলাইকুম বাবা। তোমার জন্য কফি নিয়ে এসেছি।
ওয়ালাইকুম আসসালাম। মেয়ের হাসির বদলে হাসি ফিরিয়ে দিলেন মহিমার বাবা আয়ান সাহেব। কিন্তু এই সময় তো আমি কফি পান করি না।
আমার ইচ্ছে করছিলো বাবা তাই তোমার জন্যও নিয়ে এলাম। হেসে বলল মহিমা। বাবার কোলের দিকে চোখ পড়তে একটা ভুল ভাঙ্গলো তার। বাবা বই পড়ছিলেন না মা’র ডায়েরী পড়ছিলেন। এজন্যই এতটা আত্মমগ্ন লাগছে বাবাকে। ও আচ্ছা বাবার মন তাহলে আজ খুব খুব খুব ভালো। বুঝতে শেখার পর থেকেই দেখে আসছে খুব আনন্দ দিনগুলোতেই বাবা মা’র ডায়েরী নিয়ে বসেন। মনে মনে খুশি হলো মহিমা। আদুরে গলায় বলল, জানো বাবা আমার এক বান্ধবীর খালামণির বিয়ে হচ্ছে। গতকাল ক্লাসে খালামণি আর তার হবু বরের সাথে প্রথম সাক্ষাতের গল্প বললো আমাদেরকে। আচ্ছা বাবা তোমার আর মামণির প্রথম সাক্ষাত কেমন ছিলো সেকথা কি মামণি ডায়েরীতে লিখেছে? যদি লিখে থাকে তাহলে আমাকে পড়তে দেবে? প্লিজ বাবা প্লিজ।
মেয়েকে আদর করে কাছে টেনে নিলেন আয়ান সাহেব। তোমার মামণির সাথে আমার প্রথম সাক্ষাতের কথা চাইলেও লেখা সম্ভব ছিলো না তার পক্ষে।
কেন বাবা? বেশ অবাক হয়েই জানতে চাইলো মহিমা।
হাসলেন আয়ান সাহেব। তোমার নানুমণি আর দাদুমণি দু’বোন সেটা তো জানোই।
হুমম...মামণিকে তুমি একদম ছোট্টবেলা থেকেই দেখেছো। হাসতে হাসতে বললো মহিমা।
উহু...তোমার মামণিকে আমি প্রথম সেদিন দেখেছিলাম যেদিন সে নতুন অতিথি হয়ে পৃথিবীতে পদার্পন করেছিল। মজার ব্যাপার কি শুনবে? তোমার মামণিকে আমি হসপিটালে প্রথম দেখেছিলাম। যেদিন সে নব প্রাণের রূপে প্রস্ফুটিত হয়েছিলো ভুবন বাগিচায়। এর অনেক বছর পর তোমার দাদুমণি স্ট্রোক করলে তার ধারণা হলো তিনি মারা যাবেন। আর মৃত্যুর আগে দেখে যেতে যান বড়পুত্রের বিয়ে। সবকিছু মিলিয়ে হসপিটালে বসেই দুই পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আমাদের বিয়ের। আর কি ভাগ্য দেখো কয়েক মাস পর তিন স্বীকারোক্তির ঐশী বাঁধনেও আমরা আবদ্ধ হয়েছিলাম হসপিটালেই।
ইশশ...শুনতেই কি রোম্যান্টিক লাগছে। প্লিজ বাবা আমাকে বলো না তোমাদের গল্প। কেমন ছিলো মামণি ছোটবেলায়? কিভাবে হলো তোমাদের এই বিয়ে? সংসার জীবন কেমন ছিলো তোমাদের?
কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন আয়ান সাহেব। তারপর মেয়ের হাতে তুলে দিলেন স্ত্রীর ডায়রী। পৃথিবীতে এই ডায়েরীটির চেয়ে প্রিয় কিছুই নেই আমার কাছে। জীবনের দীর্ঘ পথে এই ডায়েরীটি আমার সাথী হয়ে সবসময় পাশে পাশে ছিলো। জীবনের বাকি পথ চলতে, সুখ-স্বপনে বার বার স্নাত হতে এই ডায়েরীটিকে আমার প্রয়োজন পড়বে বার বার।
আমি জানি বাবা। আমি একটুও অযত্ন করবো না ইনশাআল্লাহ। পড়া শেষ করেই আমি ফিরিয়ে দিয়ে যাবো তোমার চলার পথের সাথীকে।
হেসে কফির মগ তুলে নিলেন আয়ান সাহেব। মেয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলেন অন্য কাপটি। মায়ের ডায়েরী হাতে পেয়ে এক মুহুর্তও অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছিলো না মহিমার। বাবার সাথে বসে কোন মতে কফি শেষ করেই ছুট লাগালো নিজের ঘরে।
বিছানাতে বসে কোলের উপর কুশন টেনে নিয়ে তারউপর ডায়েরী রেখে পরম হাত বুলিয়ে দিলো। কিছুক্ষণ বুকে চেপে ধরে মামণির স্পর্শ অনুভব করার চেষ্টা করবো। নিশ্চয়ই এই ডায়েরীর প্রতিটি পৃষ্ঠায়, প্রতিটি লাইনে, ভাঁজে ভাঁজে ছড়িয়ে আছে, লুকিয়ে আছে মামণির স্পর্শ, ঘ্রাণ। লম্বা শ্বাসের সাথে টেনে নিতে চেষ্টা করলো মহিমা সেই নির্যাস। মনের শূন্যতা ঘেরা অংশগুলোতে কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করতে শুরু করলো সে। মামণি যেন তার পাশে এসে বসেছে। তাকে কোলে টেনে নিয়ে চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে শোনাচ্ছে জীবন উপাখ্যান। আরো কিছুক্ষণ শক্ত করে ডায়েরীটা বুকে চেপে ধরে থাকলো মহিমা। ছুঁয়ে দিলো অসংখ্য বার ঠোঁটের ছোঁয়ায়। তারপর ধীরে ধীরে তার সামনে উন্মোচিত হতে লাগলো সেই দুয়ার যা তাকে নিয়ে যাবে তার স্বপ্নকন্যার কাছে......
বিষয়: বিবিধ
১৪৩৮ বার পঠিত, ২৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার মনে দয়া মায়া আছে তাই হাতুড়ি পেটা করেন্নাই..... আপনার জায়গায় আমি হলে কিন্তু এমন সুযোগ হাতছাড়া করাতম না
ইসলামী ঢঙ্গে লেখা সুন্দর ছোটোগল্প; ভালো লেগেছে ।
আলহামদুলিল্লাহ
শুকরিয়া আপুনি ।আপনি কেমন আছেন এখন ।জুনিয়ার রাজকন্যা এখন কি দুনিয়াতে ।
আলহামদুলিল্লাহ তিনি দুনিয়াতে এসেছেন প্রায় তিনমাস হয়ে গিয়েছে। দোয়া করো ওর জন্য।
নট ফাকিবাজি লিখাটি ভোরে পড়বো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন