আকাশ বিকাশ ডন ও বাংলার সহিংসতাঃ পুলিশী দক্ষতা
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০৪ জুলাই, ২০১৬, ০৩:০৯:৩৮ রাত
একটা প্রবাদ আছে- Violence is the last resort of the incompetent.
সহিংসতা অক্ষমের শেষ অবলম্বন। মানুষ যখন আর সহ্য করতে পারে না, মানুষের যখন আর এর বিরুদ্ধে প্রথাগত কোন আইন কানুন ব্যবস্থা কার্যকর করতে পারে না, এই ভাগ্যাহত হেরে যাওয়া মানুষ তখন সহিংসতা অবলম্বন করে! এটা প্রবাদ!
আসলে সহিংসতা কেন হয় ? হাজারো কারনে মানুষ সহিংস হয়ে উঠতে পারে! স্থান কাল পরিস্থিতি পরিবেশ এর চাপে মানুষ কেন, পশুও সহিংস হয়ে উঠে! কথায় আছে – দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে বিড়ালও বাঘের মত ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে! এর সাইকো এনালাইসিস করা হয়েছে! বাঘা বাঘা পণ্ডিতের দল মনোবিশ্লেষণ করে রায় দিয়েছেন। একটা ক্ষেত্রে তা একশত ভাগ সঠিক না হলেও, অনেকাংশেই তা যুক্তি নির্ভর!
কিছু মনোবিজ্ঞানী বলছেনঃ নারসিসিজম ও আত্মবিশ্বাসের অভাব অনেক সময় সহিংসতা ও আক্রমণাত্মক মনোভাবের কারন হিসেবে দেখা যায়; এর ফলাফল(ভায়লেন্সঃ জে গিলিগান, ১৯৯৬ ) মনোবিশ্লেষণ ভিত্তিক ও কগনিটিভ ( Psychoanalytic & cognitive) !
সহিংসতার মডেলে দেখা যায়, মানসিক ভাবে স্বাভাবিক বা স্থিতিশীল নয় বা যাদের আত্মবিশ্বাস খুব একটা প্রবল নয়- এরা অপমান বা অমর্যাদাকর পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ বা প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে উঠে; এবং আত্মমর্যাদা বা নিজের আত্ম- অহংকার পুনরুদ্ধারের জন্য সহিংসতার প্রকাশ ঘটায়। ইগো বা আত্মমর্যাদা বোধের উপর আক্রমণ হলে প্রতিক্রিয়া হিসেবে কোন ব্যক্তি সহিংসতার আশ্রয় নিতে পারে! ‘নারসিসিজম ও আত্মঅহংকার’ এর সাথে সহিংসতার সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ হয়েছে- । বিশেষ করে যাদের ঐ দুই সমস্যা নেই – বা কম আছে, তাদের তুলনায় যারা ঐ বিষয়ে ‘সেনসিটিভ - তারা অবশ্যই সহিংসতা প্রবন হয়ে উঠতে পারে, যখন পরিবেশ, বা পরিস্থিতি এতে ইন্ধন যোগায়!
অবশ্যই সে ব্যাক্তির বা বিশেষ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান - স্কুল বা কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া বা তার পারিবারিক বা অর্থনৈতিক অবস্থা বা তার ধর্ম বা রাজনৈতিকবিশ্বাস এ বিবেচনায় আসছে না!
ইগোতে বা অহম বা আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগলে- যারা এ বিষয়ে সেনসিটিভ – তারা প্রতিক্রিয়া হিসেবে সহিংসতার আশ্রয় নিতে পারে- মূল কথা এটাই!
আরও তত্ত রয়েছে! একজন গরিব মানুষ সমাজের নানা জুলুমের শিকার হলেও সহিংসতার আশ্রয় নিতে পারে, একজন ধনী মানুষও বৈরী আবহাওয়ায় ভোগান্তির শিকার হলে সহিংস আচরন করতে পারে!
আবার অন্য তত্ত বলছে- নিজেকে প্রমাণ করার কথা! এর নাম হিরোইজম। যুবকদের মধ্যে এ প্রবনতা লক্ষ্য করা যায়। ‘আঠারো বছর দারুণ সময়- স্পর্ধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি” ! একটা বয়সে হরমোন এর কল্যাণে মানুষের মনোজগতে ঝড় উঠে- সে তার স্বাভাবিক আসেপাশের জগতকে ভেঙ্গেচুরে নূতন ভাবে গড়তে চায়, সে নূতন স্বপ্ন দেখে- এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য সহিংসতার আশ্রয় নেয়াকে খারাপ কিছু মনে তো করেই না- বরং তাকে চমক সৃষ্টির একটা উপায় মনে করে ! তার কাছে নূতন স্বপ্ন আর তা বাস্তবায়নের জন্য সবকিছুই একটা নূতন চ্যালেঞ্জ, দুনিয়াকে বদলে দেয়ার ‘পদক্ষেপ মাত্র! কল্পনায় নিজেকে বিরাট কিছু করে সাফল্য অর্জনকারী হিসেবে সে নিজেকে দেখে, আর যার কল্পনা যত শক্তিশালী, সে ততটাই উদ্দীপিত হয় সে পথে , হোক তা সহিংসতার পথ!
হাজারো ধরনের মানুষ রয়েছে এ দুনিয়ায়। তাদের মনঃস্তত্তও ভিন্ন ধরনের। নিজেদের হিরো প্রমাণ করার উদ্দেশ্য ছাড়াও আরও অনেক কারন থাকতে পারে মানুষ যেজন্য সহিংসতার আশ্রয় নিতে পারে! আর এই সহিংসতাকে – সন্ত্রাসবাদ নাম দিয়ে, তার সাথে ইসলামকে জুড়ে দিয়ে, ইসলামের অবমাননা করার জন্য মুখিয়ে আছে একদল মানুষ । তাদের বাকযন্ত্র যেমন পরিষ্কার, তাদের মাইক্রোফোনও তেমন ক্ষমতাশালী, তাদের চিন্তা চেতনা ও মানুষকে প্রভাবিত করবার দক্ষতাও প্রশ্নাতীত ! এরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়েই নানাভাবে ইসলাম অনুশীলনকারী মানুষকে ‘আক্রমণ করে যাচ্ছে- বিরতিহীন ভাবে! এদের অবিরাম আক্রমণের ফলে মুসলিম গণমানসে এক ধরনের হীনমন্যতা বোধের জন্ম নিচ্ছে । এমনকি ইসলাম অনুরাগী মানুষও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে- আসলেই কি ইসলাম এই সকল সমস্যার মূলে? এটাই ভয়ানক চিন্তার কথা! এটাই সেই ‘দল বা গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য, মানুষকে ইসলামের প্রতি বিরুপ করে তোলা! আন্দ্রিয়াস ব্রেভিক যখন ৭৫ জন তরতাজা প্রাণকে একের পর এক গুলী করে খুন করে, এটাকে সে মিডিয়া সন্ত্রাসবাদ বা টেররিজম বলে না, আমেরিকায় একের পর এক গণহত্যা হয়, খুনী যখন সাদা – এরা সন্ত্রাসী হয় না, এই টেররিজম বা সন্ত্রাস শব্দ কেবল মুসলিম বা ইসলামের অনুসারীদের জন্য সংরক্ষিত! সাধারন মুসলিমরাও যেন এ বৈষম্য ধরতে অক্ষম, বরং আমাশয়ের রোগীর মত ঘন ঘন বাথরুমে গিয়ে নিজেদের অক্ষমতাকে চাপা দেয়ার চেষ্টা করছে! যেন মেনে নিয়েছে মুসলিমরাই কেবল সন্ত্রাসী, মুসলিম হয়ে জন্মেই যেন এ সন্ত্রাসের পাপ করে বসে আছে!
হিটলারের তথ্য সন্ত্রাসী সহচর জোসেফ গোয়েবল এর প্রচারনা কৌশল ছিল এমনই, একটা মিথ্যা দশবার শুনতে শুনতে মানুষ সেটাকেই সত্য ভাবতে শুরু করে! এই সব নব্য গোয়েবলস তাদের প্রয়াত গুরুর অনুসরণ করেই এ অপকৌশল অবলম্বন করেছে! ইসলামের বদনাম শুধু সহিংসতাকে জড়িয়ে নয়, তৃণমূল পর্যায়ে এর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও অবলম্বনের উপরেও আক্রমণ করছে তারা – বলেছে, মাদ্রাসাতে সহিংসবাদ সৃষ্টি হচ্ছে! এত বড় ঘৃণ্য অভিযোগ করার পরেও তাদের বিরুদ্ধে সাধারন মুসলিমরা কিছুই করতে পারবে না- কারন রাষ্ট্রের কর্তা ব্যাক্তিরাই এই অভিযোগের হোতা! এসব কারনে সাধারন মুসলিমরাও এখন তাদের ধর্ম বিশ্বাসের পরিচয় দিতে কুণ্ঠাবোধ করছে, নিজেরাই ক্ষত বিক্ষত হচ্ছে, আত্মগ্লানিতে ভুগছে! এটা দারুণ আশংকার কথা, ভয়ের কথা! মানুষ তার বিশ্বাস আর চেতনা একবার হারালে তার আর পশুর মধ্যে কোন পার্থক্য থাকে না!
বাংলাদশে রাজনৈতিক সহিংসতা নূতন কোন ঘটনা নয়; স্বৈরাচার আর রাষ্ট্রীয় কঠোরতার কারনে - বিরোধী পক্ষকে দলন আর অত্যাচার যখন চরম, যখন বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে, সাধারন মানুষ যখন শাসন যন্ত্রের নাগপাশে হাঁসফাঁস করে উঠে, তখন সহিংসতা মাথা চাড়া দেয়! সাধারণত রাষ্ট্র যন্ত্রের বিরোধী পক্ষ এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ সূত্র অচল! সরকারি বাহিনীর ছত্র ছায়ায় এবং তাদের প্রত্যক্ষ সহায়তায় সরকারি দলের গুণ্ডারা সহিংসতা করে- বৈধ ভাবে, এমন কি সরকারি বাহিনীও ‘আইনী ক্ষমতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সহিংসতার আশ্রয় নেয়, নেয় ক্রস ফায়ারের মত ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের আশ্রয়, বিচার বহির্ভূত খুন – গুম এমন অস্বাভাবিক মৃত্যু গুলো বড় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে বাংলাদেশে!
এমন ধারার দেশে ঘটলো গুলশানের সহিংস ঘটনা। হতে পারে রাজনৈতিক সহিংসতা বা নারসিসিজম বা ইগো বা আরও অনেক ফ্যাক্টর এর সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এ সহিংসতার! কিন্তু রমযান মাসে ইসলামের অনুশীলনকারী একজন মানুষ কি সারাদিন রোজা রেখে এ ধরনের সহিংসতার আশ্রয় নেবে? এমন পবিত্র দিনে! এছাড়া যেমনটা রাষ্ট্রীয় কর্তা ব্যাক্তি বা তাদের আন্তর্জাতিক গুরুরা যেমনটা বলে থাকে – এরা তো কেউ ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত নয়, বা এরা কোন মাদ্রাসায় পড়ে নাই! তাহলে?
বাংলাদেশের পুলিশের বদনাম রয়েছে, এরা অদক্ষ, অসৎ- ঘুসখোর, ব্যাক্তিগত বা দলীয় স্বার্থে কাজ করে – দেশের স্বার্থে নয়। সাধারন মানুষ এদের কাছে নিরাপত্তা পায় না- বরং উল্টো, বাঘে ধরলে আঠারো ঘা, পুলিশে ধরলে ছত্রিশ ঘা! ভাল অফিসার যে নেই তা নয়, তবে এদের সংখ্যা, না থাকার মতই- অগ্রাহ্য করা যায়~ । এক সময়ে মনে হত, পুলিশ বাহিনি না থাকলেই বোধ হয় এ দেশে অপরাধ কম হত, কারন অপরাধীরা পুলিশকে ‘ভাগ দিয়ে অপরাধ করে!
গুলশান সহিংসতায় পুলিশ মেরে ফেলেছে পাঁচ যুবককে, পুলিশের ভাষায় যারা সহিংসবাদী! যত গুলো লাশ পড়েছে এই রেস্টুরেন্টে- জানার উপায় নেই কয়জন পুলিশের গুলিতে আর কয়জন সহিংসবাদীদের গুলিতে মরেছে! জানার উপায় নেই, এই যুবকরা কেন এ কাজ করেছে, কারা এর পেছনে, কি উদ্দেশ্য! কিন্তু এরা তো তথাকথিত ইসলামিক ‘প্রোফাইলে পড়ে না! তাহলে? শুনেছি, স্মোক বম্ব এর কথা, গ্যাস বম্ব এর কথা- এগুলো ছুঁড়লে সবাই অজ্ঞান হয়ে যেত, মানুষ জানতে পারত তাদের উদ্দেশ্য কি, গবেষণা হতে পারত- ভবিষ্যতের এদের মত কেউ যেন আর এমন দুর্ঘটনা না ঘটায়, তার পন্থা উদ্ভাবনে সে জ্ঞান কাজে লাগত! কিন্তু না – পুলিশ তাদের পশ্চিমা গুরুদের ট্রেনিং অনুসরণ করেছে, তাদেরকে মেরে ফেলতে হবে- যেন সাধারন মানুষ এদের বক্তব্য কখনো জানতে না পারে, কেবল মাত্র ‘পুলিশ ভার্সন’কেই বিশ্বাস করে! পুলিশের প্রতি ‘সে আস্থা – সে বিশ্বাস কি মানুষের আছে?
পুলিশ বলছে এদের নাম আকাশ, বিকাশ, ডন – বাঁধন – ইত্যাদি! কিন্তু আমাদের ফেসবুক ‘ইন্টেলিজেন্স প্রমাণ করছে, তাদের দক্ষতা পুলিশের চাইতে বেশী। পুলিশ কি করে তাদের এই নাম গুলো পেল আর কিভাবেই তা যাচাই না করে – মিডিয়ায় প্রকাশ করলো? এটা বাংলাদেশী পুলিশের ‘দক্ষতার আরও এক প্রমাণ! অনেক মানুষ মারা গেছে, দুজন পুলিশও মারা গেছে- আমরা ব্যাথিত, যে কোন অপমৃত্যু- অসময়ে মৃত্যুই কারো কাম্য নয়! আমরা সকল অপ্রয়োজনীয় মৃত্যুর বিরুদ্ধে আমাদের ক্ষোভ ও নিন্দা জানাই।
এক পক্ষের ‘অনুপস্থিতিতে – পুলিশের বক্তব্যই রাষ্ট্র যন্ত্র আমাদের শুনাবে। পুলিশের অদক্ষতা বা রাষ্ট্র যন্ত্রের কোন ভূমিকার ক্রুটি বিচ্যুতি আমরা কখনোই জানতে পারব না ! মিডিয়া বিশেষ করে ‘উদ্দেশ্যমূলক মিডিয়া গুলো সরব হবে মুসলিম তথা ইসলামের বিরুদ্ধে, দুনিয়া জোড়া ইসলাম বিরোধী যুদ্ধে নূতন অ্যামুনিশন, নূতন জ্বালানী যোগ হবে, আমরা সাধারন মুসলিম যেন আরও একধাপ আত্মগ্লানীতে নীচে নামব, আস্তে ধীরে তলিয়ে যাব।
এভাবে সহিংসতা কি নির্মূল হবে? কখনো নয়! সহিংসতার কারন অনূসন্ধান না করতে পারলে – সহিংসতা কখনো কমবে না, আবার কোথাও কোন আকাশ বিকাশ ডন গ্রুপ হামলা করবে কোন শপিং মল বা রেস্তরায়, ক্রুসেডার বাহিনী আবার কিছু ইন্ধন পাবে ইসলামের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানানোর জন্য।
Every Action Has an equal and opposite reaction - নিউটনের তৃতীয় সূত্র কেবল পদার্থ বিদ্যা নয়, জীবনের আরও অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর ।
বিষয়: বিবিধ
১৫৪৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাড়াহুড়ো করে পুলিশ এই নামগুলোকেই বেছে নিয়েছে । বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীতে আইটি এক্সপার্ট পাড়ার মোবাইলের দোকানের পিচ্চির চেয়েও কি খুব বেশী দক্ষ ?
কমান্ডোরা কি ১০০ তে ১০০ পেয়েছে - মানে যাদেরকে মেরেছে সবাই হামলাকারী ছিল? কিভাবে তারা এই একিউরিসি পেল ? ২০ জন যে মারা গেল তারা নাকি অভিযানের আগেই মারা গিয়েছিল ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ।
এটা তো আমাদের কমান্ডোদের জন্য প্রথম অভিযান । Virtua Cop 2 খেলা প্রথম যখন খেলেন তখন কি এক সটে সব ক্লিন করেন , একজন হোস্টেজও কি গুলি খায় না ?
http://www.fullypcgames.net/2013/04/virtua-cop-2-game.html
মন্তব্য করতে লগইন করুন