লাভ-লাইজ-ব্লিডিং (Love Lies Bleeding): ব্যার্থ প্রেম, মিথ্যা আর নৈরাশ্যের ডাঁটা শাক

লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০২ অক্টোবর, ২০১৭, ০৮:১৫:০৬ সকাল







Superweed explosion threatens Monsanto heartland!

এমন ‘অগ্নিস্ফুলিংগ মার্কা শিরোনাম কোন পত্রিকার প্রথম পাতায় দেখলে মানুষ চমকে উঠবেই- সন্দেহ নেই। তাও আবার আমেরিকান নিউজ পেপারে~ যে দেশের খবর পৃথিবীর প্রায় সকল দেশের পত্রিকায় প্রথম পেজে বড় ফন্টে লেখা হয়! তবে এটা কেবল নামমাত্র শিরোনাম ছিল না, ছিল ফ্যাক্ট!

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিনের কৃষিভূমিগুলো Monsanto’র জিএম (GM- Genetically modified) শস্য ফলানোর ঢালাও বন্দোবস্ত করে ফেললেও বাদ সেধেছে পিগ উইড নামের এক ‘সুপার উইড। তার অপর নাম- আমারান্থাস (Amaranthus sp. ), কেজো বাংলায় বললে- আমাদের ঘরের কাছের ডাঁটা শাক । খুঁড়া, কাঁটানটে, কাঁটাবিহীন নটে শাক – সবাই একই Amaranthus গণভুক্ত উদ্ভিদ! গ্রীক ‘আমারান্তস’ অর্থ –চির অম্লান (Unfading)- এটা অবশ্য এর অপরিবর্তনীয় ফুলের রং এর বিষয়ে সত্যি, যা কখনো ম্লান হয় না! যেমন ছিল তেমনি থাকে!

Monsanto এক ধনন্তরি ‘আগাছা-নাশক’ আবিস্কারের কল্যাণে দুনিয়া জোড়া একচেটিয়া ব্যাবসা করছিল; তাদের কৃষিশস্যের ব্যবসা- সাথে ‘গাছের খাবে তলারও কুড়াবে’ এমন ব্যবস্থা করে ফেলেছে তারা! শস্য তো আছেই, সাথে তাদের এ আগাছা বিধ্বংসী ‘বস্তুর নাম ‘রাউন্ডআপ! এক ধরনের গ্লাইফসফেট যৌগ। কেবল জি এম উদ্ভিদ ছাড়া রাউণ্ড আপ, বড় পাতার প্রায় সকল আগাছাই ধ্বংস করে দেবে! মানুষ চায় সেটাই আজকাল- ধর তক্তা মার পেরেক! তবে এতে 2,4 D এর মত ক্যান্সার উৎপাদক থাকার কারনে সুইডেন, নরওয়ে সহ ইউরোপের অনেক দেশ নিষিদ্ধ করেছে- এই বিষ, যা কিনা ’৬০ এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধে বন ধ্বংসকারী আমেরিকান ‘এজেন্ট অরেঞ্জ’ এরও একটা উপাদান! পরিবেশের জন্য যতই ক্ষতিকর হোক, বানিজ্যিক কৃষিতে সস্তা পড়ছিল, তাই তারা রাউন্ড আপ দিয়ে -আগাছার বংশ, ধ্বংস করছিল ! যান্ত্রিক কৃষির জন্য সুবিধাজনক- ! ‘কনভিনিয়েন্ট! শুধু তাই নয়, সাধারন মানুষও এদিকের শস্যক্ষেত্র বা নিজেদের গার্ডেন / আঙ্গিনায় জন্মানো বড় পাতার প্রায় সকল আগাছা ধ্বংস করতে এই ‘আগাছা-নাশক’ ব্যাবহার করে আসছিল। বাদ সাধল এই ডাঁটা শাক। এমন সরল সাদা চেহারার উদ্ভিদ- আমারান্থ! কত হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল?

প্রতি একরে ৮৮ আউন্স মাত্রায় এই আগাছা নাশক ব্যাবহার করা হল । তিন বারে, ২৬৪ আউন্স বিষ হজম করেও কিছু ডাঁটা শাক টিকে গেল এখানে; সেই থেকে শুরু। রাউন্ড আপ প্রতিরোধী আগাছা! তাকে বলা হল ‘সুপার উইড! ক্ষতিকর, খারাপ বা নোংরা কিছু হলেই শুয়োরের সাথে তাকে জুড়ে দেয়া শুধু আমাদের দেশেই নয় – পাশ্চাত্যেও চালু রয়েছে! এই ‘খতরনাক আগাছার ডাক নাম হয়ে গেল- পিগ উইড! আমরা যেমন সময়ে রাগ করে বলে ফেলি- শু --- বাচ্চা!

২০০১ সালে ইলিনয় এর দক্ষিনে এই প্রতিরোধী আগাছা সনাক্ত করা গেল; ২০০৬ সালে তা ইলিনয় এর উত্তরাঞ্চলে এসে হাজির। ২০১৭ সালে আমি দেখছি আরও অনেক অনেক উত্তরে, টরন্টোতে; আমার এক প্রতিবেশীর ফ্রন্ট ইয়ার্ডে ! অবশ্য উড়ে এসে জুড়ে বসল নাকি কেউ শখ করে কারো বাগানে এর বীজ বপন করেছে- এবং সেখান থেকে এরা সটকে পড়েছে আশপাশে- তা বলা শক্ত। বাস্তবতা এই যে, এরা ছড়িয়ে পড়েছে। মনসানতো’র মত এক ‘দৈত্যের প্রতি বিরাট এক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে এক ক্ষুদ্র উদ্ভিদ প্রজাতি ! ২০১৫ সাল থেকে অ্যামেরিকার ‘বর্ষ সেরা আগাছা’র খেতাব জুটেছে এর কপালে- পর পর ২ বছর এদের ‘শীর্ষ নাম এখনো অক্ষুণ্ণ রয়েছে।

Amaranthus গণ (Genus) এর অনেকগুলো প্রজাতি। সবগুলো আলোচনা করা সম্ভব হবে না, আমরা কেবল এর বিশেষ কয়েকটা প্রজাতিকে তুলে ধরব আজকের প্রবন্ধে।

এদের সহ্য ক্ষমতা উঁচু মানের। খরা সহ্য করে টিকে থাকতে পারে জন্য মরু বা মরু- সদৃশ এলাকাতেও এদের দেখা পাওয়া যায় প্রায়শঃ। দক্ষিন আমেরিকার আদিবাসী- মেক্সিকো পেরু সহ আফ্রিকাতেও দানা শস্য হিসেবে এর চাষ করা হতো, অনেক এলাকাতে এখনো হচ্ছে!

আফ্রিকার মত, মেক্সিকোতেও প্রায় হাজার বছরের ইতিহাস এই শস্যের । কম যত্নে, অল্প পানিতে, খরা সহ্য করে জন্মাতে পারে এবং কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে রোগ শোকের আক্রমণ কম, দানা সংরক্ষণ করতেও তেমন ঝামেলা পোহাতে হয় না- গম বা ভুট্টার তুলনায় এটা দীর্ঘদিন অবিকৃত থাকে- ইত্যাকার কারনেই শুধু আদিবাসী মেক্সিকান নয়, আরও অনেক দক্ষিন আমেরিকান দেশেও কৃষির আদি থেকেই এর চাষ করা হতো বলে রেকর্ড রয়েছে। তবে এখন আর ধান গম বা ভুট্টার মত এটা মূল দানা-শস্যের পর্যায়ে পড়ে না। যদিও চাহিদা রয়েছে এখনো যথেষ্ট। দক্ষিন আমেরিকার আন্দেজ (Andese) এলাকা – পেরুর পাহাড়ি এলাকার দানা শস্য – কিবিচা (Kiwicha) বলতে এর দানাকেই বুঝায়।

আমাদের দেশের লাল শাক (Red garnet amaranth-রেড গারনেট আমারান্থ) খুব জনপ্রিয় এক সব্জি।



পুষ্টি তো আছেই, সাদা ভাতে মেখে নিলে এমন সুন্দর লাল রং হয়! সাদা ভাতের উপর শুধু এই রঙের কারনে দুটো শাকের প্রতি শৈশবে আমার নিজেরও আকর্ষণ জন্মেছিল, একটা বথুয়া, অপরটি এই লাল শাক। উচ্চ মাত্রার ‘বেটা-এন্থো সায়ানিন এর উপস্থিতির কারনে এদের কান্ড এবং পাতার বা ফুলের এই বেগুনী লাল রং হয় । এর থেকে Hopi red dye বানানো হয়, উল্লেখ রয়েছে ।

তথাকথিত ‘সভ্য ইউরোপিয়ান- অন্যদের ভাষায়, স্পেনিশ লূটেরাদের হাতে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত দক্ষিন আমেরিকার অ্যাজটেকদের মূল দানা শস্যের একটি ছিল এই আমারান্থ-; এক সুত্র এটাকে ‘গোল্ডেন গ্রেইনস অভ গড’(Golden grains of God ) বলে সম্মানিত করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে। এ এলাকার সেই ‘অসভ্য মানুষদের হাতে ছিল প্রচুর সম্পদ- সোনা! তাদের ‘সভ্য করতে ইউরোপিয়ান ‘বিজেতা (পড়ুন, লুটেরা)রা হাতে করে এনেছিল বাইবেল। এ ব্যাপারে এক ভুক্তভোগী বোদ্ধার মন্তব্য –“তারা যখন এলো, তাদের হাতে ছিল বাইবেল আর আমাদের হাতে ছিল সোনা! কিছুদিন পর আমাদের যখন হুঁশ ফিরল – দেখি আমাদের হাতে বাইবেল- আর তাদের হাতে সোনা’। অবশ্য সেটা অন্য গল্প!

ডাঁটা শাক- শক্ত প্রাণ- বলেই হয়তো পৃথিবীর প্রায় সকল মহাদেশেই এর সফল পদচারনা। অনেক ক্ষেত্রেই তাদেরকে যত্ন করে আবাদ করা হয়নি। আগাছা হিসেবে হেলায় বেড়ে উঠেছে তারা, মানুষ কেবল তা ‘সংগ্রহ করে নিয়েছে- হয় শাক পাতার জন্য, অথবা দানার জন্য। কাঁটাখুঁড়ে (A. spinosus ), খুঁড়ে (A. viridis), ডাঁটাশাক- এমনকি লাল শাক এখনও বাংলাদেশের গ্রাম এলাকায়- বসত বাটির আশে পাশে নিতান্ত অবহেলায় জন্মায়; মাত্র ২০-৩০ বছর আগেও অধিকাংশ গ্রামের মানুষ নিত্যদিনের শাকপাতা বাজার থেকে কিনত না- আশপাশ থেকেই ‘সংগ্রহ করত; এখনো করে না – এমন নয়। অবশ্য আগের দিনে খালে বিলে মাছও পাওয়া যেত অঢেল-গ্রামের পাশের খাল বিল থেকে মাছ ধরত মানুষ। এমন একটা সময় গেছে- ঘরের চাল ডাল, খালে বিলের মাছ- বাড়ির আশেপাশে বুনো শাক পাতা বা হাতে লাগানো গাছ থেকে লাউ কুমড়ো শাক সব্জি ফল মূল – গ্রামে মানুষের নিত্য দিনের খাবার ছিল; তেল আসত কলুবাড়ি থেকে ঘানী ঘুরিয়ে! নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষের মধ্যে বাজার থেকে কিনতে হতো- লবণ আর কেরোসিন! অবশ্য সেটা এখন বোধ হয় গল্পকাহিনীর মত শুনাবে! বাজার এখন পণ্যে সয়লাব- মার্কেট ইকনমি! চাহিদা আর সরবরাহের অর্থনৈতিক সুত্র! অবশ্য চাহিদা না থাকলেও কৃত্তিম চাহিদা সৃষ্টি করা হয়- সুন্দর মুখের বিজ্ঞাপন চালিয়ে! এভাবেই অনাবশ্যক আবর্জনায় ভরে গেছে বাজার, দেশ, সারা পৃথিবী!

এবার কয়েকটা অতি পরিচিত – বিশেষ বিশেষ আমারান্থ প্রজাতির আলোচনা আসা যাকঃ

A. caudatus (Love-lies-bleeding, pendant, velvet flower)



চমৎকার, দৃষ্টি নন্দন আমারান্থ এর উল্লেখ করতে গেলে এই নামটাই আগে আসে; দানা বা বীজের জন্য নয়, শুধু ফুলের সৌন্দর্যের জন্য এর চাষ হয় কেবল আমেরিকায় নয়, ইউরোপ সহ অন্য মহাদেশেও। আমার এক প্রতিবেশী তার ফ্রন্ট ইয়ার্ডে বেড়ার ধার দিয়ে চার ফুট অন্তর অন্তর লাগিয়ে দিয়েছে সেই ফুল, বেগুনী চুলের দীর্ঘ বেণীর মত, এর সাথে আবার ‘ভেলভেট এর মত গোলাকার বল গুলো ঝুলে ঝুলে আছে! এক ভিন্ন মাত্রার সৌন্দর্য-যোগ হয়েছে! এর আগেও উল্লেখ করেছি- কম যত্নে – কম পানিতে বড় হয়! এদেশের ব্যাস্ত জীবনে অনেক মানুষই নিজের বাগানের জন্য এমন ধরনের গাছপালার জাত নির্বাচন করে যা দেখতে সুন্দর কিন্তু জন্মানো ‘কষ্ট সাধ্য নয়! সে দিক থেকে এটি পারফেক্ট, সন্দেহ নেই!

Ornamental হিসেবে এর চাষ হয়েছে শত শত বছর আগেই! ভিক্টোরিয়ান যুগে (১৮৩৭-১৯০১) সে সমাজের ‘এলিটরাই বেশীরভাগ বাগান করত। গরীবদের নুন আনতে পাতা ফুরাতো সে যুগেও-। ক্ষুধার জগতে গদ্যময় পৃথিবী! কাজেই বাগানের পেছনে ব্যায় করার মত ‘রেস্ত তাদের ছিলনা; এখনো কি আছে! তবে দৈন্যতার কারনেই হয়তো সমাজের পিছিয়ে থাকা মানুষগুলো ‘সফল মানুষদের অনুসরণ করে, এখনো করছে! তো, সে যুগের লর্ডদের বাগানে বিশেষ জাতের বা বিশেষ বর্ণের ফুল – কিছু বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে লাগানো হত, এর পেছনে কিছু গুঢ় অর্থ থাকত। সাদা বা লাল বর্ণের গোলাপ এর এক অর্থ, বেগুনী লালচে রঙের আমারান্থ এর অর্থ আবার আলাদা! এর অপর নাম লাভ, লাইজ, ব্লিডিং (Love lies Bleeding) ! ব্যর্থ প্রেম বা নৈরাশ্যময় প্রেম উপাখ্যান এর প্রতীক হিসেবেই এর অর্থ করা হত। যেহেতু এটা ‘অর্থবহ ছিল, একটা ফুলের তোড়া বা ‘বোকে – অলিখিত ভাবে দাতা আর গ্রহীতার মধ্যে ‘ভাব বিনিময় করতে পারত! তবে এর সাথে আধ্যাত্মিকতাও যোগ করেছে কেউ । খৃষ্টের প্রেম- আর ত্যাগ তিতীক্ষা – আর অন্যদের জন্য স্বার্থত্যাগ বা আত্ম-বিসর্জনকেও সেই অর্থে প্রকাশ করেছে। এর ঝুলে থাকা দীর্ঘ মঞ্জরী –চুলের বেনী বা পণী টেইল এর কথা মনে করিয়ে দেয় ; মঞ্জরীর সাথে গোলাকার বল– নিয়মিত জ্যামিতিক তল এর বিপরীতে এই খাড়া কাণ্ডের গাছ- (ফুল ফুটলে যার জন্য খুঁটির আশ্রয় দরকার হয়)- এবং এর মাথায় ঝুলে থাকা ঝুলন্ত দীর্ঘবেণী আর বল গুলো এক নূতন মাত্রা যোগ করে। বাগানের সীমান্তে লাগালে সকল গাছের উপর দিয়ে মাথা উঁচু করে দৃষ্টি কাড়বে এই দৃষ্টি নন্দন গাছটি! সেভাবেই লাগানো হয় এগুলোকে!

অবশ্য লম্বা টাসেল বা বেণীর মধ্যে বীজের সংখ্যাও প্রচুর। কাজেই দানার জন্যও এই প্রজাতি বা এর হাইব্রিড ব্যবহার করা হয়েছে- অতীতে। A. caudatus, A.cruentus, A. hypocondriacus বা এদের হাইব্রিড গুলো দানার জন্য ভাল জাত।

A.cruentus:



বর্তমান দুনিয়ায় দানার জন্য চাষ হয় এমন তিনটা প্রজাতির একটা; মেক্সিকোতে বলে হুয়াউতি বা ওয়াউতি কিম্বা আলেগ্রিয়া ! আর যে সব নামে একে ডাকা হয়, তার মধ্যে লাল আমারান্থ, বা বেগুনী আমারান্থ প্রিন্সেস ফেদার বা মেক্সিকান দানা আমারান্থ ! মহারাষ্ট্রে একে বলে শ্রাবনী মাঠ বা রাজগীরা!

A.palmeri:

আমেরিকার ‘মনসানতোকে এক হাত দেখিয়ে দেয়া এই প্রতিরোধী প্রজাতির নাম A. palmeri বা পিগ উইড। সবুজ পাতা ও ফুলের এই জাতটি দেখতেও বেশ শক্ত পোক্ত- দেখলেই মনে হয় অনেক ঝড় ঝাপটা সহ্য করে টিকে থাকবে সে! যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের অর্ধেকে এদের রাজত্ব, পূর্ব পাশে হয়তো ঢুকানো হয়েছিল ইচ্ছে করে, যেমনটা ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য এলাকায় অনুপ্রবেশ করেছে এই উদ্ভিদ। দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পায় এবং এক সাথে জন্মানো অন্য উদ্ভিদকে টেক্কা দিয়ে উপরে মাথা তুলে আগে, অন্যদেরকে কোণঠাসা করে ফেলতে পারে। টিকে থাকার যোগ্যতায় এগিয়ে ! মাটি থেকে অতিরিক্ত নাইট্রোজেন সংগ্রহের স্বভাব, কাজেই উর্বর জমির ক্ষেত্রে এদের অধিগ্রহণ, আবাদি ফসলের অপুষ্টির কারন হতে পারে এবং সেই সাথে এরা নিজ দেহে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নাইট্রোজেন জমা করে রাখে। পালং এবং আরও কিছু সবুজ সব্জির মত এদের শরীরে অক্সালিক এসিডের আধিক্য থাকে; যতই স্বাস্থ্যকর হোক, এর অতিরিক্ত ভোজন কিডনি রোগী সহ আরও অনেকের জন্যই ক্ষতিকর হতে পারে। পরিমিত হলে যেটা দারুণ উপকারী, অধিক হলে সেটাই প্রাণঘাতী! অতিরিক্ত নাইট্রেট জমা করে রাখে এরা ! গরু বাছুরের ক্ষেত্রেও বেশী পরিমাণে খেয়ে নিলে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে – পাতায় অতিরিক্ত নাইট্রেট এর কারনে!

সয়াবিন এবং তুলার বানিজ্যিক চাষের ক্ষেত্রে এটা ‘ঝুকি পূর্ণ আগাছা হিসেবে খবরের কাগজে শিরোনাম হয়েছিল- এই জাত। আপাদমস্তক সবুজ এবং উচ্চমানের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই উদ্ভিদ, আদিবাসী আমেরিকাদের নিয়মিত খাদ্য তালিকায় ছিল; এর দানা এবং পাতা / কাণ্ড সবই। আজকের দিনে আদিবাসীদের খাদ্যাভ্যাসও পরিবর্তিত হয়ে গেছে, পরবর্তী জেনারেশন এখন শহুরে জীবনধারায়, প্রক্রিয়াজাত খাবারে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে; ১৬ শতকের ঘোড়া দাবড়ে বেড়ানো, অসম্ভব মজবুত স্বাস্থ্যের আদিবাসী, সেই আলো ঠিকরে পড়া চকচকে বাদামি পেশল দেহ, সেই নেটিভ আমেরিকান আজ কল্পনা মাত্র। অনেক ক্ষেত্রেই -পেট মোটা, অপরিচ্ছন্ন – ভিখারী বা মাতালের চেহারা পেয়েছে এক সময়ের দুর্ধর্ষ যোদ্ধা- শিকারী জাতির বংশধর! দুর্ভাগ্যজনক।

যাহোক, বানিজ্যিক চাষীদের হাজার হাজার একর জমিতে এই আগাছা যখন ‘রাউণ্ড আপ’ দিয়ে দূর করা গেল না, সেটা একটা বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়ালো। বিকল্প হল – হাত দিয়ে উপড়ে ফেলা। এটা এক বা দু একর জমি নয়, কাজেই সেটা তাদের জন্য বাস্তব সম্মত কোন সমাধান নয় ! মনসানতোকে সত্যিই চ্যালেঞ্জ করেছে এই উদ্ভিদ! এত দ্রুত বাড়ে (তিন দিনে ৪-৫ ইঞ্চি; এক মাসে ১২- ১৮ ইঞ্চি । সেই তুলনায় তুলা গাছের বৃদ্ধি অনেক কম, মাসে পাঁচ থেকে ৮ ইঞ্চি); কাজেই এই উদ্ভিদ খুব দ্রুত তুলা বা সয়াবিন গাছ এর বৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে যায়। আর যখন আগাছা নাশক এদের দমন করতে পারছে না, তখন চাষীরা বিপাকে ।

A.tricolor ; synoym A. gangeticus



হিব্রু বাইবেলে বর্ণীত হয়েছে- ‘বহু রঙ্গা কোট’ । প্রফেট ইউসুফ (Josef) তার পিতা ইয়াকুব (Jacob) – (তাঁদের আত্মার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক) এর কাছ থেকে পেয়েছিলেন এই বহুরঙ্গা কোট ! ইয়াকুব (আঃ) এর আরেক নাম ইজরায়েল। কিং জেমস ভার্সন বাইবেল-এর অনুচ্ছেদ ৩৭:৩ বর্ণনা করেছে এভাবেঃ ‘এখন ইজরায়েল সকল সন্তানের মধ্য থেকে ইউসুফকে বেশী ভালবাসেন- কারন তিনি তাঁর শেষ বয়সের সন্তান; তিনি তাকে বানিয়ে দিলেন ‘বহু- রঙ্গা কোট!’ (‘Kethoneth passim-কেথোনেথ পাসিম’) । তিন রঙ্গা পাতার আদর্শ প্রজাতিটি চমকপ্রদ, বর্ণীল। যদিও এক রঙ্গা লাল শাকও এই প্রজাতির সদস্য। লাল শাককে A. gangeticus বলা হলেও সেটা A.tricolor এর সমনাম মাত্র। পুষ্টিমান এবং স্বাদের দিক থেকেও অনন্য এই প্রজাতি। বাংলাদেশ এবং ভারতে তো বটেই, কোরিয়া- জাপান চীনের খাদ্যাভ্যাসে এর স্থান অগ্রগণ্য।

বিশেষ করে কোরিয়ানদের কুলিনারি অভ্যাসে A. tricolor এর ব্যবহার লক্ষনীয়। কোরিয়ার গ্রাম এলাকায় বন্য প্রজাতি হিসেবেই প্রচুর জন্মায়, এবং তারা একে বলে ‘বিরিউম! লাল ডাঁটা সহ ছোট ছোট পাতার সব্জি হল ‘চামবিরিউম- বা প্রকৃত বিরিউম। ‘নামুল সব্জি হিসেবে এই বিরিউম এর ব্যবহার কোরিয়া উপদ্বীপে স্বীকৃত, যাকে বলে ‘বিরিউম নামুল। সয়া সস এর স্যুপ এবং ‘গোচুজাং – দুভাবেই এটা ব্যবহৃত হয়। বিরিউম নামুল এক বিশেষ ধনের নামুল রান্না- যাতে এর শাক পাতাকে সেদ্ধ করে পানি চিপে ফেলে দিয়ে- সিজনিং করা হয় দিওঞ্জাং বা গোচুজাং, তিলের তেল, পেঁয়াজ পাতার কুচি, রসুন কুচি ও শুকনো, খোসা ছাড়ানো তিল দিয়ে। ফুটে উঠা পানিতে ৩০ সেকেন্ড থেকে এক মিনিট শাকগুলোকে ফুটিয়ে – দ্রুত ঠাণ্ডা পানি যোগ করে একে অধিক সেদ্ধ হওয়া থেকে রক্ষা করা হয় ! এরপর হালকা ভাবে চিপে পানি ফেলে দিয়ে, পেঁয়াজের কচি পাতা বা ডাঁটা সহ কচি পেঁয়াজ কুচি বা স্ক্যালিয়ন কুচি, থেঁতো করা রসুন, সয়া সস, তিল তেল যোগ করে সিজনিং সম্পন্ন করা হয়। এই বিশেষ সব্জি নামুল, বার্লি রাইস এর সাথে খাওয়ার চল রয়েছে। লবন মরিচের বালাই নেই-তাই বাঙ্গালি রসনায় এমন ধারার খাবার কতটুকু মজা লাগবে সেটা গবেষণার বিষয়।

ব্যাবহারঃ

আগেই উল্লেখ করা হয়েছে- অ্যাজটেকদের ‘স্বর্গীয় দানা শস্য ছিল অ্যামার্যাচন্থ! উঁচু মাত্রার প্রোটিন, গ্লুটেন মুক্ত, লাইসিন সমৃদ্ধ বীজ; যে গুণ অনেক দানা শস্যেই অনুপস্থিত। এর পাতায় ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান রয়েছে । তবে এতে অক্সালিক এসিডের পরিমাণও রয়েছে যথেষ্ট যা ক্যালসিয়াম এর পুষ্টিমানকে দুর্ভাগ্যক্রমে, অকার্যকর করে দেয়।

খৃষ্টের জন্মের চার হাজার বছর পূর্বে মেক্সিকোতে এর ব্যবহার হয়েছে- দানাশস্য হিসেবে। এটা তাদের মূল খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হত । বীজ সাধারনত দুই রং এর- বুনো জাতের গাছের বীজ কালো এবং আবাদি জাতের বীজ সাদা বর্ণের। এর শস্য দানা খাওয়া হয় গম বা ভুট্টার মতই। পাতাকে পালং এর মত করে খাওয়া হয় বিভিন্ন মহাদেশে! বীজ গুড়ো করে পাউডার বানানো হয়, স্টার্চ এবং অন্যান্য খনিজ উপাদানের উৎস । বীজ কে পরিজ হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। যদিও মূল খাদ্য নয়, তবে এর ব্যবহার আদিম গোত্রের মানুষের কাছে এখনো শেষ হয়ে যায়নি। এর অংকুরিত বীজকে ‘বিন স্প্রাউট এর মত সালাদ হিসেবেও খায় অনেকে, তা উন্নত মানের পুষ্টির উৎস। বীজকে পপকর্ণ এর মত খৈ বানিয়ে খাওয়া হয়। আলেগ্রিয়া নামের স্ন্যাক্স তৈরি হয় এই দানা বা বীজ থেকেই।

মহারাষ্ট্রে শ্রাবন মাসের এক পার্বণে এর বীজ বিশেষ ভাবে স্টিয়ার ফ্রাই করে ‘নারকেল-কোপড়া ও অন্য উপাচারের সাথে গনভোজে দেয়া হয়, (বোধ করি প্রসাদ বা এমন ধরনের বিশেষ খাবার)। আর এর ডাঁটা, ডাল দিয়ে রান্না করে খাওয়া হয়। বীজ বা দানা না খেলেও আমাদের দেশেও এর ডাঁটার তরকারি খাওয়া হয়। আমাদের দেশেও এমন ভাবে ডালের সাথে রান্নার প্রচলন রয়েছে, শক্ত ডাঁটা গুলো। আমাদের রাজশাহী অঞ্চলের ‘কাটোয়া ডাঁটা যে কি ‘মিষ্টি ! যারা খায়নি তারা সে মজা কখনো জানবে না! গরমের দিনে শাকসবজি যখন বাড়ন্ত- তখন ডাঁটা বা শাক একটা অতি ব্যবহৃত সব্জি। তবে আমার ছেলেবেলায় বাসায় যখন মুড়ি এবং খৈ ভাজা হচ্ছিল- দাদীর ভাণ্ডারে রাখা ডাঁটার বীজও এক দফা ভেজে নেয়া হয়, শাপলা বীজ বা ঢেপ এর খৈ এর মত ছিল সে স্বাদ, – মনে পড়ে।

আমেরিকার আদিবাসী – পুয়েবলো বা জুনি গোত্রের মানুষ এর ফুলের পাপড়ির মত অংশ পিষে পেস্ট তৈরি করে এবং তা তাদের সৌন্দর্য চর্চায় ব্যবহার কর- গালে ঘষে দেয় রুজের মত।

ডাঁটা শাকের পুষ্টিমান ভাল সন্দেহ নেই ! প্রতি ১০০ গ্রামে প্রায় ৩৭১ ক্যালরি; শুন্য কলেস্টেরল, পটাশিয়াম ৫০৮ মিলি গ্রাম, ফ্যাট ৭ গ্রাম, প্রোটিন ১৪ গ্রাম, ডায়েটারি ফাইবার ৭ গ্রাম, সুগার ১.৭ গ্রাম। এছাড়া এতে রয়েছে প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় খনিজ উপাদানের বড় অংশ – যেমন আয়রন ৪২%, ক্যালসিয়াম ১৫%, ভিটামিন বি ৬- ৩০%, ম্যাগনেসিয়াম ৬২% ! এছাড়া এর রয়েছে ওষধি গুণ, ঔষধ কোম্পানিতে আমার্যারন্থের তেল একজিমার ঔষধ তৈরির জন্য ব্যাবহৃত হয়! এছাড়া কলেস্টেরল কমাতে এবং স্মৃতি শক্তি বাড়াতে এর ব্যাবহার রয়েছে!

তবে অক্সালেট এর উপস্থিতির কারনে মানুষ, এমন কি গরু ছাগলও অতিরিক্ত ডাঁটা শাক প্রতিদিন খেতে থাকলে সমস্যা সৃষ্টি হবে! কাজেই এটা সর্বগুণে গুণান্বিত - এর সবকিছু ভাল বললে ভুল বলা হবে! দু একটা খারাপ দিকও যে রয়েছে তারও প্রমান রয়েছে।

প্রচুর নাইট্রোজেন শোষণ করে এই উদ্ভিদ। যদি তা উর্বর জমিতে হয়, এর শরীরের অতিরিক্ত নাইট্রেট জমার কারনে গরু ছাগল বা তৃণভোজীদের জন্য বিষক্রিয়ার হুমকি হতে পারে ! ‘ব্রিটিশ জার্নাল অভ নিউট্রিশান (British Journal of Nutrition, 2003) এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রবন্ধ প্রমান করেছে আরেক ক্ষতিকর বিষয়। বাংলাদেশে লাল শাকের ব্যবহার রয়েছে যথেষ্ট! আমাদের মূল খাবার ভাত। এই ভাত ভিত্তিক ডায়েটে এই ডাঁটা শাকের কোন ‘প্রভাব রয়েছে কিনা সেটাই ছিল গবেষণার লক্ষ্য । একদল অল্প বয়সী ইঁদুরকে কয়েক ভাগে ভাগ করে, তাদের শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রিটেনশন এর উপর এ গবেষণা করা হয়। এই ইঁদুরদেরকে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় - এক দলকে শুধু মাত্র ভাত, অপর ৪ দলকে ডাঁটা শাক, মলা মাছ এবং মশুর ডাল এর ভিন্ন ভিন্ন ডায়েটের ভিত্তিতে বিভক্ত করা হয়। মূলতঃ এভাবে গ্রাম বাংলার সাধারন মানুষের খাদ্যভ্যাসকে অনুকরণ করা হয়েছিল। “একটা নির্বাচিত ডায়েট, এরপর স্টার্চ এর সাথে মিশিয়ে নির্বাচিত ডায়েট এবং ‘ডাঁটা শাক ব্যাতিরেকে নির্বাচিত ডায়েট- এভাবে ট্রায়াল দেয়া হয়। দেখা গেল শুধু মাত্র ভাতের ডায়েটের তুলনায়, ডাঁটা শাক, মলা মাছ ও ডালের ডায়েট তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ইঁদুর দলের পুষ্টিমাত্রা উন্নয়ন ও বৃদ্ধি ঘটায় এবং নাইট্রোজেন রিটেনশান করতে পারে । কিন্তু যখন সে ডায়েটে, অল্প পরিমাণে ডাঁটা শাক যোগ করা হয় (০.৬৬ গ্রাম/১০০ গ্রাম DM), তখন তাৎপর্যপূর্ণ (Significant) ভাবে ক্যালসিয়াম (ca) শোষণ ও রিটেনশান হ্রাস পায় । ডাঁটা শাক খাওয়ানো ইঁদুর দলের উরুর হাড্ডির গঠন (Bone mass), ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের ঘনত্ব তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে হ্রাস পায়। ক্যালসিয়াম এর শোষণ এবং রিটেনশান প্রতিবন্ধি (Inhibitory) এই প্রভাব সম্ভবতঃ ডাঁটা শাকে ‘অক্সালেট এর উপস্থিতির কারনে হয়ে থাকে। কাজেই কোন মানুষও যদি শুধু মাত্র ভাত আর ডাঁটা শাক খেতে থাকে তাহলে, তার শরীরে ক্যালসিয়াম মাত্রা দ্রুত হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা, যদি না সে তার ঐ খাবারের পাশাপাশি ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি সংযোজন না করে। উল্লেখ থাকে যে, মাত্রার অতিরীক্ত বা একমাত্র সব্জি হিসেবে ডাঁটা বা লাল শাক খাওয়া হলেই এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে। সতর্ক হওয়ার দরকার রয়েছে অবশ্যই, তবে বাঙ্গালী খাদ্যে মাছ এবং দুধের আধিক্য রয়েছে- কাজেই এলার্মড হওয়ার মত কোন পরিস্থিতি কখনো সৃষ্টি হয়নি!

উপসংহারঃ ডাঁটা শাকের সহনশীলতা বা সহ্যক্ষমতা বা অভিযোজন ক্ষমতা দারুণ। পাঁচটা মহাদেশে এর সরব উপস্থিতি তার বড় প্রমান। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারনে বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে- এবং নিয়মিত ফল ফসলের চাষ এবং উন্নয়ন ক্রমেই হুমকীর মুখে । উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই খরা সহ্যকারী উদ্ভিদের জাত উদ্ভাবনের চেষ্টায় লেগে গেছেন। ডাঁটা শাকের মত খরা প্রতিরোধী উদ্ভিদের প্রজাতি সেদিকে থেকে আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এটা শুধু পুষ্টি আর আঁশের উৎসই নয়, মাটির ক্ষয় রোধের মত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে তারা। বায়োমাস নাইট্রোজেন ধারন করতে পারে প্রচুর। কাজেই এর শাক পাতা বা ডাঁটা মাটিতে মিশিয়ে দেয়া গেলে- নাইট্রোজেন মাটিতে ফিরে আসবে, মূলতঃ মাটির উর্বরতা বাড়বে! কাজেই, দেখা যাচ্ছে, জীবিত ডাঁটা শাক তো বটেই, মৃত আমারান্থ হলেও তা কম উপকারী নয় !



বিষয়: বিবিধ

১৬২৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File