খেজুর রস

লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০৭ মার্চ, ২০১৭, ১০:১৭:৩২ সকাল

রসঃ



গ্রামের জীবন যাত্রা তখনও এত জটিল হয়ে উঠেনি ! শরৎ বাবুর কেষ্টর মায়েরা তখনও মোটা ভাত মোটা কাপড়ে সন্তুষ্ট ছিল, স্টার জলসার নোংরা ধারাবাহিকগুলো বাংলার ঘর গেরস্থালী তখনও অপবিত্র করতে পারেনি। ঋতু বৈচিত্রে মানুষের সাড়া ছিল স্বতঃ স্ফূর্ত । এখনকার মত ৩১ ডিসেম্বরের রাতে বা ১৪ ফেব্রুয়ারির বুনো পার্টিতে বাংলার দামাল ছেলেরা ( এবং মেয়েরা) তখনো মেতে উঠেনি! বউচি - দাড়িয়া বান্ধা - বদন - এই সব খেলা গুলো তখনও অবসর নিয়ে মুখ লুকিয়ে ফেলেনি! মাটির ভাঁড়ে রসগোল্লা নিয়ে আত্মীয় বাড়ি গমণেচ্ছু লোকজনের দেখা পাওয়া যেত আকসার!

শীতের দিনে নূতন ধান উঠত ঘরে আর তার সাথেই শীতের পিঠা পার্বণ শুরু হত সাড়া গ্রাম জুড়ে।নাইওর আসত মেয়েরা - মেয়ে জামাইদের পিঠা খাওয়ানোর প্রচলন - ছিল গ্রামীণ ঐতিহ্য !

শীতের সকালে সোনালি রোদে পিঠ দিয়ে দাওয়ায়া বসে মচমচে মুড়ি সহযোগে গলাধঃকরন করা হত গাছ থেকে সদ্য নামিয়ে নিয়ে আসা ঠাণ্ডা খেজুর রস! মৌ মৌ গন্ধের সাথে লালাভ তরল মিষ্টি রস যেন অন্তরাত্মা পর্যন্ত মিষ্টতায় ভরিয়ে দিত। রস খাওয়ার পরে শীত আরও জাঁকিয়ে বসত চাদর গায়ে দিয়ে শীতে কাঁপতে কাঁপতে নাড়ার আগুন জ্বালিয়ে আগুন পোহাত দুরন্ত কিশোরের দল । উলেন সোয়েটার কালে ভদ্রে শিক্ষিত লোকজন ব্যবহার করলেও - জ্যাকেট কি বস্তু তা সে সময়ে বিলাত ফেরত লোকজন ছাড়া আর তেমন কেউ সু বিদিত ছিল না! মহাত্মা গান্ধীর মত সেলাই ছাড়া কাপড়- ধুতি চাদরে লজ্জা এবং শীত উভয়টাই নিবারন হত অধিকাংশ মানুষের!

শীতের মজা প্রায় হারিয়েই গেছে এখন - বাদুরের ভাইরাসের 'কল্যাণে সেই রস খাওয়া যেন এখন 'বিভীষিকা ! কেউ হয়তো দুষিত রস খেয়ে সত্যিই মারা গেছে- আর সে খবর মিডিয়ার কল্যানে এমন ভাবে ছড়িয়েছে যে, আমি যখন রস খাওয়ার প্রস্তাব দিলাম- আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধু এমন ভাবে তাকালো যেন আমি এনাস্থেসিয়া ছাড়া তার 'বাইপাস অপারেশন করতে চাইলেও সে এত অবাক হত না!

যাহোক, - 'অকাল মৃত্যু রোধের পর্যাপ্ত 'ব্যবস্থা নিয়ে 'অপারেশন খেজুর রস পান- সম্পন্ন করা হল! যথা সময়ে সকালের প্রার্থনা শেষে 'খেজুরের রস' এলেন মাটির ভাঁড়ে নয়, এলুমিনিয়ামের বালতিতে চড়ে ! কাঁসার গ্লাস নয়, চিনে মাটির কফি মগে করে গলাধঃকরন করা হল- সে রস। এটা শুধু রস পান নয় - রস উৎসব যেন! অবাক লাগল যখন আমাদের বাড়ির কাজের মানুষটি পর্যন্ত নিতান্ত অবহেলায় 'রস খাওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল! তার তো আর মাথা 'খারাপ হয়নি যে দিনে দুপুরে সে এমন পাগলামি করবে! রস খাওয়ার সে মজাও যেন 'আদিম সভ্যতার অংশ হিসেবে 'লুপ্ত হয়ে গেছে!

তবে বেশ তারিয়ে তারিয়েই দীর্ঘদিন পরে খেজুর রসের মজা উপভোগ করলাম ! রসের গ্লাসে মুড়ি ফেলে দিয়ে এমন 'রস করে রস খাওয়া প্রায় এক যুগ পরে ! বেঁচে থাকো খেজুর রস!

আর কিছু দিন পরে হয়তো নাতি নাতনীদেরকে বাংলাদেশের দাদুরা গল্প বলবে - শোন দাদু - অনেক অনেক দিন আগের কথা! ঐযে মাথায় আলুথালু ডালপালা নিয়ে এক পায়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে যে গাছটি - মানুষ তার গায়ে ক্ষত সৃষ্টি করত- ধারালো হেঁসোর টানে - ওর গলা থেকে চুইয়ে নামত রস, সারা রাত ধরে টুপ টাপ করে জমা হত গাছের গলায় বেঁধে রাখা মাটির ভাঁড়ে; সকালে প্রায় ভর্তি হয়ে যাওয়া ভাঁড় নামিয়ে আনত 'গাছিরা! শিশু কিশোররা কত্ত মজা করে সে রস খেত! সে এক সময় গেছে----!

বিষয়: বিবিধ

৯৪৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382157
০৮ মার্চ ২০১৭ বিকাল ০৫:৪২
সন্ধাতারা লিখেছেন : Salam! Enjoyable writing mashalllah
382168
০৯ মার্চ ২০১৭ সকাল ০৮:৩৭
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : আপনাকেও সালাম! অনেক ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File