নিউজিল্যান্ড ট্র্যাজেডিঃ ২০১৯
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ২৫ মার্চ, ২০১৯, ০৮:৫৭:৫৬ সকাল
মসজিদে প্রার্থনারত অবস্থায় শতাধিক নিরপরাধ শিশু নারী যুবাবৃদ্ধ একের এক গুনিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়েছে, ৫০ জন শহীদ হয়েছে, আহত প্রায় সম-সংখ্যক ! ইজরাইলের বারুচ গোল্ডস্টেইন, কুইবেকের অ্যালেকজান্ডার বিশোনেট এর পর এবার নরপিশাচ ব্রেন্টন, মসজিদে – প্রার্থনাগৃহে ম্যাসাকার করে, গান গাইতে গাইতে চলে গেল।
নিউজিল্যান্ডের এই জঘন্য হত্যাকান্ড আরেক বিশাল ম্যাসাকারের কথা মনে করিয়ে দেয়! জুলাই, ১০৯৯ । জেরুসালেম দখল করে ক্রুসেডাররা যেমন রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছিল – ঘোড়া গুলোর পা ডুবে গেছে রক্তে – নারী শিশু বৃদ্ধ কেউ তাদের হাত থেকে সেদিন নিস্তার পায়নি! মুসলিমদের রক্ত দিয়ে ক্রুসেডাররা বিজয়োৎসব করেছে। এই নব্য ক্রুসেডারও একই পন্থা অনুসরন করেছে! তার অস্ত্র গোলাবারুদে অতীতের অসংখ্যা নরঘাতক, ক্রুসেডার এর নাম লিখে এনেছিল সে, যেন তাদের প্রেতাত্মা ভর করেছে তার উপরে, সেদিন! নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষগুলোর উপরে সে তার প্রতিহিংসা আর জিঘাংসার বিষ ঢেলে দিয়েছে, ১০০০ বছরের জমে থাকা প্রতিহিংসা!
শ্বেতাঙ্গ উগ্রপন্থী এই নরপিশাচ ট্যারান্ট এর বন্দুকের গুলী ভরা ম্যাগাজিন গুলোতে প্রচুর লেখা দেখা গেছে,– সাদা মার্কার দিয়ে। ক্রুসেডার বাহিনীর নেতা-গাজি সালাহদীনের হাতে পরাজিত হওয়া জেরুসালেমের ক্রুসেডার রাজা গাই, বেহেমন্ড -১ এদের নাম লিখেছে সে! যারা মধ্যপ্রাচ্যে প্রথম ক্রুসেডের নামে মুসলিম নিধন করা শুরু করে- (যদিও প্রমানিত হয়েছে- তাদের উদ্দেশ্য যতটুকু না ধর্মীয়, তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল রাজ্য দখল) আর পোপ এর প্রত্যক্ষ উস্কানি আর প্রচারনা, স্থায়ীভাবে ইসলামের বিরুদ্ধে ইউরোপীয়রা শত্রুতায় জড়িয়ে গেছে। এ পর্যন্ত যত গনহত্যাকারী খূনীদের হাতে মুসলিম খুন হয়েছে- যেমন মন্ট্রিয়লের রমজান মাসে নামাজরত মুসলিমদের উপরে বর্বরোচিত হামলা চালানো কাপুরুষ- পিশাচ আলেক্সনাডার, নরওয়ের আরেক নর- পিশাচ এন্ড্রার্স ব্রেইভিক যে ৭১ জন নিরাপরাধ তরুণ তরুণীকে পরিকল্পিত ভাবে ঠান্ডা মাথায় খুন করেছে, এদের সহ যারাই মুসলিম বা উসমান তুর্কী সালাতানাতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে – এমন অনেক ইউরোপীয়দের নাম দেখা গেছে তার অস্ত্র আর ম্যাগাজিনে। মুসলিমদের বিরুদ্ধে তার ঘৃণা– সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মসজিদে প্রার্থনারত মানুষদের উপর গুলী চালানো ছিল পানির মত সোজা, না তারা অস্ত্র বহন করছিল, না কোন পাহারা ছিল- একটা শিশুও অনায়াসে, বাধাহীন ভাবে ঢুকতে পারে সেখানে- অবারিত দ্বার- ! আল্লাহর ঘর, উন্মুক্ত সবার জন্য, অন্ততঃ মুসলিমরা তাই বিশ্বাস করে। কারো জন্য কোন বাধা নেই, ভয় নেই-কেবল আল্লাহ পাক এর করুনা ধারার আশ্বাস এখানে!
সেই উন্মুক্ত দরজা দিয়ে মানুষ নয় – ঢুকল এক নরপিশাচ, পেছন থেকে নিরপরাধ, প্রার্থনারত মানুশগুলোর স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের বুলেট বৃষ্টি করে চলেছে ! সে ২০১৭ সালে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার পর থেকে ৫টা অস্ত্র সংগ্রহ করেছে, পর্যাপ্ত বুলেট, আইনে ৭ টা বুলেট ঢুকানোর কথা থাক্লেও- ৩০টা করে বুলেট ঢুকিয়ে ম্যাগজিন গুলো ভর্তি করে বন্দুকের গায়ে স্কচ টেপ দিয়ে লাগিয়ে রেখেছিল সে, যেন গুলী ফুরিয়ে গেলে মুহূর্তের মধ্যে শুন্য ম্যাগাজিন ফেলে বদলে নেয়া যায় তা। যেন কোন বিরতিছাড়াই মানুষ খুন করা যায় ! ইসরাইলে গিয়ে সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে এসেছে সে, এক সুত্রে প্রকাশ পেয়েছে যে খবর !
১৪ মিনিটে প্রায় অর্ধ শত মানুষ খুন করেছে, এত গুলো পাখীও সেই সময়ের মধ্যে খুন করা যায় না, একটাকে মারতে বাঁকি গুলো উড়ে যায়, পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
তার ম্যাগাজিনগুলো অতীতের খুণীদের নামে নামাঙ্কিত, যেন সে তাদের প্রেতাত্মা সাথে নিয়ে এসেছিল, তাদের ব্লেসিংস নিচ্ছিল!
আমরা চেষ্টা করেছি যতটুকু উদ্ধার করা যায় অস্ত্র আর ম্যাগাজিনের ছবি থেকে- তার মর্ম উদ্ধার করতে , আমাদেরও জানা উচিত ঐ নাম গুলো কার, তারা কি এমন অপকর্ম করেছে যার জন্য ব্রেন্টন এর আরাধ্য দেবতার ভূমিকা পেয়েছে তারা!
১। ডেভিড সোসলানঃ ১২-১৩ শতকের জর্জিয়ান রাজা, রানী তামার এর ২য় স্বামী, পাশের মুসলিম রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সফলতার মুখ দেখেছিল সে, খ্যাত হয়েছিল।
২। ডেভিড ৪র্থ; প্রতিষ্ঠাতা নামে খ্যাত! জর্জিয়ার ইতিহাসে সব চাইতে সফল, খ্যাতিমান রাজা, সেলজুক তুর্কদেরকে- ১১২১তে দিদগরির যুদ্ধে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে, ককেশাস এর বেশীর ভাগ এলাকা তার আয়ত্বে এসেছিল!
৩। দিমিত্রি সেনিয়াভিনঃ রাশান এডমিরাল, রূশো- টার্কিশ যুদ্ধে- ১৭৮৭-৯২; ১৮০৬-১২ নাম করেছিল!
৪। সেরবান ক্যান্টাকুজিনোঃ সাবেক রোমানিয়ার রাজপুত্র- যে নাকি কনস্ট্যান্টিনপোল আক্রমণ ও তুর্কিদের ইউরোপ থেকে বের করে দেবে – এমন পরিকল্পনা করেছিল।
৫। মার্কো মিলিজানভ – মন্টেনেগ্রোর দুই সেনানায়কের একজন, এক মন্টিনেগ্রো মুসলিম মাসো- হাজি- আহমেতভ এর কাছ থেকে আগেভাগে তুর্কিদের যুদ্ধ পরিকল্পনা জেনে যায় এবং সেভাবে আক্রমণ সাজিয়ে কুচি’র যুদ্ধে জয়লাভ করে! উসমান তুর্কীদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু লড়াই করেছে এবং নিজেকে সফল দলনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল।
৬। স্তেফান লাজারেভিচঃ সার্বিয়ার রাজপুত্র, উসমান তূর্কিদের জায়গীরদার ছিল, পরে নিজে স্বাধীন রাজা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে।
৭। এডওয়ার্ড কোড্রিংটনঃ ব্রিটিশ এডমিরাল- পরে কমান্ডার ইন চিফ, নেপোলিয়ানের যুদ্ধে লড়াই করে, পরে তুর্কী ও মিশরের ফ্লিটের বিরুদ্ধে লড়াই করে – গ্রীসের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তা করে ।
৮। মার্কো আন্তোনিও ব্রাগাডিনঃ ভেনিসের সেনাবাহিনীর অফিসার, তুর্কী সালতানাতের সাইপ্রাস আক্রমণের বিরুদ্ধে বীরত্ব দেখায়, টার্কিশ জেনারেল এর কাছে সকল খ্রীস্টান সহ আত্মসমর্পন করার পরে নিহত হয়। তুর্কীদের হাতে তার মৃত্যুকে শহীদের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়, ভেনিসের নাবিকদের কাছে সে লিজেন্ড হয়ে উঠে! তুর্কি মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়াই করা এবং তাদের হাতে মৃত্যু বরন করার জন্যই সে নরপিশাচ ব্রেন্টন এর কাছে সম্মানিত, বুঝা যাচ্ছে।
৯। আর্নষ্ট রুদীগার ভন স্টারহেমবার্গঃ ভিয়েনার মিলিটারী গভর্নর, ভিয়েনার ১৬৮৩ সালের যুদ্ধে তুর্কি আক্রমণ প্রতিহত করেছিল। মুসলিমদের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গ খ্রীস্টানদের এমন বীরত্বগাথা এ খুনীর অনেক অস্ত্রেই লিখিত ছিল।
১। ফর রথ্যারহ্যামঃ এটা রথারহ্যাম এর এক কলংকিত অধ্যায়কে রেফার করেছে, কয়েকজন ব্রিটিশ পাকিস্তানী- কিছু ব্রিটিশ তরুণীদেরকে দীর্ঘদিন যৌন নির্যাতন করে, যা পুলিশের চোখ এড়িয়ে যায়। কেয়ার হোমগুলো থেকে এদের তুলে নিয়ে যেত ট্যাক্সি ড্রাইভাররা, মুলতঃ দরিদ্র শ্রেণীর মেয়েদের তুলে নিয়ে যেত জন্য পুলিশ হয়তো গুরুত্ব দেয়নি। শুধ শ্বেতাঙ্গ নয়, অন্যরাও এর শিকার হয়েছে, তবে বেশিরভাগই শ্বেতাঙ্গ। যাদের শাস্তি হয়েছে তাদের ৫ জন পাকিস্তানি অরিজিন, ট্যাক্সি কোম্পানি চালাতো। হয়তো সাদারাও এমন কাজে জড়িত, কিন্তু এখানে বেশিরভাগ বালিকা শ্বেতাঙ্গ, নির্যাতিত হয়েছে কালারড মানুষের হাতে, এটাই গোটা ব্রিটেনে বর্নবাদী মানসিকতাকে আরো উস্কে দেয়, পাকি তথা মুসলিমদের বিরুদ্ধে। ব্রেন্টনও একজন শ্বেতাঙ্গ হিসেবে তার নিজের জিঘাংসাকে উস্কে দিতে এই রেফারেন্স ব্যাবহার করেছে।
২। অ্যালেক্সান্ডার বিশোনেটঃ ২০১৭ জানুয়ারীতে এই কূখ্যাত ফ্রেঞ্চভাষী নরপিশাচ কুইবেক, মনট্রিয়লের মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের উপরে হামলা চালায়, একই কায়দা এই নরপিশাচ ব্রেন্টনও অনুসরণ করেছে। যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করছে- সে- কানাডার জেলে। সে আদালতে বলেছে-যে, সে অনুতপ্ত এবং ক্ষমা প্রার্থী, সংশ্লিষ্ট মুসলিমদের অনেকেই তার এ ভূমিকায় সন্দেহ প্রকাশ করেছে। তবে পরে স্বীকার করেছে সে নাম কামাতে চাইছিল, এবং আরও বেশী মুসলিমকে খুন করতে পারে নাই জন্য সে আফসোস করেছে! আর তার নাম ব্যাবহার আর কপিক্যাট আক্রমণ সে সন্দেহকে আরও জোরদার করল।
৩। লুকা তারিনিঃ ইটালিয়ান উগ্রবাদী, ৬জন আফ্রিকান ইমিগ্রান্টকে গুলি করে মেরেছে ২০১৭ ফেব্রুয়ারীতে; ইটালিয়ান পতাকা গায়ে জড়িয়ে সে হিটলারী স্যালুট দিতে গিয়ে গ্রেফতার হ্য় –এবং ১২ বৎসরের জেল হয় তার! সে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চেয়েছে!
৪। কাগুলের যুদ্ধ, ১৭৭০; রুশ টার্কিশ যুদ্ধ (১৭৬৮-১৭৭৪) ৪০ হাজার রাশান সৈন্য প্রায় ৭০ হাজার উসমানী তুর্কদের সাথে লড়াই করে, রাশানরা মাত্র হাজার খানেক সৈন্য হারায়, তুর্কিদের ২০ হাজার এর বদলে!পুনরায়, মুসলিমদের পরাজয় তাকে উত্তেজিত করেছে, ইমিগ্রান্ট নয়, ইমিগ্রান্ট মুসলিমরাই তার টার্গেট।
৫। বাজো পিভলিয়ানিনঃ তুর্কীদের অধীনে জন্ম, তবে পরে ৫ম ভেনেশিয়ান- তুর্কি যুদ্ধে দলবদল করে-, তুর্কিদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করে, মারা যায়। নিচ থেকে আস্তে আস্তে ব্যান্ডিট চিফ হয়েছিল সে, ভেনিসের বাহিনীতে জগ দিয়েছিল ভেনিস হেরে গেলে সে আবার তুর্কির অধীনে ফিরে আসে এবং হাজদুক সীমান্তে সক্রিয় ছিল! তবে তাকে সেরা পদাতিকদের একজন বলে গন্য করা হয়। সার্বিয়ার এপিক কবিতায় তার কাহিনী স্থান পেয়েছে। একজন শ্বেতাঙ্গ যখন মুসলিমদের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভাবে যুদ্ধে নিয়োজিত এমন কেউ ব্রেন্টনের আরাধ্য!
৬। বুলায়ের এর যুদ্ধ ১৯১৩ঃ বুলগেরিয়ার সেনাবাহিনী তাদের চাইতে অনেক বড় তুর্কি বাহীনির বিরুদ্ধে লড়ছিল। অল্প কিছু সৈন্য হারিয়েই তারা অনেক বেশী তুর্কি সৈন্যকে হত্যা করেছিল, তুর্কিদের ব্লকেড ভাঙ্গতে পেরেছিল।
৭। প্রিন্স ফ্রুঝিনঃ বুলগেরিয়ার অভিজাত – তুর্কীদের ২য় বুলগেরিয়ান সম্রাজ্য বিজয়ের বিরুদ্ধে লড়েছিল।
৮। সেবাস্তিয়ানো ভিনিয়ারঃ ১৫৭০-১৫৭৩ এর ৪র্থ ভেনিস তুর্কী যুদ্ধের নাম করেছিল, তুর্কিদের বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিল লেপান্তোর যুদ্ধে!
৯। শিপকা পাসঃ আরও একটা রূশ- উসমানীয় যুদ্ধের রেফারেন্স- ১৮৭৭-১৮৭৮ সালে, বলা হয় ৫ হাজার বুলগেরীয় আর ২৫০০ রাশান সেনা ৪০ হাজার তুর্কি সেনাকে পরাজিত করেছিল।
১০। নোভাক ভূজোসেভিকঃ মন্টেনেগ্রোর ফুন্ডিনাতে তুর্কীদের সাথে যুদ্ধে সে একাই ২৮ জন তুর্কী সেনা হত্যা করেছিল,রাশান সম্রাট তাঁকে পুরস্কার দিয়েছিল এজন্য!
১। কনস্ট্যান্টিন ২ আসেনঃ বুলগেরিয়া ২য় কনস্ট্যান্টিন, স্টেফান লাজারেভিচ এর সহযোগী, অর্ধদশক সে তুর্কিদের বিরুদ্ধে লড়েছে, যদিও শেষ পর্যন্ত হেরেছে!
২। হোরোগসেগি সিলাগি মিহালিঃ হাঙ্গেরিয়ান জেনারেল- বুলগেরিয়া দুর্গের ক্যাপ্টেন, তুর্কিদের বিরুদ্ধে ১৪৫৬ সালের যুদ্ধে হাঙ্গেরি জেতে !
৩, এন্টিওক এর বেহেমন্দ-১ঃ ক্রুসেডার, ঘৃনিত পোপ আরবান – ২ এর উস্কানীতেই প্রথম ক্রুসেডের শুরু। এই ব্যাক্তি প্রথম ক্রুসেডের নেতাদের একজন, এন্টিওকে সে ক্রুসেডার রাজত্বের গোড়াপত্তন করে। ১০৯৫- ১০৯৯ সালে জেরুসালেম দখল করে। নারী শিশু বৃদ্ধ একটা প্রানীকেও ছাড়ে নি তারা, ক্রুসেডারদের ঘোড়ার পা ডুবে গিয়েছিল জেরুসালেম্র বাসিন্দাদের রক্তে ! ক্রুসেডারদের কিংডম অভ জেরুসালেম এর শুরুও এ সময়েই।
৪। গ্যাস্টন অফ বিয়ার্নঃ প্রথম ক্রুসেডে যোগদানকারী – জেরুসালেমের প্রতিরক্ষা দেয়াল ভেংগে পড়লে, সেখানে প্রথম অনুপ্রবেশকারী ক্রুসেডার!
৫। পেলাইয়্যু (Pelagius of Asturious)ঃ আস্তরিয়াস এর পেলাইয়্যু, ভিসগথ এর অভিজাত- যে আস্তুরিয়াস রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। ‘রিকনকুইস্তা’র সূচনাকারী হিসেবে তার নাম আসে- ৭১১- ১৪৯১ পর্যন্ত যা চলেছে. মুর মুসলিমদের হাত থেকে ইবেরিয়ান উপদ্বীপ ছিনিয়ে নেয়া প্রত্যক্ষকারী, ৭১৮ সাল থেকে তার মৃত্যু পর্যন্ত সে ক্ষমতায় ছিল।
৬। চার্লস মার্তেল - ফ্রান্স এর এক অংশের শাসক, Tours (৭৩২ সাল ) এর যুদ্ধে জঙ্গলের মধ্যে থেকে গেরিলা যুদ্ধে মূরদের এক অংশের পরাজয়ের ক্রেডিট তাকে দেয়া হয়, ফ্রান্সে এক আরব অভিযানের ইতি শুরু হয় এর সময়েই ( BAttle of Tours)। বলা হয়- ‘যুদ্ধক্ষেত্রে তার সাফল্য আসাধারন’। এর পাশাপাশি ফ্রান্সে সামন্ততান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব দেয়া হয় তাকে। তার নাতি শার্লামেন (Charlemagne) রোমের পতনের পর পশ্চিম থেকে প্রথম সম্রাট হয়েছিল।
৭। ১৪: বর্নবাদী শ্বেতাঙ্গদের আপ্ত বাক্য – ১৪ বাক্য – “We must secure the existence of our people and a future for white children,” . কিম্বা আরেকটু কম প্রচলিত বাক্য, "Because the beauty of the White Aryan woman must not perish from the earth." । মূল স্লোগান ডেভিড লেন নামের শ্বেতাঙ্গ বর্নবাদী বা বর্ণ শ্রেষ্টত্ববাদীর (white supremacist) লেখা। এক অর্ধশিক্ষিত, স্ব- ঘোষিত বেশ্যাপুত্র আমেরিকায় হোয়াইট সুপারম্যাসিকে উস্কে দিতে সাহায্য করেছে, তার লেখা শুধু ১৪ বাক্যই নয়, সে ৮৮ পারসেপ্টস এরও লেখক, প্রকাশক উগ্রপন্থীদের কাছে ১৪/৮৮। জেলেই মৃত্যু হয়েছে তার, যদিও উগ্রপন্থী শ্বেতাঙ্গদের কাছে সে গুরুস্থানীয় ।
১। জসুয়া এস্তেবানেজ (Josue Estebanez) এক স্প্যানিশ নিও- নাজি যে ফেসিস্ট বিরোধী প্রতিবাদী ১৬ বছরের কার্লোস পলামিনোকে হৃৎপিণ্ডে ছুরিকাঘাত করে, সে তখন মাদ্রিদে এক ইমিগ্রেশান বিরোধী এক সমাবেশে অংশ নিতে আসছিল। বর্তমানে ২৬ বছরের জেল খাটছে।
২। মিলোস অবিলিক-(Milos Obilic) প্রিন্স ল্যাজারের এক নাইট, তুর্কিদের বিরুদ্ধে লড়েছে, কসোভোর যুদ্ধের সময় (১৩৮৯) সুলতান মুরাদ এর এসাসিনেশান এর জন্য তাকে দায়ী করা হয়।
৩। লুক্সেমবার্গ এর সিগমুন্ড( Sigismund of Luxemburg) আরেক ইউরোপীয় অভিজাত, ১৩৮৭ থেকে ক্রোয়েশিয়া ও হাঙ্গেরির রাজা ১৪১১ থেকে জার্মানির রাজা, ১৪৩১ ইটালির রাজা, ১৪৩৩ থেকে -৩৭ রোমান সম্রাট হয়েছিল, নিকোপলিস এর ক্রুসেডে উসমানী তুর্কিদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিল, লাভ হয়নি যদিও। ধ্বংস হয়েছিল।
৪। ফেলিক্স কাজিমিয়ার্জ পোটোকি (Feliks Kazimierz Potocki) পোলিশ অভিজাত, তুর্ক এবং তাতারদের বিরুদ্ধে অনেক যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে, ১৬৯৮ সালে তুর্কিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও ছিল। বলা হয়- মাত্র ৬হাজার সেনা নিয়ে সে ১৪ হাজার তাতারদের পরাজিত করেছে (Battle of podhazce)।
৫। ইয়োসিফ গুরকো (Iosif Vladimirovich Romeyko-Gurko) রাশান ফিল্ড মার্শাল, রুশো – টার্কিশ যুদ্ধে (১৮৭৭-১৮৭৮) নেতৃত্ব দেয়, শিপকা- পাস এর যুদ্ধে সে ছিল নেতা।
৬। ভিয়েনা ১৬৮৩ – তুরস্কের পরাজয় হয় ভিয়েনায় এই যুদ্ধে, প্রথম বারের মত অনেক দিন পরে হোলি রোমান সম্রাজ্য উসমান তুর্কীদের বিরুদ্ধে ভিয়েনার সাথে যোগ দেয়, উসমানী খেলাফতের স্বর্ণযুগের শেষ এর শুরু এ ১৬৮৩র যুদ্ধ।
৭। আক্রে ১১৮৯: ক্রুসেডের সময়কার রেফারেন্স, আক্রের অবরোধ চলে প্রায় ২ বছর, সালাহদিন বাহিনী গাই অভ জেরুসালেম সহ ক্রুসেডারদের শেষ অংশকে অবরোধ করেছিলেন এখানে। ( ভুল তথ্য- গাই জেতেনি, ৩য় ক্রুসেডের সূচনাও নয় এটা, মেইল এর লেখক ভুল উদ্ধৃতি দিয়েছে)।
১। ব্লাক সান(Black sun) পুরাতন সেল্টিক সংস্কৃতির অংশ – কাল সূর্য- বা সান হুইল - একটা প্রতীক, প্রথমে নাজি এবং পরে নব্য- নাজিদের মতে- খাঁটি শ্বেতাঙ্গ জাতির প্রতীক।
২। ডগ ট্যাগ (Dog tag)এ ট্যাগ আসলে হোয়াইট সুপারমেসিষ্টদের সেল্টিক ক্রস (celtic cross) এর প্রতীক; হোয়াইট সুপারমেসিষ্টদের সাধারন প্রতীক! ডান দিকের আরেক প্রতীক হল, ভাইকিং সূর্য। সেল্টিক ও ভাইকিং প্রতীক গুলো হোয়াইট সুপারমেসিস্টদের মত অনুসারে খাঁটি শ্বেতাঙ্গ জাতির প্রতীক।
৩। সেবাস্টিয়ানো ভিনিয়ের (Sebastiano vinier ): আগেও এ নাম উল্লেখ করেছে সে তার অন্য একটি অস্ত্রে, লেপান্টোর যুদ্ধের এডমিরাল হিসেবে এ ব্যাক্তি পরিচিত, এভযুদ্ধে ভেনেসীয়রা জেতে- তুর্কিদের বিরুদ্ধে লড়ে। ।
৪। মারকান্টনিও কোলোনা (Mark antonio colonna) ইতালিয়ান অভিজাত, লেপান্তোর যুদ্ধে পোপের জাহাজের নেতৃত্বে ছিল সে, ১৫৭১ সালে। উসমানী তুর্কীদের উপর একটা বড় পরাজয় নামিয়ে এনেছিল এ যুদ্ধ। যখন তুর্কি নেভি অষ্ট্রিয়ার ফ্ল্যাগশিল ‘রিয়াল প্রায় দখল করে ফেলেছিল, এ সময়ে কোলোনা’র গ্যালি এর পাশে আসে এবং প্রতি আক্রমণ করে। কোলোনার সহায়তায় মূলতঃ কমান্ডার আলী পাশা’র জাহাজে উঠতে তারা সমর্থ হয় এবং জাহাজের সবাইকে মেরে ফেলে – কমান্ডার সহ। তখন এ জাহাজে হোলি লিগ এর পতাকা উড়িয়ে দেয়া হয়। এতে তুর্কি বাহিনীর মনোবল কমে যায়।
১। মাইগ্রেশান এর পরিণতিঃ জাতিসংঘ আইনানুগ এবং নিয়মিত অভিবাসনের জন্য একটা প্রস্তাব পাশ করে, ২০১৬ সালে যখন মধ্য প্রাচ্য থেকে অভিবাসীরা দলে দলে ইউরোপে পাড়ি জমাতে শুরু করে। অন্যান্য বিষয়ের সাথে স্বাক্ষরকারীদেরকে আরেকটা বিষয়ে নিবেদিত হতে বলে- তা হল অভিবাসীদের প্রতি বৈষম্য বিরোধী আচরণ। এ বিধিটি ডান-পন্থী ( পড়ুন উগ্র) ইউরোপিয়ানরা তীব্র প্রতিবাদ করেছে। (বৈষম্য তাদের চরিত্রের অংশ, বলতেই হচ্ছে)।
২। জন হুনিয়াদিঃ ১৫ শতকের হাঙ্গেরির সামরিক নেতৃত্বে থাকা একজন, দক্ষিণ সীমান্তে পাহাড়ার দায়িত্বে ছিল, তুর্কি আক্রমণ ঠেকাতে ।
৩। আবার হোয়াইট সুপারমেসিষ্টদের ১৪ শব্দের আপ্ত বাক্য- আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
৪। টুরস ৭৩২, ফ্রান্সের এ যুদ্ধে আরবদের সেনাপতি আব্দুর রহমান এর আক্রমণ রুখে দেয়া হয়, আগেও এ রেফারেন্স উল্লেখ কার হয়েছে। চার্লস ম্যান্তেল এর নেতৃত্বে।
৫। তুর্কোফ্যাগোস (Turcofagos); তুর্কিখোরঃ হারামখোর এর মত তূর্কীখোরও একটা গালি, গ্রীকদের কাছে তা গর্বের বিষয় ; নিকিতাস স্টামাটেলোপুলাস এর ডাক নাম। গ্রীকদের স্বাধীনতা যুদ্ধে খুব জনপ্রিয় ছিল এ নাম (১৭৪৮- ১৭৪৯) ।
এ ঐতিহাসিক নাম গুলো সে স্মরণ করে -মধ্য যুগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর মুসলিম বিরোধী অংশ থেকে, অনুপ্রেরণা সঞ্চয় করেছে সে। মধ্য যুগীয় ক্রুসেডার তথা পুর্ব থেকে পশ্চিম ইউরোপের শ্বেতাঙ্গ নেতৃত্বের নামে তার জিঘাংসাকে বৈধ করার চেষ্টামাত্র – আর কিছু নয়। সে ভুলে গেছে – সে সময়ে রাজ্য লিপ্সাই ছিল এমন যুদ্ধের চালিকা শক্তি, ধর্ম ছিল নেহায়েত আণ্ডার কারেন্ট! পোপ যেভাবে ইউরোপীয় খ্রিস্টানদের উস্কানি দিতে ধর্মকে ইউজ করেছে- ক্রুসেডকে উস্কে দিতে ইউরোপের নেতৃত্বও এমনটা করেছে- তা প্রমানিত হয়েছে!
তুরস্ক খেলাফত এক সময় ইউরোপের বড় শক্তি থাকলেও গত ৩০০ বছর মুসলিমরা এক পরাস্ত শক্তি! এমনকি মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের বেশির ভাগই পাশ্চাত্য দেশগুলোর তল্পিবাহক মাত্র! পাশ্চাত্যবাসীদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই ! এ যুগে মুসলিমরা যে দেশে অবস্থান করে সেখানে শ্রম দেয়, শ্বেতাঙ্গ বা কৃষ্ণাঙ্গ কিম্বা অন্য ধর্মের মানুষদের সাথে একইভাবে ট্যাক্স দেয়- রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রাখে। মুসলিমরা এখনো যে কোন ইউরোপীয় দেশের ১%- ৫% এর মধ্যে। বাস্তব সমত ভাবে চিন্তা করলে, ৯৫% মানুষের এ নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা হওয়ারই কথা নয় । এরা তাদের দেশগুলো দেখল করে নেবে – এটা শুধু কষ্টকল্পনা মাত্র! কিন্তু ক্রমাগত মিডিয়ায় ইসলাম বা মুসলিম বিরোধী প্রচারনা আর অসাধু রাজনীতিকদের অপ- প্রচারনা, প্রতিহিংসা আর ঘৃনাকে পূঁজি করে ভোট বাড়ানোর কৌশলে এখন মুসলিমরা হয়ে গেছে বলীর পাঁঠা। আর এই প্রতিহিংসাপরায়ণ উগ্রপন্থী শ্বেতাঙ্গ বর্নবাদীদের শিকার হচ্ছে তারাই।
কিভাবে এর প্রতিকার করা যাবে?
১। মিডিয়ায় অপ- প্রচারের বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিবাদ আবশ্যক, সম্ভাব্য সব উপায়ে!
২। গন জমায়েতগুলোতে পাহারার ব্যাবস্থা
৩। আত্মরক্ষার জন্য প্রশিক্ষণ এর বিকল্প নেই
৪। হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে মুসলিমদের নাজেহাল অবস্থা আরও বাড়বে বৈ কমবে না! শান্তি পূর্ন প্রতিরোধ গড়ে তুলা, মানুষকে সত্য তথ্যগুলো জানিয়ে দেয়া – সংখ্যা গরিস্ট দের সাথে সু – সম্পর্ক গড়ে তুলা ও সেটা বজায় রাখা – ইসলামের মানবতাবাদি দিক গুলোকে তুলে ধরা ও তার উপরে আমল করা জরুরী! নিজের ধর্মীয় প্র্যাক্টিস গুলো থেকেও মুসলিমরা দূরে সরে যাচ্ছে, তাদের আচরন আর ইসলামী আচরন নয়। হেন অপকর্ম নেই যা সে তথাকথিত মুসলিমরা করছে না, বাস্তব জীবনে একজন অমুসলিমের চাইতে সে খারাপ।
নবী (সাঃ)এর হাদিস গুলোর মধ্যে একটা গুরুত্ব পুর্ন হাদিস ছিল।
১ । সত্য বলবে, মিথ্যা বলবে না
২। কখনও কাউকে ধোঁকা দেবে না , প্রতারনা করবে না ।
৩। প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবে!
এমন চারিত্রিক উৎকর্ষতা থেকে আমরা বহুদূরে।উট না বেঁধে শুধু আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করলে আর যাই হোক- মুসলিমদের সুদিন আসবে না, এটা নিশ্চিত!
বিষয়: বিবিধ
৯৯৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রায় ৩০ মিনিট ধরে সে দিনে দুপুরে, খোলা ময়দানে, এক মাসজিদ থেকে আরেক মাসজিদ গিয়ে , গাড়ি থেকে বন্দুক বদল করে, নিরীহ নিরস্ত্র ও নামাজরত মুসলমানদের উপর সে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে । পরে আফসোস করেছে যে সে বেশী তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে। অপেক্ষা করলে সে আরও লাশ ফেলতে পারতো।
তাহলে এতটা কনফিডেন্স সে কিভাবে পেল যে এই সময়ের মধ্যে কোন পুলিশ তাকে বাঁধা দিতে আসবে না?
আল নূর মাসজিদের বাথরুম থেকে নামাজে আসা একজন মুসল্লী পুলিশ স্টেশনে ফোন করলেও পুলিশ সেটা রিসিভ করে নি। এমন তো না যে নিউজিল্যান্ড পুলিশের সবাই সে সময়ে জুম্মার নামাজে গিয়েছিল!
আর ঘটনার পর এখন লাইম লাইটে এসেছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা। অনেক প্রটেকশন নিয়ে উনি পরের জুম্মায় এসে পাহারা দিয়েছেন, সাথে অন্যান্য মহিলারাও ছিলেন।
কিন্তু উনি কি খৃষ্টান শ্বেতাঙ্গদেরকে এখন কড়া নজরদারীর মধ্যে রেখেছেন যেমনটা আমরা দেখে থাকি কোন মুসলিম এটা যদি করতো? এর জন্য কি খৃষ্টান সম্প্রদায়কে কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে যেমনটা আমরা দেখে থাকি কোন মুসলমানের নাম আসলে?
মন্তব্য করতে লগইন করুন