মানব মস্তিষ্কের সামনের অংশঃ সত্য বা মিথ্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৭:৪৭:০৭ সকাল
এই পৃথিবীতে ৯৫০হাজার প্রজাতির কেবল পোকা মাকড়ই রয়েছে! বিশ্বাস হয়? সারা পৃথিবীর প্রজাতির সংখ্যা কত?
প্রতি বছর নূতন প্রজাতি আবিষ্কৃত হয় প্রায় ১০ হাজার; বর্ণিত বা রেকর্ডকৃত প্রজাতির সংখ্যা অর্ধ মিলিয়ন! এক সময় মানুষ মনে করত ২ থেকে তিন লাখ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে এই পৃথিবীতে! এখন ভাবা হচ্ছে তা দুই মিলিয়ন থেকে ৫০ মিলিয়ন! এ কেবল অনুমান! প্রকৃত সংখ্যা জানেন কেবল একজন, যিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন!
মানুষকে ‘সৃষ্টির সেরা জীব কেন মনে করা হয়? বিজ্ঞানময় এক কিতাব মানুষকে বলেছে – আশরাফুল মুখলুকাত! মজার বিষয় হল, যারা সে গ্রন্থ বিশ্বাস করেন না – তারাও মানুষকে ‘ জীবশ্রেষ্ট বলে মেনে নিয়েছেন – মানুষের ব্রেইন বা মস্তিস্কের কারনে! তাহলে অন্য জীবের কি ব্রেইন নেই! কুকুর বা ঘোড়া অসম্ভব প্রভুভক্ত! মৌমাছি যে ইঞ্জিনিয়ারিং জানে তা অনেক আর্কিটেক্ট এর মাথা খারাপ করে দেবে! ক্ষুদ্র কিছু ব্যাকটেরিয়া এমন কিছু অসাধ্য সাধন করে যা গোটা মানবজাতি মিলে পারবে না! কাজেই মস্তিস্কের বিশেষ কোন ক্ষমতার জন্য মানুষ সেরা নয়! মানুষ সেরা তার মানবতার জন্য!
পশু কেবল তার পশু ধর্ম বা জৈবিক তাগিদ দিয়ে তাড়িত হয়! মানুষ কেবল ‘আবেগ দিয়েই তাড়িত হয় না, যুক্তি দিয়ে তাড়িত হয়। তার ন্যায় অন্যায় বোধ রয়েছে! একটা গরু বূঝবে না কোনটা তাঁর মালিকের ক্ষেত আর কোনটা অন্যের !কিন্তু মানুষ বুঝবে! তাকে ধর্ম বলেন- ‘আক্কল’ ! এই ‘আক্কল’ বা বিবেক বিবেচনার কারনে মানুষ শ্রেষ্ট ! হয়তো অন্য ফ্যাক্টরও রয়েছে – তবে ব্রেইন এখানে প্রধান নিয়ন্ত্রক!
এই ব্রেইন নিয়ে হত ৬০ বছরে যথেষ্ট গবেষণা হয়েছে! নিউরোলজী এখন স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে স্বীকৃত! ব্রেইনের নানা ফাংশন বা কার্যক্ষমতা নিয়ে গবেষণা হয়েছে এবং হচ্ছে! আমরা এখনও যে সবকিছু জেনে ফেলেছি তা কিন্তু নয়! তবে যা জানা গেছে তা নিয়েই আজকের এ লেখা!
মানুষের ব্রেইন এক আজব সৃষ্টি! অতি গুরুত্বপূর্ণ জন্য তাকে রাখা হয়েছে খুব শক্ত এক আধারে! এই আধার – খূলি এমন শক্ত যে তা ঊর্ধ্বে প্রায় ২১০০ পাউন্ড চাপ সহ্য করতে পারে! আর মাথার সামনের দিকের অংশ বা ফ্রন্টাল লোব ( Frontal lobe)কে ঘিরে থাকা খুলির অংশই সবচেয়ে বেশী শক্ত! হীরের গয়না আয়রন সেফে রাখা হয় ! কাজেই অতি মূল্যবান জিনিষ তো শক্ত করেই সংরক্ষণ করা হবে – নয় কি! সহজ হিসেব! এথেকে এটাও প্রমান করে যে- ফ্রন্টাল লোব (Frontal lobe) মানব ব্রেইনের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ! প্রকৃত পক্ষেও তাই! এর অর্থ এই নয় যে, অন্যান্য অংশ গুরুত্বহীন!
কি কাজ করে এই সামনের অংশ বা ফ্রন্টাল লোব ? এখন একজন দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রও জানে ব্রেনের সামনের অংশ বা Frontal lobe কি কি কাজের জন্য দায়ী!
এনাটমিক্যাল ডায়াগ্রাম থেকে দেখা যাচ্ছে– মূলতঃ এক্সিকিউটিভ ফাংশন – চিন্তা- পরিকল্পনা- সিদ্ধান্ত গ্রহণ- সংগঠন –সমস্যা সমাধান, আবেগ এবং আচরণ নিয়ন্ত্রন, ব্যাক্তিত্ব – মানব জীবনের মুল বিষয়গুলোর প্রায় সবকিছু নিয়ন্ত্রিত হয় এই ‘সামনের অংশ’ থেকে! প্রেষণা বা উদ্যমের সাথে সংশ্লিষ্টতার জন্য এই অঞ্চলকে উদ্যোগ, আগ্রাসন বা বা আক্রমণের কেন্দ্র বলেও ভাবা হয়ে থাকে! কাজেই এই অঞ্চল ভাল কিম্বা মন্দ কাজের ক্ষেত্রেও ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মিথ্যা বা সত্য বলার সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য দায়ীও মস্তিস্কের এই সামনের অংশটি! এটা খুব বেশীদিন আগের জ্ঞাত বিষয় নয়!
এবার এক পুরাতন পুস্তকে চোখ বুলানো যাক! এর ৯৬ নম্বর অধ্যায় এর নাম – সূরা আলাক্ক! ১৯ আয়াত বিশিষ্ট মক্কী সূরা। প্রথম পাঁচ আয়াত কুরআন নাজিল হওয়ার প্রারম্ভিক আয়াত। আয়াত ২ এ আদম সন্তান এর ভ্রূণ সৃষ্টি বিষয়ক বাক্য থেকে এর শিরোনাম নেয়া হয়েছে! (এই ভ্রূণ সৃষ্টির গুঢ় রহস্য- এর ধাপ সমূহ কুরআনে বর্ণীত হয়েছে, মাত্র কিছুদিন আগে টরণ্টো বিশ্ববিদ্যায়ালয়ের এক অধ্যাপক – বিজ্ঞানী তা আবিষ্কার করেছেন এবং সিদ্ধান্তে এসেছেন, সৃষ্টিকর্তা ছাড়া এ ঘটনা কোন মানুষের পক্ষে ১৪০০ বছর আগে জানা সম্ভব ছিল না; তবে সেটা অন্য গল্প) ! মানব জীবনে জ্ঞান অর্জনের চরম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এই সূরায়! কিন্তু আবার যারা চিন্তা চেতনায় ‘সীমা অতিক্রম করে যায় এবং ভাবতে শুরু করে, তারা নিজেরাই তাদের প্রভু, সতর্ক করা হয়েছে তেমন আঁতেলদেরকেঃ “একদিন (তার প্রকৃত) প্রভুর দিকেই হবে (তার) প্রত্যাবর্তন! (৯৬:৮)। ৯ থেকে ১৪- এই আয়াত সমূহে আবু জাহল ও তার সহযোগীদের হাতে রাসূল (সাঃ) এর নির্যাতনের বর্ণনা দেয়া হয়েছে- এমনকি ক্কাবায় তাঁকে প্রার্থনা করতে দেয়া হয়নি; এমন অপকর্মকারী- যারা প্রথমে সত্যকে অগ্রাহ্য করেছে এবং দ্বিতীয়ত, সত্যের পথে প্রতিবন্ধক হয়েছে, তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম, সে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়া হয়েছে এখানে!
১৫ ও ১৬ নম্বর আয়াতে, আল্লাহ্র অস্তিত্ব অস্বীকারকারী- এমন ধরনের কাফেরদের পরিণতি সম্বন্ধে সতর্ক করা হচ্ছেঃ “কিছুতেই না! যদি সে (দুষ্কর্ম থেকে) ফিরে না আসে, তাহলে অবশ্যই তাকে তার মাথার সম্মুখভাগের চুল ধরে হেঁচড়ে নেব; ( জান না কে সেই) মিথ্যাবাদী, সেই নাফরমানের সামনের দিকের চুলের গোছা”!
সামনের দিকের চুলের গোছা”! মাথার চুলের আর সামনের বা পেছনের দিক কী? শাস্তির জন্য পেছনের চুল ধরলে সমস্যা কি? কি আছে মানুষের মাথার খুলির এই সামনের দিকের চুলের গোছায়?
সূরাটির এই অংশটি বুদ্ধিমান মানুষদের জন্য খুব কৌতূহলোদ্দীপক ! আমরা আগেই উল্লেখ করেছি মানুষের মাথার খুলির সামনের দিক ( Frontal lobe) ব্রেনের মূল ব্যবস্থাপনা বা নিয়ন্ত্রনের জন্য দায়ী । ব্রেনের কার্যকারিতার ক্ষেত্রে এই অঞ্চল মূলতঃ এক্সিকিউটিভের দায়িত্ব পালন করে।
চিন্তা- পরিকল্পনা, দূরদৃষ্টি, সমস্যা সমাধান, উদ্যম, মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রন ও সিদ্ধান্তগ্রহণ –এর মত জীবনের মূল বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রিত হয় এই অঞ্চল থেকেই! প্রেষণা বা উদ্যমের সাথে সংশ্লিষ্টতার জন্য এই অঞ্চলকে আগ্রাসন বা উদ্যোগ বা আক্রমণের কেন্দ্র বলেও ভাবা হয়ে থাকে! কাজেই এই অঞ্চল ভাল কিম্বা মন্দ কাজের ক্ষেত্রে ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, অনুপ্রেরণা বা প্রেষণার মূলাধার । মিথ্যা বা সত্য বলার জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেও দায়ী মস্তিস্কের এই সামনের অংশটি!
কাজেই মিথ্যে বলার জন্য দায়ী যে অঞ্চল সেখানে ঝাঁকি দিয়ে এই মিথ্যেবাদীকে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য হুমকি দিয়েছেন তিনি, যিনি জানেন – কি থেকে কি হয় ! কে বা কি দায়ী – কিসের জন্য!
মিথ্যা সকল পাপের মা! সত্য অস্বীকার করে, মিথ্যে বলার জন্য, মিথ্যাবাদীর সামনের চুলের গোছা টেনে ধরে এই অঞ্চলকেই ঝাঁকি দেয়া হবে, তার জঘন্য পাপাচারের জন্য শাস্তি হিসেবে; আল্লাহ্ পাক সে হুমকি দিয়েছেন মিথ্যাবাদীদেরকে! ১৪০০ বছর আগের লেখা বিজ্ঞানময় কুরআনে যে তথ্য লিখিত হয়েছে তা কিছুদিন আগে বিজ্ঞানীরা প্রমানিত করলেন!
“এই সেই গ্রন্থ যাতে কোন সন্দেহ নেই”( সূরা বাক্কারা) আর ‘বুদ্ধিমানদের জন্য অসংখ্য ‘চিন্তার খোরাক আল্লাহ্ পাক ছড়িয়ে রেখেছেন – আমাদের চারপাশেই! “যদি তারা চিন্তা ভাবনা করে”!
আর সে সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য নির্দেশনা রয়েছে এই সূরাতেও ! কিভাবে আল্লাহপাকের নৈকট্যলাভ করা যাবে- এবিষয়ের নির্দেশনা দিয়ে সূরাটির সমাপ্তি ঘোষিত হয়েছে-“প্রার্থনার সময় সর্ব শক্তিমানের সামনে সেজদায় প্রণত হও এবং তাঁর নিকটবর্তী হও”।
বিষয়: বিবিধ
১৬৩৭ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আবারো ধন্যবাদ!
মন্তব্য করতে লগইন করুন