মরিয়াম জামিলার লেখায় মরিয়াম জামিলাকে চিনি (২) .....
লিখেছেন লিখেছেন সাওগাত ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১০:৪৬:১৭ সকাল
(পূর্বোক্ত লেখার শেষাংশ) আমার জীবনে রাসূলুল্লাহ সা. এর প্রভাব
প্রাসঙ্গিক হাদীসের জ্ঞান ব্যতীত কুরআনকে যথাযথভাবে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। কুরআন পাঠ শুরু করা মাত্রই আমি এটা অনুধাবন করতে পেরেছিলাম। কেননা, যার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, তিনি ব্যতীত আর কে কুরআনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে যোগ্যতর? কুরআন কেবল ইসলাম-নির্দেশিত জীবনের এক সাধারণ রূপরেখা প্রদান করে। কিন্তু হাদীস সেই রূপরেখার শূন্যস্থানগুলো পুংখানুপুঙখরূপে পূরণ করে। অনেকেই কুরআনের এই চুড়ান্ত ব্যাখ্যাতাকে অর্থাৎ হাদীসেক অস্বীকার করে। তাদের উদ্দেশ্যে নি¤েœাক্ত হাদীসটি উল্লেখ করা হলো।
রাসূল (সা.) এর স্ত্রী হযরত আয়েশাকে (রাযি.) রাসূল (সা.) এর জীবন ও আচরণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন : কুরআনই হলো তাঁর আচরণ। অন্য কথায়, তাঁর দৈনন্দিন জীবনাচরণ ছিল কুরআনের প্রকৃত শিক্ষার প্রতিচ্ছবি। কুরাআন যে সকল গুণাবলীর বর্ণনা করেছে, সে সকল গুণাবলীর বাহ্যিক প্রকাশ বা দৃশ্যমান রূপ হলেন রাসূল (সা.)। রাসূলের জীবনীর বর্ণনাসমূহতে কিশোর বালক, পিতা, প্রতিবেশি, বন্ধু, যোদ্ধা, সেনাপ্রধান, বিজেতা, আইন-প্রণেতা, বিচারক, শাসক এবং সর্বোপরি আল্লার অনুগত বান্দা হিসেবে রাসূলকে (সা.) তুলে ধরা হয়েছে। এ বর্ণনাগুলো আল্লাহর কিতাব তথা কুরআনের তাত্ত্বিক বর্ণনার ব্যবহারিক দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ।
রাসূল (সা.) এর জীবনাচারণের মাঝ দিয়ে তার দৈনন্দিন জীবনের একনিষ্ঠতা এবং পবিত্রতা ছবি ফুটে উঠেছে।
রাসূল (সা.) এর দৈনন্দিন কর্মকা-ের সূচী ছিল অত্যন্ত শৃংখলাপূর্ণ-নিষয়নিষ্ঠ। ফজরের নামাযের পর তিনি মানুষকে সাদরে গ্রহণ করতেন, যাতে করে তিনি তাদেরকে শিক্ষা দিতে পারেন। এ সময় তিনি তাদের বিবাদ মেটাতেন, বিচার কার্য পরিচালনা করতেন, বিদেশী প্রতিনিধি দলকে সাক্ষাত দিতেন, প্রয়োজনীয় নির্দেশনাবলী দিতেন এবং এরপর সেই বৈঠক তখনকার মত শেষ করতেন। দাফতরিক এই কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর তিনি তাঁর স্ত্রীগণের কোন একজনের নিকট গমন করতেন। সেই স্ত্রীর কোন অনুরোধ-উপরোধ থাকলে, তিনি তা রক্ষা করতেন। এমনকি তিনি কেনা-কাটার জন্যে বাজারেও যেতেন। এরপর স্বল্প-পরিসরের আরেকটি নামায আদায় করতেন। এরপর অসুস্থদেরকে দেখতে যেতেন, বন্ধুদের বাসায় যেতেন দেখা করতে এবং সেখান থেকে যোহর নামাযের জন্যে মসজিদে যেতেন। মসজিদ থেকে ফিরে এসে তিনি খাবার খেতেন, যদি বাসায় খাবার থাকতো। এরপর তিনি তাঁর ব্যক্তিগত কামরায় প্রবেশ করতেন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করতেন। এরপর পুনরায় আসরের নামাযের জন্যে মসজিদে যেতেন। নামায শেষে তিনি তাঁর স্ত্রীগণের নিকট যেতেন এবং তাঁদের সাথে ততক্ষণ সময় দিতেন। এরই মধ্যে বাচ্চারা তাঁর কাছে সময় চাইত এবং তিনি বাচ্চাদেরকেও সময় দিতেন। তিনি মাগরিবের নামাজে ইমামতি করতেন এবং এরপর রাতের খাবার খেতেন। এরপর তিনি নিরবে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করতেন এবং বিশ্রামের নিতেন। তিনি অল্প কয়েক ঘণ্টা ঘুমাতেন। ঘুম থেকে জেগে উঠে নামায আদায় করতেন, আল্লাহর ধ্যানে নিমগ্ন হতেন এবং পুনরায় সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে বিছানায় যেতেন। এরপর আবার ফজরের নামাযের জন্যে উঠতেন এবং এরপর দিনের অন্যান্য কাজ শুরু করতেন। তাঁর কর্মক্ষমতা ছিল অসাধারণ। তিনি কখনও ক্লান্তিবোধের অভিযোগ করতেন না।
দেখা যাক, তাঁর পবিত্র জীবন কিভাবে তাঁর সাথে সংশ্লিষ্ট নারীদের জীবনকে প্রভাবিত করেছিল।
হযরত আলী (রাযি.) একবার তাঁর ছাত্রদের একজনকে বললেন, আমি তোমাদেরকে রাসূল (সা.) এর সবচেয়ে প্রিয়তম কন্যা ফাতিমা (রাযি.) এর অবস্থা শোনাবো? ঐ ছাত্র শোনার আগ্রহ প্রকাশ করলে, তিনি বললেন, ফাতিমা নিজেই শষ্যদানা ভাঙ্গাতো; এতে করে তার হাতে কড়া পড়ে যেত। সে চামড়ার ব্যাগে করে পানি নিয়ে আসতো; এতে করে তার কাঁধে দাগ পড়ে যেত। সে নিজেই বাসার পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার কাজ করতো; এতে করে তার পরিধেয় কাপড়-চোপড় অপরিচ্ছন্ন হয়ে যেত। একবার কিছু যুদ্ধবন্দীকে মদীনায় আনা হয়েছিল। আমি তখন তাকে বললাম, ‘‘নবীজী (সা.) এর কাছে যাও, তোমার ঘরের কাজের সহায়তা করার জন্য একজন দাসী দেয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ কর।” সে নবীজী (সা.) এর নিকট গেল। সেখানে তখন অনেক লোক ছিল। সে ছিল অত্যন্ত বিন¤্র; তাই এতগুলো লোকের মাঝে সাহস করে রাসূল (সা.) এর নিকট নিজের কথা বলতে পারলো না। পরের দিন রাসূল (সা.) নিজে আমাদের বাসায় আসল এবং বলল, ফাতিমা কিসে গতকাল তোমাকে আমার নিকট নিয়ে গিয়েছিল? ফাতেমা লজ্জিত হলো এবং কোন কথা বলল না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.) শষ্য ভাঙতে ভাঙতে এবং পানি টানতে টানতে ফাতেমার হাতে ও পিঠে কড়া পড়ে গেছে। সে সবসময় ঘর-দোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা সহ অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকে। তার কাপড়-চোপড়ও সবসময় অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায়। আমি তাকে যুদ্ধবন্দীদের কথা জানিয়েছিলাম এবং আপনার কাছে গিয়ে একজন দাসীর জন্য অনুরোধ করতে বলেছিলাম। নবীজী (সা.) উত্তর দিলেন ঃ ফাতেমা, আল্লাহকে ভয় কর। রাতে যখন বিছানায় যাবে, সুবহান্নাল্লাহু ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার এবং আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পাঠ করবে। একজন দাসীর চেয়েও এই আমলকে তোমার কাছে বেশি উপকারী বলে মনে হবে। ফাতিমা (রাযি.) বললেন, আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সা.) এর উপর সন্তুষ্ট।
নবীজী (সা.) এর পবিত্র স্ত্রীগণ কিভাবে দিনাতিপাত করতেন- তা দেখা যাক।
আয়েশা (রাযি.) বলেন ঃ নবীজী (সা.) এর স্ত্রীগণের মাঝে মাইমুনা ছিলেন সবচেয়ে বেশি ধার্মিক ও বিশ্বস্ত। তাঁকে হয়তো নামাজে অথবা ঘরের কাজে ব্যস্ত দেখা যেত। আর যখন তিনি এই দুটোর কোনটিই করতেন না, তখন তিনি মিসওয়াক দিয়ে দাঁত পরিস্কার করতে থাকতেন।
এই বর্ণনা তথাকথিত ‘নারী-মুক্তি আন্দোলন’ সমর্থকদের কাছে মোটেই আকর্ষণীয় হবে না। এই বিবরণ শুনেই আধুনিক নারীরা হতাশাব্যঞ্জক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে। তারা আমাকে প্রশ্ন করবে আধুনিক আমেরিকায় জন্মগ্রহণকারী ও লালিত-পালিত হওয়া বিংশ-শতকের নারী হয়ে আমি কিভাবে ঐরকম দরিদ্র ও গ-িবদ্ধ জীবন মেনে নিতে পারি? এর উত্তরটা হলো, নবীজী (সা.) মনে করতেন কোন কিছু অর্জনের যে অভিজ্ঞতাÑতার গভীরতা বড়; বিস্তৃতি নয়। [অর্থাৎ অনেক বেশি কিছু অর্জনের অভিজ্ঞতা বড় নয়; বরং অর্জন স্বল্প হোক কিন্তু গভীরভাবে, পরিপূর্ণতার অর্জন করতে পারলেই সে অভিজ্ঞতাই বড়।] হন্ত-দন্ত হয়ে ছোটা এই আধুনিক যান্ত্রিক জীবনে সকলকেই কর্মঠ এবং এক-পায়ে-খাড়া জীবন যাপন করতে হয় এবং এই ছোটাছুটিকেই জীবনের পরম গুণ বলে বিবেচনা করা হয়। আধুনিক যুগে নারী-পুরুষ ব্যাপক পরিসরে এবং নানা রং এর অভিজ্ঞতা লাভ করে কিন্তু তাদের মনোজগত বাহ্যিকতাপূর্ণ, দুর্বল এবং গভীরতাহীন। আমি আধুনিক নারী-পুরুষকে যে দিকটাকে লক্ষ্য করতে বললো তা হলো, অনেক অনেক বেশি আধুনিক আমেরিকান নারী আজ অসুখী অথচ কার্যত তারা তাদের ইচ্ছামত সবকিছুই করতে পারে। তারা সর্বোচ্চ মানসম্মত জীবন ধারার অধিকারী। তারা সুসজ্জিত, সুপরিপাটি, মানসম্মত খাবারে লালিত-পালিত। তারা সুপরিপটি বাসস্থানে বসবাস করে। তাদের বিরক্তকর কাজ-কর্মও কম। তাদের রয়েছে সর্বোচ্চ স্বাধীনতা, সামাজিক যোগাযোগের নানাধরনের চমৎকার সব উপায়, আধুনিক সেকুলার শিক্ষালাভের অতুলনীয় সুযোগ। তাদের রয়েছে আত্ম-তৃপ্তির সম্ভব্য সব ধরনের ব্যবস্থা এবং ‘যা-ইচ্ছা তা-ই করতে পারা’র জীবন। এতো কিছুর পরও অনেক বেশি পরিমাণ আমেরিকান নারীরা অস্থির, অসন্তুষ্ট এবং এমনকি পাগলাটে।
নবীজী (সা.) এর নিকট জীবনের লক্ষ্য হলো অর্জন; উপভোগ নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে আনন্দ ও সুখ হলো উপজাতÑ মানসিক পরিতৃপ্তির ফল। আর এই পরিতৃপ্তি আসে ‘আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জিত হলে মৃত্যুপরবর্তী জীবনে মুক্তি লাভ করা যায়’ এই অনুভূতি থেকে নিজ কর্তব্যকর্মগুলো সুমসম্পন্ন করা থেকে। বস্তুবাদী জীবনে বড় অর্জন হলো রাজনৈতিক অথবা অর্থনৈতিক ক্ষমতা অর্জন। কিংবা বিজ্ঞান বা কলায় পারদর্শিতা অর্জন এবং সুখ্যাতি পাওয়া, যদি সে বিশেষ কোন যোগ্যতার অধিকারী হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে আয়-রোজগারের ভাল একটা ব্যবস্থা থাকাও বড় অর্জন। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে বড় অর্জন হলো ভাল, কল্যাণকর ও উৎপাদনশীলতার মধ্য দিয়ে স্থায়ী ও টেকসই কিছু করা এবং আত্ম-তৃপ্তকারী, পাপপূর্ণ ও সময়ের অপচয়মূলক কাজকর্ম থেকে বিরত থাকা। চুড়ান্ত অর্জন হলো দুনিয়া-পরবর্তী জীবনে মুক্তি লাভ। এটি অর্জিত হয় কুরআন-সুন্নাহর প্রতি আনুগত্য দ্বারা।
এইগুলো নবীজী (সা.) এর জীবনের মৌলিক শিক্ষা। হিজরতের প্রথম বর্ষে মদীনার মসজিদে তিনি একটি ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই ভাষণে এই কথাগুলোই বলা হয়েছে।
ও মানবসকল! তোমরা এখন থেকেই ভবিষ্যতের (মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের) জন্য একটা কিছুর ব্যবস্থা কর। আল্লাহর শপথ, তোমাদের প্রত্যেকে-ই একদিন মৃত্যুবরণ করবে। সেদিন সে তারা পরিবারকে রক্ষকহীন রেখে যাবে। ঐ সময় তার হাতের কাছে কোন পথ-নির্দেশক থাকবে না, অথবা থাকবে না কোন আশ্রয়, যেখানে সে নিজেকে আড়াল করবে। তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে জিজ্ঞেস করবেন, আমার বার্তাবাহক কি তোমার কাছে যান নি? আমার পাঠানো প্রত্যাদেশ কি তোমাকে দেন নি? আমি তোমার প্রতি অনেক অনুগ্রহ করেছিলাম। তুমি তোমার ভবিষ্যতের জন্যে কি করেছ? সে ডানে-বামে সাহায্যের আশায় দৃষ্টি ফেরাতে থাকবে। কিন্তু তাকে সাহায্য করার মত কিছু খুঁজে পাবে না। এরপর সে সামনের দিকে নজর ফেরাবে। সেখানে দেখবে কেবল দোযখের আগুন আর আগুন। সুতরাং যে পারে সে যেন দোযখের আগুন থেকে নিজেকে রক্ষা করে; সেই রক্ষা সামান্য এক টুকরো খেজুর আল্লাহর রাস্তায় দান করে হলেও। কেউ যদি একটুকু করতেও না পারে, সে যেন ভালো কথার দ্বারা নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে। কেননা, ভালো কাজকে পুরস্কৃত করা হবে এবং সেই প্রতিদানকে দশ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে।
৯ হিজরীতে সিরিয়ার তাবুকে রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেন ঃ
নিশ্চয় সবথেকে সুষ্পষ্ট বর্ণনাগ্রন্থ হলো আল্লাহর কিতাব। আর সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয় হলো অনুগ্রহপূর্ণ বচন। সর্বোত্তম ধর্ম হলো ইবরাহীম (আ.) এর ধর্ম। আমলী জিন্দেগীর সবকৃষ্ট নমুনা হলো রাসূলুল্লাহ (সা.) এর জীবনাচরণ। সর্বোত্তম কথা হলো আল্লাহর পথে আহবান। সবথেকে সুন্দর বর্ণনা হলো কুরআন। আর সর্বোত্তম বিষয় হলো এমন বিষয় যা ভালোভাবে সম্পাদিত হয়েছে। ধর্মের মাঝে সবথেকে নিকৃষ্ট কাজ হলো নতুন-অনুপ্রবেশ-বিদআত। সর্বোত্তম পথ হলো নব-রাসূলগণের পথ। সর্বোত্তম মৃত্যু হলো শহীদী মৃত্যু। সর্বনিকৃষ্ট অন্ধত্ব/অজ্ঞতা হলো সঠিক পথ থেকে বিচ্যুতি। সর্বোত্তম কাজ হলো সেই কাজ যা উপকার করে। সর্বোত্তম উপদেশ হলো সে উপদেশ যে উপদেশকে গ্রহণ করা হয়। সর্বনিকৃষ্ট মুর্খতা হলো অন্তরের অজ্ঞানতা। প্রাচুর্য্য ও প্রলুদ্ধকর পরিমাণের চেয়ে স্বল্প, পর্যাপ্ত পরিমাণই ভাল। সর্বনিকৃষ্ট ক্ষমা প্রার্থনা হল সেই ক্ষমা প্রার্থনা যা মৃত্যুর সময় করা হয়। আর সবথেকে খারাপ অনুশোচনা হলো ঐ অনুশোচনা যা কিয়ামতের দিন করা হবে।
এভাবে রাসূল (সা.) ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্যে এবং সর্বযুগের সর্বস্থানের মানুষের জন্য মানব জীবনের উদ্দেশ্য কি তা ব্যক্ত করেছেন। কোন বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ এবং কোনগুলো গুরুত্বপূর্ণ নয় তাও তিনি বলে দিয়েছেন। হিন্দুত্ববাদ, বুদ্ধবাদ এবং প্রচলিত খৃষ্টবাদ মুক্তির জন্যে বৈরাগ্যবাদ ও আত্ম-বিসর্জনের পথ অবলম্বন করেছে। কিন্তু নবীজী (সা.) বৈরাগ্যবাদকে প্রত্যাখান করেছেন। তিনি চমৎকারভাবে ভারসাম্য স্থাপন করেছেন। জীবনের বৈধ আনন্দকে পরিত্যাগ করেননি। নবীজী (সা.) এর অত্যন্ত পরিশীলিত ও মার্জিত কৌতুকবোধও ছিল। তিনি মাঝে মাঝে শিশু-কিশোরদের সাথেও খেলায় অংশ নিতেন। কিন্তু কখনও এ বিষয়ে জোর দিতে ভুলেন নি যে, বিশ্বাসী ব্যক্তির কাছে ইহজাগতিক আনন্দ সবসময়ই পরকালীন আনন্দের অধীন। তিনি প্রায়ই তাঁর সহচরদের বলতেন, ‘‘দেখ, আমি যা দেখেছি (পরকালীন জীবনের যে দৃশ্য) যদি তোমরা তা দেখতে, তবে নিশ্চয় তোমরা খুবই কম হাসতে আর কাঁদতে অনেক বেশি।
নবীজী (সা.) এর প্রার্থনা এবং আহাজারি প্রমাণ করে তাঁর কাছে জীবনের পরম লক্ষ্য ছিল আল্লাহর প্রতি দৃষ্টান্তবিহীন প্রাণ-নিবেদন। দুনিয়ার সুখ-দুঃখের বিষয়-আশয়গুলো তাঁর জীবনের লক্ষ্য ছিল না। রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে তিনি প্রার্থনা করতেন -
হে আল্লাহ! আমাকে পুনরুত্থান দিবসের কষ্ট থেকে রক্ষা কর। হে আল্লাহ! আমি তোমার নামেই মৃত্যুবরণ করি এবং তোমার নামেই জীবন ফিরে পাই।
বিষয়: বিবিধ
১৬৭০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন