অসীমের সীমানায়

লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ২২ নভেম্বর, ২০১৫, ০৭:৫৩:৩১ সকাল



ঘূর্ণায়মান আমাদের এ পৃথিবী!

লাটিম যেমন নিজের অক্ষের উপর ঘুরে, সেই সাথে আবার পাক মেরে খানিক দূর দিয়ে ঘুরে আসে, আরও এক বা একাধিক বৃত্ত তৈরী করে ঘুরে। এক সময় শক্তি শেষ হয়ে গেলে থেমে যায়! বৃত্তের উপর বৃত্ত! আমাদের এ ধরাধামও তেমনটাই করছে! তবে লাটিমের মত অনিয়মিত ভাবে নয়। আমাদের পৃথিবী তা করছে - দারুন চমকপ্রদ ভাবে –অতি নিখুঁত টাইমিং মেনে! পৃথিবী নামের এই গ্রহের প্রতিদিন, সূর্য নামের দারুণ উত্তপ্ত এক তারকার চতুর্দিকে নিয়মিত পরিক্রমার কারনেই আমাদের জন্য নিয়মিত আসছে দিন ও রাত ! অতি সূক্ষ্ম নিয়ম মেনেই সে পরিক্রমা চলছে – যার জন্য দিন আলোকময় ও রাত অন্ধকার! প্রায় পাঁচ বিলিয়ন বছর ধরে সূর্য সে উত্তাপ বিলিয়ে যাচ্ছে, এজন্য পৃথিবীর প্রতিটি গাছপালা ও জীব জন্তু তাদের প্রাত্যাহিক তাপের প্রয়োজন মিটিয়ে নিতে পারছে । সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করে যাচ্ছে! মাত্রায় একটু বেশী তাপ হলেই চামড়ার ক্যান্সার, একটু কম তাপ হলেই নিউমোনিয়া, না হলে ঠাণ্ডায় ভূগে মানব প্রজাতি বা জীব জগত শেষ হয়ে যায় যায়! পৃথিবী ঘুরে ঘুরে তার চার পাশ সূর্যের দিকে রেখে রেখে এক ধরনের ভারসাম্য পূর্ণ তাপমাত্রা বজায় রাখে! এর জন্য আমাদের কোন দায় নেই, কৃতিত্বও নেই! প্রতিদিনের রোদের জন্য আমাদের ‘বিল দিতে হয় না! প্রতি মাসের বিদ্যুৎ বিলের মত, প্রতিদিনের রোদের ‘বিল দিতে হলে কেমন হত?

অনেক সময় আমাদের মনে হতে পারে আমরা অনেক জ্ঞানী হয়ে গেছি ! মানব জাতির ‘প্রকৃতি হচ্ছে- আমরা সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ হাতে নিতে চেষ্টা করি- সে ঘর হোক, অফিস হোক আর ‘দেশ হোক! আমরা সব কিছুই ‘সীমার মধ্যে নিতে পছন্দ করি! কিন্তু একটা সত্য হল, এ সৌর জগতের সীমা কোথায় – তা এখনও আমাদের জানা নেই! আমাদের দৃশ্যমাণ জগতের মধ্যেই অসংখ্য ( পুনরায় – অসীম !) তারার রাজ্য – ছায়াপথ ! এরাও ঘুরছে ! কে কাকে ঘিরে ঘুরছে – কেঊ কারো সাথে একবারও ধাক্কা না খেয়ে, এ এক অপার রহস্যময় জগত! এদের ঘূর্ণন দেখে মনে হতে পারে – এরা পরস্পরের আকর্ষণে ঘুরছে! তাহলে তো এক সময় এরা পরস্পরের আকর্ষণে কাছাকাছি এসে যেতে পারে ! কিন্তু না! ১৯২৯ সালে এডউইন হাবল ( Edwin Hubble) নামে একজন জ্যোতির্বিদ অযাচিত এক আবিষ্কার করলেন । তিনি জানালেন –“দূরবর্তী এই গ্যালাক্সি গুলো পৃথিবী থেকে ক্রমেই আরও দূরে সরে যাচ্ছে! প্রকৃত পক্ষে- পৃথিবী থেকে যে যত দুরে – সে আরও দ্রুত বেগে দুরে সরে যাচ্ছে! অবাক কাণ্ড!! (#১)

এ থেকে উল্টো সিদ্ধান্তে আসা যায়- তাহলে, অনেক অনেক যুগ আগে এক সময় এরা আমাদের পৃথিবীর আরও কাছাকাছি ছিল! তাহলে ১৩.৮ বিলিয়ন বৎসর আগে- নিশ্চয়ও এই দূরত্ব আরও অনেক অনেক কম ছিল? কত কাছে ছিল সেই জগত আর আমাদের এখনকার পৃথিবী!

এই ক্রমঃ অপসৃয়মাণ গ্যালাক্সি গুলোর বেগ ও গতিপথ – দিক – এসব মিলিয়ে হিসেব করে ‘অংক কষে জ্যোতির্বিদরা বলছেন –মূলতঃ ১৩.৮ বিলিয়ন বৎসর আগে এরা একই অবস্থানে ছিল; একই শরীরের অংশ ছিল! এই সিদ্ধান্ত, সাদৃশ্যমুলক আরও অনেক প্রমাণ দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে!

এ থেকে অনুমিত হয়, সেই ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে “আমাদের পৃথিবী ও সমস্ত সৌর জগতের ভর মিলিয়ে যে ‘শিশু জগত”, তা অকল্পনীয় ঘনত্ব বিশিষ্ট এক ‘ঘনবস্তু বা পিণ্ড ছিল! কেমন ঘণ ছিল এই ক্ষুদ্র পিণ্ড ?

বলা হচ্ছে, এর এক চামচ পরিমাণ ‘বস্তুর ওজণ হবে- ১০০ মিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন পাউণ্ড! ( ১ ট্রিলিয়নঃ 1012) - কাজেই এক এর পরে ৪২ টা শূন্য দিলে তবে হবে সে সংখ্যাটা)! বস্তু ( MATTER/PARTICLES ) আর শক্তি (ENERGY) একত্রে মিশে এই ‘পিণ্ড (MASS) তৈরি করেছে ! এই পিণ্ডের আগের অবস্থা কেমন ছিল ? তখন কেমন ছিল সে জগত ? সৌর জগতের আদি অবস্থা ? সৃষ্টির আদিতে? আমাদের জ্ঞাণ তার আর আগে বাড়তে পারে না! আমরা এর বেশী আর কিছু জানিনা ! বিজ্ঞান যখন বলে – জানিনা – তখন আমাদের জানার অতীত’ সে জগত এর নাম হচ্ছে – ‘বিশ্বাস এর জগত! “বিশ্বাসে মিলায় ‘বস্তু – তর্কে বহু দূর !

বিগ ব্যাং এর আগের অবস্থার, এই চরম ঘণপিণ্ড বস্তুকে, ১৪০০ বছর আগে পবিত্র কুরআন উল্লেখ করেছে – “রতক্কা” বলে ( আয়াত ৩০, সূরা আম্বিয়া)। পবিত্র কুরআন সৌর জগত সৃষ্টির আদি এ অবস্থাকে ‘অবিশ্বাসীদের সামনে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেছেঃ

“অবিশ্বাসীরা কি দেখে না, আসমান ও জমিন (এক সময়) অভিন্ন এক ক্ষুদ্র পিণ্ড (অবস্থায়) ছিল, অতঃপর আমিই এদের উভয়কে বিচ্ছিন্ন করেছি; এবং প্রাণ আছে এমন সবকিছুই সৃষ্টি করেছি পানি থেকে; এর (এসব কিছু জানার) পরেও কি তারা ঈমাণ আনবে না?” ( সূরা আম্বিয়া আয়াত ৩০) ।

এ সূরাতেই আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি ‘সূর্য ও চাঁদের উদাহরণ তুলে ধরে আবার বলেছেন – “তিনিই রাত, দিন এবং সূর্য আর চাঁদকে সৃষ্টি করছেন, যারা প্রত্যেকেই (মহাকাশে তাদের) কক্ষপথে ‘সাঁতার কেটে যাচ্ছে! (সূরা আম্বিয়া – ৩৩)।

#১। “সৌর জগতের ক্রমঃসম্প্রসারণবাদ তত্ব ”( Expanding Universe) - যা অল্পদিন আগে বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে, পবিত্র কুরআন ১৪০০ বছর আগেই তার উল্লেখ করেছে সূরা- আয যারিয়াত, আয়াত ৪৭)। মহাশক্তিমান আল্লাহ্‌ সৌরজগত সৃষ্টি করেছেন ক্ষুদ্র ‘রতক্কান থেকে- তাঁর প্রচণ্ড শক্তি আর কুদরত দিয়ে, যা ক্রমশঃ সম্প্রসারিত হচ্ছে- এবং হতে থাকবে, আল্লাহ্‌ যতদিন তার সীমা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তত দিন পর্যন্ত!



বিষয়: বিবিধ

১৩৪৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

350778
২২ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ০৯:৫০
অপি বাইদান লিখেছেন : আল্যার কোরাণ হইল সকল বিজ্ঞানের খনি!!!!
২২ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ১০:২৪
291150
নকীব কম্পিউটার লিখেছেন : অপি বাইদানের কুড়কুড়ানি উঠছে,মান্দার/ শিমুল গাছে পাঠাও।
350950
২৩ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০২:৫০
সাদিয়া মুকিম লিখেছেন : আসসালামুআলাইকুম।

সুবহান আল্লাহ!দারুন লিখা! জাযাকাল্লাহু খাইর।
২৬ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১০
291918
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : ওয়া আলাইকুম সালাম। অনেক ধন্যবাদ আপু!
351123
২৪ নভেম্বর ২০১৫ রাত ০২:৩৯
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : এভাবেই পবিত্র কোরআনে যুগ যুগ ধরে মানুষকে সঠিকভাবে জ্ঞানবিজ্ঞান সাধনার প্রতি উৎসাহিত করে আসছে। জ্ঞানী মানুষেরা যেন সৃষ্টি বৈচিত্র সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে সেজন্য কোরআনে বার বার তাগিদ দেয়া হযেছে। ধন্যবাদ আপনাকে Good Luck Good Luck
351585
২৬ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:১১
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : :জ্ঞানী মানুষেরা যেন সৃষ্টি বৈচিত্র সম্পর্কে চিন্তা-গবেষণা করে সেজন্য কোরআনে বার বার তাগিদ দেয়া হযেছে।:
সঠিক বলেছেন! অনেক ধন্যবাদ!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File