মালফুযাত ই তৈমুরি থেকে তৈমূর এর ১২ নীতি
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১৭ আগস্ট, ২০১৭, ০৭:৪০:৩৫ সন্ধ্যা
সাড়া দুনিয়ার মধ্যে মুসলিম জাতি আজ সবচাইতে বেশী নিগ্রহ আর জুলুমের শিকার ! যারা মুসলিমদের উপর এই জুলুম করছে- অনেক দেশের মুসলিম শাসক আর রাষ্ট্রনায়করা তাদেরই পায়ে চুমু খাচ্ছে। নিজেদের গদি বাঁচাতে! তাই আজ আর খালেদ বিন ওয়ালিদ বা গাজী সালাহদিন কিম্বা তৈমুরের মত দিগবিজয়ীদের জন্ম হচ্ছে না মুসলিমদের মধ্যে! হঠাৎ করেই বীরপ্রসবিনী মুসলিম জাতি যেন আজ বন্ধ্যা হয়ে গেছে। হবে নাই বা কেন? যারা বীরের মর্যাদা দিতে জানে না- তাদের ঘরে বীর জন্মায় না !
শুধু রাষ্ট্রনায়কদের দোষ দেই কেন, সাধারন গণমানস কিম্বা বিদ্বানদের মধ্যেও ‘আত্মপক্ষ সমর্থনের মত ‘মৌলিক চিন্তা আজ অনুপস্থিত! তারা পেট অথবা পিঠের চামড়া বাঁচাতে বেশী তৎপর! ক্ষমতাসীনদের পায়ে ‘তেল মালিশ করছে তারাও! ‘সন্ত্রাস’ মুসলিমরা তৈরি করে নাই- শুরু ও করে নাই। হ্যাঁ, সন্ত্রাসের দাওয়াই দেয়ার জন্য ‘ঔষধ তৈরি করতে ‘নির্দেশ দেয়া আছে মুসলিমদের, এটা প্রয়োজন, তাই ! কিন্তু বর্তমান দুনিয়ায় যারা সন্ত্রাসের হোতা, সন্ত্রাসের হর্তা-কর্তা বিধাতা তারাই কতিপয় মুসলিম নামধারীদের হাতে ‘তামাক খেয়ে- দেখো দেখো মুসলিমদের হাতে সন্ত্রাসের গন্ধ- ‘মুসলিমরা সন্ত্রাসী’ এই অপবাদ ছড়িয়ে দিল! প্রতিনিয়ত জুলুমের শিকার, সব দিকে আক্রান্ত হয়ে এখন মেধাটাও গেছে- ! মুসলিমদের অধিকাংশই এখন- চিন্তা না করেই, সেই সুরে গান গাওয়া শুরু করেছে- ‘মুসলিম সন্ত্রাসী- ইসলামিক টেররিজম! টেররিজম শব্দ যোগ করে দিয়ে ‘ইসলামকে দুষিত করার প্রচেষ্টা! অনেকটা সফলও হয়েছে তারা! মুসলিমরাও কবুল করে নিয়েছে- যেন, ‘আমরা সন্ত্রাসী! আহারে!
ফিলিস্তিনের বস্তিতে যে যন্ত্রণা একজন মানুষ প্রতি মুহূর্তে ভোগ করছে, সিরিয়া আফগানিস্তান, আবু গারিব, গুয়ানতানামো- এমন জায়গায় মানুষ শুধু নয়, পশুকে সেই পরিস্থিতিতে রাখলে- আর সে জুলুম, সে অনিশ্চয়তা সহ্য করতে হলে, সে নৈরাশ্য নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে, সেই পশুও ‘সন্ত্রাসী হয়ে যাবে! দোষ পশুর নয়, যারা জালিম, যারা এমন অবস্থা সৃষ্টি করেছে, তাদের।
কানাকে কানা খোঁড়াকে খোঁড়া বলিও না, এটা আমাদের শিশু শিক্ষা! কিন্তু তৈমুরকে খোঁড়া তৈমুর বলে ‘বিদ্রূপ করেছে ইউরোপ, রক্ত পিপাসু, ধ্বংসের নায়ক বলে তৈমূরের প্রতি সমস্ত ঘৃণা আর বিদ্বেষ ছুঁড়ে দিয়েছে ইউরোপ, আমাদের শিক্ষিত- বিদ্বান গুলোও সেই চর্বিত চর্বণ গিলে – একই ভাষায় অনুবাদ করেছে- খোঁড়া তৈমূর – রক্তপিপাসূ তৈমুর! অথচ অনেক মুসলমানের জানা নেই যে, তাঁর অভিযানে - তাঁর সহচর এবং গাইড হিসেবে থাকতেন – আলিম- ইসলামিক স্কলার, তাঁদের পরামর্শ না শুনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন না। যেমনটা গাজি সালাহদিনের সাথেও থাকতেন তাঁর ধর্মগুরু ও বন্ধু, আলিম! রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত- ইসলামের অনুশাসনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতেই হবে, নাহলে তা গৃহীত হবে না; এটা ছিল তাঁদের চিন্তা চেতনায় ! দুনিয়ার উপরে তারা আখেরাতকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন!
তৈমুর রক্তপিপাসূ? পূর্বপুরুষ চেঙ্গিস খানের বা তার বাহিনীর নামে এ বদনাম দেয়া ঠিক হলেও, তৈমূরের নামে এমন – ‘রক্তপিপাসু’ বিশেষণ খাপ খায় না!
তৈমূর শিল্প সংস্কৃতির একনিষ্ট সমর্থক ছিলেন- তা ইউরোপিয়ানরাও স্বীকার করেছে। তিনি গড়ে তুলেছিলেন ‘সবুজ নগরী, সবুজ রং ইসলামের সাথে জুড়ে আছে এর জন্ম লগ্ন থেকেই; সেই রং দিয়েই পুরো শহরকে গড়ে তুলা- মসজিদের গম্বুজের নকশাও সবুজ- নয়নাভিরাম- এমন ছবি এখনো দুষ্প্রাপ্য নয়- তা ছিল তৈমূরের অবদান! সমরখন্দ এর স্থাপত্য ছিল সেই যুগের ‘মডেল! পরবর্তীতে তাঁর বংশধরদের হাত দিয়েই তৈরি হয়েছে তাজমহল! তাজমহল, আগ্রা- ফতেহপুর সিক্রি, মুঘলদের অমর কীর্তি এখনো ম্লান হয়নি! ইন্ডিয়ানরা তাজ নিয়ে গর্ব করলেও, যারা এটা তৈরি করেছে সেই মুসলিমদের প্রতি একবুক ঘৃণা আর বিদ্বেষ দেখাতে কসুর করে নি বা করছে না! এক শ্রেণীর মুসলিম আবার সেই ‘বিদ্বেষী-ভারতীয়দের তোষণ করছে- তাদের পায়ে চুমু দিচ্ছে! ফারাক্কা বাঁধ দেখার পরে কোন বাঙ্গালী বাংলাদেশী যখন ‘ভারতের গুণগান গায়, ‘সে জন কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি’ বলতে ইচ্ছে করে! ধিক ! শত ধিক!
যা যা বলছিলাম! তৈমূর।
মালফুজাত ই তৈমূরি- মূল লেখা হয়েছিল তৈমূরের জবানীতে- চাগতাই তুর্কী- বাবুরের ভাষায়! বাবুরের আত্মজীবনীও একই ভাষায় লেখা, তাঁর পূর্ব পুরুষ তৈমূরের ছায়া রয়েছে সেখানে! পরে তা ফার্সিতে অনূদিত হয় এবং সেখান থেকে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পনির এক মেজর ইংরেজিতে অনূবাদ করেন।
তৈমূরের কর্মকান্ড কোন লুটেরার সৃষ্টিছাড়া কর্মকান্ড নয়। তাঁর কর্মকান্ড নিয়ন্ত্রিত হয়েছে নীতির ভিত্তিতে! দেখুন তাঁর নিজের আত্নজীবনীতে!
মা ভেরা আল নহর ( আরবী- দরিয়ার ওপারে!) তাঁর শুরু! নবীর বংশধরদের পরিবার ও সন্তানদের ৭০ জনকে অপহরণ করে মঙ্গল বাহিনী! তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো অর্থ আজকের আমেরিকান বহুজাতিক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা! কিন্তু তৈমূর ভীত হয়ে থেমে থাকেন নি, তাদের অধীনস্থ হয়েও আক্রমণ করেন লূটেরাদেরকে! বিদ্রোহের শাস্তি ছিল মৃত্যুদন্ড! তা জানা সত্বেও, আক্রমণ করে মঙ্গল বাহিনীর কব্জা থেকে সেই বন্দীদের উদ্ধার করেছিলেন ! এ সময় এক স্বপ্ন দেখেন তিনি! স্বপ্নে রাসূল ( সাঃ) তাঁকে বলেছেনঃ তুমি আমার বংশধরদের প্রতি যে সম্মান আর এহসানি দেখিয়েছ- এর বদলে, আল্লাহ তোমার প্রতি ও তোমার বংশধরদের প্রতি রহম করবেন; তোমার ভবিষ্যৎ বংশধরদের মধ্য থেকে ৭২ প্রজন্ম রাজ্য শাসন করবে ।
তৈমূর এর ভাষায় তাঁর অনুসরণ করা ১২ নীতি:
আমার সৌভাগ্যবান সন্তানগণ, জ্ঞানী মন্ত্রীগন, আমার বিশ্বাসী সভাসদ ও অনুসারীদের অবগতির জন্য জানাই যে, আমি আল্লাহপাকের ১২ টি আইন সর্বদা অনুশীলন করে চলেছি, যা আমাকে বড় হতে এবং তাঁর ‘বান্দাদের দেখভাল করতে এবং তাঁর ঐশী সহায়তা পেতে আমাকে সাহায্য করেছে এবং আমি এক বিশাল সম্রাজ্যের অধিকার পেয়েছি;-
এই ১২ টি নীতি হল:
১। বিচারের দাঁড়িপাল্লা হাতে নিয়ে, আমি একটু বেশী বা কম করি নাই (কারো ভাগে), সবার জন্য সমান পরিমাপ করেছি।
২। আমি মানবজাতির জন্য কঠোর ভাবে ন্যায়বিচারের আইন বলবৎ করেছি এবং সত্য আর মিথ্যার মাঝে পার্থক্য প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছি।
৩। আমি আল্লাহর আদেশ মনে চলেছি, তাঁর পবিত্র আইনের প্রতি সম্মান করেছি এবং তিনি যাদের মর্যাদা দিয়েছেন তাদের সম্মান করেছি ।
৪। মানব জাতির প্রতি ছিল আমার করুণার অনুভূতি এবং আমি সবার উপকার করার চেষ্টা করেছি; আর এ গুণের জন্যই আমি আল্লাহর সৃষ্টজীবের ভালবাসা অর্জন করিবে; আমি কখনও অন্যায় ভাবে একটা আত্মাকেও জ্বালাতন করি নাই, আমার দরবার থেকে কিছু চেয়ে কেউ ব্যর্থ মনোরথ হয়ে ফিরে যায় নাই, কেউ আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আমি তাঁকে সাহায্য করেছি;
৫। আমি সর্বদা ধর্মীয় বিষয়কে আমার দুনিয়াভি বিষয়ের উপরে প্রাধান্য দিয়েছি। আমি প্রথমে আল্লাহর দেয়া দায়িত্ব (হুক্কুল্লাহ) সম্পন্ন করে, তারপর হুক্কুল এবাদ বা দুনিয়াভি দায়িত্ব পালনে এগিয়েছি।
৬। আমি সর্বদা সত্য বলেছি, সত্য কথা শুনেছি, আমি অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে আমি আমার ধর্মীয় দায়িত্ব এবং সেকুলার দায়ভার পালন করেছি; বাঁকা পথ পরিহার করে চলেছি; এজন্য যে, আমি শুনেছি- আল্লাহ যখন আদমকে সৃষ্টি করলেন, তখন ফেরেশতারা একে অপরকে বলছিল, “এক জীবকে সৃষ্টি করা হয়েছে- যারা বংশ পরম্পরায় মিথ্যুক, যারা প্রতিজ্ঞা ভঙ্গকারী এবং খারাপ কাজের জন্য অপরাধী’। আল্লাহ ফেরেস্তাদেরকে বলেছেন- আমি তাদের মধ্যে ‘তরবারি পাঠাব, যারা প্রত্যেক দুষ্ট ব্যাক্তি বা অন্যায়কারী জালিমকে টুকরো করে কাটবে; আমি শুনেছি এই তরবারি হল রাজা বা শাসক, কাজেই প্রতিটি শাসকের উচিত সত্য বলা এবং শুধু সত্য শুনা।
৭। আমি একজন মানুষের কাছে যা প্রতিজ্ঞা করেছি, তা সব সময়ে পালন করে চলেছি; আমি কোন চুক্তি থেকে বিচ্যুত হই নাই; আমি কখনো জালিম বা অবিচারকারী হিসেবে দোষী হই নাই, কিম্বা কখনো নিজেকে অন্যায় বা অসম্মানজনক কাজে যুক্ত করি নাই। কিম্বা কোন ভাবেই কোন সন্তান, বংশধর বা আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছেদ করি নাই।
৮। আমি নিজেকে আল্লাহর খাজানার কোষাধ্যক্ষ মনে করি; এবং তাঁর প্রতিনিধি (উলেমা)দের পরামর্শ ব্যাতিত সে খাজানা থেকে কোন ‘ব্যায় করি নাই । আল্লাহর বান্দাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে সতর্কতা ও সহৃদয়তার সাথে বিবেচনা করেছি; অন্যায় ভাবে কারো সম্পদ ছিনিয়ে নেই নাই, কিম্বা নিজে সে সম্পদ কুক্ষিগত করে সম্পদের পাহাড় গড়ি নাই; বরং আমি আমার সৈন্য এবং প্রজাদের সুখ ও আনন্দের কথা সর্বাগ্রে বিবেচনা করেছি; একই ভাবে আমার পিতার সভাসদদের জমাকৃত সম্পদও স্পর্শ করি নাই; বা কোন ব্যাক্তির ব্যাক্তিগত সম্পদের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি দেই নাই। অভিজ্ঞতা থেকে আমার জানা আছে- আমির হুসাইন তার সৈন্য ও প্রজাদের অর্জিত সম্পদ এমনকি তার পিতার সভাসদদের সম্পদের প্রতি লোলুপ দৃষ্টি দিয়েছিল, তার সম্পদ দ্রুতই শেষ হয়ে গেছে!
৯। আমার বিবেচনায়, আল্লাহর অনুগত হওয়া বলতে তাঁর রাসূলের অনুসরণ করাও তার অন্তর্ভুক্ত, এজন্য রাসুলের আইন অনুসরণ করে চলেছি,এবং আইনের বিরুদ্ধে যায় এমন কিছু করি নাই। মুহাম্মদ (সাঃ) এর বংশধরগনকে এবং তাঁর সাহাবাদেরকে (আল্লাহ তাঁদের প্রতি রহম করুন) আমি সর্বদা আমার বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করেছি এবং তাদের প্রতি ভালাবাসার নিদর্শন দিয়েছি।
১০। ইসলামের জন্য আমি আমার রাজত্ব জুড়ে অর্থ প্রদান করেছি; ধর্মের প্রচার প্রসারে আমার পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা করেছি; আর এভাবে আমি আমার সরকারকে স্থিতিশীল রেখেছি, এজন্য যে, আমি শুনেছি – রাষ্ট্র আর ধর্ম হল- দুই যমজ এবং যে রাজত্ব ধর্ম দিয়ে সমর্থিত নয়, তা স্থায়ী হয় না, তার কর্তৃত্ব দ্রুত হারিয়ে যায় এবং এর আদেশ আর প্রতিপালিত হয় না; কিন্তু প্রতিটি ব্যাক্তি – যোগ্যতা থাকুক বা না থাকুক, রাষ্ট্রকর্মে অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপকারি হয়ে উঠে!
১১। সৈয়দদের প্রতি আমি বিশেষ সুবিধা দিয়েছি, যারা জ্ঞানী বা শিখতে আগ্রহী তারা যেন তাদের সাহচর্য পায় এবং আমি সর্বদা তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেছি, তাদের কোন আবেদনকে কখনো অগ্রাহ্য করি নাই; এজন্য তারা সকল সময়ে আমার দরবারে উপস্থিত থেকে আমার মঙ্গলের ও সমৃদ্ধির জন্য প্রার্থনা করেছে। আমি সর্বদা জ্ঞানী ও ধার্মিকদের সাহচর্যে থেকে নিজেকে ধন্য মনে করেছি, তাদের বাণী শুনেছি – (ধর্মীয় এবং ধর্ম বিদ্বেষী ইতিহাস থেকে) সেখান থেকে অনেক সারগর্ভ ‘উপদেশ হাসিল করেছি;
এভাবে তারা আমার সাথে কন্সটাণ্টিনপলের সম্রাট এর তুলনা করে, যে একবার ‘রাই (Ry) রাজ্যে আক্রমণ করে শুনতে পেল, অনেক সৈয়দ সহ অনেক জ্ঞানী গুণী ব্যাক্তি সে দরবারে উপস্থিত থাকে; তখন সে তার বাহিনীকে বিরত করল এবং সে দেশের মন্ত্রী, সভাসদকে লক্ষ্য করে এই বলে যেঃ আমি পবিত্র পুস্তকে পড়েছি- যে দরবারে জ্ঞানী গুণী ধার্মিক ব্যাক্তিদের উপস্থিতির আধিক্য থাকে, সে দরবারের ধ্বংস হয় না! আমি জানতে পেরেছি তোমাদের রাজ্য এমনই একটা রাজ্য, আমি অনুধাবন করেছি- আমি এ দেশ পদানত করতে পারব না’। সে রাজাকেও লিখলঃ যখন আমি জানতে পারলাম যে তোমার রাজ্য আমাদের পূর্বসূরি ন্যায় পরায়ণ রাজা বাদশাদের অনুরূপ, আমি তোমার রাজ্যে আর অনুপ্রবেশ করলাম না। আমি আমি আমার বাহিনী নিয়ে ফিরে গেলাম – তোমাকে নিরুপদ্রবে রেখে। বিদায়’।
১২। আমি দরবেশদের, ধার্মিক ও আলোকপ্রাপ্ত মানুষদের আশীর্বাদ প্রার্থনা করি; আমি গৃহত্যাগী দরবেশ, ফকিরদের আশ্রম থেকে তাদের কখনও উচ্ছেদ করি নাই, তাদের প্রতিরক্ষা দিয়েছি; তাদের গালমন্দ করি নাই বরং তাদের মনঃ জয় করার চেষ্টা করেছি। আমি মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য জীবন পণ করেছি, এবং তাদের লোকজনকে খুন করা থেকে বিরত থেকেছি; নবীর বংশধরদের প্রতি বিশেষ মর্যাদা ও মনোযোগ দিয়েছি; এবং মহৎ মানুষদের ক্ষতি যেন না হয় এব্যাপারে সতর্ক থেকেছি; তবে খারাপ মানুষদের এবং জালিম অন্যায়কারীদের প্রতি আমি দয়া দেখাইনি।
আমি শুনেছি আল্লাহ যখন কাউকে কোন দেশের শাসনের জন্য নির্বাচিত করেন, এবং সে দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রনের ভার ও কর্তৃত্ব তাঁর হাতে অর্পণ করেন, তা এজন্য যে, সে যেন তাদের উপর ন্যায়বিচার আর সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারে, সুবিচার, সাম্যতা আর ন্যায়পরায়ণতা কায়েম করে মানুষের প্রতি উত্তম আচরণ করতে পারে। যদি সে সফলভাবে এগুলো প্রয়োগ করে, তাঁর রাজত্ব টিকে থাকে; আর যদি অপরদিকে সে জালিম, অত্যাচারী হয়, অন্যায় অপকর্ম আর জুলুম করতে থাকে, আল্লাহ তাঁকে নিঃসন্তান করে দেন, তাঁর রাজত্ব কেড়ে নিয়ে অন্যদেরকে তা দিয়ে দেন;-
এ জন্য আমি আমার সার্বভৌমত্ব রক্ষায়- এক হাতে সুবিচার আর অন্য হাতে ন্যায়পরায়ণতা, এই দুই আলোর সাহায্যে আমি রাজকীয় প্রাসাদ আলোকিত করেছি;-
এবং যেহেতু আমি শুনেছি ন্যায় পরায়ণ বাদশা দুনিয়াতে আল্লাহর ছায়া, আর সেই হল সবচেয়ে উত্তম বাদশা যে আল্লাহর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারে, অপরাধীদের মাফ করে; আমি সেই সব ন্যায়পরায়ণ বাদশাহদের অনুসরণ করেছি এবং আমার শত্রুদের ক্ষমা করেছি।
যে কোন মুসলিম শাসকের জন্য তা এখনো ‘অনুকরণীয় ! কেয়ামত পর্যন্ত সুবিচার – ন্যায় পরায়ণতা- সাম্যতা- দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে – এ নীতির কোন ব্যাতিক্রম হবে না!
বিষয়: বিবিধ
১০৫৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন