এইতো জীবন, জীবনের চরম সত্যতা!
লিখেছেন লিখেছেন আব্দুল আজিজ এম আল সাইফ ০৫ আগস্ট, ২০১৪, ১১:৪৭:১২ রাত
তখন সবে ইন্টার্নি শেষ করে ঢাকাতে এসেছে। বড় ভাইদের বদলতে একটা মুল্যবান খেপ ও পেয়ে গেলাম! হসপিটালে আমার তেমন কোন কাজ ছিল না। সকালে রাউন্ড দিয়ে আউটডোর চেম্বারে বসে আছি! আর বসে বসে মোবাইল গুতাতেছি! মাঝে মাঝে টুকটাক সমস্যা নিয়ে রোগী আসছে যা আমার মতন নবীন চিকিৎসক অতি আগ্রহসহকারে ট্রিটমেন্ট দিচ্ছে । আর নিজেকে চেম্বার করা বড় স্যার মনে করছি !
১২টা কিংবা ১২. ৩০ টার দিকে এক ভদ্রলোক চেম্বারে ঢুকলো, বলতে পারেন অনেকটা কিছু না বলেই ঢুকে সামনের চেয়ারে বসলো। গায়ে সাদা একটা পান্জাবি , ময়লার কারনে সাদা বলে মনে হচ্ছে না। মুখে সফেদ দাড়ি ,মনে হয় অনেকদিন সাইজ করেনি। মাথার টুপিটার অবস্থাও একই , অনেক আগে ধৌত করা হয়েছে। পরনে লুঙ্গি। প্রথম দেখাতে যেকেও বলতে পারবে গ্রামের দরিদ্র শ্রেনির কেও হবে তবে ভালো করে দেখলে বুঝা যাবে তার কাপড়গুলো অনেক দামি!
যাহোক, আমি লোকটাকে রোগী অথবা অবার্চিন কেও ভেবে ওয়ার্ড বয়কে ডাকতে যাবো এমন সময় ভদ্রলোক বলল, আপনি হাসপাতালের নতুন ডাক্তার? আমি বললাম, জ্বি। আপনি কে এই কথা জিজ্ঞাসা করার আগেই উনি বললেন, আমি এই হাসপালের বিল্ডিং এবং জায়গার মালিক। আমি কিছুটা নড়েচড়ে বসলাম! উনি বললেন, হাসপাতালের পিছনের বাড়িটাও আমার! আমি ওখানেই থাকি। পাশে যে জায়গাটা দেখছো তিন কানি এটাও আমার । তোমার আগের ডাক্তারদের সাথে এসে মাঝেমাঝে আমি গল্প করতাম। আশ্চার্য হবারই বিষয় কিন্তু তিনি কোন কথা না জিজ্ঞাসা করে বলতে লাগলেন , আমিও একজন ডিপ্লমা ফার্মাসিস্ট, সৌদি আরব থাকছি ২৫ বছর সরকারিভাবে।
ঐ সময় এই জায়গা কেনা। কিনছিলাম ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে আর এখন ৪৫ কোটি তো হবেই। ঢাকার গুলিস্থানে একটা বাড়ি কিনছিলাম, মতিঝিলেও একটা বাড়ি আছে। ঢাকাতে এখনও আমার ফার্মাসি আছে। আমি লোকটার কথা শুনছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম! তিনি বললেন, আমার একছেলে পিজির প্রপেসর আর এক মেয়েও ডাক্তার। আর এক মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকে, জামাই ইন্জিনিয়ার। অনেক নাতি নাতনি আছে। আমি যখন সৌদি আরব থাকতাম তখন খুব বাড়ি আসতে ইচ্ছা করতো কিন্তু পরে আবার ভাবতাম কয়দিন টাকা কামায় করে কিছু দিন পর সবার সাথে একসাথে কাটিয়ে দিবো । কিন্তু দেশে যখন একবারে চলে এলাম তখন বৌ আর বেচে নেই । ছেলে মেয়ে বিয়ে দিতে হলো । সবায় সবার মতো চলে গেলো আর আমি সৌদিতে যেমন একা ছিলাম দেশেও একা হয়ে রইলাম ! গ্রাম থেকে একটা ছেলে এনে রাখছি ঔই আমার দেখা শুনা করে ।
আমি লোকটার চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম জল ছল ছল করছে! সেখানে জলে স্পস্ট দেখতে পেলাম একাকিত্বতা, গর্ভ, আনন্দ, সুখ, হতাশা এক সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। তিনি আর কোন কথা না বলে, নামাজের নাম করে বের হয়ে নিজের কান্নাকে ঢাকলেন। আমিও বসে রইলাম নিরবে!
এইতো জীবন, জীবনের চরম সত্যতা! এভাবেই হয়তো আমরাও চলে যাবো কোন একদিন । তবে কেন এই মিছে ছুটে চলা?
বিষয়: বিবিধ
১৬৪৫ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
যাইহোক ভদ্রলোক এর অনেক কথার মধ্যে যে কথাটা আমার মাথায় গেথে গিয়েছিল - উনি বলছিলেন - বেশ কয়েকবার তিনি সাথে অনেক টাকা আর বউ নিয়ে গুলশান বনানীতে গিয়েছেন - ভাল কোন রেস্টুরেন্ট এ ডিনার খাবেন বলে। কিন্তু সামনে গিয়ে অনেকক্ষন অপেক্ষা করে ফিরে এসেছেন। বলেছিলেন, ভাই কি যে হয়েছে - টাকা আছে অথচ সাহস করে ডুকতে পারছিলাম না। জাপান টাকা দিয়েছে কিন্তু আমি মানুষটাকে ধ্বংশ করে দিয়েছে।
মূর্তির ন্যায় টাকাপয়সাকে পূজা করা, টাকা পয়সাকে ভালবাসা - আলটিমেটলী একজন মানুষকে পুরোপুরিই দেওলিয়া করে দেয়, এ পৃথিবীতে যেমন পরকালেও নিশ্চয়ই তেমন এম্পটি হ্যান্ডেড অবস্থাই হয়তো তাদের নসীবে হবে। আল্লাহ ভাল জানেন।
সাদা চোখে কি মনে হয় এই লোক পৃথিবীর প্রথম ৩ জন সম্পদ শালীর একজন ?
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এক আধটু পয়সা হলেই আমরা ফুটানী মারা শুরু করি ।
অনেকে আছে নিজের কামাইকে মানুষের চোখের সামনে না দেখানোর জন্য খুব হীন দীনভাবে পোষাক পড়ে । কিন্তু কথার ঝাঁঝে আর ধরে রাখা যায় না ।
এরকম অনেক লোক আছে বাংলাদেশে যারা বিদেশে বেড়াতে গিয়ে লাখ লাখ টাকার মেডিকেল চেক আপ করিয়ে আসে । দেশে এসে খুব ভাব মেরে বলে সিঙ্গাপুর/ব্যাংকক/ভারতে গিয়ে ছিলাম অমুকের সাথে তার অপারেশনের জন্য । সেখানে গিয়ে নিজের চেক আপটাও করিয়ে আসলাম ।
যদি বলেন যে আপনার প্রেশারটা তো বেশী , লিপিড প্রোফাইলটা করে ফেলুন বা আপনার তো বুকে ব্যথা, ই.সি.জি. টা করে ফেলুন এখনই । তখনই দেখবেন বলে উঠবে - না না , এসব ওখানে করিয়েছি । এখন হাতে টাকা নেই । শুধু ঔষধ দেন । আপনাদের ডাক্তারদের কাছে এজন্যই আসতে চাই না । কিছু হলেই টেস্ট ধরিয়ে দেন ।
এসব বাস্তব অভিজ্ঞতা ।
এই প্রবীন লোককে বলেন , গ্রাম থেকে লোক না আনিয়ে বরং নিজেই শহরে যা কিছু আছে সব বিক্রি করে দিয়ে গ্রামে চলে যান । যেখানে ছেলে মেয়ে , নাতি নাতনিরা কেউ নেই সাথে তাই উনার কাছে শহরের চেয়ে গ্রামই হবে বেটার অপশন । সেখানে সে পরিচিত আত্মীয় স্বজনদেরকেও কাছে পাবে সময় অসময় যেটা তার ডাক্তার+ প্রফেসর + প্রবাসী ছেলে মেয়েরা পারবে না ।
কি মনে হয় - উনার এই সাহস আছে সম্পত্তি ছেড়ে ছুড়ে চলে যেতে ? একদিন তো এটা হবেই ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন