জাতীয় ফুল-১

লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১১:৫২:৩৩ রাত



অনেক দিন আগে জনপ্রিয় অভিনেতা আরিফুল হকের কণ্ঠে একটা গান শুনেছিলাম। ‘সব মানুষের পৃথিবী’- এমন আপ্ত বাক্যের সাথে সহমত পোষণ করি- অনেকের মতই ! এটা ছিল এমনই এক ভাব ধারায় রচিত- গণসংগীত! সত্যিকারের উন্নয়ন হোক না হোক – থানাকে উপজেলা, মহকুমাকে জেলায় ‘পরিণত করে এরশাদ সাহেব ও তার জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে ‘উন্নয়নের জোয়ার ‘বহাইয়া দিয়াছিলেন’। (উরেব্বাস- পার্টিরও জাতীয়করন হয়েছে! )। কেউ নাম পরিবর্তন করে ‘বেগুনকে প্রাননাথ বললে কিই বা ক্ষতিবৃদ্ধি!! যাহোক গানের কলি গুলো ছিল এমনঃ

“গাঁও গুলো সব জেলা হল

জেলা উপদেশ,

দেশটা শুধু রইল বাঁকি

করতে মহাদেশ!

তো – এরশাদ বা মাদাম এরশাদের জাতীয় পার্টি নিয়ে না হলেও, - জাতীয়তা নিয়ে অনেকেরই ‘অতি আদিখ্যেতা আছে ! এই গ্লোবালাইজেশন এর যুগে অনেকেই, এ স্বভাবটাকে ‘ছুঁয়ে দিলেই তোর জাত যাবে’- ‘জাত কি ছেলের হাতের মোয়া’ এমন ভাষায় আঘাত করলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই ! আমি কোথায় জন্ম গ্রহণ করলাম এতে তো আমার কৃতিত্বের কিছু নেই- আমি তা নির্ধারণ করি নি বা এর জন্য কোন শ্রম দেইনি! একজন আমেরিকায় জন্ম নিল জন্যই, সে একজন বার্মিজ থেকে বড় কিছু – তা তো নয়!

জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভাল। কোন ধর্ম বা সংস্কৃতি যদি, জন্ম সুত্রে কোন ব্যাক্তি বিশেষ বা তাদের সন্তানদেরকে ‘অগ্রাধিকার বা ‘প্রিভিলেজ ক্লাস বলে ঘোষণা করে তা ‘ন্যায্যতার ভিত্তিতে বৈধ হতে পারে না!

আমরা মধ্যপন্থী। রাজনীতি সচেতন । - উগ্র জাতীয়তাবাদ ভিত্তিক ‘বাঙ্গালী নাকি বাংলাদেশী জাতীয় বিতর্কে না গিয়ে, সকল জাতের সুকুমার বৃত্তির একটা ‘অভিন্ন বিষয় নিয়ে বরং কথা বলি! আমাদের আজকের বিষয়ঃ জাতীয় ফুল!

জাতীয় প্রতীক হিসেবে ফুলকে, প্রথম প্রথম কানাডা এবং অস্ট্রেলিয়া ব্যবহার করলেও, এখন পৃথিবীর বহু দেশেরই ‘জাতীয় ফুল’ বলে একটা জাতীয় প্রতীক নির্দিষ্ট হয়ে গেছে! যদিও অনেক দেশেরই জাতীয় ফুল বলে কোন নির্দিষ্ট ফুল নেই। থাকতেই হবে এমনও নয়!

বাংলাদেশের জাতীয় ফুল যে ‘শাপলা তা ছেলে বুড়ো সবাই জানে!

যদি বলি কোন শাপলা? সাদা ? গোলাপী নাকি লাল?

ডায়রি দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে? বলে দিলাম - সাদা!

তাই, আমার লেখার প্রথম জাতীয় ফুলঃ অবশ্যই শাপলা!

সাধারনভাবে, জাতীয় ফুল নির্বাচন করা হয় – দেশে ফুলটির সহজলভ্যতা রয়েছে কিনা কিম্বা দেশে অতি পরিচিত কিনা; আকর্ষণীয় হতেই হবে- নাহলে মানুষ তাকে জাতীয় মর্যাদা দিতে চাইবে কি! আর কোন ভাবে দেশেটির সাথে এ ফুলের নাড়ির সম্পর্ক আছে কিনা, বা কোন বিশেষ মর্যাদার প্রশ্ন জড়িত থাকলে তো কথাই নেই!

বাংলাদেশ নদী মাতৃক দেশ; এর নদী নালা খাল বিলে বিশেষ করে স্রোত বিহীন জলাশয়ে শাপলার ফুলে ফুলে ছেয়ে থাকে! যত্র তত্র পাওয়া যায় জন্য অনেকেই একে কদর দিতে জানেন না! তবে খাল বা জলাশয়ে শত শত শাপলা ফুটে আলো করে রাখে যখন, একে তারার মেলা বললে ভুল হয় না ! কাক-চক্ষু জলে, নীল আকাশ প্রতিবিম্বিত হচ্ছে – এমন পুকুরে বা খালে বিলে অজস্র শ্বেত শাপলা ফুটে যে সৌন্দর্য বিস্তার করে – তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয় । এর জন্য কোন শ্রম দিতে হয়না- জন্যই বোধ হয় অনেকে এর মূল্য বোঝেন না! যার জন্য ‘দাম দিতে হয় না- বাঙ্গালী তার মর্যাদা দিতে শেখেনি – তা ‘অমূল্য হলেও আমদের কাছে সস্তা, ‘মুল্যহীন হয়ে পড়েছে- অনেক ক্ষেত্রেই – দুর্ভাগ্য আমাদের!

শুধু ফুলের সৌন্দর্যেই শেষ নয়, এর ফলও অত্যন্ত উপকারী! এর বীজ থেকে তৈরি খৈ খেয়েছি ছোট বেলায়। দরিদ্র ক্ষুধার্ত মানুষকে এগুলো পয়সা দিয়ে কিনতে হয় না- জলাশয়ে নামলেই একবেলার ক্ষুধা নিবারনের খাদ্য যোগাড় হয়ে যাবে! এর সরু কাঠির মত দীর্ঘ কাণ্ডটিও ফেলনা নয়! সব্জি হিসেবে চাহিদা রয়েছে!

আচ্ছা – বলুন তো, বাড়ির পাশের শ্রীলংকার জাতীয় ফুল কি?

হাতের কাছে ‘স্ক্রিন আর ওয়েব সংযোগ থাকলে আপনি এখন ছুটবেন ‘গুগল বাবাজীর ‘পদচুম্বন করতে ! যাক – আমরা আপনার খাটুনি বাঁচিয়ে দিলাম! ওদের জাতীয় ফুলও শাপলা- তবে নীল শাপলা, বা নীল মানেল ( বৈজ্ঞানিক নাম আগে Nymphaea stellata বলা হলেও, এখন বাংলার জাতীয় ফুলের নামেই তার বৈজ্ঞানিক নাম- Nymphaea nouchali!



মিশরীয় শাপলা Nymphaea caerulea এর নিকটাত্মীয়! পরিবার Nymphaeaceae! খাদ্য ও সৌন্দর্য চর্চা ছাড়াও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ‘অম্বল নামে এর ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে!

জলে ফুটে থাকলেও এর আত্মীয়তা কিন্তু মাটির সাথেই- শেকড় আটকে থাকে মাটিতে! এর মূল শেকড়ও ফেলনা নয়, ফলের মত এও কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান! গ্রামের দরিদ্র মানুষ বিলের পানিতে ‘অযত্নে লালিত এই খাদ্য ‘বিনা মূল্যে সংগ্রহ করত, পুড়িয়ে বা সেদ্ধ করে খেত! এখনও তা করে কিনা কে জানে! পানির দৈর্ঘ বৃদ্ধি পেলে এর কাণ্ড দ্রুত দৈর্ঘ বাড়িয়ে পানির সাথে তাল দিয়ে বেড়ে উঠে এবং শাপলা সব সময় মাথাটা পানির উপরেই ভাসিয়ে রাখে ! কে তাকে সাঁতার শেখালো? ভাবনার বিষয়!

এক সময় একটা কবিতা (ধাঁধা) পড়েছিলামঃ

হরির উপরে হরি

হরি বসে চায়,

হরিকে দেখিয়া হরি

হরিতে লুকায়!

প্রথম হরি – কিন্তু শাপলা (বা পদ্ম) এর বিশাল সবুজ পাতা- যা পানির উপরে বিছিয়ে থাকে! বাঁকি ‘হরি’ গুলো পাঠকদের জন্য ধাঁধা!

(চলবে)।

বিষয়: বিবিধ

২৪১২ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

359846
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৩:৫৪
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

জাতীয় ফুল শাপলাকে নিয়ে লিখাটি ভালো লাগলো, মনে উঁকি দিয়ে যাচ্ছে নানান স্মৃতি! স্মৃতির সরোবরে দিলাম ডুব.........

শুকরিয়া।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:১৯
298470
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে!
359849
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৫:৪৬
শেখের পোলা লিখেছেন : হরি যেমন বেঙ কে বলে তেমনই শাপলা ও পানিকেও বলে৷ আপনার লেখা ভাল লাগল৷
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:১৯
298471
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : ধন্যবাদ!
359854
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৯:৫১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বল হরি,হরি বোল!!
শাপলা ডাঁটি দিয়ে ওল!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File