সেক্যুলারিজম এবং বাংলায় বৈশাখী ইতিবৃত্ত
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০৬ আগস্ট, ২০১৭, ০২:১৮:৪০ রাত
সেক্যুলারিজম এর সব চেয়ে বড় ক্রুটি হল- তার ‘পরম বা চরম কোন আদর্শ নেই।- না কোন মানব তার আদর্শ, না কোন এক কিতাব তার নীতি নির্ধারণকারী ~আদর্শ । অনেক মানুষ বা তাদের সমন্বিত চেতনা আর অনুভূতির যোগফল মিলিয়ে একটা খিচুড়ি ধারনা জট পাকিয়ে উঠেছে। কিছু মানুষ আবার মনে মনে শেখ ফরিদ, বগলে ইট; তার বা তাদের ধারনা আর বলয়ের বাইরের মানুষকে দ্বিধায় ফেলতে বা বিচ্যুত করতেই যেন এই ‘খিচুড়ির অবতারণা করেছেন এবং ‘সেই ঢাক আবার সমানে পিটিয়ে চলেছেন; যাতে অন্য কোন শব্দ যেন সেই সব অর্বাচীনদের কর্ণকুহরে আবার প্রবেশ না করে! বাজার অর্থনীতির একটা তত্ত্ব- হচ্ছেঃ নিজেদের পণ্য দিয়ে এমন ভাবে বাজার সয়লাব করিয়ে দাও, যেন ক্রেতা তোমার পণ্য ব্যাতিত বিকল্প আর কোন পণ্য হাতের নাগালেই না পায়! তোমার কেল্লা ফতে!
ক্ষেত্র বিশেষে বা সময় বিশেষে মানুষ বা মানুষের মন যেমন বদলে যায়- এই সেক্যুলারিজমের ধারনাটাও তেমন বদলে যায়। আমাদের দেশের কতিপয় ‘ধর্মত্যাগী বা ‘ধর্মহীন মানুষ- সেক্যুলারিজমকে তাদের ‘ধর্ম বানিয়ে ফেলেছে- আর তা আমাদের ‘আমজনতার ধর্ম বানানোর জন্য আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে। মূর্খের সংখ্যা তো কম নয়! আবেগ ছুঁয়ে দিতে পারলে- বাঙ্গালী কোন যুক্তির ধার ধারে না- হুজুগে কিস্তি মাত! সে অবস্থাই দেখা যাচ্ছে।
পরিশীলিত – নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা একটা ‘আদর্শ সমাজ গড়ার থেকে বহুদূরে আমাদের অবস্থান। যে কোন স্থানে বিশৃঙ্খল অবস্থা চলতে থাকলে শয়তানদের অপকর্ম গতি পায় - ঘোলা পানিতে মৎস্য শিকার ! আমাদের দেশে সেই ঘোলা পানিতে মৎস্য শিকার হচ্ছে – স্বাধীনতার পর থেকেই। শেখ মুজিব যখন নিতান্ত হতাশায় চিৎকার করে উঠেছিলেন – সাত কোটী কম্বল ভিক্ষা করে আনলাম, আমারটা গেল কোথায় ? কিম্বা- ...... ‘চাটার দল’ সব ‘চাইট্যা শেষ কইর্যা ফালায়! সে বেচারা দেখেছে পরিষ্কার, কিন্তু এদের ঝেটিয়ে বিদেয় করার শক্তি, বা সামর্থ বা সদিচ্ছা তার ছিল কিনা- এই বাক্য আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি না! জনগণ জানে! শেখ মুজিব নেই, কিন্তু তার এই ‘চাটার দল’ এখন ডালপালা গজিয়ে মহীরুহ হয়েছে, দেশের সর্বাঙ্গে নখর আর থাবা বসিয়েছে – । এমন ভাবে যে – আর সবকিছু চাপা পরে গেছে তাদের মুঠোর আওতায়; দেশের দুর্বল আর নিরীহ- হীন -কন্ঠদের আবৃত করে ফেলেছে নির্বিবাদে ।
কোন দেশে যখন দুঃশাসন চলে, ধুরন্ধর দুঃশাসক তখন মানুষের আমোদ প্রমোদ বাড়িয়ে দেয়। মানুষ যেন আমোদ প্রমোদে মত্ত হয়ে তাদের ন্যায্য বিচার আর অধিকারের দাবী কিছুটা ভুলে থাকতে পারে! তাদের ‘অর্জনের প্রচারণা এত জোরে শোরে চলে যে, মানুষের মন আর মস্তিস্ক আচ্ছন্ন হয়ে যায় সেই ‘জিকিরে; এর বাইরে আর কোন কিছু ভাবার সময় পায়না – আম জনতা! অনেকে আবার হতাশগ্রস্থ হয়ে গেছে, হতাশা ভুলতেও প্রমোদের স্মরণাপন্ন হওয়া নূতন কিছু নয়। দেবদাসের চরিত্র – পার্বতীকে ভুলতে গিয়ে যেমন ‘প্রমোদমত্ত হয়েছিল !
দেশে স্টার জলসা থেকে শুরু করে প্রমোদ চ্যানেলের আধিক্য, ভারতীয় নায়ক নায়িকাদের ঘন ঘন ‘রঙ্গিলা জলসা, এর সাথে রাষ্ট্রীয় প্ররোচনা, প্রচারণা আর পৃষ্টপোষকতায় ‘গ্র্যান্ড বৈশাখী শোভা যাত্রা বা হোলির রঙের খেলা আমাদেরকে তেমনি- প্রমোদ বর্ধনের রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়!
বৈশাখী কোন নূতন পার্বণ নয়! আমাদের দেশ এক সময় মোগল শাসনের আওতায় ছিল, তাদের ফসলি সন - খাজানা আদায়ের জণ্য ইসলামি হিজরি সনকে ভিত্তি করে মুঘল আকবরের রাজকীয় গণক ফতেউল্লাহ সিরাজি এর প্রচলন করেন। বঙ্গাব্দ বলে তা পরিচিত হয়। খাজানা আদায় শাসকদের জন্য এক পার্বন। আমাদের জনগণ যে সেই পার্বণের সম্পর্কে একবারেই অজ্ঞ তা নয়। তবে আমরা যেটার বিষয়ে অজ্ঞ সেটা হচ্ছে- অভাবনীয়, গ্র্যান্ড সেলিব্রেশন।
যে দেশটির স্বাস্থ্যসেবা এবং পয়ঃনিষ্কাশনের মত মৌলিক সমস্যা সমাধানের সামর্থ নেই, বিদেশীদের দয়া এবং দাক্ষিণ্যের জন্য চাতক পাখীর মত চেয়ে থাকতে হয় অতি প্রয়োজনীয় মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য; এক মাস আমাদের প্রবাসীরা বৈদেশিক মুদ্রা পরিমাণে কম পাঠালে দেশের ‘নাভিশ্বাস উঠে যায়; সেই দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র – এই বৈশাখী পালনে এত ঘটা করে পালনের উৎসাহ দেখে – মনে হওয়া কি অস্বাভাবিক যে, ডাল মে কুচ কালা হয়!
বলা হচ্ছে – এটা সেকুলার অনুষ্ঠান, কোন ধর্মীয় গোষ্ঠীকে বিশেষ ভাবে ‘পৃষ্টপোষকতা না করে রাষ্ট্রযন্ত্র উদার হস্তে ‘সেকূলার অনুষ্ঠান উদযাপন করতে দেশের সর্ব স্তরের মানুষকে উৎসাহ দিচ্ছে! ব্যাপারটা কি তাই? শত শত বছর ধরে আমাদের জনগোষ্ঠী কি বৈশাখী উদযাপন প্রত্যক্ষ করে নাই? হ্যাঁ, দেশের সংখ্যা লঘুদের একটা গ্রুপ একটু বেশী ঘটা করে এই দিন পালন করত, আর সংখ্যাগুরুদের কাছে এটা তেমন একটা গুরুত্ব পেত না, মহাজনের বাঁকি উশুল হালখাতা করতেই তাদের মনোযোগ বেশী আকৃষ্ট হত। অবশ্য সেই সংখ্যালঘুদের মধ্যে সুদখোর ‘মহাজন এবং ‘বাণিজ্য বসতে লক্ষ্মী –পূজারী, ব্যবসায়ীদের সংখ্যা বেশী ছিল! হয়তো একারনেই এই সময়ে তাদের নগদ নারায়নের আমদানী বেশী হত বিধায় বৈশাখী পালনের ঘটা ছিল বেশী, আর সে সকল মানুষ ‘বৈশাখীকে তাদের উৎসব বলেই মনে করত, এটা অনেকে মনে করেন!
সে সময়ে সেকুলার বা পরধর্মে ‘নিঃস্পৃহ জনগোষ্ঠী এটা নিয়ে আদৌ উচ্চ বাচ্য করত না; কারণ এদেশের মানুষ সহনশীল, সেবক সংঘ -শিবসেনা বা বজরঙ্গি দলের মত প্রতিক্রিয়াশীল দল এখানে ছিল না! কিন্তু এভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা তথাকথিত ‘সেকুলার অনুষ্ঠানের বা ভারতীয় সংস্কৃতির ‘( সেটাও সেকুলার, তাদের ব্যখ্যায়-বলা বাহুল্য!) প্রচারণায় রাষ্ট্র যদি নগ্নভাবে সমর্থন ও সহযোগিতা করতে থাকে- প্রত্যেক ক্রিয়ার একটি বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে- এই সুত্রে আমাদের দেশেও প্রতিক্রিয়াশীল কর্মসুচি বা দলের বা প্রতিক্রিয়াশীল ব্যাক্তির জন্ম নেয়া অসম্ভব নয়! হয়তো সেটা আমাদের বর্তমান ক্ষমতাসীন সেকুলার গোষ্ঠী বা তাদের স্বার্থ রক্ষাকারীরা বুঝতে পারছে না!
রাশিয়ার পাঁড় কমিউনিস্টদের বজ্র আঁটুনি যখন ছিঁড়ে গেল – রাতারাতি সে দেশে মসজিদ আর চার্চ এর সংখ্যা কত হয়েছিল তাদের জানা আছে? এখন আমাদের দেশেও রাষ্ট্রীয় ভাবে একটা ধর্মীয় সংখ্যা লঘু গ্রুপকে সরকারি সমর্থনক দিয়ে ঢালাও ভাবে ক্ষমতায়ন করা হচ্ছে- ক্ষমতার বলয়ের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা হচ্ছে! প্রশাসনের বিশ্বস্ত হয়ে উঠেছে তারা –যেমন ব্রিটিশ দখলদাররা তাদেরকে ফ্রন্ট – লাইন ওয়ার্কার হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সামনে এনেছিল। মুসলিমরা কখনো ব্রিটিশদের গুডবুক তথা বিশ্বস্ত সেবাদাস ছিল না; তিতুমিরদের তথা মুসলিমদের সমূল বিনাশ ছাড়া বেণিয়া গোষ্টি আর কিছু চাইত না! কাজেই মুসলিম প্রভু ছেড়ে যখন তারা ব্রিটিশ প্রভুদের ক্রীড়নক হয়ে উঠেছিল, ব্রিটিশরা চরম স্বস্তি পেয়েছিল! এখন চামড়ার রং বদলে গেলেও শাসক গোষ্টি আবার সেই সংখ্যা লঘুদের ক্ষমতাইয়ন করছে ঢালাও ভাবে! দেশের জনসংখ্যার অনুপাতে ৯% হলেও, ক্ষমতাধারী সরকারী পদের ৯০ ভাগ তাদের দখলে। শুধু জেলা প্রশাসক আর সচিবালয়ের পদ নয়, এমনকি স্কুল কলেজের প্রিন্সিপাল ভাইস প্রিন্সিপাল হেডমাস্টার- ব্যাংক বীমা থেকে পুলিশ ফাঁড়ির সাব ইন্সপেক্টর পদের ক্ষেত্রেও এমন বৈসাদৃশ্য দেখা যাবে! সংখ্যাগরিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের মধ্যে যারা, তারা কি এই ক’বছরে এমন গরু গাধা হয়ে গেল যে তারা আর সরকারি উচ্চপদ গুলোর জন্য বিবেচিত হচ্ছে না! শুধু সেকুলার নয়, তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বা তাদের ধর্মীয় উৎসবে সরকারী অনুদানের সমপরিমাণ অনুদান তো অন্য ধর্মের প্রতিষ্ঠান গুলোর কি পাওয়া উচিত নয়? বৈষম্য যে ঢালাও ভাবে হচ্ছে – এটা সর্বস্তরের মানুষ জ্ঞাত – সবাই বুঝলেও আরও বড় ধরণের ‘বিপদ এড়াতে কেউ কিছু বলছে না! যখন অন্যান্য জাতি গোষ্ঠীর সাথে বৈষম্য করে কেবল একটা গ্রুপকে সামনে এগিয়ে আনা হয়, স্বভাবতঃ তারা পরবর্তী সময়ে – বৈরিতার শিকার হবে না – এমন কথা জোর দিয়ে বলা যায় না! আর যদি তা ঘটে, ক্ষমতাসীন দলের বৈষম্যমূলক আচরণই এর জন্য দায়ী হবে, তা নিশ্চিত। চিরদিন কারো সমান যায়না~ ।
আমাদের দেশ নানা বর্ণের নানা জাতের মানুষের মিলন মেলা! আমরা বরং অন্য জাতপাতের মানুষকে ধর্মীয় ‘সহনশীলতা শিখাতে পারি! যে যার ধর্ম পালন করবে – যে যার উৎসব পালন করবে নিজেদের সামর্থ অনুসারে। সরকারের দায়িত্ব হল, সবাই যেন তা নির্বিঘ্নে করতে পারে – এমন পরিবেশ নিশ্চিত করা । এর বেশী কিছু নয়, রাষ্ট্রের কাছে এর চাইতে বেশী কিছু আশাও করে না মানুষ; বিশেষ করে সংবিধানে যখন ‘সেকুলার ধর্ম গ্রহণ করা হয়েছে; বিসমিল্লাহ কেটে তুলে দেয়া হয়েছে! কিন্তু একদিকে বিসমিল্লাহ কেটে ফেলে দেয়া অন্যদিকে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার পৃষ্টপোষকতা আর গ্র্যান্ড সেলেব্রেশন- অন্য অর্থ প্রকাশ করে না কি!
আমাদের দেশের আওয়ামী পন্থী সরকারের ‘ভারত তোষণ নীতির কারণে আমাদের দেশের আর্থ –সামাজিক পরিবর্তন গুলোও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে । এখন পায়ে একটা ফোঁড়া উঠলেও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষও ভারতে ছুটছে ডাক্তার দেখাতে। আর ভেজাল তেল আর ভেজাল খাদ্যের যথেচ্ছ ব্যবহারে মাশাল্লাহ । তরুণ যুবাদের হার্টের আর্টারি পর্যন্ত ব্লক হয়ে যাচ্ছে, আর সাথে সাথে ভারতীয় ক্লিনিক গুলোর হয়েছে পোয়া বারো! এক সময় আমার এক কলিগ ছিলেন সংখ্যালঘু – তার বাড়িতে হজমোলা থেকে মাথা ধরার বড়ি সব তিনি ‘ওপার থেকে আনিয়ে নিতেন! এমন লোকের সংখ্যা এখন সরকারী ভাবে প্রতিষ্ঠিত ‘ভারত তোষণ নীতির কারণে আরও বেড়েছে বলেই মনে হয়! সংখ্যালঘুদের মধ্যে এদেশে খুব ব্যবসা সফল যারা তাদেরও পরিবারের এক বা একাধিক সদস্য ‘ওপারে থাকেন, তাদের বাড়ি ঘর বা ব্যবসা রয়েছে এবং তাদের সহায়তায় নিয়মিত ভাবে এই দরিদ্র দেশ থেকে ভারতে ‘পুঁজি পাচার চলছে! আর নিয়মিত বাণিজ্যপথে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য থেকে শুরু করে কলকব্জা - কাপড়চোপড় – এমন কি সূচ ব্লেডও ভারত থেকে আসছে! শুল্ক মুক্ত অনূপ্রবেশ সুবিধা প্রদান করে – বাংলাদেশের সাথে ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি এখন আকাশে পৌঁছে গেছে- এটা অর্থনীতির ‘অ’ জানে না এমন লোক ও স্বীকার করবে – সন্দেহ নেই! আমরা কি পেলাম~? সেটা দেখার দায়িত্ব কার?
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরের আগে ভারতের সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জয়দীপ মজুমদার তার এক লেখায় লিখেছেন, ‘ভারতকে সহায়তা করার জন্য শেখ হাসিনা তার যা করার, তার চেয়েও বেশি করেছেন। ভূমিবেষ্টিত ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে প্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশ খুবই স্বল্প মাশুলে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে। তিনি তার দেশে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেওয়া বন্ধ করেছেন, এমনকি এসব গোষ্ঠীর নেতাদের আটক করে ভারতীয় এজেন্সিগুলোর হাতে তুলে দেওয়ার কাজও করেছেন। দেশের মধ্যে বিরোধী রাজনৈতিক দল ও ভারতবিরোধী ইসলামপন্থি দলগুলোর কঠোর সমালোচনা উপেক্ষা করেই শেখ হাসিনা এ কাজটি করেছেন।’
১৯৭১ এর স্বাধীনতা অর্জনের (নাকি ভারতের ভাষায়- পাকিস্তানের পরাজয়) পর থেকে এত আরামে ভারত আর কখন ছিল না; অঙ্গরাষ্ট্র না হয়েও আমরা ভারতের স্বার্থ আর সুবিধা দিয়ে যাচ্ছি অঙ্গরাজ্যের থেকে হাজারো গুণে বেশী, এমনকি নিজেদের স্বার্থের হানি করে হলেও। এ যেন নিজেকে অন্ধ করে ভারতকে কর্নিয়া দানের ব্রত নিয়েছে সরকারি কর্তা /কর্ত্রীরা! ক্ষমতা আরোহণ কার স্বার্থে – এথেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে~ ।
ভারতীয় নাটক সিনেমার প্রভাব সমাজে ফুটে উঠেছে- মানুষ যা ভারতীয় সংস্কৃতি বিশেষ করে ভারতীয় সংখ্যা গরিষ্ট মানুষের সংস্কার বা সংস্কৃতি হিসেবে জানে , এবং তার উপরে বলিউডি রং ছড়ানো ‘মুভি সংস্কৃতি – সরকারী গণমাধ্যমের অবারিত দ্বার- নীতির কারণে তারা এখন বাংলা সংস্কৃতিকে প্রায় গিলে ফেলেছে! আমাদের সংখ্যাধিক্য মানুষের সংস্কার আর সংস্কৃতি যেন ঘরে পেছনে মুখ লুকিয়ে ফেলেছে, লজ্জায় অধোবদন হয়েছে! সরকারি বাহিনী ও সরকারি দল ও তার তাবেদার তরুণদের হাতে দাঁড়ি টুপি ওয়ালাদের হেনস্থা করার দৃশ্য গণ মাধ্যমে যেভাবে প্রকাশিত, এরপর মানুষ দাঁড়ি টুপির সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করলেও তাদের দোষ দেয়া যাবে না। মানব চরিত্রের দুর্বল একটা দিক হল, দুর্বলের সাথে কেউ থাকে না। সবাই গাট ছড়া বাঁধতে চায় ‘উপরহস্তওয়ালা’র সাথে! এর শেষ কোথায় ? সত্যই কি আমাদের বাঙ্গালী মুসলিম সংস্কৃতির চর্চার কোন সুযোগ আমাদের থাকছে! সব তো আমাদের বর্তমান ‘সংস্কৃতির তথাকথিত ধ্বজাধারীদের কল্যাণে ভারতীয় সংস্কৃতির ‘উম্মত হয়ে যাচ্ছে!
ব্রিটিশ শাসনের শেষে- হিন্দুস্থান পাকিস্তান আলাদা হলেও, মুসলিমদের অনেকে স্বাধীন ভারতে থেকে গিয়েছিল। কিন্তু তারা সংখ্যাগরিষ্ট কালচারের মধ্যে যখন ‘ডুবে যাচ্ছিল তখন তাবলিগ জামাতের গোড়া পত্তন করে কোন ক্রমে মুসলিম আত্ম -পরিচয় টিকিয়ে রাখেন এক জ্ঞানী, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মুসলিম! আমাদেরও বোধ হয় সেদিন আসছে! যদিও এই জামাতকে বা তাদের অবদানকে অনেকেই ছোট করে দেখেন- তবে পরিস্থিতি সাপেক্ষে ঐ জামাতের প্রয়োজনের কোন বিকল্প ছিল না!
যাহোক যা বলছিলাম- সেকুলারিজমের ভুত আমাদের গিলে ফেলার আগেই – আমাদের উচিত এমন কোন পদ্ধতির আশ্রয় নেয়া – যা আমাদের অপসংস্কৃতির গহ্বর এ ঢুকে যাওয়া থেকে হেফাজত করবে, আমাদেরকে প্রকৃত সংস্কৃতমনা হতে শিখাবে; বিদেশি অপসংস্কৃতির দহন থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সাবধানে বড় করে তুলতে সাহায্য করবে!
বিষয়: বিবিধ
১০৬৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন