মরিয়ম জামিলার লেখা থেকে মরিয়াম জামিলাকে জানি ..... (১)
লিখেছেন লিখেছেন সাওগাত ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ১২:২২:০৭ রাত
আমার জীবনে রাসূল (সা.) এর প্রভাব
একেবারে ছোটবেলা থেকেই আমার জীবনে ধর্মের প্রভাব ছিল। এমনকি আমি সেই কৈশোর ও প্রাক-যুবা সময়েও ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত ছিলাম। অবশ্য তখনকার দিনের প্রতিষ্ঠিত ইহুদী সেনেগগ ও খৃষ্টান চার্চের প্রতি আমার মোহ ছিল না এবং ঐ সময় আমি নাস্তিক্যবাদে বিশ্বাসী ছিলাম। তারপরও আমার জীবন ধর্মীয় আবেগতাড়িত ছিল। ‘আমি ধর্মীয় আবেগ-তাড়িত ছিলাম’ এই অর্থে যে, আমি সর্বদাই পরম সত্যের অনুসন্ধানে রত ছিলাম- যে সত্য আমাকে জীবনের অর্থ-দিক-নির্দেশনা-উদ্দেশ্য বলে দিবে। তবে আমি ধর্মীয় প্রতিবেশে লালিত-পালিত হই নি। আমার পরিবার এবং পরিবারের পরিচিতজনেরা সকলেই আমেরিকান জীবনধারাকে নিজেদের জীবনধারা বানিয়ে নিয়েছিলেন। তারা ইহুদী ছিলেনÑ তবে এটা কেবল নামেই। তাঁরা ছিলেন খুবই মার্জিত, সম্মানী, বুদ্ধিদৃপ্ত, উদারমনা এবং সংস্কৃতবান মানুষ। তাঁরা মৌলিক নৈতিক বিধি-বিধানগুলোতে বিশ্বাস করতেন, সেগুলোকে মেনে চলতেন। তবে তাঁরা স্বীকার করতেন না যে, নৈতিক আচরণ কোন ধর্ম বা ধর্মীয় তত্তের উপর ভিত্তিশীল। এমনকি তাঁরা ‘নৈতিকতা ও ধর্ম’ এ দু’য়ের মাঝে যে সম্পর্ক রয়েছে - সেটিও অনুধাবন করতে পারতেন না। আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন পুরস্কার অথবা মৃত্যুর পর শাস্তির বিশ্বাসকে তাঁরা মনে করতেন পুরনো দিনের কুসংস্কারমূলক বিশ্বাস। একই ভাবে কোন অতি-মানবীয় সত্তা মানবীয় বিষয়াদিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে কিংবা ব্যক্তির আহবানে সাড়া দিতে পারে- তা তারা বিশ্বাস করতেন না। ওহী এবং নবীর উপর বিশ্বাসকেও তারা ভ্রুকুটি করতেন।
সেই সময় সমাজের প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধগুলো ছিলো সুখ, আনন্দ এবং বিনোদন তালাশ করা। আমি সবকিছু বোঝা এবং অনুধাবন করার মত বয়সে পৌঁছা মাত্রই এ সব প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়েছিলাম। এগুলোর পরিবর্তে আমি চেয়েছি চিরস্থায়ী একটা কিছুকে। সমাজে প্রতিষ্ঠিত এই মূল্যবোধে ‘পরম সত্তা’ সংক্রান্ত প্রশ্নের কোন উত্তর নেই। তাই এ সমাজে এই প্রশ্নগুলোই এড়িয়ে চলতে হয় এবং কেবল ‘যতটা বেশি পারা যায় ভোগ করে নাও’ এ আদর্শে জীবন পরিচালনা করতে হয়। এ জীবন সামায়িকভাবে ক্ষণস্থায়ী আনন্দ নিয়ে আসে। সুঠাম দেহ, মুখরোচক খাবার, আয়েশী জীবনযাপন, আপনজনের ভালোবাসা, বন্ধুদের সংসঙ্গ এবং নানাজাতের বিানোদন এবং মজার মজার বিষয়গুলো পাওয়া যায়। এগুলো আমেরিকান সমাজে খুব বেশি মাত্রায় সহজলভ্যও। কেন আমাদের জন্ম, কে আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য কী, কেন আমরা মৃত্যুবরণ করব এবং মৃত্যুর পর আমাদের কি হবেÑ এ প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যেতে হয়। এ প্রশ্নগুলো মনের কোণে দিলেই সব শেষ! হতাশা, দুঃখবাদ এবং ব্যর্থতা ভর করবে।
আমেরিকার বাইরের লোকজন প্রায়ই আমেরিকার প্রশংসা করে থাকে। তাদের মতে আমেরিকায় সবকিছুই গতিশীল- এমনকি ভালোবাসা, প্রার্থনা-উপসনারও পরিবর্তন হয়। এসব প্রগতিবাদীদের মতে আমেরিকা মানেই প্রগতি। কেননা একমাত্র আমেরিকাতেই কোনকিছুই স্থবির-স্থির নয়, কোনকিছুই অনড় সামাজিক, ধমীয় অথবা দার্শনিক মতাদর্শ দ্বারা বাধাগ্রস্ত নয়। সেহেতু আমেরিকা সৃজনশীল পরিবর্তনকে লালন করতে সক্ষম। আমি কখনও পরিবর্তন-পূজার সমর্থক ছিলাম না। আমার কাছে জীবনের স্থায়িত্বের অনুপস্থিতি এবং স্থিরতাহীনতা জীবনেরই মূল্যকেই অস্বীকার করা। এবং তা জীবনকে তুচ্ছ ও বাহ্যকতাসর্বস্ব করে তোলে। সবসময়ই আমার অনুসন্ধান ছিল পরমসত্ত্বাকে কেন্দ্র করে।
ইহুদীবাদ কিংবা খৃষ্টবাদ কোনটাই আমাকে সন্তুষ্ট করতে পারে নি। আমি সেনেগগের সংকীর্ণতা ও গোষ্ঠীবাদ এর কারণে বিরক্ত ছিলাম। ফিলিস্তিনের স্বদেশী আরবদের বিরুদ্ধে জায়নবাদীদের নিষ্ঠুরতা আমাকে আতংকিত করে তুলতো। খৃষ্টবাদের জটিল, দুর্বোধ্য ধর্মত্তত্ব এবং নৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে চার্চের সীমাহীন ছাড়-দেওয়ার সাথেও আমি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারিনি। সেনেগগ এবং চার্চ উভয়ই, আমি যেমনটি তাদেরকে পেয়েছি, দুর্নীতি ও কপটতায় ভরা। ইহুদীবাদের যে শিক্ষা আমি লাভ করেছিলাম, তাতে ধর্মের প্রতি, বিশেষভাবে ইহুদীবাদের, প্রতি আগ্রহী হওয়াই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু আমি তা হইনি।
আমি দেখলাম যে, আরবদের সম্পর্কে জানতে হলে আমাকে ইসলাম এবং আরবের সভ্যতা সম্পর্কে জানতে হবে। এক পর্যায়ে আমি জানলাম যে, আরবরা ইসলামকে বিখ্যাত করেনি; বরং ইসলামই আরবদেরকে জগতে বড়ো করেছে। তখনই আমি এই ধর্ম সম্পর্কে বেশি বেশি জানতে আগ্রহী হই। বাইবেলের চেয়ে কুরআন আমার কাছে শ্রেষ্ঠতর মনে হতো। করণ, কুরআনের শিক্ষা সর্বব্যাপক, সর্বজনীন। আর বাইবেলের শিক্ষা সংকীর্ণ এবং ইহুদী জাতীয়তাবাদের মাঝে সীমাবদ্ধ। আর সার্বজনীনতা উন্নততর নৈতিকতা জন্ম দেয় এবং এই নৈতিকতাই সংশ্লিষ্ট ধর্ম ও সভ্যতার ঐতিহাসিক বিকাশকে অনেক বেশি প্রভাবিত করে।
আমি পরম-সত্তার অনুসন্ধানে লিপ্ত ছিলাম এবং সেই ইসলামে আমার সেই অনুসন্ধিৎসার প্ররিতৃপ্তি লাভ ঘটে। ইসলামেই আমি খুঁজে পেলাম যা-কিছু সত্য, যা-কিছু ভাল, যা-কিছু সুন্দর এবং যা-কিছু মানুষের জীবনের দিক-নির্দেশনা ও তৎপর্য তুলে ধরে। অন্য ধর্মে সত্য বিকৃত, সংকীর্ণায়িত ও খ-ায়িত। কেউ আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারে আমি কিভাবে এটা জানতে পারলাম। আমি উত্তরে বলবো- আমার ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতাই আমার এ বিশ্বাসে উপনীত হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এই কারণে ইসলামে আমার বিশ্বাস স্থির, নিশ্চল কিন্তু অত্যন্ত গভীর।
আরো অনেক ধর্ম-পরিবর্তনকারীদের মত আমি রাসূল (সা.) কে রাতে স্বপ্নে দেখি নি। কখনই কোন রহস্যময় কিছু আমার গোচরীভুত হয় নি এবং আমার ধর্ম-পরিবর্তনের সময়ে নাটকীয় কোন কিছুই ঘটে নি। আমি বিশ্বাস করি, আন্তরের দিক থেকে, এবং স্বভাবের দিক থেকে আমি সর্বদাই মুসলিম ছিলাম। এমনকি ঐ সময়ও, যখন আমি জানতাম না যে ইসলাম নামে কোন ধর্ম রয়েছে। তাই আমার ধর্ম-পরিবর্তনটা ছিল আনুষ্ঠানিতকামাত্র। এর জন্যে আমার ভেতরগত কোন পরিবর্তন সাধনেরই দরকার হয় নি; বরং আমি বহুবছর ধরে যার প্রত্যাশী ছিলাম, তারই দাফতরিক পরিচিতি লাভ মাত্র।
প্রাসঙ্গিক হাদীসের জ্ঞান ব্যতীত কুরআনকে যথাযথভাবে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। কুরআন পাঠ শুরু করা মাত্রই আমি এটা অনুধাবন করতে পেরেছিলাম। কেননা, যার উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, তিনি ব্যতীত আর কে কুরআনের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে যোগ্যতর? কুরআন কেবল ইসলাম-নির্দেশিত জীবনের এক সাধারণ রূপরেখা প্রদান করে। কিন্তু হাদীস সেই রূপরেখার শূন্যস্থানগুলো পুংখানুপুঙখরূপে পূরণ করে। অনেকেই কুরআনের এই চুড়ান্ত ব্যাখ্যাতাকে অর্থাৎ হাদীসেক অস্বীকার করে। তাদের উদ্দেশ্যে নি¤েœাক্ত হাদীসটি উল্লেখ করা হলো।
রাসূল (সা.) এর স্ত্রী হযরত আয়েশাকে (রাযি.) রাসূল (সা.) এর জীবন ও আচরণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উত্তরে বলেছিলেন : কুরআনই হলো তাঁর আচরণ। অন্য কথায়, তাঁর দৈনন্দিন জীবনাচরণ ছিল কুরআনের প্রকৃত শিক্ষার প্রতিচ্ছবি। কুরাআন যে সকল গুণাবলীর বর্ণনা করেছে, সে সকল গুণাবলীর বাহ্যিক প্রকাশ বা দৃশ্যমান রূপ হলেন রাসূল (সা.)। রাসূলের জীবনীর বর্ণনাসমূহতে কিশোর বালক, পিতা, প্রতিবেশি, বন্ধু, যোদ্ধা, সেনাপ্রধান, বিজেতা, আইন-প্রণেতা, বিচারক, শাসক এবং সর্বোপরি আল্লার অনুগত বান্দা হিসেবে রাসূলকে (সা.) তুলে ধরা হয়েছে। এ বর্ণনাগুলো আল্লাহর কিতাব তথা কুরআনের তাত্ত্বিক বর্ণনার ব্যবহারিক দৃষ্টান্ত বা উদাহরণ। (সূত্র : ইসলাম ও পশ্চিমা সমাজ) (চলবে .....)
বিষয়: বিবিধ
১২৬৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন