দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসে ব্রিটিশ কৌশল এবং মাছি মারা কেরানী:
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:৪৮:২৬ রাত
এক কেরানী তার ‘সাহেবের ড্রাফট নকল করছে! ড্রাফটের উপরে এক লাইনে একটা মাছি ঘটনাবশতঃ ‘চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে আটকে ছিল! কেরানী কপি করার তাড়নায় – অনেক কষ্টে আরেকটা মাছি মেরে ‘নকলএর উপরে বসিয়ে দিল! জন্ম নিল মাছি মারা কেরানীর অধ্যায়! মূল বাগধারার অর্থ হয়েছে এমন- যে ব্যাক্তি নিজের বিবেক বুদ্ধি না খাটিয়ে কেবল তার ‘প্রভুর সেবার উদ্দেশ্যে আর হুকুম তামিল করতে নিবেদিত প্রান! কোন কোন জাতি যেন জন্মগত ভাবে স্বাধীনচেতা-( যেমন আফগান!) আর কোন জাতি বোধ হয় জন্মগত ভাবে ‘গুরুভজা চরিত্রের, যেমন আমাদের জাতি! তৈলের ভাঁড় হাতে নিয়েই যাদের জন্ম ! আমাদের বর্তমান কায়-কারবার আর আচরণ দেখলে এমনটাই মনে হয়- সেটা অফিসের পিয়ন আর্দালি থেকে মন্ত্রী উপমন্ত্রী নেতা পাতি নেতা – সবার জন্যই সমভাবে প্রযোজ্য! বুদ্ধিমান !
তবে এটা বোধ হয় সর্বাংশে সত্য নয়! এক সময় বাঙ্গালা মুলুক ভারতবর্ষের মধ্যে সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকা ছিল ! ব্রিটিশ দখলদারির আগে মুঘল শাহ সুজা ফি বছর বাঙ্গালা মুলুকের রেভিনিউ পাঠাতেন দিল্লিতে । সেটা কি পরিমাণ তার একটা রেকর্ড খুঁজে পাওয়া গেছে- বর্তমান হিসেবে তা গুণতে গেলে অনেকেরই চক্ষূ চড়কগাছ হয়ে যাবে! সে হিসেবে বাঙ্গালা যে সবচেয়ে বেশী সম্পদশালী ছিল তাতে সন্দেহ নেই, হয়তো একারনেই ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী ছিল কোলকাতা ! দিল্লী নয়!
পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হল; আর উপমহাদেশ ইংরেজদের দখলে চলে গেল ১৭৫৭ সালে। দখল করেই যে তারা রাজা হয়ে সুখে ছিল তা নয়, দেশ ছেড়ে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষকে ‘ ক্লীব বানিয়ে ফেললেও ‘বাঘের বাচ্চা রশিদ আলী, সুভাষ বসু, ক্ষুদিরাম, শাহ নেওয়াজরাও তাদের লাথি মেরে বিদায় করার চেষ্টায় সর্বদাই তৎপর ছিল; এমনকি সংখ্যায় তারা কম হলেও! কিভাবে এটা করল তারা! একটা সম্পদশালী জাতিকে শুষে ছিবড়ে বানিয়ে – পুরো গোলাম বানিয়ে ফেলল ! শুধু অর্থনৈতিক দিক থেকে নয়, মানসিকতার দিক থেকেও পরনির্ভর, আত্মমর্যাদাহীন এক পর্যদুস্থ জাতিতে পরিণত করে গেছে তারা আমাদেরকে! অবশ্য তাদের সেবাদাসরা এ দায়টুকুও তাদের ঘাড়ে চাপাতে ‘লজ্জা পায়! তবে আমাদের হাতে প্রমান রয়েছে! তাদের প্রভূদের নিজের মুখের কথা!
ইংরেজ কূটবুদ্ধি ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ প্রয়োগ করে জাতিগত অবিশ্বাস আর মতদ্বৈততাকে উস্কে দিয়ে অনেকখানি সুবিধা ভোগ করলেও- পুরো দেশবাসীর মন ও মগজ করায়ত্ব করতে সক্ষম হয়নি! প্রথম দিকে তো বটেই! সে সময়ে তাদের প্রতিনিধি এক লর্ড, লর্ড ম্যাককাউলে এদেশে বেড়াতে আসে। এই ব্যাক্তি উপমহাদেশ থেকে ফিরে গিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে’ এ এক বক্তৃতা দেয়! তার বক্তৃতার অনুবাদ নিম্নরূপঃ
“আমি ভারত উপমহাদেশের দৈর্ঘ ও প্রস্থ বরাবর ভ্রমণ করেছি এবং না কোন ভিখারী দেখেছি, না কোন চোর । এত পরিমাণ সম্পদ আমি সে দেশে দেখেছি; এমন নৈতিক আদর্শ- এমন মর্যাদাবোধ সম্পন্ন মানুষ- আমি মনে করি না যে আমরা কখনও এই দেশকে পুরোপুরি ‘জয় করতে সক্ষম হব; যদি না আমরা এই জাতির মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেলতে সমর্থ হই। তা হচ্ছে দেশটির আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং এজন্য, আমি প্রস্তাব করছি যে আমরা যেন সে দেশের আদি ও প্রাচীন শিক্ষা পদ্ধতি বদলে ফেলি, এবং বদলে ফেলি তার সংস্কৃতি ।- যখন তারা ভাবতে থাকবে সেগুলো তাদের নয় – এবং ইংরেজরা তাদের থেকে উত্তম এবং উন্নত;- তাহলেই তাদের ‘আত্মমর্যাদাবোধ ও তাদের সংস্কার হারিয়ে ফেলবে; আর তাহলেই কেবল আমরা যেমন চাইছি – তারা সেই রকম এক ‘পর্যদুস্ত জাতিতে পরিণত হবে’।
হ্যাঁ, প্রায় আড়াইশো বছরের শাসনে তাদের হুকুমবরদার ‘কেরানি তৈরির শিক্ষা ব্যবস্থা তারা তৈরি করে যেতে পেরেছিল । ফরমাইশ খাটা মেরুদণ্ডহীন ‘ক্লীব, যে ‘কর্তার হুকুমে উঠে বসে; মাছিমারা কেরানির ’কাহানি সেই শ্রেণীর ‘পরাধীন জীবদের ‘ঐতিহ্য বহন করছে! এখনো আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় পদের চাকুরি হল – সেক্রেটারি; যা নেহায়েত মন্ত্রীর কেরানী বাবু। আর সে পদ দখল করার জন্যই আজ দেশের মেধাবী ছাত্ররা চরম প্রতিযোগিতা করছে! চাকুরি করাই জীবনের ব্রত, এমন ধারনা নিয়েই বেড়ে উঠছে সাড়া দেশের শিশু তরুণরা! কারো অধীনস্থ না হয়ে, স্বাধীন ভাবে – স্বাধীন চিন্তা চেতনায় – ব্যবসা –বানিজ্য, আবিষ্কার –ফার্ম প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন নিয়ে আর ক’জন বড় হয়? দেশের চিন্তা চেতনা আর মননে স্থায়ী কেরানী’ হওয়ার মানসিকতা অত্যন্ত সফল ভাবে ‘প্রবিষ্ট করিয়ে দিয়ে গেছে ব্রিটিশরা -। আমরা নামেই কেবল স্বাধীন-! আমাদের চিন্তা চেতনায় পরাধীন, পর্যদুস্থ মানসিকতা, বিদেশী সংস্কৃতির ‘সেবাদাস হওয়াটাই যেন আমাদের নিয়তি! দেশী পণ্য কিনে হও ধন্য – এ কেবল গাল ভরা বুলি; আমাদের পায়ের নখ থেকে মাথার চুল পর্যন্ত বিদেশী পণ্যে ঢাকা থাকলে আমরা গর্বিত; ফোনের একটা স্ক্রু পর্যন্ত আমরা তৈরি না করতে পারলেও প্রতি হাতে হাতে একাধিক ফোনের বাহার আমাদের লজ্জিত করে না। বিদেশী পোশাক, সংগীত, খাদ্য, সংস্কৃতি আর ভাষা আমাদের নিজস্ব জাতিস্বত্বা ভুলিয়ে দিচ্ছে, ব্রিটিশরা না থাকলেও তাদের ট্রেনিং আজো যেন সমান ভাবে কার্যকর ! অনেকে আইন প্রনেতা- তো তাদের সে ‘গোলামি আইন বাতিল দূরে থাক, সংশোধন করতেও ভয় পায়, পাছে নাকি আবার বাঙ্গালী অতিরিক্ত স্বাধীনচেতা হয়ে যায়! আদালতে সেই ব্রিটিশ ঔপণিবেশিকদের অনুকরণে – মাথায় পরচুলা – গলায় ‘ডগ-কলার ‘স্বাধীন দেশের আইনজীবীদের গলায় সগৌরবে শোভা পায় – চক্ষুলজ্জার কোন বালাই নেই! জয় বাবা ব্রিটিশরাজ, সরি মা রানী ! আমরা তোমার প্রজা মাত্র! তোমার সিঁথির সিঁদুর অক্ষয় হোক!!
[img]http://www.newsbangla.net/blog/bloggeruploadedimage/tmirmustafa/1492282062.jpg
বিষয়: বিবিধ
১২৭৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধন্যবাদ লেখাটার জন্য। এমন লেখা আরও দরকার আমাদের আমাদের চেনার জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন