নিন্দাবাদ : ভারতে ‘মুসলিম-হত্যাকারী’ গরুর বাচ্চাদের বিরুদ্ধে

লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ২৪ অক্টোবর, ২০১৫, ০৯:১১:১০ সকাল



তিনজন মুসলিমকে গরুর মাংস খাওয়ার মিথ্যা অপবাদে খুন করেছে বিজেপির উগ্রবাদী গরুর বাচ্চারা! তীব্র নিন্দাবাদ এই গরুর বাচ্চাদের বিরুদ্ধে!

দিল্লীর বিশারা গ্রামের মুহাম্মদ আখলাকের অপরাধ কি? সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সে মাংস খেয়েছে ! সপ্তাহান্তে পরিবারকে নিয়ে ভালমন্দ খাওয়াটা খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা; সব দেশেই তা হয়ে থাকে! এছাড়া ঈদের সময় মাংস খাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। হয়তো এ কারণেই সন্দেহজনক ভাবে গূজব ছড়িয়ে বি জে পি, শিব সেনা / আর এস এস এর ঘাতক বাহিণী পরিকল্পিত ভাবে মুসলিম পরিবারের উপর হামলা করেছে! সংখ্যা লঘূ নির্যাতনে ভারত এখন পৃথিবীর সব দেশকে ছাড়িয়ে গেছে!

স্থানীয় মন্দিরে গণজমায়েত হল খুনী বিজেপি / আর এস এস এর গরুর বাচ্চারা! হামলা করল মুহাম্মদ আখলাকের ঘরে– ঘর থেকে টেনে বের করে নিয়ে গেল এই মধ্য বয়স্ক ব্যক্তি এবং তার তরতাজা ২২ বছরের পুত্রকে ! কোন যুক্তি তর্ক নেই – কোন প্রমাণের দরকার নেই, নৃশংস ভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলল গৃহকর্তাকে, পুত্রকে মৃত ভেবেই ছেড়ে গেল তারা, ঘরে স্ত্রী আর তরুণী কন্যাকে শাসিয়ে গেল, হুমকি দিয়ে গেল- যদি তারা ওদের কথা ফাঁস করে দেয়, তবে তাদেরকে ‘মৃত্যুর অধিক কিছু করার! স্ত্রী কন্যার গগণ বিদারি আর্তচীৎকারে এদের রক্ষায় কেউ এগিয়ে এলো না- কারণ এরা মুসলিম, অচ্ছুৎ !

পুলিশ এসে অপরাধীদের গ্রেফতার করা বাদ দিয়ে আগে ফ্রিজে রাখা মাংস পরীক্ষা করে দেখল। পাঠালো ল্যাবরেটরিতে ! আখলাকের তরুণী কন্যা সাজিদার প্রশ্নঃ যদি প্রমাণ হয় তা খাসীর মাংস, গরুর নয়, তবে কি আমার বাবা ফিরে আসবে?



পরীক্ষায় দেখা গেল – তা গরু নয়, খাসির মাংস! এ বিষয়ে সরকারী প্রশাসনের চরম নীরবতা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে! মুসলিমের রক্ত মাখানো হাতে, নরঘাতক মোদী, গুজরাটে ‘মুখ্য মন্ত্রী থাকা অবস্থায় যে করেছে, এখানেও সেটাই করছে!- আইন রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘সক্রিয় না করে নিষ্ক্রিয় করেছে এবং এই অজুহাতে রাজনৈতিক ফায়দা উঠিয়ে নিচ্ছে! মোদী এমনকি এর জন্য দুঃখ প্রকাশও করে নাই! নীরবতা ব্রত পালন করছে!

এই নীরবতাকে ‘সম্মতি ধরে নিয়ে ইতিমধ্যে কাশ্মীরে ট্রাকে আগূণ ধরিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মেরেছে জাহিদ রসূল নামের এক তরুণকে। অপরাধ, – গূজব শুনা গেছে – গরু জবেহ করা হয়েছে! কাছেই ট্রাক নিয়ে যাচ্ছিল – এই মুসলিম! অনন্তণাগ এলাকার উধামপূরের হিন্দূ অধ্যুষিত এলাকায় খূণী ‘গরুর বাচ্চারা’ এই ঘটনা ঘটিয়েছে ! বলা বাহুল্য সরকারী নীরবতা তাদের এই অপকর্মে উৎসাহিত করেছে! অপরাধ এর বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ভয় থাকলে মানুষ অপরাধ থেকে দূরে থাকে। আর অন্যদিকে, বিচার না থেকে- নীরবতার নামে যদি রাষ্ট্রীয় ‘সহায়তা থাকে, এই ধরনের অপরাধ চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে যাবেই!

ভারতে সংখ্যা গরিষ্ট মানুষ গরুর মাংস খায় না জন্য, সেজন্য ভারত গরুর মাংসের বড় রপ্তানীকারক দেশ! মুসলিমদের জন্য গরু হালাল, কাজেই এর বেচা বিক্রি, জবাই – চামড়ার ব্যবসা (মাংস না খেলেও গরুর চামড়ার জূতা স্যান্ডেল সব হিন্দুই ব্যবহার করে) প্রায় পুরোটাই মুসলিমদের হাতে ছিল। এখন তাদের এ ব্যবসাতে লাল বাতি জ্বলছে ! কয়েকটা গরু ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছিল কয়েকজন মানুষ! জবাই করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এই সন্দেহে তাদের উপরে হামলা করেছে উগ্র হিন্দুদের এক দল। একজন মারা গেছে, কয়েকজন – জংগলে পালিয়ে জান বাঁচিয়েছে! কিন্তু পুলিশ যখন এলো, তারা ঘাতকবাহিনীকে গ্রেফতার না করে- এই আহতদের গ্রেফতার করেছে, অপরাধ – ‘পশুর উপর নির্যাতন ! কারণ এরা যে মুসলিম! কয় বছর আগে বাবরী মসজিদ ধ্বংসের সময় আর এক গরুর বাচ্চা ‘পূলিশের সাক্ষাৎকার দেখেছিলাম, মণে পড়ল! তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হল, উগ্র হিন্দুরা মসজিদ ভাঙ্গছে – ওদের বাধা দিলে না কেন? সে উত্তর দিল, আমিও তো মনে মনে চাই - এখানে মসজিদ ভেঙ্গে মন্দির উঠুক! এই হল ‘উর্দি পরিহিত ‘গরুর বাচ্চা! শান্তি রক্ষা নয়, তার ‘ধর্ম রক্ষা! সেলূকাস!

ভারতের সনাতনধর্মী ( গাছ পাথর নদী পাহাড় পশু পাখি সাপ সব কিছুই যাদের দেবতা) নিজেদের ধর্ম তারা সবাই যে মেণে চলে তা নয়, তবে অধিকাংশই, গরুর মাংস খায় না! আমার চেণা জানা -অনেক হিন্দুই স্বেচ্ছায় গরুর মাংস খায়, (এরা অবশ্য শিক্ষিত, এবং এ ধরনের কু- সংস্কারের অনেকটাই কাটিয়ে উঠেছে) তাতে তাদের হিন্দুত্ব কমে গেছে বলে মনে করে না, (যেমন শুধু গরু খেয়ে কোন মুসলিম, উত্তম মুসলিম হবে না)।

কিন্তু কথা হচ্ছে, একজন মানুষ -যে ধর্মই একজন পালণ করুক – মানুষ তো মানুষই, যেকোন ভাবে, তার জীবনের মূল্য, যে কোন পশুর জীবনের তুলনায় কি শ্রেয়তর নয়!

অনেক সময়ই ধর্মের উপরে আমাদের হাত থাকে না! যে যে কূলে জন্মেছে – সে তারই ধর্ম অনুসরণ করে চলেছে; অনেকেই মাথা খাটায় না- “কেন বুদ্ধিমান মানুষ হয়ে, বানরের মত প্রাণীকে, সাপের বা গরুর মত জীবকে দেবতার আসনে বসাতে হবে; শুধু আচার বা অভ্যাস বশে, তাদের পিতৃ পুরুষ যা করেছে সরাসরি তা করে যাচ্ছে! তাতেও আমি সমস্যা দেখছি না! প্রত্যেকের স্বাধীনতা রয়েছে নিজ ইচ্ছামত তার ধর্ম পালণ করার! যারা গরুকে দেবতা মানে না, তাদের তো গরুর মাংস খেতে সমস্যা নেই! আর একজন গরুর মাংস খেয়েছে কি না খেয়েছে এই অপরাধে সেই মানুষকে মেরে ফেলতে হবে! একজন মানুষের জীবনের চেয়ে গরুর জীবনের গুরুত্ব এত বেশী ?

এক সময় ভাবতে ইচ্ছে করে, মুসলমানদের ধৈর্য আসলেই বেশী! প্রায় হাজার বছর ধরে মুসলিমদের হাতে ভারতের শাসন ক্ষমতা ছিল! মুসলিম শাসকরা যদি চাইত, একটা গরু পূজাকারীর লেজুড়ও আজ ভারতে টিকে থাকতে পারত না! অনেক ভারতীয়ই আজ ‘তাজমহলকে তাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ বলে ‘গর্বে বুকটা ফুলিয়ে তোলে, মূঘল আমলের নানা স্থাপত্য ভাস্কর্য নিয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করে! এই গরুর বাচ্চারা কি একবার হলেও মনে করে না যে, এটা মুসলিমদের অবদান! এতটুকু কৃতজ্ঞতা বোধও কি মূসলিমরা তাদের থেকে আশা করতে পারে না!

কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যে শৈশব কেটেছে– কাজেই গালাগাল শেখার বা ব্যবহার করার সুযোগ হয় নি! ভারতীয় সনাতনধর্মী ( হিন্দূধর্ম নামে ১০০ বছর আগেও কোন ধর্মের অস্তিত্ব ছিল না, সত্যি! ) দের গরুর বাচ্চা বলছি – অনেকের আঁতে ঘা লাগতেও পারে! তবে গরুর বাচ্চা বা ‘গোমাতার সন্তান’ এই বাক্যটি বলে গেছেন স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ ! বিশ্বাস হচ্ছে না? হওয়ার কথাও না! বিশ্বাস হলে কি এই ২০১৫ সালে, গরুর মাংস খেয়েছে এই কারণে একজন ‘মানুষের প্রাণ হরণ করতে পারত! মানুষের বাচ্চা হলে পারত না, কেবল গরুর বাচ্চার পক্ষেই এমন কর্ম সম্ভব! তাদের জন্যই প্রমাণ সংযুক্ত করে দিলাম!



পুনশ্চঃ ভারতের ‘গরুর বাচ্চাদের অপকর্মের জন্য, বাংলাদেশের ‘সনাতনধর্মীদের কষ্ট দেয়া কোন সভ্য মানুষের কাম্য নয়! আবার ভারতের সব সনাতনধর্মীই তো আর ‘মোদীর পা চাটা গরুর বাচ্চা নয়! আমাদের সমস্ত নিন্দাবাদ ঐ সকল মূর্খ গরুর বাচ্চাদের বিরুদ্ধে, যাদের কাছে –মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই! গরুর গোবর আর মূত্র খেয়ে পেট ভরুক ওদের, ওরা গরুরও অধম!!

বিষয়: বিবিধ

২০৯০ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

347010
২৪ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১০:০৩
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : বুখারীর ৮১,৫০,৯৬ মুসলিমের ৫৪ অধ্যায় পড়ুন অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়ে যাবে। সামনে আরো ভয়ের দিন আসছে সবে তো শুরু।
347014
২৪ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১০:১৯
অপি বাইদান লিখেছেন :
347030
২৪ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০২:৪৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : চমৎকার পোষ্টটির জন্য ধন্যবাদ। ভারতিয় সরকার উল্টা সেই গোস্ত টেষ্ট করতে নিয়ে গিয়ে বরং নিহতকেই অপরাধি বানানর চেষ্টা করেছে।
347237
২৬ অক্টোবর ২০১৫ বিকাল ০৫:২০
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : সেটাই ভারতীয় সংবিধানের ‘ধর্ম (অ) নিরপেক্ষতার বড় প্রমান!
ধন্যবাদ আপনাকে!
347396
২৭ অক্টোবর ২০১৫ দুপুর ০৩:৩৬
হতভাগা লিখেছেন :



মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File