মোহর – স্ত্রীর অধিকার!
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১৬ জুন, ২০১৯, ০৭:৩৯:২০ সন্ধ্যা
জুম্মার নামায হয়ে গেছে!
এ দেশে জু্ম্মায় স্থানাভাবে একই মসজিদে পরপর দুইবার জুম্মার নামায আদায় করা হয় – অনেক জায়গাতেই! আদালত পাড়ায় একটা কাজ ছিল। কাজটা যখন শেষ হল, জুম্মার আজান হয়ে গেছে! ৬০ কিমি জোনে ৮০ কিমি স্পিড তুলেও শেষ রক্ষা হয়নি, আমি যখন মসজিদের গেটে পৌঁছুলাম – তখন খুৎবা শুরু হয়ে গেছে; এদিকে মসজিদের গেটে লাল বাত্তি! পার্কিং লট ফুল! আর কোন গাড়ী ঢুকতে দেয়া হবে না! তুষারপাত হচ্ছে- পরের ব্লকে একটা মেডিক্যাল অফিস- ওদের পেছনে মাঝে সাঝে পার্ক করা যায় গাড়ি! এগিয়ে গেলাম! আহারে! এখানেও পার্কিং পাওয়া গেলনা! করি কি! দুই ব্লক পরে একটা মার্কেট; ওখানে পার্ক করলে বোধ হয় চলবে! তাই করলাম। সেখান থেকে যখন তুষার মাড়িয়ে, হেঁটে হেঁটে মসজিদে এসে ঢুকলাম, জুম্মা শেষ!
প্রতীক্ষা! পরের জুম্মার জন্য! দেড় ঘণ্টা পরে!
অজু করে এলাম। দুই রাকাত তাহিয়াতূল মসজিদ পড়লাম। কারন রাসূল বলেছেন- যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, ২ রাকআত না পড়ে বসবে না! বসে কুরআন তিলাওয়াতের ইচ্ছা করছি। এমন সময় মেইন প্রেয়ার হলে – মিম্বর এর কাছে একটা জমায়েত লক্ষ্য করা গেল! মাঝে সাঝে এজায়গায় তাবলীগ জামাতের ‘বহুত ফায়দা হওয়ার বয়ান চলে, নিজেও শরীক হই সুযোগ থাকলে। ! জ্ঞানের ক্ষেত্র তো ছড়িয়ে আছে! আজকেও তেমন কিছু?
কুন্ঠিত পায়ে ভেতরে গিয়ে দলে শরীক হলাম। কিছুটা আলাদা বিষয়! ওহহো ! বিয়ে পড়ানো হচ্ছে, বুঝতে পারিনি!
সামনে পাগড়ী পড়া বর সমাসীন। নাহ, হিন্দি বা বাংলা সিনেমার মত কালারফুল কুর্তা শেরওয়ানী বা বাহারি পাগড়ী নেই, নেহায়েত সাদা কাল। কিন্তু ছাঁটা গোঁফ –মার্জিত লম্বা দাড়ি আর সুচারুভাবে বাঁধা পাগড়ীর মধ্যেই তার যে আজ বিশেষ দিন – এটা ফুটে বেরুচ্ছে- । তাঁর মুখে এক যৌবনময় দীপ্তি – এক নূতন আভা ! আজ সে রাজাধিরাজ, সম্রাট -! আজকের অনুষ্ঠানে হাজারো মানুষের কেন্দ্রবিন্দু সে! গরীব ধনী নির্বিশেষে, এমন দিনটি তাকে ঘিরেই আবর্তিত হয়! তার বিয়ের দিন। সে আজ সূর্য, তাকে ঘিরেই সেলেস্টিয়াল বডির অন্য তারকা গুলো আবর্তিত হবে আজ!
ইমাম সাহেব এর পাকা দাড়ি নড়ছে যুগপৎ - বিয়ের খুৎবা পড়া হচ্ছে -তার সূরের গুঞ্জন – বাড়ছে, কমছে ! এই মসজিদের ইমাম- গুজরাটি এই ভদ্রলোক – শুকনা পাতলা (গুজরাতি বললেই শুকনো –কাঠির মত, টিটি এফ এফ- মানে টেনে টুনে ফাইভ ফিটের এক ক্ষুদে মানব দেহ মনে পড়ে যায়, গান্ধিজী!) মানুষ, তার চোখ দুটোর পাতা সব সময়ে ফুলা ফুলা, উনার সাড়া মুখে সর্বদা বিষাদ মাখা! তাকে হাসতে দেখিনি কখনো ! স্থায়ী বিষাদের প্রতিমূর্তি যেন!
খুৎবা পড়া শেষ হল। তিনি এবার ইসলামী নিয়মের সেই আদি ও অকৃত্তিম – ১৪০০ বছরের পুরনো অতি সরল পদ্ধতির আবতারনা করলেন। ইজাব কবুল! লক্ষ লক্ষ নয়, কোটী কোটী মানুষ এই সহজ সরল পদ্ধতিতে দুটি প্রাণের সেতুবন্ধন গড়ে ! সহজ, সরল, অনাড়ম্বর অথচ মজবুত এক বন্ধন।
অমুকের মেয়ে- অমুক, এত ডলার মোহর আদায় সাপেক্ষে আপনাকে বিয়ে করতে রাজী হয়েছে, আপনাকে স্বামী স্বীকার করেছে – অমুক এবং অমুক সাক্ষী! আপনি তাকে স্ত্রীর মর্যাদায় বরন করলেন? অথবা আপনি কি তাকে স্ত্রী হিসেবে স্বীকার করছেন? তাঁকে স্ত্রী হিসেবে কবুল করছেন?
বলা বাহুল্য মসজিদে এ মুহূর্তে মহিলা বা বিয়ের কন্যা বা বধূ উপস্থিত নেই। তার পক্ষ থেকে তার অলি বা গার্জিয়ান কবুল বললে বা রাজী থাকলেই বিয়ে ‘সিদ্ধ হবে। অবশ্য আজকের নারীবাদিরা জোর গলায় চিৎকার করবেন- দেখলাম না শুনলাম না – কানা নাকি খোঁড়া – কথা বলতে পারে নাকি তোতলা- এসব না দেখে কিভাবে রাজি হবে একজন মেয়ে? মেয়েদের কি ব্যাক্তিত্ব বলে কিছু নেই? ইত্যাদি ইত্যাদি! কিন্তু এমন বিয়ে এখনো হচ্ছে- মেয়েরা তার স্বামীর সাথে বছর ছ’মাস ডেটিং না করেই বিয়ে করছে, সুখে থাকছে! কথা সত্য, ধর্ম মানুষকে ভাগ্যনির্ভর হতে সাহায্য করে-। এর ভাল দিক হল- আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন তার উপর ভরসা রাখলে অনেক খানি স্ট্রেস কমে যায়! হয়তো সে মেয়েদের স্ট্রেস কম, কে জানে! তারা আল্লাহ্র উপর ভরসাতো রেখেছেই – ভরসা রেখেছে তার অলি বা গার্জিয়ানের উপরেও! গার্জিয়ানতো দেখে শুনেই বিয়ে দেবেন, তাই নয় কি! অভিভাবকের চাইতে তার মেয়েদেরকে কি এই নারীবাদীরা বেশী ভালবাসে? নেভার!
যারা এই পুরনো প্রথায় নাক সিটকান- তারা যে নিজের চয়েসে সব রসগোল্লা বিয়ে করেছেন তা কিন্তু নয়! এদেশে গড়ে দুইটা বিয়েতে একটা ডিভোর্স! মাত্র ৫০%! আবার সে তুলনায় পুরাতন পদ্ধতিতে বিয়ে দেখা যাচ্ছে অনেক বেশী কার্যকর ! পরিসংখ্যান দেখে লাভ নেই, জীবনের সুখ দুঃখে আপোষ করতে হয়, এখানে সেই ‘ধৈর্যের অভাব, আত্মসমর্পনের অভাব থাকলেই ভাঙ্গন, কোন বিকল্প নেই! যুগ পাল্টেছে, মানব চরিত্র পালটায় না।
২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর! কানাডার মসজিদে বসে বিয়ে হচ্ছে, বিয়ের আসরে কনে উপস্থিত নেই, উভয় পক্ষের অভিভাভবক রয়েছেন, আর বর রয়েছে, বিয়ে সম্পন্ন হল ! মোহর? এ বিষয়ে দুটি কথা! ৫০০ ডলার মাত্র! মোহরে ফাতেমি!
যে বিয়েতে মোহর কম, আল্লাহর ব্লেসিং – রহমত, বরকত থাকে সেখানে! কিন্তু কনে পক্ষ তাদের বংশ মর্যাদার প্রমাণ হিসেবে কখনও কখনও অতিরিক্ত মোহর দাবী করে! এমন অযৌক্তিক দাবির খাঁই মেটাতে বরকে ঋণের বোঝা মাথায় নিতে হয়, বিয়ের আনন্দের চাইতে স্ট্রেস নিতে হয় অনেক বেশী! অথবা অনেক মেয়ের বিয়েই হবে না- কারন অতিরিক্ত পয়সা ওয়ালা তরুণের সংখ্যা সমাজে খুব বেশী নয়, থাকলেও তাদেরও আরও চাহিদা থাকতে পারে । অথবা পয়সা ওয়ালা বুড়োরা তরুণীদের উপর হামলে পড়বে- তার অতিরিক্ত মোহর দেয়ার ক্ষমতা রয়েছে! এই ধরনের সামাজিক সমস্যা যেন সৃষ্টি না হয়, বিবাহ যোগ্যা নারীতে যেন ঘর সয়লাব না হয় এজন্য, খলিফা উমর (রাঃ) এক আইন করতে গিয়েছিলেন স্বল্প মোহরের পক্ষে! এক মহিলা – উপযুক্ত যুক্তি দেখিয়ে উমরের সে প্রচেষ্টা বাতিল করে দেন! আজকে মধ্যপ্রাচ্যের অবস্থা দেখলে মনে হয়- উমর (রাঃ) তারাবিহ এর নামাজন জামাতে পড়তে আদেশ করে মসজিদে যে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলেন, মোহর কম করার আইনটা পাশ করে গেলে আজ এত ‘আইবুড়ো মেয়ে মধ্যপ্রাচ্যে আর দেখা যেত না! ঘরের খুঁটির মত পড়ে রয়েছে অনেক মহিলা, সাধ থাকলেও গার্জিয়ানের মোহেরের খাঁই মেটাতে আসা যুবক খুব একটা মিলছে না! ফলাফল – আইবুড়ো! আরও খারাপ – জেনার মত অনাচার ছড়িয়ে পড়বে; হালাল পথে যখন সফলতা পাওয়া অসম্ভব, হারাম পথে চেষ্টা নেবে অনেকেই, বায়োলজিক্যাল নিড বা জৈবিক চাহিদা বলে কথা! এমন জৈবিক চাহিদায় অনেক সময় মানুষও, পশুর মতই।
অবশ্য উন্নত দেশ গুলোতে বিয়ের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, জৈবিক ইউনিয়ন বা জোড় বাঁধার সংখ্যা বাড়ছে! দুজনকে দুজনার পছন্দ হল, একসাথে থাকল, সবই চলছে স্বামী স্ত্রীর মত। যখন পছন্দের ঘাটতি শুরু হল, রাস্তা তো খোলাই। সরকার স্বীকৃতি দিচ্ছে এমন ‘জীবন যাপন! বাস্টার্ড এর সংখ্যা বাড়ছে এই যা।
সৌভাগ্য এই যে, এখনো কিছু মানুষ – হাজার বছরের পুরনো এই সরল সহজ পদ্ধতির অনুসরণ করেন। অল্প মোহরে বিয়ে হলে বেশীরভাগ মানুষের জন্য তা মঙ্গলজনক। জেওর পোশাক -ওয়ালিমা খরচ এগুলো তো রয়েছেই। তেমনি এক বিয়ে দেখছি আজ এখানে, যার বাঁকি দেনমোহর ৫০০ ডলার! একজন নিম্ন বেতনের কর্মচারী – মুদি দোকানের সাহায্যকারী কিম্বা কফি শপের কাস্টমার হেল্পার-এক সপ্তাহে প্রায় এই রকম মজুরি আয় করে। সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে- পাঁচ সাতশো ডলার! বাসর হওয়ার আগেই স্ত্রীর প্রাপ্য বা অধিকার- মোহর, তার হাতে তুলে দিতে পারবে স্বামী! অনেকেরই নাক কুচকে উঠবে হয়তো, মাত্র ৫০০ ডলার~ ! কিন্তু এই মোহর তো বৌকে কিনে নেয়ার জন্য নয় – তার মর্যাদা হিসেবে! আবার কন্যা তো গরু ছাগলের মত পণ্য নয় যে, অধিক অর্থে কন্যা- বিক্রির জন্য মূলামূলি করতে হবে!
আবার পূর্বের কথা মনে করিয়ে দিতে হবে। খাবার আগে বিসমিল্লাহ বলি কেন আমরা! প্রতি কাজের আগে? কারন আমরা সব কাজেই – সেটা খাবার হোক বা অন্য কাজ হোক- আল্লাহ্র ব্লেসিংস বা রহমত তালাশ করি! মুমিনের সমস্ত জিন্দেগী এই রহমত তালাশের উদ্দেশ্যে! অল্প মোহরের বিয়েতে আল্লাহ্র রহমত বেশী। তাহলে একজন মুসলমান কেন সেটা ‘অশ্রদ্ধা করবে? বেশী মোহর ধার্য করে মৃত্যু পর্যন্ত শোধ করতে পারেনা অনেকে! কিম্বা বৌ এর কাছে মাফ চেয়ে নেয়, বৌ অনেক সময় চক্ষু লজ্জাতে মাফ করলেও মন থেকে মাফ করে না, এমন নজির অহরহ রয়েছে! যাদের এতেও ভ্রম সংশোধন হয়না, তাদের জন্য আরও এক সুন্নাহ রয়েছে- মোহরে ফাতেমি!
মা ফাতিমা! রাসূল (সা এর কন্যা যখন ৫ বছরের, তখন তার মা খাদিজা (রাঃ) দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। মায়ের এই শুন্যতা বাবা পূর্ণ করেছিলেন; আচরণে, আদর্শে তিনি ছিলেন পূন্যময়ী নারী কূলের আদর্শ; রাসূল (সাঃ) এর পবিত্র অবয়বের সাথে তাঁর অবয়বগত সাদৃশ্য ছিল বলে উল্লেখ আছে! ব্যাক্তিত্ব ও চরিত্র মাধুর্যেও আপন পিতার ‘ছায়া ছিল তাঁর মধ্যে! তাঁর জন্য প্রস্তাব এসেছিল আরও দুই বয়স্ক সাহাবার, রাসুল (সাঃ) তা মনজুর করেন নাই। কিন্তু আলী (রাঃ) এর সাথে সম্পর্ক তিনি মনজুর করেন! আলী (রাঃ) এর আর্থিক অবস্থা ভাল ছিল না! তিনি নিজের ঢাল বিক্রি করে সে অর্থে মোহর শোধ করতে চাইলেন।
আলীর সে ঢাল – অনেক উচ্চ মূল্য -৪০০ দিরহাম দিয়ে কিনে নেন উসমান (রাঃ)। এবার বললেন, ঢালটা এখন আমার, ৪০০ দিরহাম তোমার! এখন এই ঢালটা তোমাদের বিয়ের উপহার হিসেবে আবার তোমাকেই দিলাম! কত মধুর সে বিয়ের উপহার ! উসমান (রাঃ) এর আচরণ রাসূল (সাঃ) এতই পছন্দ করতেন যে, পরপর দুই মেয়েকে তাঁর হাতে সোপর্দ করেছেন, আরও মেয়ে থাকলে – তাদের মৃত্যুর পরে তিনি আবার তাঁর সাথে বিয়ে দিতেন- এমন মন্তব্যও করেছিলেন! ঢাল বিক্রির (!) এই ৪০০ দিরহাম থেকে খরচ হয় ফাতিমার বিয়ের পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী কেনার জন্য! কাজেই মোহরে ফাতেমির হিসেব হয় সর্বোচ্চ ৪০০ দিরহাম –। ১ দিরহাম = প্রায় ৩.০৬ গ্রাম রূপার ওজন, (এক মতে ২.৯৭ গ্রাম)। আমরা ৩.০৬ হিসেবে ধরেছি, কাজেই ৪০০ দিরহাম হচ্ছে প্রায় ১২২৪ গ্রাম রূপার মূল্য ! আজকের বাজার দর হিসেবে (ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭), রুপা প্রতি গ্রাম .৫২ ডলার, সেই হিসেবে মোহরে ফাতেমির পরিমাণ হবে ৬৩৬.৪৮ ডলার)। অবশ্য কারো কারো মতে এ পরিমাণের কম বেশী আছে, তবে তা কোন ক্রমেই ১ হাজার কানাডিয়ান ডলারের বেশী হবে না! ভিন্ন দেশে বা মুদ্রায় তা ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক।
বদরের যুদ্ধের ২ বছর পরে ফাতিমা ( রাঃ) এর বিয়ে ! আলীর সাথে বিয়েতে রাসূল (সাঃ) নিজেই বিয়ের খুৎবা পাঠ করেন। ফাতিমা যখন স্বামীর ঘরে যাচ্ছেন রাসূল (সাঃ ) নিজে তাকে উস্ট্রীর পিঠে সওয়ার হতে সাহায্য করেন; লাগাম ধরে সামনে হাঁটছিলেন সালমান ফারসী (রা, এবার উটনীর এক পাশে রাসূল (সাঃ) নিজে, অপর পাশে বীর কেশরী হামযা (রাঃ)- অনান্য সাহাবা – আনসার ও মুহাজিররা তাদের পেছনে; বনু হাশিমের তরুণ ঘোড়সওয়াররা- মুক্ত তরবারি আকাশে উঁচিয়ে আল্লাহু আকবর রবে মদিনা প্রান্তর মুখরিত করে তুলেছিল। এই স্বর্গীয় শোভাযাত্রা এসে শেষ হল বরের বাড়িতে! রাসূল সাহায্য করলেন মা ফাতিমাকে নামতে, এরপর ফাতিমার হাত আলীর হাতে সোপর্দ করলেন; দুয়া করলেনঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি ফাতিমা ও আলীকে হেফাজত করুন; রহম করুন তাদের প্রতি; তাদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন, আপনার সীমাহীন দয়া আর করুণা তাদের উপরে বর্ষণ করুন; তাদের সেরা পুরস্কারে ভূষিত করুন। তাদের এ বিবাহ ফলপ্রসূ করুন। তাদের একের প্রতি অপরের ভালবাসায় স্থিতিশীল করুন, আপনার দ্বীনের উপরে তাদের সাবুত রাখুন।
মা ফাতেমার বিয়ের মোহর ছিল কম। আলী (রাঃ) রাসূল ( সঃ) এর নিজের হাতে গড়া প্রথম মুসলিম, যিনি অত্যন্ত জ্ঞানী, ধর্মভীরু, তেজস্বী, শক্তিমান বীর পুরুষ ছিলেন, তবে পকেট বেশী গভীর ছিল না তার (বাস্তবিক অর্থে অতি অল্প সাহাবা (রাঃ)ই সে অর্থে ধনী ছিলেন! এখনো কি একটা সমাজের সবাই ধনী?)। হযরত আলীর জন্য মোহর ধার্য করা হয়েছিল খুব কম, ওয়ালিমা (বিবাহোত্তর ভোজ) দেয়া তাঁর জন্য কঠিন ছিল। তবে রসূল (সা তাকে ওয়ালীমার আয়োজন করতে বলেন কারণ যারা তা করে আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট থাকেন। এর কারণ বোধ হয় এটাই যে, এ উদ্দেশ্যে মানুষ সমবেত হয়, ভাব বিনিময় করে – একত্রে মেলা মেশার ফলে ভ্রাতৃত্ববোধ বৃদ্ধি পায়। আলীর ওয়ালীমায় মদিনার আনসাররা কেউ বাদ রইল না, মুহাজিররা তো বটেই! খাবারে এত বরকত হল যে মানুষ খেয়েদেয়ে, সাথে করে নিয়েও গেল, এরপরেও খাবার রয়ে গেল।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, মোহর এবং ওয়ালীমা – দুটোই একজন বর এর জন্য দায়। মোহর যে – মোহরে ফাতেমির সমান হতেই হবে তা নয়! এমন মানুষ থাকাটা অস্বাভাবিক নয় যে, এই ১ হাজার ডলার আয় করতে ১০ বছর লেগে যাবে! সে কি বিয়ে করবে না? বিয়ে করলে তাদের উপর বরকত নেমে আসে, রাসূল বলেছেন! এক সাহাবার কাহিনী বর্ণিত হয়েছে- যার কিছুই ছিল না, এক ইজার ছাড়া! এই ইজার নিয়ে সে কি করবে? রাসূল বললেন! দেখ – কিছু যোগাড় করতে পার কিনা! সে পারল না! শেষ পর্যন্ত রাসূল বললেন তুমি কুরআন কতটূকূ ইয়াদ করেছ ? সে জানাল- ! এবার রাসূল বললেন, তুমি তোমার স্ত্রীকে কুরআন শেখাবে, যতটুকু জানো; এটাই তোমার মোহরানা!
তাহলে দেখা গেল কপর্দকহীন মানুষও মোহরানা দিয়ে বিয়ে করতে পারবে! ক্যাশ অর কাইণ্ড (Cash or kind )!
কিন্তু বর্তমান জামানায় লোক দেখানো বিষয় (ইসলামের পরিভাষায় যা ‘রিয়া নামে পরিচিত, শরিয়া যাকে হারাম করেছে!) গুলো এতটাই গুরুত্ব পেয়েছে যে, শুধু লোক দেখানোর জন্য হলেও লক্ষ লক্ষ টাকা মোহর ধার্য করা হয়! বলে দেয়া হচ্ছে- দিতে হবে না, এটাতো শুধু ধরার জন্য ধরা আরকি! কি ধরণের মূর্খতা এটা? মোহরানা স্ত্রীর অধিকার বা হক। সে অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করার ক্ষমতা কাউকে দেয়া হয়নি!
ইসলাম এক পরিপূর্ণ জীবন বিধানের নাম। এর অংশ বিশেষ মেনে চলব, বাঁকি অংশ মানব না – এটা কোন সামাজিক ভারসাম্য এনে দেবে না! এ কারণে সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবেই- এটা চোখ বন্ধ করে বলা যায়। মধ্য প্রাচ্য হোক আর দূর প্রাচ্য হোক, অবাধ যৌনতা ছড়িয়ে পড়ছে, সময় মত বিয়ে না দেয়া বা বিয়ে না করার কারণে যৌন চাহিদা মেটানো হচ্ছে হারাম পথে! পশ্চিমা দেশগুলোতে জারজ বা বাস্টার্ড নামে কোন শব্দ আর দেখা যায় না! মুসলিম দেশ গুলোতে এখনো কিছুটা বিধি নিষেধ বিদ্যমান – কিন্তু শরিয়ার আংশিক বাস্তবায়ন – হারামের পথ উন্মুক্ত করে দিচ্ছে! সেদিন বেশি দূরে নয়, হয়তো দেখা যাবে, পশ্চিমাদের মত মুসলিম দেশ গুলোতেও বিবাহ বিচ্ছেদ এর হার শতকরা পঞ্চাশ ভাগ, কিম্বা বৈবাহিক সম্পর্ক ছাড়াই নর-নারী তাদের জৈবিক চাহিদা মেটাতে শুরু করেছে- অন্যান্য পশু পাখীর মত! আংশিক ইসলাম বলে কোন কথা নেই। আল্লাহ এবং তার রাসূল বলেছেন – পরিপূর্ণভাবে ইসলামে দাখিল হওয়ার জন্য! তা নাহলে ইসলাম বাস্তবায়নের পূর্ণ বেনিফিট মানব সমাজে আসবে না!
আল্লাহ আমাদেরকে পরিপূর্ণ ইসলামে দাখিল হওয়ার তৌফিক দিন। আমিন!
বিষয়: বিবিধ
৮৮০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন