অবসরে
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১১:২৮:১০ রাত
ঝির ঝির করে ঝরে যাচ্ছে তুষার! ঝরছে একটানা, সেই সকাল থেকে!ভোরে উঠেছিলাম একবার; এরপর তুষারপাতের মনোটনাস খেলা দেখতে দেখতেই সকালের সুখসুপ্তিতে আবার কখন তলিয়ে গেছি ! যখন উঠলাম- তখনও তাড়া নেই! গরম কফির কাপ হাতে নিয়ে যখন ৮ ফিট প্রশস্ত কাঁচের জানালার সামনে বসলাম, তখনও রবিবারের সকাল ! আহহ! ঝরছে তুষার, ঝরুক ! আমি গৃহকোণের উষ্ণতায় বসে গরম কফিতে চুমুক দেই আর দুচোখ ভরে দেখতে থাকি এই ক্রমাগত তুষারপাত! এমন ধারাবাহিক পতন দেখতেও ভাল লাগে! মন কোথায় হারিয়ে যায় দূর অতীতে; আষাঢ় দিনের ইলশে গুঁড়িতে এমন ধারাই যেন অনুভূত হত!
খুব ছোট ছোট কণা – গুঁড়ি গুঁড়ি, তবে জমাট বাধা শক্ত দানা নয়, মোলায়েম, একেবারেই ওজনহীন। ফ্লেকস! বাংলায় এমন শব্দ বোধ হয় নেই, অনুবাদ করতে গেলে এমন জবরজংগ শব্দমালা আসবে যে– তা দেখে কবিত্ব হারিয়ে যাবে ! একটু বাতাস থাকলে এক ধরনের গতি আসে এই তুষারপাতে, একটা প্রবাহ দেখা যায়। আজকে মনে হচ্ছে পবন দেব ঘুমিয়ে পড়েছেন! তাই বা বলি কি করে ! একটা কৌণিক ছাঁট দেখছি, ঝিরঝিরানি দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে আবার! নাহ! পায়ের উপর ছোট কম্বলটা টেনে দেই আবার!
ঘরে হিটার চলে অবিরাম, ২১ ডিগ্রীর স্থির তাপমাত্রা, এর চেয়ে বেশী হলে গরম বোধ হয়, যদিও গরমের দিনে এয়ার কন্ডিশনারের তাপমাত্রা ২২শে স্থির করা থাকে। হাওয়ায় ভেসে আসা তুষারকণা জমা হচ্ছে আস্তে আস্তে, রাস্তা ঘাট উঠোন, ঘরের ছাদ, বারান্দা সব দিকে কায়েম হচ্ছে একই রং- এর সাম্যবাদ। কেবল মধ্যে মধ্যে চির হরিত বৃক্ষগুলো বেরসিক সেলিব্রেটিগুলোর মত নিজের শরীরের চামড়া খানিকটা বের করে রেখেছে, যেন দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য। আজ আকাশ এর কোন রং নেই- ধূসর সাদার মাঝামাঝি একটা ভঙ্গীতে স্থির; ‘ভাবলেশহীন’ বোধ হয় একেই বলে। কিছুতেই কিছু আসে যায় না তার- এমন একটা গোঁ ধরেছে বোধ হয়; বাড়িতে রান্না হোক আর না হোক বড় কর্তা বাজার মূখো হবেন না আজ- এযেন তার ভীষ্মের প্রতিজ্ঞা! ধূসর আকাশের গায়ে ঠেস দিয়ে রয়েছে পাতা বিহীন ডালাপালার কঙ্কাল, সাদা তুষারের বিরুদ্ধে এক জমজমাট বর্ণবাদ বিরোধী মিছিল, কালো কালো ক্ষিপ্ত হাত গুলি আকাশে প্রক্ষিপ্ত ।
একটা পাখিও নেই, একটা পোকাও নড়ছে না, প্রকৃতির সাথে সব জমাট বেঁধে গেছে মনে হয়, অথবা তুষারপাতকে স্বাগত জানাতেই তারা দল বেঁধে ‘মূক হয়ে গেছে! এদের ‘প্যান্টোমাইম আমাকেও স্তব্ধ করেছে, মন চাইছে না কিছু করতে, কিছু বলতে। একটা রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনলে কেমন হয়? নাহ! এই লোক পূর্ব বঙ্গের চাষাভুষোদের জন্য ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছিল- এ কথা গুলো মনে হলে সব রবীন্দ্র সঙ্গীত ডাস্টবিনে ফেলতে ইচ্ছে করে! এটা ভুলে যাই কি করে – আমি তো সেই চাষাভুষোদের সন্তানদেরই একজন! এই চাষাভুষোদের শ্রমেই যার দেহের রক্ত মাংস পুষ্ট হয়েছে- তাদের প্রতি কেমন চরম অশ্রদ্ধা ছিল এই অকৃতজ্ঞ জমিদার তনয়ের! ভাগ্য ভাল, ব্যাটা মরে বেঁচেছে! তাকে বিশ্বকবি যারা বলে তার জন্মান্ধ! সে তো পশ্চিম বঙ্গের কবি, আঞ্চলিকতার দোষে দুষ্ট এক পেটি বুর্জোয়া মাত্র!
রোববার গুলো কেমন যেন অবসাদ নিয়ে আসে! সারা সপ্তাহের শ্রম ব্যাস্ত মানুষ স্বপ্ন দ্যাখে সপ্তাহান্তের! ঝরছে তুষার – ঝরতে থাকুক! আজ অফিসে যেতে হবে না, রাস্তায় জমে থাকা বরফের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে না, দীর্ঘ ট্রাফিকের পেছনে থেকে অফিস পৌঁছুতে দেরী হয়ে যাবে এই স্ট্রেস নিয়ে শাপ শাপান্ত করতে হবেনা ! আবেশে চোখ মুদে আসছে! আহ – শান্তি!
আরে ! কি হল! হঠাৎ চোখ খুলে দেখি -বদলে গেছে তুষারের প্যাটার্ন ! ছোট ছোট গুঁড়ি গুঁড়ি তুষারকণা, এখন বড় হয়ে উঠেছে, আরও প্রশস্ত হয়ে উঠেছে! যে ধারায় পড়ছিল- সে ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে, কেমন ধীরে ধীরে পড়ছে স্লো মোশনে! ভিসুয়াল গ্রাফিক্স! কত রকমের বৈচিত্র যে লুকিয়ে আছে প্রকৃতির গর্ভে! একটু বাতাস উঠলেই এখন আবার বদলে যাবে সব কিছু! তারপর আরেকটু গতি বাড়লে - ! তুষার ঝড়! তখন লেখা হবে আরেক ইতিহাস ! উপভোগ থেকে শুরু হবে দূর্ভোগ! কখনো কখনো মনে হয়, জীবনের শান্তি আর অশান্তির মধ্যে খুব বড় উঁচু দেয়াল নেই; সুক্ষ্ম একটা পর্দা মাত্র! নিমেষে মধু হয়ে ওঠে বিষ, ঘটনা হয় দূর্ঘটনা, কবিতা হয়ে যায় নিখাদ গদ্য! সহজ ভাবে নিতে পারলে অশান্তির মধ্যেও শান্তির অস্তিত্ব খুঁজে বের করা সম্ভব! কিন্তু ব্যাস্ত মানুষ! তার সময় কোথায়! এগুলো ভাবার!
বিষয়: বিবিধ
৯৯৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পূর্ব বঙ্গের চাষাভুষোদের জন্য ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছিল ,
তার কবিতা কে জাতীয় সঙ্গীত। রবীন্দ্রাথ
কে নিয়ে মাতামাতি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন