হট ডগ

লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১১ জুলাই, ২০১৫, ০৩:৩৪:৩৭ রাত



হট ডগ খুব জনপ্রিয় খাবার !

ইউরোপ অ্যামেরিকায় তো বটেই, অনেক উন্নয়নশীল দেশেও এই বস্তু জনপ্রিয় হচ্ছে! সস্তা, প্রসেসে সময় ব্যায় হয় না- বলতে গেলে রেডি মেড, স্বাদ খারাপ নয়, ট্রেন্ড বা চালু ফ্যাশনের জিনিষ- এবং সর্বোপরি - কনিভিনিয়েন্স- এ সব মিলিয়ে এর বিক্রী হার গগণ চুম্বী!

কিন্তু ইউরোপের এক পত্রিকার মতে, কেউ যদি একবার এর প্রস্তুত প্রনালী প্রত্যক্ষ করে- জন্মের মত এ বস্তু সে গলাধঃকরন করবে না! আমি সম্পূর্ণ একমত ! এ এক অসহনীয় ( আমার কাছে – অশ্লীল ) নোংরা প্রক্রিয়া!

কি দিয়ে বানানো হয় এ বস্তু?

পশু জবাই করে মাংসের মূল অংশ প্যাকেট হওয়ার পড়ে, পড়ে থাকা- কাট ছাঁট হওয়া, ফেলনা মাংসের অবশেষ যা নেহায়েত ফেলে দিতে হবে, এগুলো একত্রিত করে, কুচি করে, পানি মিশিয়ে - প্রচুর চাপ দিয়ে এক ধরণের ঝাঁঝরির মধ্য দিয়ে ঠেলে দেয়া হয়। ফেনাময় রক্তাক্ত একধরনের গাদ বেরিয়ে আসে। মাংসের উচ্ছিষ্ট বা চামড়া- রক্ত, চর্বি- লিগামেন্ট এর সমন্বয়ের এই লাল বর্ণের ফেনা জাতীয় গাদ হচ্ছে, হট ডগ বা ওয়াইনার এর মূল মাংসের অংশ ! ইন্ডাস্ট্রির ভাষায় , এ বস্তুকে সরাসরি মাংস না বলে, ‘ যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পুনরুদ্ধারকৃত মাংস (mechanically recovered meat ) বলা হয়েছে, কারণ তা প্রকৃত মাংস নয়!



এই গাদের সাথে সংগত কারনেই, পচন রোধ করতে উচ্চ মাত্রার প্রিজারভেটিভ পাউডার মিশান হয় যথেষ্ট পরিমাণে । এবার এই গাদকে একত্রে আঠালো করে ধরে রাখার জন্য ও পছন্দসই ‘আকৃতি দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত স্টার্চ –( তা গম বা আলুর উৎস থেকে নেয়া হবে, সিজন অনুযায়ী যেটা সস্তা, সেটা ব্যবহৃত হবে; রাস্ক (rusk) - বিস্কুট বা পাউরুটির ফেলনা টুকরা বিশেষ ও এর সাথে যোগ হতে পারে); পর্যাপ্ত রং, ফ্লেভারিং, অধিক মাত্রায় লবন- ( যা প্রায় সব প্রসেসড ফুডেই থাকে) মিশিয়ে ঘন, আঠালো ‘লেই বানিয়ে তা প্লাস্টিক টিউবে পূরে দেয়া হয় এবং সেদ্ধ করে, সুদৃশ্য প্যাকেট সহ বাজার জাত করা হয়।



Food sustain গ্রুপের চার্লি পাওয়েল মন্তব্য করেছেঃ সস্তা দামের এই হট ডগ/ সসেজ বা ফ্রাংকফূরটার (ফ্রাঙ্কফুর্ট এর সাথে এর সৃষ্টিগত আদি সম্পর্ক!) অতিমাত্রার - প্রক্রিয়া জাত, এই শিল্প-বর্জ্য জাত খাদ্যে, স্বাস্থ্যগত উপাদান খুব কমই আছে! প্রতিদিন এ খাদ্য খেলে তা কারো স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই ভাল হবে না।

The World Cancer Research Fund সুপারিশ করেছে প্রক্রিয়া- জাত মাংস কম খাওয়ার জন্য! Dr. Rachel Thompson ( The fund) এর মতে, কেউ যদি গড়ে প্রতি সপ্তাহে ৭০ গ্রাম কম, প্রক্রিয়া- জাত মাংস বা দুটো হট ডগ কম খায়, ইংল্যান্ডে পেটের ক্যান্সারের সংখ্যা বছরে ৪০০০ কমে যাবে!

মাংসের উপজাত বস্তুর সাথে পানি ও অন্য যে সব বস্তু যেমন স্টার্চ, লবণ, ফ্লেভার, ও প্রিজারভেটিভ রাসায়নিক উপাদান যোগ করা হয় তা একটু তলিয়ে দেখা যাক!

স্টার্চঃ সকল সসেজ বা হট ডগে পর্যাপ্ত স্টার্চ যোগ করা হয়! হট ডগের আয়তণ বাড়াতে, মাংসল উপাদানকে আঠালো করতে এবং মনুষ্য জিভের কাছে তা আরও উপাদেয় করতে স্টার্চ ব্যবহার করা হয়।

লবণঃ হট ডগের আয়তনের প্রায় দুই ভাগ লবণ যোগ করা হয়। ৩৫ গ্রামের হট ডগে প্রায় .৬ গ্রাম লবণ থাকে। অতিরিক্ত লবণ যুক্ত খাবার উচ্চ রক্ত চাপ, ভঙ্গুর হাড্ডি গঠন, হাঁপানি, স্ট্রোক, হার্ট সমস্যা, পাকস্থলী ক্যান্সার ও মুটিয়ে যাওয়ার মত সমস্যার সাথে যুক্ত!

হট ডগে মিল্ক প্রোটিন, সয়া বা মটরজাত প্রোটিন যোগ করা হয়- একদিকে প্রোটিনের মাত্রা বাড়াতে, অন্য দিকে হট ডগের গঠন বা আকৃতি ভাল করতে।

সোডিয়াম নাইট্রাইটঃ ( E 250) অতিরিক্ত প্রক্রিয়া- জাত মাংস খাওয়ার কারনে পাকস্থলী বা আন্ত্রিক ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে- এর জন্য দায় অনেকাংশে এই রাসায়নিক পদার্থের । এই বস্তুই হট ডগের রং অবিকৃত রাখতে ( মাংস যেন সর্বদা লাল বা গোলাপি দেখায়) আর ব্যাক্টেরিয়াকে দূরে রাখতে, কাজ করে । গবেষণায় দেখা গেছে জীবের শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধির সাথে সোডিয়াম নাইট্রাইট এর সম্পর্ক রয়েছে। শরীরে এই নাইট্রাইট, প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের সাথে বিক্রিয়া করে এন- নাই ট্রোসো কম্পাউন্ড তৈরী করে( NoCs ) । কতিপয় NoCs শরীরের কোষের ডি এন এ কে ক্ষতিগ্রস্থ করে এবং ক্যান্সারের জন্ম দেয়! ২০০৬ সালের প্রায় ৬০ টি গবেষণায় পাকস্থলীর ক্যান্সারের সাথে এই নাইট্রাইট এর যোগ রয়েছে বলে দেখা গেছে।

আইনগত ভাবে উৎপাদক কোম্পানীর জন্য হট ডগে কোন ফ্লেভার যোগ করা হয়েছে তা উল্লেখ করার জন্য কোন বাধ্য বাধকতা নেই। এম এস জি বা ক্ষতিকর এমণ কোন ফ্লেভার যোগ করা হলেও, লেবেলে তা উল্লেখ না করলেও কোম্পানির আইন গত সমস্যা হবে না!

ফ্লেভারঃ সাধারণত ফ্লেভার খুব ক্ষতিকর উপাদান নয়, তা যদি মসলা বা ওষধি গাছপালা – রসুন ইত্যাদি থেকে আসে। তবে ফ্লেভার এর তীব্রতা বাড়াতে এম এস জি ( E621) ও একাজে ব্যবহৃত হয় । এলারজি, মাথা ধরা, পানিশূন্যতা সমস্যার সাথে একে যুক্ত করা হয়, যদিও খুব শক্ত প্রমাণ নেই, কারণ ব্রক্কলি, মাশরুম, বা টমেটোর প্রকৃতি গত ভাবে এর উপস্থিতি আছে।

পটাশিয়াম এবং সোডিয়াম ট্রাই ফসফেটঃ ( E- 451) , E-452 বা পলি ফসফেট ইমালসিফায়ার, স্ট্যাবিলাইজার যা হট ডগকে একটু দৃঢ়তা প্রদান করে। অম্লত্ব ঠই রাখে এবং তেল চর্বি মাংস ও পানির কণাকে এক সাথে বেঁধে রাখে! এর সাথে ফুড পয়জনিং ব্যাকটেরিয়ায় বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।

ই- ৩০১. সোডিয়াম এসকরবেট – এক ধরণের ভিটামিন সি ; অ্যাণ্টি অক্সিডেণ্ট – মাংস উপাদানের এসিডিটি নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্তের লাল রং ধরে রাখে । অল্প ডোজে মাণব শরীরে ক্ষতি না করলেও যারা নিয়মিত খায় তাদের অতিরিক্ত স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে – এটা বলা যায়! এমনকি চামড়ায় প্রদাহ বা এলারজি দেখা দিতে পারে!

ই ১২০ – কারমিনঃ লাল খাদ্য রং- ছোট বিটলস এর শেল গূড়ো করে এই রং তৈরি করা হয়। শেলকে অ্যামোনিয়ায় বা সোডিয়াম কারবোণেটএর উপস্থিতিতে সেদ্ধ করে, ফিল্টার করে এই রং পাওয়া যায়! কাজেই পোকা মাকড়ে কারো এলারজি থাকলও, এই রং ব্যবহারেও তার এলারজি দেখা দেয়া অসম্ভব নয়!

বাচ্চাদেরকে খেতে দেয়া খাবারের মধ্যে হট ডগ এক ঝুঁকি পূর্ণ খাবার। ১৭% আমেরিকান বাচ্চাদের গলায় খাবার আটকে যাওয়ার কারণ হচ্ছে এই হট ডগ, গড়ে বছরে ৮০ টি বাচ্চা মারা গেছে এই হট ডগ খেতে গিয়ে ।

গরু ছাগল জবেহ করার পরে মাংস প্রসেস করা হলে, এর কাট ছাঁট এক সময় কুকুরের খাদ্য হিসেবে ভাগাড়ে ফেলা হত । এখন আর কুকুরের জন্য নয়, মনুষ্য সন্তানদের ভোগে লাগছে সেই শিল্প বর্জ্য! আপনি যদি এখনো সে বস্তু কিনে খাওয়ার মানসিকতা পোষণ করেন – চয়েস আপনার! তবে – স্বাস্থ্যকর খাবার ক্রয়ের সুযোগ থাকতে, এই শিল্প বর্জ্য কেনার সিদ্ধান্ত যে খূব একটা উত্তম সিদ্ধান্ত নয়, তা বলা যায় !

বিষয়: বিবিধ

২২৭৫ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

329507
১১ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৭:৪৯
শেখের পোলা লিখেছেন : তথ্য সরবরাহের জন্য ধন্যবাদ৷
329509
১১ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৮:১৪
ছালসাবিল লিখেছেন : ওয়াক! ওয়াক! ওয়াক! Sad
329512
১১ জুলাই ২০১৫ সকাল ১০:৪০
মিনহাজুল ইসলাম মোহাম্মদ মাছুম লিখেছেন : যেহেতু এই বর্জ্য বর্জনীয়..আছে অনেক করণীয়.. ধন্যবাদ..
329514
১১ জুলাই ২০১৫ সকাল ১০:৪৬
নেহায়েৎ লিখেছেন : আস্তাগফিরুল্লাহ! আমার অন্ত্যন্ত প্রিয় ছিল এই হটডগ। প্রচুর খেয়েছি জীবনে। আর না আজ হতে ত্যাগ করলাম। ওয়াক থুঃ থুঃ থুঃ! জাজাকাল্লাহু খাইরান।
১১ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৫:২৮
271868
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : বাংলাদেশি হটডগ এভাবে বানায় না ভাই!!!
329530
১১ জুলাই ২০১৫ দুপুর ১২:৪১
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অনেক ভালো লিখেছেন। জাজাকাল্লাহ। আমি জীবনে ১/২বার খেয়েছি মাত্র। এটা যে অখাদ্য তা জানি Happy
329535
১১ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০১:২৭
বাকপ্রবাস লিখেছেন : নামটাইতো অখাদ্য
329539
১১ জুলাই ২০১৫ দুপুর ০২:০৯
আবু জান্নাত লিখেছেন : হট ডগ (গরম কুত্তা)ও প্যাকেটজাত কিমা যারা পছন্দ করেন, ভিডিও আকারে দেখে আসুন প্রস্তুত প্রণালী, আর জীবনের জন্য ত্যাগ করুন এসব অখাদ্য এখানে
329557
১১ জুলাই ২০১৫ বিকাল ০৫:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : গরম কুত্তা খেতে ভালই লাগে!!!
তবে ছাট মাংস থেকে দেশিয় খাবারও উৎপাদন করা হয়। এতে সমস্যা নাই। সমস্যা প্রিজারভেটিভ এ।
329825
১৩ জুলাই ২০১৫ রাত ১০:৪৯
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : Processed food is not a healthy choice! ya, one big reason is preservative, that's true!
I have no idea if they are making it at back home! However, its a huge - profitable industry in the developed world. I tried to highlight that fact. Everybody has their own choice - anyway!
১০
329858
১৪ জুলাই ২০১৫ রাত ০২:১১
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : প্রক্রিয়াকরণটা জানতাম বলে খাইনা, পছন্দও নয়। যে কোনো প্রসেস ফুড, ক্যান ফুড স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। ক্যান্সারের কারণও বটে । গলায় খাবার আটকে যাবার সতর্কতা হিসেবে রেস্টুরেন্টগুলোতে সাইন দেয়া থাকে দেখেছি। কারনটা জানা ছিলনা। সচেতন করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ Happy
১১
332013
২৭ জুলাই ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:১৩
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File