রাজনীতি ও ইসলাম জময বোন না-কি সতীন?
লিখেছেন লিখেছেন সাওগাত ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৪:৫১:৪৭ বিকাল
রাজনীতি সম্পর্কে ইসলামের প্রকৃত অবস্থান সম্পর্কে অনেকেরই স্বচ্ছ ধারণা নেই। ফলে অনেকেই ইসলামকে ঠেলে রাজনীতির বাইরে নিয়ে যেতে চায়। তারা রাজনীতি ও ইসলামকে সতীন হিসেবে মনে করে। উল্টো অনেকেই ইসলামকে কেবল রাজনীতির মাঝেই সীমাবদ্ধ করে ফেলতে চায়। প্রকৃতপক্ষে ইসলামে রাজনীতিও রয়েছে আবার রাজনীতির বাইরেও ইসলাম রয়েছে। রাজনীতি ও ইসলামের সম্পর্ক জযম বোনের মত। আশা করি নিচের লেখাটুকু পড়লে এটা অনুধাবন করা যাবে। লেখাটা আমার নিজের নয়। একটা গ্রন্থ থেকে নেওয়া । গ্রন্থের সূত্র উল্লেখ করা হয়েছে।
ইসলামের রাজনীতির গুরুত্ব ঃ রাজনৈতিক উদাসীনা ও রাজনৈতিক চরমপন্থার মাঝে ভারসাম্য স্থাপন
ইসলাম ও রাজনীতির সম্পর্ক নিয়ে বর্তমানের দুই প্রকার মত দেখা যায়। এই দুই ধরনের মত বড়াবাড়ি ও ঝাড় দেওয়ার দুই চুড়ান্ত প্রান্তে অবস্থিত। ধর্মহীন বা ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের একটা মত এবং এই মত হলো ইসলাম অন্য ধর্মের মতো-ই। ইসলামের সাথে মানুষের সম্পর্ক কেবল ব্যক্তিগত ও আধ্যাত্মিক কর্মকা-ে। সুতরাং এটি ব্যক্তিগত বিষয়। রাষ্ট্রপরিচালনা ও রাজনীতির সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। আমরা পূর্বেই আলোচনা করেছি খৃস্টীয় ধর্মরাষ্ট্রের নির্যাতন-নিপীড়নের প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই মতাদর্শ সৃষ্টি হয়েছে। ধর্মহীন বা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার পর এই মতবাদ সারা বিশ্বেই গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। কোন কোন ধর্মী- মহল বা গোষ্ঠীর ব্যবহারিক কর্মকা- থেকেও এই মতবাদ খানিকটা সমর্থন লাভ করে। অনেক ধর্মী-গোষ্ঠী নিজেদের কর্মকা-কে কেবল আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগি এবং খুব বেশি হলে চারিত্রিক সংশোধনির মাঝে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। কোন ব্যক্তি এ সীমার বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক কর্মকা-ে জড়িত হলে তার দিকে আঙুল নির্দেশ করে বলা হয়, দীনদার ব্যক্তি কিভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত হতে পারে? ইসলামকে অন্য ধর্মের সাথে তুলনা করার ফলে ইসলাম সম্পর্কেও এ মতাদর্শের উদ্ভব ঘটেছে। কিন্তু এই তুলনা নিশ্চিতরূপে ভ্রান্ত। ইসলামের দিক নির্দেশনা ও শিক্ষা কেবল আকীদা-বিশ্বাস, ইবাদত-বন্দেগি ও চারিত্রিক গুণাবলির মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। অর্থনীতি, রাজনীতি এবং শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কেও ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ দিক-নির্দেশনা দান করেছে এবং এসব বিধি-বিধান ব্যতীত ইসলামকে পূর্ণভাবে চিন্তাও করা যায় না। এ সব বিধি-বিধানের কিছুটা বিস্তারিত আলোচনা ইনশা আল্লাহ সামনে তুলে ধরা হবে।
দ্বিতীয় চরমপন্থীগোষ্ঠী ধর্মহীন রাষ্ট্র-ব্যবস্থাকে প্রত্যাখ্যান করতে গিয়ে রাজনীতিকেই ইসলামের মূল উদ্দেশ্য বলে মনে করে। তাদের বক্তব্য হলো ইসলামের মূল উদ্দেশ্য হলো দুনিয়াতে একটা ন্যায়পর রাষ্ট্র গঠন করা। ইসলামের অন্য বিধানগুলো এই মূল লক্ষ্যের অনুগামী। এই কারণে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ইসলামকে বিজয়ী করার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিই ইসলামের প্রকৃত মর্ম-উদ্দেশ্য উপলদ্ধ করতে পেরেছে। আর কোন ব্যক্তি রাজনীতি থেকে দূরে থেকে নফসের সংশোধনি, ইসলামী শিক্ষার প্রসার, ইসলামের দাওয়াত, সামাজিক সংস্কার ইত্যাদি কাজে নিয়োজিত থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তার উল্লেখযোগ্য কোন ভূমিকা না থাকলে তিনি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণকারী এবং ইসলামের আসল মর্ম-উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি সচেতন নন।
এই দুই দৃষ্টিভঙ্গিই প্রান্তিক বা চরমপন্থী মতাদর্শÑ অতিরিক্ত কড়াকড়ি অথবা অতিরিক্ত ছাড় দেওয়া। রাজনীতির ক্ষেত্রে ইসলামের প্রকৃত অবস্থান উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে এই সব মতাদর্শ গড়ে উঠেছে। প্রকৃত বাস্তবতা হলো, ইসলামের দিক-নির্দেশনা, শিক্ষা ও বিধি-বিধান জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্যেই প্রযোজ্য। এর মাঝে রাজীতিও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু রাজনীতিকেই ইসলামের মূল উদ্দেশ্য বিবেচনা করে অন্যান্য বিধি-বিধানকে রাজনীতির অধীন মনে করা ভ্রান্তি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইসলামে ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত বিস্তৃতি বিধি-বিধান রয়েছে। এর ভিত্তিতে কোন ব্যক্তি ব্যবসা-বাণিজ্যকে ইসলামের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য মনে করলে ভুল করবে। অনুরূপভাবে বিবাহ সংক্রান্তেও ইসলামে বিস্তারিত বিধি-বিধান রয়েছে। বিস্তারিত বিধি-বিধান থাকার অর্থ এটা নয় যে, বিবাহ-শাদীই ইসলামের মূল লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। ঠিক অনুরূপভাবে ইসলামে রাজনীতি সম্পর্কেও মৌলিক দিক-নির্দেশনা ও বিধি-বিধান রয়েছে। কিন্তু এর উদ্দেশ্য এটা নয় যে, রাজনীতিই ইসলামের মৌলিক উদ্দেশ্য।
[সূত্র ঃ পৃ. ১১৯, রাজনীতি ঃ ইসলামি চিন্তাধারা, মূল ঃ জাস্টিস তকী উসমানি, অনুবাদ রেজাউল করিম, প্রকাশক : মাকতাবাতুত তামাদ্দুন, যোগাযোগ ঃ ০১৮৩৬০৫০৯০৯]
বিষয়: রাজনীতি
১১৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন