বেদুঈন....
লিখেছেন লিখেছেন বেদুঈন ২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৫:৩৫:৫৫ বিকাল
১ লা সেপ্টেম্বর ২০১৩, রবিবার ভোরে মুরুর বুকে অবস্থিত দাম্মাম বিমান বন্দরে নেমে ট্যাক্সি ধরে চলে আসলাম বাদশা ফাহদ পেট্রোলিয়াম ও মিনারেলস বিশ্ববিদ্যালয়ে। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক এবং এখানকার গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট সাইফুল ভাই আমাকে ক্যাম্পাসে রিসিভ করে তার রুমে থাকার ব্যবস্থা করে আমাকে নিয়ে ক্যাফেতে খেতে যান। খাওয়া দাওয়া শেষে আমি একটা লম্বা ঘুম দিলাম। ঘুম থেকে উঠে একাডেমিক এবং হাউসিং সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কাজে সারাদিন-ই এই ভবন থেকে সেই ভবনে ছোটাছূটি শেষে আবার সাইফুল ভাইয়ের রুমেই বিশ্রাম নিলাম। বাইরে প্রচন্ড গরম, তাই আমি চেষ্টা করতাম (এখনো করি) যত দ্রুত সম্ভব কোন একটা ভবনের ভেতর ঢুকে পড়ি, কারন সব গুলো বিল্ডিং-ই সেন্ট্রালি এয়ার কন্ডিশনড।
এই মরুর দেশে যে জিনিসটি আমার সব থেকে বেশি পছন্দ হয়েছে, এখানে সব ওয়াক্তের নামায-ই একদম ওয়াক্তের শুরুর সময়ে পড়ে। এখানকার ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী সবাই চেষ্টা করেন শুরুর জামায়াতে নামায আদায় করতে কিন্তু কেউ কোন কারনে প্রথম জামায়াত মিস করলেও তার জামায়াত মিস করার সম্ভাবনা খুব-ই কম। একের পর এক জামায়াত হতেই থাকে। দুই জন হলেই তারা জামায়াত শুরু করে দেন তৃতীয় ব্যক্তি এসে দ্বিতীয় জনের পিঠে হাত ছোঁয়ালেই দ্বিতীয় জন পিছিয়ে চলে আসেন এবং এটাই নিয়ম। মজার ব্যাপার হল এখানকার প্রত্যেকটি মানুষই দ্বীন সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারনা রাখেন। আমাদের দেশের খুব কম মানুষ-ই হয়তোবা এটা জানেন। অবশ্য এটা না জানার-ই কথা, মসজিদে দ্বিতীয় জামায়াত নিয়েই অনেক জায়গা-ই ব্যপক আপত্তি দেখা যায়।
একদিন আমি তৃতীয় কিংবা চতুর্থ জামায়াতে নামাজ শেষে একজন এরাবিয়ানকে দেখলাম এদিক ওদিক তাকাচ্ছে, একটু পরে আমাকে এসে আমি ফরজ পড়েছি কিনা ভদ্রভাবে জানতে চেয়েছেন। আমি হ্যাঁ বললে আমার নামায শেষ হয়ে যাওয়ায় আমাকে অভিনন্দন সুচক ইঙ্গিত দিয়ে তার জামায়াতের জন্য টেনশন করতে লাগল। আমি দূর থেকে তাকে কিছুটা ফলো করতে লাগলাম, সে কি করে এটা দেখার জন্যে। সে প্রায় ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে একজনকে পেয়ে জামায়াতের সহিত নামাজ আদায় করেছেন। হয়তো কাউকে না পেলে সে আরো অপেক্ষা করতেন এবং জামায়াত মিস না করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেন।
অবাক করার মত বিষয় হল, ইমাম সাহেব সাধারনত কোরানের লম্বা লম্বা সুরা গুলোর অংশ বিশেষ পড়ে থাকেন কিন্তু তিনি কোথাও ভুল করলে সংশোধনের লোকের অভাব হয় না, তার মানে সবাই খুব মনোযোগের সহিত নামাজ পড়েন এবং কোরানের অনেক সুরাই তাদের মুখস্ত।
আরো কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য করার মত, ফরজ নামাজের পরে অনেকেই কোরান পড়ে তারপর সুন্নাত নামাজ পড়েন। তবে এখানকার কোন মসজিদেই ফরজ নামাজের পরে ইমামসহ কেউ হাত তুলে মুনাজাত করেন না। অনেককেই তার নির্দিষ্ট ওয়াক্তের সব নামাজ শেষে হাত তুলে মুনাজাত করেন। মসজিদ গুলোতে আছে পবিত্র কোরানের বিশাল ভান্ডার, উন্নত বই পুস্তকের সমাহার, আছে খাওয়ার পানির ব্যবস্থা। কেউ কেউ আবার তাদের একাডেমিক পড়াশোনাও করেন সেখানে বসে।
একদিন হঠাত করে দেখি মসজিদের গেইটে এক বক্স ফল রাখা, সারাজীবন শুকনা আর পুরানো খেজুর খাওয়া আমি বুঝতেই পারি নাই এগুলো সদ্য গাছ থেকে পেরে আনা কাঁচা-পাকা খেজুর। একটা খাওয়া পর মনে হল এমন সুস্বাদু ফল আমি জীবনেও খাইনি। একটার পর একটা খেতে থাকলাম। খাওয়া শেষে হাতে করেও অনেক গুলা নিয়েও এসেছিলাম। প্রায় দুইদিন পর্যন্ত সেখান থেকে অনেক মুসল্লি-ই খেজুর খেয়েছেন। তবে আমি কোন ওয়াক্তেই মিস করতাম না।
facebook note
বিষয়: বিবিধ
১০৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন