এক কাপ কফি, বীজ অঙ্কুরোদ্গম ও 'তাঁর নিদর্শন
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১৭ জুলাই, ২০১৬, ১১:৩৫:৫৭ রাত
আলহামদুলিল্লাহ!
আমি কি ভাগ্যবান!
ধুমায়িত এক কাপ কফি আমার সামনে!
এ পৃথিবীতে লাখো মানুষ আছে যাদের জন্য এ সামান্য কফিও এক বিশাল বিলাসিতা!
কত স্তর – কত ধাপ পেরিয়ে এ কফি আমার কাছে এসে পৌঁছেছে! কোথায় কোন দেশে এর গাছ গুলো জন্মেছে, সে মাটিতে কে সার দিয়েছে- সেচ দিয়েছে- পোকামাকড় বা রোগবালাই এর তত্ববিধান করেছে, বীজ পাকলে তা সংগ্রহ করেছে? বীজাবরণ পচে গেলে বীজের পরিচ্ছন্নতা- এর পর এর বেকিং (Baking)! তাপের একটু কম বাড়া হলেই শেষ! হয় ‘সেই গন্ধ বা ফ্লেভারটা আসবে না, বা পুড়ে গেলে পুরোটাই বাতিল! এবার কোয়ালিটি চেক! স্বাদ গন্ধ সব কিছু ঠিক হলে প্যাকেট করে বাজারজাত!আমি এবং আমার মত আর যারা তা কিনে ঘরে আনছি!
পানি ফুটল, কাপে ঢেলে, প্যাকেট থেকে বের করে কফি যোগ করা হল, দুধ ও চিনি যোগ হল পরিমাণ মত। বিশাল কর্মযজ্ঞের ধারাবাহিকতার শেষে আমার কফি কাপ এসে দাঁড়ালো ‘ভোগের জন্য!
কয়েক চুমুকে শেষ করে ফেললে তো ল্যাঠা চুকেই যেত ! কিন্তু এ ধাপ গুলো নিয়ে চিন্তা করতে গেলেই তো কফি পানের মজা অর্ধেক কমে যাবে! আরও যদি গভীরে যাওয়া হয়!
‘প্রকৃতি প্রদত্ত ভাবেই পৃথিবীর এক এক এলাকার মাটির গুনাগুন আলাদা! ঠিক বললাম? জাভা কফির যে ফ্লেভার আর স্বাদ, তা ব্রাজিলের কফিতে আসবেনা! কিম্বা আফ্রিকার ইথিওপিয়ার কফির গন্ধ! আগের দুদেশের মত নয়! কে তৈরি করেছে এ মাটি? আর এর আলাদা বৈশিষ্ট?খনিজ উপাদান?
বীজ বপণ করে দিলেই যে চারা হবে তা কে বলেছে! বীজ থেকে অংকুরোদগমের যে বিশাল প্রক্রিয়া তা লিখতে গেলে একটা বই হয়ে যাবে! বীজের শক্ত আবরণ যখন মাটির আদরে আশ্রয় নেয়, আর সেখান থেকে আদ্রতা শোষণ করে নরম হয়, ভেঙ্গে যেতে থাকে এর কাঠিন্য। আমরা যেমন আমাদের এক দুবছরের শিশুকে –সমস্ত প্রতিকূলতা থেকে হেফাজত করি, এ বীজাবরণ ঠিক তাই করে এসেছে- দীর্ঘদিন! কঠিন হস্তে ভেতরের বীজকে রক্ষা করে এসেছে! বয়স হলে আমরা যেমন আমাদের ছেলেমেয়েরা একা বাইরে গেলে আর শঙ্কায় কুঁকড়ে যাই না – এর এখন সে অবস্থা! সে নরম হয়ে উন্মুক্ত করে দিল- পথ করে দিল অংকুরের জন্য! ভেতরের শস্য দানা ভাঙ্গতে শুরু করেছে; দুগ্ধপোষ্য শিশুর মত – জন্মা মাত্রই এ শিশুপ্রাণ মাটি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতে অপারগ! তাই সে শস্য দানা গলে গিয়ে এর খাবারের যোগান দেবে, যতদিন না এর শেকড় গজাচ্ছে, ছড়িয়ে পরছে মাটির গভীরে, পাতা গজিয়ে সূর্যালোক থেকে ‘শক্তি টেনে নিতে পারছে! এ তণ্ডুল বা শস্য কনার ভাঙ্গনের যে রাসায়নিক বিক্রিয়া তা বর্ণনা করতে একটা পৃষ্টায় হবে না! প্রোটিন ভাঙ্গতে এক রকম, স্টার্চ ভাঙ্গতে আর এক রকম- ধাপে ধাপে তা এমন যৌগে এসে রূপ নেবে যা কিনা উৎগত অংকুর হজম করতে পারে। কে শেখাল তাদেরকে এ জটিল প্রক্রিয়া? কিভাবে তা ধাপে ধাপে নিয়ন্ত্রিত হয়? হরমোন ? এনজাইম? কে তৈরি করল এসব? যার একটু এদিক সেদিক হলে সে বীজ আর আলোর মুখ দেখবে না! পুরো প্রক্রিয়া বিনষ্ট হবে!
একই বীজ থেকে বের হল অংকুর-এত দিন একসাথে মিশে থাকা এ কোষকলা এবার ভাগ হয়ে যাবে! কোন এক অদৃশ্য আঙ্গুলী হেলনে এর একটা অংশ আলোর দিকে মাথা উঁচু করবে- ভবিষ্যতে আমরা একেই বলব কাণ্ড। আর একটা অংশ নীচে মাটির অন্ধকারের দিকে নামতে থাকবে, আলোর বিপরীত দিকে। এটাই এক সময় রূপ নেবে শেকড়ে – একাধারে তা গাছকে মাটির সাথে শক্ত ভাবে আটকে দেবে, মাটি থেকে সংগ্রহ করবে পানি ও গাছের প্রয়োজনীয় খনিজ। কাণ্ডে গজাবে পাতা-আর পাতার ক্লোরোফিল প্রাণশক্তি টেনে নেবে সূর্যালোক থেকে, পাতার রন্ধ্র পথে ঢুকবে প্রয়োজনীয় গ্যাস, কার্বন ডাই অক্সাইড- আমরা যা প্রতিনিয়ত নিঃশ্বাসের সাথে ত্যাগ করছি! বাতাসের ভারসাম্য রক্ষা করবে এ প্রক্রিয়া – আমরা নাম দিয়েছি ‘সালোক সংশ্লেষণ! সেই গ্যাস আর পানির সম্মেলনে তৈরি হবে কার্বোহাইড্রেট- বা স্টার্চ, এক সময় তা খাদ্যের যোগান দেবে শুধু গাছ নয়, বা মানব জাতির জন্যই নয়, সমগ্র প্রানীকূলের! এ খাদ্যের সহায়তায় এরা দ্রুত বাড়তে থাকবে, বড় হবে, ঋতু এলে- ফুল ফুটবে, মৌমাছির খাদ্য যোগাবে ফুলের মধু, পরাগায়ন হবে- ফল হবে, সে ফল বীজ তৈরি করবে- ফল ও বীজের সিংহভাগ তাদের নয়, সমগ্র প্রাণীকূলের-ভোগে লাগবে! কে নির্ধারিত করে রেখেছে অতি নিখুঁত পরিকল্পনায় – এর প্রতিটি ধাপ? প্রকৃতি?
কিভাবে?
প্রকৃতিতে পরিকল্পিত ভাবে কি কিছু ঘটে? জঙ্গলে গেলে দেখা যাবে- অসংখ্য গাছের পাতা পড়ে আছে নীচে, কোথাও বেশি কোথাও কম, ডাল পালা প্রানীর উচ্ছিষ্ট- কোথাও এত ঘন প্রাণীর অনুপ্রবেশ অসম্ভব, কোথাও খালি- কিছু নেই! এই হল প্রকৃতি! কোন নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে হয়নি, বরং নিয়ম শৃঙ্খলার আপাতঃ অনুপস্থিতি এর জন্য দায়ী!
একটা গাছের বীজও উদ্দেশ্যহীন ভাবে গজায় না! সূরা ওয়াক্কিয়া আয়াত ৬৩ এবং ৬৪ উল্লেখ করেছে সে কথাঃ তোমরা যে বীজ বপন কর, সে সম্বন্ধে ভেবে দেখেছ কি? এগুলো তোমরা গজিয়ে দাও নাকি আমি? কোন এটা মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে- এর পেছনে রয়েছে এক ‘বিজ্ঞানময় পরিকল্পনা! এসব কিছুই নিদর্শন- চিন্তা ভাবণার খোরাক – কেবল যারা চিন্তা ভাবণা করে! কোন কিছুই প্রয়োজন ছাড়া বা উদ্দেশ্য ব্যাতিরেকে সৃষ্টি করা হয় নি!
আমাদের সামনে খাদ্যের থালা এসে যাচ্ছে- চর্ব্য চোষ্য লেহ্য পেয়- এর পেছনে কত পরিকল্পনা কত শ্রম কত স্তর যে পেরিয়ে এসেছে- এরজন্য আমরা কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি! একটু চিন্তা ভাবনা করি? মানুষ এত গাফেল কিভাবে হয়?
এই অকৃতজ্ঞ মানুষকে লক্ষ্য করেই- আল্লাহপাকের প্রতি আমাদের অকৃতজ্ঞতার আভাস জানিয়েই আর এক সূরায় বর্ণিত হয়েছেঃ “কোন জিনিষ তোমার মহামহিম প্রভুর বিষয়ে তোমাকে ধোঁকায় ফেলে রাখল, যিনি তোমায় সৃষ্টি করেছেন, সোজা সুঠাম দেহ বানিয়েছেন এবং প্রতিসাম্য করেছেন? তিনি ইচ্ছে করলে যে কোন আকৃতিতে তোমায় গড়তে পারতেন !”
আমরা কি কর্ণপাত করব?
বিষয়: বিবিধ
১৯১৪ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ফা তাবা-রাকাল্লা-হু আহসানুল খা-লিকীন!
সুব হানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ !!
লা নুকাজ্জিবু বি নি'মাতি রব্বি, ফা লাকাল হামদ
স্মরণ করিয়ে দিলেন,
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
আল্লাহ সোবহানাহু তায়ালা এই ভাবেই আমাদের চুখে আংগুল দিয়ে দেখাচ্ছেন,,,, অথচ আমরা মাবুদের/রবের কথা ভূলেই আছি,,, তাদাব্বুর করছিনা,,, লিখাটিতে মুদাব্বিরদের জন্য খোরাক রয়েছে,,,,
(আউট অফ সিলেবাস)--ঈদের সারাদিন পথ চেয়ে বিফল হয়েছি। ওয়াদা ভঙ্গের কেস দিতে চাই।
ক্ষমা চাই! এদেশে আমার একমাত্র ভাগ্নি ও জামাই আমার বাসায় আসার কথা! কথা ছিল তারা আসবে- এরপর তাদেরকে বিদায় দিয়ে আমরা বের হব! তাদের বাসা আপনার কাছাকাছি! তাদের বাসায় যাব, এরপর আপনার সাথে দেখা করব! অভিযোগ করছি না, তারা এসেছে রাত এগারোটায় ! এখন বলুন !
তবে ইনশাআল্লাহ – দেখা হবে খুব শিগগীর – এটুকু বলতে চাই!
মন্তব্য করতে লগইন করুন