আজ রবিবার, আজ আমার ছুটি!
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০৫ এপ্রিল, ২০১৬, ০৮:০৪:৩৮ সকাল
আজ রবিবার, আজ আমার ছুটি!
চালশে পড়া চোখের মত ঘোলাটে আকাশ। তেড়ে ফুঁড়ে পশ্চিমে ত্রিশ ডিগ্রী বেঁকে ছুটে যাচ্ছে সাদা তীরের মস্তক! নৈশব্দ –সুন সান। বিরামহীন ।
ধারালো, ওজনদার কোন প্রজেক্টাইল হলে মা ধরিত্রী এতক্ষন শতধা বিভক্ত হয়ে যেতেন, সন্দেহ নেই। সাদা তুষারের পেঁজায় এই ক্ষুদে কণা গুলো যুক্ত হচ্ছে, আজকের আবহাওয়া পূর্বাভাষ অনুসারে ৬ সেন্টিমিটার উচ্চতায় নিজের অবদান রেখে যাচ্ছে । ক্রমশঃ।
পাশের প্রতিবেশী বাড়ীগুলোর চালে নিরবিচ্ছিন্ন সাদা আস্তরণ, তুষারের শ্বেত সন্ত্রাস এক অভূতপূর্ব সাম্যবাদ কায়েম করেছে। ঢালু ছাদের উপরে কেবল চিমনী আর বায়ু চলাচলের ঘুলঘুলি তাদের বেজায় ‘ব্যাজার কাল চোখ মেলে চেয়ে আছে, শ্বেতাঙ্গ শরীরে কাল তিলের কলঙ্ক বিশেষ। পাশের পাইন গাছ ধ্যানী বুদ্ধের স্থৈর্যতায় স্থিত, যেন হীরক চূর্ণের আলতো পরশ তার সবুজ পাতার সজীবতাকে তন্দ্রাচ্ছন্ন করে ফেলেছে। নিডলগুলো বরফ-স্পর্শে শক্ত হয়ে জমাট পাথর । গাছের কাল কাল শাখাগুলোকে স্পষ্ট করে তুলেছে তুষারের সাদা পেইন্ট, যেন এ তুষারাচ্ছন্ন (গোধূলি নয় !) সন্ধ্যা বেলায় গাছের শিরা উপশিরা ধমনীকে দর্শকের কাছে সনাক্ত করিয়ে দেয়ার দায় নিয়েছে পড়ন্ত তুষার!
সাদা পটভূমিতে কাঠের বেড়ার গায়ের বাদামী রং এখনো স্পষ্ট, শুধু বেড়ার মাথায় তুষারের রেখা, তিন সেন্টিমিটার পুরু করে ট্র্যাক এঁকে দেয়া হয়েছে – এখনি কোন আনকোরা স্প্রিন্টার যেন ধেয়ে আসবে নূতন রেকর্ড গড়তে এর উপর, উসেইন বোল্ট এর উত্তরসূরি ।
পেছনের বাগানে তুষারের স্তূপ, থেবড়ে বসা কোন প্রাগৈতিহাসিক কচ্ছপ যেন, ঝিমিয়ে আছে সময় জ্ঞান হারিয়ে, ঘাস লতা পাতারা তুষারের পুরু কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমুচ্ছে দীর্ঘদিন এর নিচে, স্থবির সময়।
এবার যেন হঠাৎ কোন অজানা ইশারায় তুষার কণারা গতি হারিয়ে ফেলল। কেমন ভেসে ভেসে নেমে আসছে- যেন ভূত নেই ভবিষ্যৎ নেই, গতি নেই, স্টপেজ নেই, গন্তব্যও নেই। ভেসে চলার আনন্দেই তারা ভাসছে। মাধ্যাকর্ষণ তিরোহিত এমন ভেসে থাকার কৌশল জানলে কত না সুখ হত। সময়ের টাণাপোড়েনে বিক্ষত এই মাণব প্রজাতি হয়তো ক্ষণেক সুখ ভোগ করতে পারত। আমি দেখছি তো দেখছি, এ এক কর্মহীন অলসতা, দেখছি না – চেয়ে আছি; চোখের পাতায় অলস স্বপ্নেরা ভর করেছে; আজ রবিবার, আজ আমার ছুটি!
আরামদায়ক উষ্ণতায়, বিশাল কাঁচের জাণালার পাশে, ঘরে বসে যখন গরম কফিতে চুমুক দিয়ে সোফা গরম করছি, বাইরের তাপমাত্রা হিমাংকের কয়েক ডিগ্রী নীচে! যারা এদেশে প্রথম এসেছিল, রক্ত হিম করা এ ঠাণ্ডায় তাদের না ছিল বিদ্যুৎ, না ছিল গরম পানি, না ছিল বুক ভরে টেনে নেয়ার মত যথেষ্ট শ্বাসযোগ্য বাতাস ! ঠাণ্ডা বাতাসে দীর্ঘক্ষণ শ্বাস নিয়ে নিউমোনিয়ায় মারা গেছে কত মানুষ! এই বরফ শীতল ঠাণ্ডা আর অবিরাম তুষারপাত ছিল খুনে ঘাতক!
কত ভাগ্যবান আমি। ধন্যবাদ সে অভিযাত্রীদের – যাদের কঠোর শ্রম আর অধ্যবসায়ের ফসল আজ আমরা ভোগ করছি । এবং শ্রম দিয়ে যাচ্ছি যেন পরবর্তী প্রজন্মেও সে ধারা বজায় থাকে। সভ্যতা একদিনে সৃষ্টি হয় না! Rome wasn’t built in a day! আর আজকের এ সভ্যতা ! এ এক অবিরাম, চলমান, এক গতিশীল, ধারাবাহিক পথচলার নাম!
বিষয়: বিবিধ
১২৪৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ঘরের ফ্লোর ঘেমে অবস্থা কেরাবেরা
আপনার ছবি গুলো দেখে
একটু ঠান্ডা ঠান্ডা
cool cool লাগছে
ভাল লাগল~!
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি এই হিম প্রাকৃতিতেও মানুষকে সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। যারা এই সুবিধা সৃষ্টি করে গেছেন তাদেরকে মহান আল্লাহ উত্তম জাযা দিন। আমিন।
আমিন।
ধন্যবাদ
কেমন আছেন আপনি!
দুয়ায় স্মরণ রাখবেন এ গুনাহগারকে!
ধন্যবাদ৷
মন্তব্য করতে লগইন করুন