পথের ধারের এক বেগুনী জুব্বা (purple robe by the road side)
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ২৮ মে, ২০১৬, ০৮:৪৫:০৪ রাত
ধুম ছুটছে গাড়ি! হাইওয়ে ৪০১ ধরে পশ্চিমে যাচ্ছি, কানাডার পূর্ব পশ্চিমকে সংযুক্ত করা দীর্ঘতম হাইওয়ে এটা ! হাইওয়ে থেকে নামার ‘সাইন খুঁজছি, রেক্সডেল শপিং মল এগিয়ে আসছে, আমাকে বেরিয়ে যেতে হবে হাইওয়ে থেকে, সাবধানে, স্পীড আক্রান্ত গাড়ীর বহরকে পাশ কাটিয়ে, একেবারে ডানের প্রান্তের লেনে যেতে হবে, এক্সিট নেয়ার পূর্বে ।
নিয়ম মেনে, সিগন্যাল দিয়ে, স্পিড বাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম- “ “ইজলিংটন নেক্সট এক্সিট –“এক কিলোমিটার’ সাইনকে পাশ কাটিয়ে ! ডানদিকে যেতে হবে ঈপ্সিত গন্তব্যে –! ডানে বামে দেখে নিয়ে আবার সিগন্যাল দিয়ে, সিগন্যালের সাথে তাল রেখে, নিয়ম অনুসারে স্পিড কমিয়ে, ৬০ কি.মি. নামিয়ে আনলাম এক্সিটের পূর্বেই ! ট্রাফিক লাইটে এসে ‘বামে মোড় নিতে হবে! লাল চোখ মেলে থামার সিগন্যাল দিচ্ছে ট্রাফিক বাত্তি! হাই ওয়েতে সর্বোচ্চ ১০০ কিমি স্পীড লিমিট লেখা থাকলেও, সিগন্যাল বিহীন রাস্তায় সুযোগ থাকলে- সবাই ১২০ কিমি বা তার উপরে চলে; আমিও ব্যতিক্রম নই, সবার গতির সাথে তাল মিলিয়ে না চললেই –বিপদ।
কিন্তু এখন হাইওয়ের ১২০ কি.মি. স্পীড থেকে দেড় মিনিটে শুন্যগতিতে নেমে এসে, থেমে গেলে এক ধরণের ‘মোশন সিকনেস’ এসে যায়! যেন বজ্র গর্জন দিয়ে অল্প বৃষ্টিতে সমাপ্তি ! বর্ধিষ্ণু জনপদের, ভেতরের রাস্তায় লঘু গতির সাথে তাল মিলানো ছাড়া উপায় নেই! স্পীড কমানোর পাশাপাশি আশেপাশে নজর রাখতে হয়, পথচারী – বুড়ো বুড়ি ড্রাইভার, ট্যাক্সির বিপদ জনক বাঁক বা যাত্রী তুলতে হঠাৎ থেমে যাওয়া বাস! বিরক্তির শেষ নেই! প্রায় এসে গেছি। গাড়ীর এয়ার কন্ডিশনার’ বন্ধ করে জানালা খুলে দিলাম; এখনো পর্যন্ত আমার কাছে গরমের দিনে, এসির নিয়ন্ত্রিত ‘ঠাণ্ডার চাইতে, বাইরের – প্রাকৃতিক মৃদুমন্দ বাতাস- বেশী স্বস্তিকর । কোন মেগা সিটি নয়, বাংলাদেশের এক ছায়া সুনিবিড় নিভৃত পল্লীতে – নেহায়েত প্রাকৃতিক পরিবেশে জন্ম আর বেড়ে উঠা, হয়তো এজন্যই।
পথের ধারে চোখ আটকে গেল! ব্রেকে পা দিয়ে গাড়ি প্রায় থামিয়ে ফেলেছি! একরাশ উজ্জল বেগুনী রঙের ঝলক আমার দৃষ্টিপথ আচ্ছন্ন করে ফেলেছে! দ্বিমুখী রাস্তাকে ভাগ করেছে- সবুজ ঘাসের গালিচায় ঢাকা ‘ডিভাইডার। এই ডিভাইডারের উপরে সার করে লাগান কালচে কাণ্ডের, শুকনো কাঠি কাঠি চেহারার গাছে, ঝোপালো বেগুনী ফুলের বিন্যাস নেমে এসেছে! গরমের মধ্যে ‘গরম রঙের ‘বর্ণোচ্ছ্বাস যেন! উজ্জল রোদের মধ্যে এত উজ্জল রঙের আকর্ষণ এড়ানো অসম্ভব। অন্ধকার রাতে ঝাড়বাতির আলোয় পতঙ্গ বোধ হয় এমন করেই আকর্ষিত হয়! আমি তন্ময় হয়ে গেছি এর রূপ দেখে !
পেছনের গাড়ির মৃদু হর্ন এর আওয়াজ আমায় ‘বাস্তবে ফিরিয়ে আনল। বেমক্কা ব্রেকে পা দিয়ে চলতি পথে বেচারার গতি রুদ্ধ করে ফেলেছি- কোন জানান না দিয়েই। দ্রুত রাস্তা থেকে সরে আসার পথ খুঁজলাম । মনে মনে ‘সরি বলে হাত উঁচিয়ে ‘ওয়েভ করলাম; এবং পাশেই এক গলিতে ঢুকে, এক ‘স্ট্রিপ মলের পারকিং গাড়ি রেখে নামলাম।
এমন সৌন্দর্যময় ‘রূপের রানীকে আপনাদের সাথে শেয়ার না করলে অন্যায় করা হবে বলে মনে হয়েছিল! এই সেই রূপসী – কেউ বলে বেগুনী রোব! Robinia pseudoacacia।
জেসুইৎ প্রিষ্টরা এর নাম দিয়েছিল ব্লাক লোকাস্ট (Black locust ) ! ফুল ঝরে গেলে এই গাছে লম্বা কাঠির
মত ফল হয়। সেইন্ট জন (জন দ্য ব্যাপ্টিস্ট) সিরিয়ার বিরান প্রান্তরে যেখানে পানি এবং খাদ্যের চরম অভাব, সেখানে তিনি ‘লোকাস্ট ট্রির ভক্ষনযোগ্য ফল এবং মধু খেয়ে জান বাঁচিয়েছিলেন (ম্যাথিউঃ চ্যাপ্টার ৩, ভার্স ৪) ! এ কারনে খৃষ্টানরা একে ‘পবিত্র বৃক্ষ জ্ঞান করে ! সম্ভবতঃ আমেরিকায় জেসুইৎ মিশনারিরা এই গাছের কাল ‘পড (Pod) দেখে ভুল করে Robinia’ নাম দিয়েছিল ‘ ব্লাক লোকাস্ট ! তবে একটা জিনিষ ঠিক আছে! খুব কম পানি বা প্রায় পানিশুন্য, পাথুরে, শক্ত মাটি ও বন্ধুর পরিবেশেও এরা টিকে থাকতে পারে! এ কারনে শহর পরিকল্পনাকারীগণ, কম যত্নে ‘মানুষ হয় এমন গাছ পালা, রাস্তার ধারে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য লাগাতে পছন্দ করেন!
কাঠ খুব শক্ত, আগুনে পুড়ালে ধোঁয়া খুব কম হয় জন্য একদিকে আসবাব তৈরিতে অন্যদিকে- ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বালাতে এর ‘চাহিদা রয়েছে ব্যাপক! ছাল ও পাতা বিষাক্ত বলে জানা গেলেও, তাজা ফল বা বীজ, ভক্ষনযোগ্য বলে উল্লেখ আছে! এর বীজ বা ফল বেশী করে ঘোড়ায় খেলে ঘোড়ার ক্ষুধামান্দ্য, দুর্বলতা -বিষণ্ণতা ইত্যাদি ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়! বিষক্রিয়ার জন্য দায়ী টক্সআলবুমিন রবিন( Toxalbumin robin ) যা তাপের মুখে বিষ ক্রিয়া হারায়। কাজেই বীজ বা ফল, ভেজে খেলে সমস্যা নেই!
এই ফাঁকে বলে রাখি, সেইন্ট জন এর ‘রুটি বলে খ্যাত ব্লাক লোকাস্ট বা লোকাস্ট বিন (Locust Bean) হচ্ছে Ceratonia siliqua বা carob tree – যেটা সিরিয়ার আদি বাসিন্দা, ভুমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের খুব বেশী বেশী জন্মায় ! বেশীর ভাগ রেফারেন্স এই মতকে সমর্থন করে! Robinia’ উত্তর আমেরিকার গণ’ হিসেবেই স্বীকৃত! এবং অবশ্যই – ইয়াহুদী নবীগণ সেই যুগে সাগর পাড়ি দিয়ে যেমন আমেরিকায় আসেন নি, এই গাছও সে সময়ে সাঁতার কেটে সিরিয়ায় পৌঁছুতে পারে নি বলেই মনে হয়!
বিষয়: বিবিধ
১৩৫১ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঢাকা বোটানিকেল গার্ডেনে ? সম্ভবত।
জানলে- কোন এক সময় আপনার দু’য়া নিতে যেতাম~! যদি আপনার সময় সুযোগ হয়!
ধন্যবাদ।
সেন্ট ক্লিয়ার ক্রস করে সেকেণ্ড লাইট,ডানে ৭০ ম্যাগনোলিয়া। পশ্চিমে কেনেডি ও পুবে মিডল্যাণ্ড। মিডল্যাণ্ড ও ড্যানফোর্থ রোডই নিকটস্থ ইন্টারশেকশন। ফোন-৪১৬-৫৩০-৭৫১৮। দেখা হলে খুশী হব।
একটানে পড়ে ফেললাম!
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন