প্রাইড প্যারেড? -ইটস নট প্রাইড, ইটস আ ডিসগ্রেস!
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০৪ জুলাই, ২০১৯, ০৯:০৯:১৮ সকাল
আজকাল জোর গলায় বললে মিথ্যেও নাকি সত্যি হয়ে যায়, অন্ততঃ সে রকম মনে হচ্ছে!
এই যে প্যারেড হয়ে গেল গত রবিবারে, নাম আবার প্রাইড প্যারেড! নাথিং টু বি প্রাউড অফ! কেউ একজন মুখ দিয়ে খাবার খায়- সেটা স্বাভাবিক! কিন্তু কেউ যখন তা অন্যভাবে কিম্বা স্যালাইন লাগিয়ে খাবারের প্রয়োজন মিটাবে- তাতে কি প্রাউড’ হওয়ার আদৌ কিছু আছে? এমন অস্বাভাবিক কর্মে হতবাক হওয়ার মত বিষয় থাকলেও, প্রাউড হওয়ার কিছি আদৌ নেই।
এই প্যারেড সমকামীদেরকে ঢাক ঢোল পিটিয়ে স্বর্গে তুলে ধরার পরিকল্পনায় করা ! সমকামীদেরকে এক অর্থে ইংরেজিতে বলে - Sodomite! যার মূল শব্দ হল Sodomy; এই Sodomy শব্দটি এসেছে সদোম (sodom) নামের এক শহর থেকে! আসুন একটু ইতিহাসের পেছনে যাওয়া যাক !
সদোম এবং গোমোরাহ (Sodom & Gommorah)- দুটো প্রাচীন শহরের নাম। বাইবেলের জেনেসিস অধ্যায়ে, হিব্রু বাইবেল এবং অন্যত্র বর্নিত হয়েছে, প্রাচীন কালের দুই বিখ্যাত শহর । শহর দুটো জর্দান সমভুমির (Jordan river plain) পাঁচটি বিখ্যাত শহরের অন্যতম।
জর্দান নদীর অব্বাহিকার সমভূমি- অতি উর্বর; সবুজ ঘাস আচ্ছাদিত অতি মনোরম এলাকা। পশুচারণের জন্য বিখ্যাত; কোন ভালকাজের জন্য বাইবেলে এর নামে এসেছে তা নয়; মূলতঃ উন্মুক্ত যৌনতা আর সমকামীতার শাস্তি হিসেবে “ডিভাইন পানিশমেন্ট নেমে এসেছিল এ দুই শহরের উপর; বাইবেল এর বর্ননা অনুযায়ী আগুন আর পাথরে পুরো ধ্বংস হয়ে যায় শহর। অন্যত্র বলা হয়েছে, ভূমিকম্পে পুরো ঊল্টিয়ে দেয়া হয় এ শহর দুটোকে, ঘৃনিত পাপের শাস্তি হিসেবে।
কি এই ঘৃনিত পাপ? এর নামই সমকামীতা! সদোম নামটিও সেই পাপের সাথে জুড়ে গেছে, sodomy গুগল করুন, জেনে যাবেন। সদোম ও গোমরাহ- সমকামীতার পাপ এর সাথে এ নামদুটোও ঘৃণার সাথে উচ্চারিত হয় ‘ধর্মে আস্থাশীলদের কাছে। ধার্মিক ইহুদী ও খৃষ্টানদের কাছেও হাজার বছর ধরে চরম পাপ এর সমার্থক এবং পাপের ইঙ্গিতবহ এ নাম দুটো। মুসলিমদের কাছেও!
পথহারা জাতিকে দিক-নির্দেশনা দিতেই নবী রাসূল এর আবির্ভাব হয়েছে যুগেযুগে। বাইবেলে বর্নিত অভিশপ্ত এ জাতির নবী হয়ে এসেছিলেন লুত (আঃ) । তাঁর কওম এ নোংরা অপকর্মে লিপ্ত হয়েছিল; লুত (আঃ) তাদেরকে এ পাপের রাস্তা থেকে সরে আসতে বলেছিলেন, তারা কর্নপাত করল না! তাই তাদেরকে শাস্তি দিতে আল্লাহ্ পাক এর অমোঘ শাস্তি নেমে এসেছিল এ শহরের উপর! কুরআনও বর্ননা করেছে এ কাহিনী, ২৬ নম্বর সূরায়। সমকামীতা এক ঘৃনিত অসভ্যতা, যুগ যুগ ধরে এমনটাই বিবেচনা করে এসেছে মানুষ।
যৌনতার ইতিহাসে সমকামীতা অনেক ক্ষেত্রেই সহনীয় পর্যায়ে ছিল, কিম্বা রাজনৈতিক কারনে ‘সহ্য করা হত! এইতো কিছুদিন আগেও আমেরিকান সেনাবাহিনীতে ‘ডোন্ট আস্ক – ডোন্ট টেল’ পলিসি ছিল। রোমান সেনাবাহিনীতে এমনকি আলেকজান্ডার এর নামেও এমন ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। আফ্রিকার উপজাতিদের মধ্যে- এমন কি শাকা জুলুও এমন বিষয় তার বাহিনীতে চলতে দিয়েছে। তবে তাদের ক্ষেত্রে ঠিক সদোমি নয়, ‘ইন্টারক্রুরাল সেক্স’ এর উল্লেখ রয়েছে। ত্বে এগুলো অফিসিয়ালি নয়, ছিল – না থাকার মত। মানুষ জানত, এদের সংখ্যা ছিল অল্প; এবং গোপনে গোপনে চলত! কিন্তু ইতিহাসের আরেক গ্রেট- চিংঙ্গিজ খান – যার বাহিনী হত্যা লুন্ঠন ধবংসে সাড়া দুনিয়ার ত্রাস ছিল, তিনি আবার তার নিজের সেনা বাহিনীতে কেউ সমকামীতার মত অপকর্মে ধরা পড়লে, তার শাস্তি নিশ্চিত করতেন- মৃত্যুদন্ড দিয়ে।
মানুষের অনেক সিদ্ধান্তই অনেক সময় মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। যুগে যুগে এ অপকর্মে অভিযুক্ত অনেকেই পাশবিক অত্যাচারের সম্মুখীন হয়েছে। তাদেরকে হীন চোখে দেখা হত, অনেক সময় ক্ষিপ্ত জনতা বা ‘মব’ এর হাতে এদের নির্যাতন, হত্যা – এগুলো ছিল খুব স্বাভাবিক ঘটনা। সমকামীরা এভাবে অনেক নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে, কথাটা মিথ্যে নয়।
কারনঃ
শারীরিকভাবে সুস্থ নয়, বিকৃত অঙ্গের মানুষ এ কাজে জড়িত হতে পারে; ক্রমোজমাল এবারেশান (aberation) বা বংশগতিয় ক্রুটির কারনে যেমন মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধী মানুষের জন্ম হয়, শারীরিক ক্রুটিও একই ভাবে হতে পারে। এমন মানুষের জননাঙ্গের গঠন ‘ কমপ্লিট’ নয়। উপমহাদেশে ‘ হিজড়া বলে কথিতদের একটা বড় অংশ এ ক্যাটেগরিতে পরে। জননাংগের গঠন বিকৃত হলেও শরীর এর অন্য আংগ প্রত্যংগ স্বাভাবিক, এমন কি মানসিক কাম- ক্রোধ লালসা- নেই তাতো নয়। মহাভারতে সাধুর অভিশাপে পঞ্চপাণ্ডবদের এক ভাই- অর্জুন এর হিজড়া হিসেবে দীর্ঘদিন জীবনযাপন সর্বজনবিদিত, এ কারনে হিজড়াদের প্রতি খানিকটা শ্রদ্ধার অনুভূতি রয়েছে উপমহাদেশে। পুরুষদের সাথে নয়, মহিলাদের সাথে কিম্বা সম শ্রেণীর মানুষদের সাথেই তাদের সখ্যতা হয় বেশী। আবার অনেকেই সমগোত্রীয়দের বাইরেও বন্ধুত্ব বা যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়। তবে যৌন-অনাচার এর কারনে সাধারনভাবে এদের প্রতি সমাজে একটা ঘৃণার অনুভূতিও আছে, সেটা মিথ্যে নয়।
বাঁকিদের একটা গ্রুপের সমস্যা দেহে নয়, মনে। মানসিক কারনেই – দেহ তাদের পুরুষের হোক বা মেয়েদের হোক, বিপরীত মেরুতে আকর্ষিত না হয়ে, তারা সম-মেরুতে আকর্ষিত হয়, সমলিঙ্গের(same sex )প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ করে। এমন অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, ত্বে অধিকাংশ ক্ষেত্রে তা সাময়িক, অনেক সময়ে সেটা আবার চলেও যায়। অনেকে আবার ‘ তাড়নার কারনে – যখন যেখানে সুবিধা – সেখানে তেমন হয়ে যায়; এটাও দেখা যায়। দ্বি- চারী বা বাই সেক্সুয়াল- এমন শব্দও চালু হয়েছে – এখন।
এ সমস্যাটা যে মূলতঃ মানসিক তা নিচের আলোচনা থেকে পরিষ্কার হবে। এ গোত্রের একটা শ্রেণীর কথা বলা যাক। তাদের শরীরের গঠন পুরুষের। অংগ প্রত্যঙ্গ পুরুষের- কিন্তু বিচিত্র কারনে তারা নিজেদেরকে মহিলাদের সমগোত্রীয় মনে করে। মহিলাদের মত পোষাক বা কেশ বিন্যাস, মেক- আপ- আলতা- বা নেইল পলিস- চোখে কাজল এমনকি গহনা পড়তেও তারা পছন্দ করে। উল্টো দিকে কিছু মানুষ রয়েছে, শারীরবৃত্তিক দিক থেকে নারী- হলেও তারা মানসিক ভাবে পুরুষদের মত ‘মাচো; স্বভাবের অনুকরণ করে। (হতে পারে শৈশবে তার রোল মডেল ছিল কোন আদর্শ নারী বা পুরুষ, সেখান থেকেই আস্তে আস্তে এ মনো-জটিলতার সৃষ্টি! গবেষকদের নানা অভিমত রয়েছে!) আমার নিজের চোখে দেখা এমন ক’জন মানুষ ছিল, তাদের সাথে আমার পরিচয় ছিল! খুব কাছ থেকে দেখা! আজ তাদের কাহিনী বলব! পাঠক নিজেই সিদ্ধান্ত নেবেন – এ ঘটনার পেছনে তাদের শারীরিক- মানসিক বা সমাজ ব্যাবস্থার কতখানি হাত রয়েছে !
মোকসেদ নামে একজনকে চিনতাম; আমার নানার গ্রামে বাড়ি।
তাল গাছ তলায় বিয়োলো গাই, সে সম্পর্কে তালতো ভাই- এর মত গ্রাম সম্পর্কে তাকে মামা বলতাম। তাদের বাড়ির পাশে কূল এর একটা গাছ ছিল, অনেকে ঢিল ছুঁড়ত সে গাছে কূল পাকলে । সে বের হয়ে এসে –‘মহিলাদের ভাষায় দুষ্ট ছেলেদের গালাগাল করত! আমরা হেসে কুটিকুটি হতাম। অনেকে তার এই গালাগাল শুনার জন্যই গাছে ঢিল ছুঁড়ত; কূল এর জন্য নয়। গরমের দিনে লুঙ্গি পরে শরীরের উর্ধাংগ উন্মুক্ত- করেই গ্রামের লোকজন চলাফেরা করে, অনেকের ঘাড়ে বা কোমরে বাঁধা থাকে লাল গামছা। গ্রামের ভেতরে সেটা খুব স্বাভাবিক দৃশ্য! মোকসেদও লুঙ্গি পরে থাকত। কিন্তু কি এক বিচিত্র কারণে সে তার গামছাটা ঘাড়ের উপর দিয়ে ঘুরিয়া বুক ঢেকে রাখত, অনেকটা মেয়েদের ওড়না পড়ার ভঙ্গিতে। চুলে সিঁথি করত মেয়েদের মত, মাথার মধ্যিখানে দু’ভাগ করে। কাজী নজরুলের বাবড়ির মতই ঘন চুল ছিল তার। বাচ্চাদের সাথে তার খুব সখ্যতা, আমাদের বেশ আদর করত। তার আরো খাতির ছিল গ্রামের তরুণী, বধুদের সাথে। তাকে গ্রামের অন্য তরুণদের মত হাডুডু খেলা বা তাস এর আড্ডায় দেখা যেত না, সে হাতে সূচ সুতা নিয়ে তরুণীদের সাথে বসে রূমাল সেলাই করত, যার কোনায় লেখা থাকত ‘ভুল না আমায়! কাকে সে না ভোলার আকূতি করছে, প্রাইমারী স্কুলের ছাত্র হিসেবে আমাদের তা জানার কথা নয়! তবে অনেকেই তাকে ‘মেয়ে মোকসেদ বলে ক্ষ্যাপাতো। গ্রামে এমন কথাবার্তা মানহানিকর, কিন্তু মোকসেদ তা কেয়ার করত বলে মনে হয়না!
নানাবাড়ি থেকে অনেক সময় কুল, আমের আচার এমন সব মহার্ঘ আসত আমাদের বাড়িতে আম্মার জন্য; অনেক সময় এই মোকসেদই তা বয়ে আনত, মামাদেরকে না পেয়ে নানী তার হাতেই এগুলো পাঠিয়ে দিতেন। আমি দেখতাম আমাদের রান্না ঘরে বসেই মকসেদ তার পান- ভোজন সারছে, মা চাচীদের সাথে কথা বলছে, মহিলাদের মতই হাত নেড়ে নেড়ে, ঘাড় দুলিয়ে! মূলতঃ তার জগত ছিল মহিলামহলে; পুরুষদের মধ্যে তাকে পাওয়া যেত না। পান খেয়ে মুখ লাল করে বিদায় হত সে।
একদিন দেখি –সে ডাবল লুঙ্গি পড়েছে! তার সমবয়সীরা তাকে নিয়ে মশকরা করছে। শাড়ির নীচে মহিলারা যেমন পেটিকোট পরে, সেও সেটাই নকল করেছে, জানা গেল! সে মহিলাদের মত চলতে – খেতে পড়তে- মেক আপ করতে পছন্দ করত। এ অঞ্চলে এখনও “মেয়ে – মোকসেদ’ নাম বললে সবাই এক বাক্যেই চিনবে তাকে।
অনেক বছর পেরিয়ে গেছে! তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। এরশাদ ভ্যাকেশনে বাড়ি যাচ্ছি। নানাবাড়ির পাশে এসে থেমেছি; একজন মানুষকে দেখে থমকে গেলাম, কোলে বাচ্চা! দাড়ি গোঁফের আড়ালে চেহারাটা ঢাকা পরে গেছে, তবে কেন যেন চেহারাটা চেনা মনে হল।
মামা, কেমন আছ? বাবারে – কদ্দিন পরে দেখলাম! তার মুখের হাসিটা নজরে এলো এবার। ‘মোকসেদ মামা?
এবারে তার হাসি একান ওকান হল। চিনতে পেরেছ তাহলে?
‘কোলে কে?
‘তোমার ভাই, বাপু! খুব জ্বালায় তোমার মামীকে! তাই বাইরে নিয়ে আসি। মামী? মোকসেদ মামা বিয়ে করেছে তাহলে!
হয়তো সত্যিই বাচ্চাটা দুষ্ট। আর ছোট বাচ্চাদের যে সে খুব পছন্দ করত তাতো আমি জানিই!
সে বিয়ে করেছে, বাচ্চা কাচ্চা হয়েছে। আর দশজন পুরুষের মতই ঘর সংসার করছে। এখন আর সেই তরুণ বয়সের ‘ওড়না পেঁচানো স্বভাব নেই, তবে কথাবার্তা বললে, এখনও নারী – সুলভ শব্দ দুয়েকটা মুখ ফস্কে বেরিয়ে আসে। দীর্ঘদিনের অভ্যেস।
আজ যদি সে কানাডায় থাকত, তাকে আর নিজের জন্ম দেয়া বাচ্চার মুখ দেখতে হত না। হয়তো এলজিবিটিকিউ এর চক্করে সে কোন সমগোত্রীয়ের সাথে যুক্ত হত, হয়তো প্রাইড প্যারেডেও নিয়মিত দেখা যেত তাকে, তার মৃত্যুতে শেষ হয়ে যেত মোকসেদ অধ্যায়ের!কিম্বা ব্রুস আর্থারের মত কোন ম্যানিয়াকের পাল্লায় পরে যেত! ভাগ্যিস, এলজিবিটিকিউ এর সম্মিলিত প্রেমরসের আস্বাদ তাকে পেতে হয়নি।
২য় জন ফজর আলী! বাংলাদেশের প্রত্যান্ত অঞ্চলেও কালেভদ্রে যাত্রাপালা – ঘেঁটু পুত্র কমলা ধাঁচের অভিনয় প্রদর্শিত হত, সে যুগের বিনোদনে মুভি বা চলচ্চিত্র ছিল না। লাইভ এ যাত্রাপালায় অনেক ক্ষেত্রেই মহিলা চরিত্রে এ সব পুরুষরা অভিনয় করতেন, তাদের কপালেও হিজড়া নামটা জুটে যেত। যদিও তারা শারীরিক বা মানসিকভাবে সক্ষম, সুস্থ পুরুষ মানুষ। এমন একজন ছিল ফজর মামা। ইনিও মামার দেশের লোক- হিসেবে মামা।
সেই প্রাইমারি স্কুলে পড়ার সময়। সহপাঠি এক বন্ধু বলল, আজ মহররমের মেলা, লাঠি খেলা দেখতে যাবি?
অবশ্যই!
তবে একটা কাজ করতে হবে। আমার গুরু – কাম মেন্টর কাম লোকাল অভিভাবক- এবং আমার শিক্ষক, ছোট চাচাকে বলতে হবে- আমি আজ স্কুল শেষে নানাবাড়ি যাব। সে আমলের নানাবাড়ি গুলোতে পড়াশুনার চাপ থাকত না,আমার কাছে ভ্যাকেশন মনে হত। আর আমার নানাবাড়ি ছিল আরও এক কাঠি উপরে। কোন মতে ঘরে ঢুকে বই পুস্তকের ব্যাগটা নানার ঘরে রেখে দিতে পারলেই আর পায় কে! বৃহস্পতিবারে সন্ধ্যায় এসে আবার সেই শনিবারে সকালে বই এর ছোঁয়া লাগত হাতে, কেবল স্কুলে যাওয়ার আগে।
লাঠি খেলা দেখা হল বিকেলে! এদিকে খবর পাওয়া গেল, পাশের পাড়ায় সন্ধ্যায় যাত্রা পালা। গেলাম মামা এবং মামাত ভাইদের সাথে দল বেঁধে! স্টেজ সরগরম! বেশ সেজে গুঁজে, রং মেখে, মাথায় মুখে ওড়না দিয়ে ঘোমটা বেঁধে নেচে চলেছে নর্তকী, গায়ে গতরে শুকনো, শুধু গালটা কেমন বসা বসা। এরপর নাট্যাভিনয়ের অংশ! এক পর্যায়ে নাট্যমন্ডপের পেছেন গেলাম, দেখি সেই নর্তকী! সমানে বিড়ি ফুঁকছে, স্টেজের পেছেন। এক কোনে দাঁড়িয়ে ! হতবাক হয়ে গেলাম। এ বয়স পর্যন্ত কোন মহিলাকে বিড়ি ফুঁকতে দেখিনি! আর এতো সেই বিখ্যাত নর্তকী।
সেজ মামা হঠাৎ পেছনে এসেছে আমাকে খুঁজতে, বলল, বাড়ি যাই চল! রাত হয়ে যাচ্ছে! আমি নর্তকীকে হাত ইশারায় দেখালাম। মামা বলল, ওকে চেন না? ওতো ফজর ভাই! পাশের পাড়ায় বাড়ি।
আরেকবার তব্দা খেয়ে গেলেম। পুরুষ মানুষ? সে এভাবে মহিলা সাজল কেমন করে? সে পছন্দ করে এমনটা, তাছাড়া নাচেও ভাল, মামা জানাল। তাইতো, দেখে বুঝতে পারিনি পুরুষ মানুষ! একজন পুরুষ মানুষের- যা কাজ, সব কাজই সে করে; তবে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে নাচ গান অভিনয়ে। মাঠে কাজ করছে সবাই, ফজরও সে কাজ করছে, একত্রে খাওয়া দাওয়া করে থালা বাস্ন ধোয়ার কাজ পড়বে ফজরের ভাগে, সেও সেটা মেনেই নিত! অভিনয়ের সময় মেয়েদের মত করে কথা বলতে বলতে একটা মহিলা- প্যাটার্ন তৈরি হয়েছে তার আচরণে, স্বাভাবিক কথা বার্তাও সে মেয়েদের ভঙ্গিতেই বলত! ‘হাফ লেডিস’ পরে শুনেছিলাম।
তাকে একদিন দেখলাম বাজারে। একদিনতো আমাদের বাড়িতে এসেই হাজির! সাথে ছেলেও আছে। কি একটা কাজে এসেছিল, নানার গ্রামের মানুষ, তাকে না খাইয়ে যেতে দেয়া হল না। এক ফাঁকে জিজ্ঞেস করলাম – মামা, আর নাটক করেন না?
‘নারে বাবা – ছেলে পুলে বড় হয়ে গেছে, বয়স হয়ে যাচ্ছে! বুঝলাম- শখ করেই করতেন এগুলো, সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতাও ছিল। একটা পর্যায়ে সে সব চুকে বুকে গেছে! স্ত্রী সন্তান নিয়ে পুরোদমে সংসারী হয়ে পড়েছেন। এলজিবিটিকিউ এখানেও কলকে পায়নি।
ক্যানাডায় দেখলাম ভিন্ন আরেক চিত্র! ল্যাবের জরুরী কিছু টেস্ট করতে হবে, -দ্রুত। এক এনালিস্ট জানাল, বিশেষ এক ধরণের গ্লাস-ওয়্যার এর ভাণ্ডার খালি! হন্যে হয়ে একে তাকে জিজ্ঞেস করছি, অর্ডার দিয়েছি, সপ্তাহের আগে ডেলিভারি আসবে না! একজন বলল, কেমিস্ট্রি ল্যাবের সাপ্লাই ডিপোতে খোঁজ কর, ওদেরও দরকার পরে সেই ‘গ্লাস-ওয়্যার!
সত্যি তাই! কেমিস্ট্রি ল্যাবের ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করতেই জানাল, বেলফিল্ড রোডে আমাদের ওয়্যারহাউসে চলে যাও! ‘রেনে’কে জিজ্ঞেস কর, সে জানে কোথায় আছে এগুলো!
টেস্টগুলো জরুরী, টাইমলি শেষ করতে হবে। গেলাম ওয়্যার হাউসে। এদিকটার দেখা শুনা করে ‘রেনে! শেষ নাম বলা যাচ্ছেনা, প্রাইভেসি ইস্যু। সুশ্রী চেহারার এক শ্বেতাংগীনি, বয়স ২৫-৩০ বছর হবে! জানালো, ওই প্রান্তে গিয়ে হাতের বামে ঘুরে, ডান দিকের স্ট্যাকে আছে ! বিশাল ওয়্যারহাউস, পঞ্চাশটা ট্রাক লুকিয়ে রাখা যাবে; আর লেবেল লাগানো নেই, শয়ে শয়ে বক্স- একই রকমের! হাজারো বক্স এর মধ্যে কাঙ্ক্ষিত বক্স খুঁজতে দিনমান চলে যাবে। ফিরে এলাম ।
‘রেনে! এর তো কোন লেবেল দেখছি না! কোথায় এই বক্স গুলো তা না জানলে এটা খুঁজতে ৩ মাস লেগে যাবে!
সে এক গাল হেসে বলল, তাইতো! এখানেই দাঁড়াও, আমি দেখছি! চলে গেল সে, কিছুক্ষণ পরে সে বেশ বড় একটা বক্স, ঘাড়ে করে নিয়ে এলো! বেশ ভারি। চেহারা কমনীয়, তবে তার হাবভাবে নারীসুলভ আচরণ নেই। কাজ করে ওয়্যারহাউসে, ৯৫ ভাগ পুরুষ যেখানে, তাদের সাথেই, টো-ট্রাক চালায়। এজন্যই সে হয়তো পুরুষদের মধ্যে সাচ্ছন্দ! আর এখানকার সাদা বা কাল মহিলারা উপমহাদেশের মহিলাদের থেকে আলাদা! যেভাবে –এফ-শব্দটা উচ্চারন করে অবলীলায়, আমার নিজের কান লাল হয়ে যায় ! তারা নির্বিকার! উপমহাদেশের মহিলা হলে তিনজন লাগত ঐ বাক্স উঠাতে! আমার গাড়িতে বক্সটা তুলে দিল সে! ‘টম বয়” নাকি! কথা একটু বেশী বলে, মহিলাদের জন্য সেটাও অস্বাভাবিক নয়! তবে আন্তরিক, নিজের কাজ বোঝে! ওটুকুই আমার দরকার।
আরেকদিন ফোন এলো! কমিশনে ‘ওয়ান্ডারল্যান্ড’ এর টিকেট দিচ্ছে অফিসের হিউম্যান রিসোর্স! গরমকালে এমনটা দেয়া হয়, কর্পোরেট পার্কস! আমাদের অফিসের পাশেই সে অফিস! তাদেরকে ফোনে পাচ্ছে না সে! আমি কি একটু দেখব?
একজনের কাজে অন্যজনকে বিরক্ত করা এখানে স্বাভাবিক নয়, নিয়মও নয় ।এখানে তো অন্য ডিপার্টমেন্ট! যেহেতু চিনি তাকে, না বলতে পারলাম না! সাহায্য করা হল।
এরপর অনেক দিন কেটে গেছে! ২-৩ বছর পার হয়েছে। তার ৩ ছেলেকে নিয়ে সে ইউ এস যাচ্ছে বেড়াতে, ক্যাম্পিং করছে, র্যা পটর এর খেলা দেখতে যাচ্ছে – অফিস পিকনিকে দেখছি তাকে! তার শ্বাশুড়ি খুব সুবিধার না- পিকনিকে এমন গল্পও করে ফেলল একদিন! এ দেখি ইউনিভার্সাল! উপমহাদেশীয় আচরণ! এছাড়া রেনে’র আচরণে কোন আস্বাভাবিকতা নেই! দায়িত্বশীল মা! এবং বৌ! হয়তো!
হঠাৎ একদিন শুনি সে ডিভোর্স দিয়েছে তার স্বামীকে! শুনা গেল, সে এখন তার নূতন গার্লফ্রেন্ড এর সাথে বাস করছে! গার্লফ্রেন্ড এর সাথে? সে কি ‘গে (Gay) নাকি? সমকামী! তিন বাচ্চার মা হওয়ার পর? আকাশ থেকে পড়লাম।
মাস তিনেক পর। একদিন দেখলাম তাকে- হিউম্যান রিসোর্স এর আফিসের সামনে! ইস্তফা দিতে এসেছে! কেন?
একটা জব পেয়েছি, ওয়াল মার্ট এ! লজিস্টিকস এর সুপারভাইজর!
গুড ফর ইউ! সহাস্যে বলি!
আমরা উপমহাদেশীয়রা এক চাকুরীতেই জীবন পার করে দিতে চাই! এরা পরিবর্তনে বিশ্বাসী!
তোমার ছেলেরা কেমন আছে? ক্যাজুয়ালি জানতে চাই!
তারা তাদের বাপের সাথে থাকে! আমি তো আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথে থাকি! তাকে বিয়ে করব! তখন ক্যানাডায় সমকামী বিয়ের আইন কেবল পাশ হয়েছে! রেনে এখানে অগ্রগামীদের দলে!
ভাল থেকো !
আবার দেখা হবে আশা করি! বিদায় নেই আমি!
এরপর আর রেনে’র সাথে দেখা হয়নি!
সুস্থ স্বাভাবিক একটা মেয়ে, বয়ফ্রেন্ড এর সাথে প্রেম করেই বিয়ে, তার আগেও অন্য পুরুষদের সাথে হয়তো সংসর্গ হয়েছে, এটা তাদের জন্য ডাল ভাত! বিয়ে হল মেয়ে হিসেবে, সাদা পরীর মত পোষাকে চার্চ এ বিয়ে! এর পর বাচ্চা হয়েছে, তিন বাচ্চার মা! দীর্ঘদিন সংসার করেছে- এরপর সন্তানদের ছেড়েছূড়ে – চলে গেল! বলছে – সে ‘ক্লোজিট থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছে! কেউকি তাকে ক্লোজিটে আটকে রেখেছিল এতদিন?
মাতৃত্বের টানও তাকে ধরে রাখতে পারেনি! এটা কি এমনি তীব্র আকর্ষণ-? এই সমকামিতা? জানা নেই।
ওণ্টারিওর প্রিমিয়ার- ক্যাথলিন ওয়েন- ওন্টারিওর শিক্ষামন্ত্রী থাকা অবস্থায় তার সাথে একই স্টেজে বসে ফান্ড রেইজিং করেছি বাংলাদেশের বন্যাদুর্গত মানুষদের জন্য! খুব মানবিকতাগুণ সম্পন্ন একজন মানুষ বলেই মনে হয়েছিল তাকে। এক ডাকেই আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন! এক সময়ে জানলাম, সে মহিলাও সমকামী!
আমাদের এম পি ছিল মি. স্মিথারম্যান! কথাবার্তায় অতি আন্তরিক, চৌকস। দীর্ঘদিন পরে জানলাম, সে আরেকজন পুরুষের ‘স্ত্রী! অবিশ্বাস্য!
স্মিথারম্যান গেছে- মেয়র ইলেকশানে ফেইল করে, আউট! নূতন এম পি হয়েছে-!
টরন্টো ডাউনটাউনে- রিজেন্ট পার্ক এলাকায়, উন্মুক্ত মাঠে ঈদের জামাত করার উদ্যোগ নিলাম, চালু করা গেল এ প্রথা; অনেক ঝুট ঝামেলা আর দৌড়াদৌড়ি করে! সাউন্ড বক্স এর পাওয়ার লাইন, ষ্টেজ- মুসল্লীদের জন্য ম্যাট বিছানো- পেছনদিকে মহিলাদের জন্য পর্দার আড়াল- যথেষ্ট শ্রম গেছে সকালে! লোকজন আছে- তারপরেও ব্যাস্ততা কম নয়! তড়িঘড়ি করে বাসায় ফিরে গোসল করে – বাচ্চাদের সাথে নিয়ে মাঠে এসে পৌঁছুলাম! যাক, উন্মুক্ত মাঠেই নামাজ পড়ছি শেষ পর্যন্ত!
নামাজ শেষ হল-! সালাম ফিরিয়ে, ইমাম খুৎবা পড়ছেন! তাকিয়ে দেখি, এলাকার তৎকালীন এমপি - বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী- দাঁড়িয়ে আছে এক পাশে! কোন এসকর্ট নেই, এমন কি বন্ধু স্তাবকদের কেউ নেই! নেহায়েত একা! ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছেন মুসলিমদের! নেহায়েত রাজনৈতিক দায়! একটু কথা বলতে সুযোগ দেয়া হল তাকে! সবার সাথে হ্যান্ডশেক করে বিদায় নিলেন। আচার আচরণে কোন অস্বাভাবিকতা নেই – সবল সুস্থ মানুষ! শুনলাম, এ লোক এর স্ত্রীও মহিলা নয়! স্ত্রী নেই, পুরুষ পার্টনারের সাথে থাকে! সমকামী!
নূতন আরেকটা ট্রেন্ড শুরু হয়েছে- ট্রান্সজেন্ডার! এদের কথা না বললেই নয়!
যাদের শারীরিক বৈকল্য আছে তাদের নিয়ে কোন কথা নেই, কিন্তু পুরোদস্তুর একজন পুরুষ মানুষ কিম্বা স্ত্রী লোক, হঠাৎ দেয়াল ফাঁড়ি দিয়ে বের হয়ে ঘোষনা দিল, আমি এই – আমি সেই, অবাক হয়ে যাই! এরা মানসিকভাবে অসুস্থ তা বলা যাবে না! বরং অনেকের চাইতে সুস্থ, গুরুদায়িত্ব পালন করছে! তাদের ড্রয়ারে যখন এমন রহস্য লুকিয়ে থাকে- জানলে অবাক হতেই হয়!
লিঙ্গের প্রাকৃতিক পরিবর্তনেও এমনটা হয়, সেটা আমাদের দেশেও হয়েছে! রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার একদা ছাত্র- এখন হুসনেয়ারা বেগম, বগুড়ার ঠেঙ্গামারা সমিতির তত্তাবধান করেন; গন – মানুষের উন্নয়নে বিশাল কাজ করেছেন! এমনটা হয়, প্রাকৃতিক ভাবে! এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই!
কিন্তু বিকলাঙ্গ নয়, এমন সুস্থ মানুষ যখন নিজের পুরুষাঙ্গ, স্ত্রীজননাঙ্গ দিয়ে প্রতিস্থাপন করিয়ে ‘ট্রান্সজেন্ডার হচ্ছে, বা উল্টোটা ঘটাচ্ছে -তখন তাকে কোন ভাবেই সুস্থ মস্তিষ্কের চিন্তা বলে ভাবতে পারিনা! তবে মানুষ করছে এদেশে এবং এটা তার স্বাধীনতা! যৌনতা পরিবর্তনের অপারেশন হচ্ছে, নিচের দিকে ফুটো করে এবং সেটা খোলা রাখতে সার্জনরা প্রানান্ত হচ্ছেন, কারন ক্ষত শুকিয়ে যেতে থাকলে শরীরের ধর্ম হিসেবে- বিচ্ছিন্ন মাংস আবার ‘জুড়ে যায়; ‘খোলা থাকেনা। কৃত্তিম হরমোন খাওয়ানো হয়! বুকেও টিস্যু জুড়ে দেয়া হচ্ছে! নারী অথচ পুরুষের মত সমতল বক্ষ, তাইলে তো হল না! সেই যে রাজার আম খাওয়ার শখ হলে, তেঁতুল আর গুঁড় দাড়িতে লাগিয়ে চুষতে বলা হয়েছিল, এটাও সেই অবস্থা! এগুলো ব্যাখ্যার অযোগ্য, অবসিন; তবে সাধারনের জানার জন্য লিখতেই হয়; উপায় কি! অনেকের কাছেই
আমরা কেন যেন মেনে নিতে পারিনা এমনটা! এটা হয়তো আমাদেরই ব্যার্থতা ! নাহলে কানাডা আমেরিকার মত এত উন্নত ( কোন দিক দিয়ে উন্নত? জিজ্ঞেস করলে আবার বিতর্ক লেগে যাবে! একদল বলবে – এখানে কেন, গো ব্যাক টু হোয়ার ইউ কেম ফ্রম! যেন এদেশটা তাদের কানাডীয় পিতাদের কাছ থেকে তেনারা ইজারা নিয়েছেন; যাকে ইচ্ছে রাখবেন, যাকে ইচ্ছে ‘পেঠিয়ে দেবেন! আরে ভাই – আমি ট্যাক্স পেয়ার! আমার ব্যাক্তি স্বাধীনতা – বাক স্বাধীনতা তোমার চাইতে কনে, কার চাইতেই কম নয়! আমি আইন মেনে চলি, আমার প্রোপারটি ট্যাক্সে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চলে, স্কুল চলে, পুলিশ বেতন পায়! কথাটা মনে থাকবে কি! আমি তো বলছি না ‘গো টু হেল! তোমার যুক্তি থাকলে তুমিও দেখাও! তুমি যেমন স্বাধীন ভাবে প্যারেড কর, ঠিক আছে; আমি তো বাধা দিচ্ছিনা! বরং তুমি সহ সকল প্রাণী যেন এদেশে ‘নিরাপদে, শান্তিতে বাস করতে পারে – সে চেষ্টা করে যাচ্ছি! দেশ গঠনে ভূমিকা রাখছি! ) দেশে সাধে কি আর এ কাজ করে? এমন চিন্তা আছে অনেকেরই। আপনার শরীর, আপনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন, এমন সাজশানও পাবেন ডানে বামে! যারা ধর্ম মানে তারা এটা মানবে না! কারন শরীর আপনার মালিকানাধীন নয়, শরীরের মালিকানাও আল্লাহ্র, আপনি ইজারাদার মাত্র! এজন্য গায়ে স্থায়ীভাবে ট্যাটু বা ঊল্কি আঁকাও একজন মুসলিমের জন্য নিষেধ!
মুসলিমরা এই সমকামীতার বিরুদ্ধে এত সোচ্চার কেন? এমন কথা ওঠে! আরে ভাই- আরও আগে যাও না? ইহুদী/ খৃষ্টানরাও আদম হাওয়া বা এডাম ও ইভ কে আদি মানব /মানবী মনে করে। এমনকি হিন্দুমতেও ‘ওকি মদনকে আদিম মানব মানবী ভাবা হয় ! শুধু দুইজন আদম কিম্বা দুইজন হাওয়া এ মস্তকে প্রবেশ করার সম্ভাবনা নেই। শিশুমনে সে ধারনা অনুপ্রবেশ করিয়ে দিতে –এক সমকামী, ক্যাথলিন উইন শিক্ষানীতির আমূল পরিবর্তন করতে চেষ্টা করেছিল। জনগণ তা মেনে নেয়নি! গত নির্বাচনে ওন্টারিওতে লিবারেল এর ভরাডুবি ঘটেছে – এর জন্য সে ‘শিক্ষানীতিরও ভূমিকা রয়েছে ! তার আচরনকে ‘রিজেক্ট করেছে ‘মেজরিটি! ফোর্ড এর কনজারভেটিভ এখন ক্ষমতায়, তারা শিক্ষানীতি পুনরুদ্ধার করেছে, যদিও শুরু হয়েছে অন্য শিরঃপীড়া!
আচ্ছা বাদ দিন ধর্মের কথা! সেকুলার সোসাইটি (কুইবেকের সেকুলার নয়, ওটা আই ওয়াশ মাত্র) বাস করে ধর্মের আলোচনার দরকারই বা কি! ধর্ম এখন ব্যাক্তিগত জিনিষ! ক’দিন পরে যাদুঘরে স্থান পাবে! এবার বিজ্ঞানে আসুন! আচ্ছা, একটা প্রজাতি যখন নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়- তাতে বৈজ্ঞানিকরা এত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন কেন, জানেন? গুগল করেন ! প্রতিটি প্রানের সাথে আরেকটা প্রান সম্পর্কিত! ইন্টারকানেক্টেড। এজন্য! একটা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলে বাকিদের অস্তিত্বও বিপন্ন হয়ে পরে, এজন্য!
এই যে আমার সন্তান, আমার আর আমার স্ত্রীর প্রেমময় জীবনের জীবন্ত প্রমান। সে আমার এবং আমার স্ত্রীর ‘জিন বহন করছে, যেমন আমি আমার পিতা মাতার জিন বহন করে চলেছি! এভাবেই জীবনধারা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে বয়ে চলে! আমি যা পেয়েছিলাম- তা আবার রেখে যাচ্ছি ভবিষ্যতের জন্য; ঋন শোধ বলতে পারেন। সত্যিকারের গর্ব যদি কারো হয় তো সেটা আমার; আমি পৃথিবীকে বাস যোগ্য করার জন্য আমার প্রজন্ম রেখে যাচ্ছি; সে আমার অসম্পূর্ন কাজ সম্পন্ন করবে, এ দুনিয়া আবাদ করবে। আপনার আমার সন্তানের জন্য একটা পরিচ্ছন্ন পৃথিবী রেখে যাব, এটাই আমাদের অঙ্গীকার!
যারা সমকামীতার অনুসারী- প্রাইড এর নামে আসলে তারা মূলতঃ সমাজের ডিসগ্রেস, প্রাইড হবে কি করে! সে-লীডার হোক আর আম জনতা হোক, বৈদ্য হোক আর কবিরাজ হোক, তার যতই ‘প্রেমরস থাকুক, তা তাকে দিয়েই শুকিয়ে যাবে; তার আর পরবর্তী প্রজন্ম বলে কিছু থাকবেনা! এই বৈদ্য কবিরাজরা তাদের ‘-কর্ম দ্বারা, মানব সমাজের নৈতিকতা ধ্বংস করতে বা ধ্বস নামাতে সক্ষম, তা ঠিক! তবে তারা কি ভেবে দেখেছে- তার সাথে সাথে তাদের নিজেদেরও ধ্বংস ডেকে আনছে- তাদের সমকামী স্বভাবের কারনে! তারা মুছে দিয়ে যাচ্ছে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম!
আজকালকার দিনে যেভাবে সমকামীদের এ অসম্পুর্ন, বায়বীয়- ফ্রুটলেস যৌনতাকে ‘প্রমোট (Promote ) করা হচ্ছে, সবাই যদি তাদের এ ‘বায়বীয়’ পন্থা অনুসরন করে- তবে পুরো মানব সভ্যতাই কিন্তু এক জেনারেশনে ধ্বংস হয়ে যাবে ! অন্য প্রজাতি রক্ষার দায় দায়িত্ব নেয়ার কেউ থাকবে না!
তবে আশার কথা – এমন মানব- বিধবংসী পথ সংখ্যাগরিষ্ট মানুষই ‘অগ্রাহ্য করছে, ভবিষ্যতেও করবে! মানুষ নামের উন্নত বুদ্ধির এ জীবের মস্তিস্ক – শরীরের ঊর্ধ্বভাগে- মাথার উপরেই থাকে, নিম্নশ্রেনীর জীবের মত তা দুইপায়ের মাঝখানে এসে আশ্রয় নেবেনা! আমরা এমনটাই আশা করি! যৌনতা মানব জীবনের অংশ বিশেষ, সম্পূর্ন, পরিপূর্ন জীবন নয়!
পূনশ্চঃ
তোমরা তোমাদের জীবন কিভাবে উপভোগ করবে তা তোমাদের ব্যাপার- আমরা হস্তক্ষেপ করতে যাচ্ছিনা! তোমাদের যেমন স্বাধীনতা রয়েছে, আমাদেরও স্বাধীনতা রয়েছে আমাদের ইচ্ছে মত জীবন উপভোগ করার! তোমরা তোমাদের মত থাক, আমাদেরকে ত্যাক্ত করতে এসো না! আমাদের দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে – তোমাদের দেখাদেখি -বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়াই নর-নারী তাদের জৈবিক চাহিদা মেটাতে শুরু করেবে- অন্যান্য হায়ওয়ান জানোয়ার-নিম্ন শ্রেণীর পশু পাখীর মত! তাতে আমাদের নৈতিকতার দেয়ালে ক্ষত সৃষ্টি হবে! তোমরা তোমাদের জীবন তোমাদের মধ্যেই সীমিত রাখ, ঢাকঢোল পিটিয়ে আমাদের কানের পোকা বের করার চেষ্টা করোনা। আমাদের নূতন প্রজন্মকে আকৃষ্ট করতে চেষ্টা করো না। এটা আমাদেরকে উত্যক্ত করার শামিল। আমরা তো তোমাদের বলতে যাচ্ছিনা- তোমাদের যৌনজীবন রিস্কি, তোমাদের মধ্যে অসুখ বিসুখের পরিমাণ বেশী, অকাল মৃত্যুর পরিমাণ-যৌন রোগে ভুগে মরার পরিমান- বেশী, তোমাদের মধ্যে আনুপাতিক হারে এইডসের সংখ্যা বেশি! যদিও বিজ্ঞান তাই বলে। আমরা যেমন তোমাদের সম্মান দেই- তোমাদের সমান ভাবে জীবন উপভোগ করার সমান অধিকার রয়েছে বলে স্বীকার করি, তোমাদের কি উচিত নয় আমাদের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখানো ! আর জানই তো, সংখ্যাগরিষ্ট মানুষদের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখানো গনতন্ত্রের শিক্ষা! নিজেদের স্বার্থেই তোমাদের তা করা উচিত, সেটাই মংগল।
বিষয়: বিবিধ
১০৫৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন