আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে?
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ২৪ মে, ২০১৫, ০৯:৫৭:৩২ রাত
হেনরি কিসিঞ্জার এক সময় বাংলাদেশকে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উল্লেখ করেছিল! আমেরিকার ‘মন্ত্রীর ‘ড্যামেজিং মন্তব্যে আমাদের গায়ে জ্বালা যদি নাও ধরে , (ওরা পৃথিবীর ‘দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, কাজেই পশ্চাদ্দেশে লাথি মারলেও, কারো কারো মনে হয়, পদধূলি দিয়েছে !), দেশের প্রয়াত এক নেতার বাণী শুনুনঃ ----‘চাটার দল চাইট্টা সব শেষ কইরা ফালায়’!! এই চাটার দল আমাদের এক সময়ের এবং বর্তমান ক্ষমতাসীনদের ‘পাতি নেতার দল, যারা নেতার জুতো পালিশ করত আর ‘চাইট্টা সব শেষ করত! সেই দেশের জন্য আমাদের ভালবাসা এক রত্তি কমেনি। সেই “ইন হাস্ত ওয়াতানম - আমার ‘ওয়াতান – সেইতো আমার জন্মভূমি!
সমুদ্রে ভেসে ভেসে ‘মরতে যাচ্ছে আমার দেশের মানুষ! রোহিঙ্গাদের সাথে বাংলাদেশীদের নামও জোরে সরে উচ্চারিত হচ্ছে! রোহিঙ্গারা বার্মার ‘ষ্টেটলেস- রিফিউজি, তাদের দুরবস্থার কারণ ‘আন্দাজ করা যায়, বাংলাদেশীরা তো তা নয়! এরা তো স্বাধীন দেশের স্বাধীন মানুষ! এদেশের নেতৃত্বের কি এতটুকু অনূভূতিও নেই সেই ‘মৃত্যুপথ যাত্রী ‘ভাসমান জিন্দা লাশদের নিয়ে! কেমন করে এ দেশ সম্মান নিয়ে – মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে পৃথিবীর বুকে? যাদের আত্মমর্যাদা নেই, নিজেদের মর্যাদা দেয় না- তাদেরকে অন্যরা সম্মান করে না! যারা নিজেদের ‘সাহায্য করে না, আল্লাহও তাদের সাহায্য করে না! বাংলাদেশের বর্তমানের নেতৃত্বের ‘কুখ্যাতি তো পৃথিবীর সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে! সেই দেশের অবস্থার পরিবর্তন কি ভাবে হবে! নেতৃত্ব পরিবর্তন না হলে, সঠিক নেতৃত্ব না হলে যে এদেশের পরিবর্তন হবে না- তা বুঝতে ‘দিব্যজ্ঞানী হওয়া লাগে না! তো, ভবিষ্যতে সঠিক নেতৃত্ব দিয়ে - এই ‘দুঃস্থ দেশকে কারা সামনে এগিয়ে নেবে?
আমাদের দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিতে কেমন নেতা চাই ?
এমন নেতা চাই , কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বন্যা ক্ষরা হলে, যে শুধু ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে জাতিসংঘের সামনে হাত পাতবে না! হাড় জিরজিরে, কঙ্কালময় কিছু বাচ্চার ছবি বিবিসি, এ এফ পি, রয়টার বা আল জাজিরার হাতে, মিডিয়ায় ছাপার বা প্রচারের জন্য পাঠাবে না! এবং প্রাপ্ত রিলিফের পয়সায় পাজেরো জীপ নিয়ে নিজে, পুত্র পরিজন বা দলের পুত্রদের নিয়ে ঘুরবে বা ঘুরাবে না। বরং স্বনির্ভর হওয়ার জন্য সমস্ত পদক্ষেপ নেবে, কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে; নিজের দেশকে, মালয়েশিয়ার মাহাথির মুহাম্মদের মত একটানে তুলে নিয়ে যাবে অনেক, অনেক উপরে।
ভোটের সময় হলে দেশে সকল বীর পুঙ্গবদের বাহাস শুরু হয়, ‘মফিজ মিয়ার চরিত্র, ফুলের মত পবিত্র’ প্রমানের জন্য। কিন্তু একজন ভোটপ্রার্থী নেতা তার পেশাগত জীবনে কি কাজ করেছে, কি অর্জন করেছে, তার নৈতিকতা কতখানি মজবুত, সে কতটুকু পরোপকারী, তার ন্যায় পরায়ণতা, তার বিচার বিবেচনা বোধ, তার স্বজন প্রীতি (পড়ুন সদল প্রীতি), তার দেশ প্রেম, তার নিষ্ঠা, মানুষের প্রতি তার মমত্ববোধ, চাপের মুখে সে নৈতিকতা বিসর্জন দেবে কিনা- এই গুণ বা যোগ্যতা/ বা অযোগ্যতা গুলো যাচাই বাছাইয়ের কোন তরীকা নেই! যা একটা দেশে প্রকৃত নেতা নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত জরুরী । বরং আমরা যা দেখছি, তাতে - তিনটে মাত্র যোগ্যতা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘নেতা নির্বাচনের মাপকাঠি।
১। সে নেত্রীর পদসেবা করে কিনা, কথায় কথায় নেতা বা নেত্রীর ‘ছু মন্তরের উপাখ্যান, আক্ষরিক অর্থেই পা ছুঁয়ে যখন তখন সালাম করে কিনা বা পা ধরে বসে থাকে কিনা (আমাদের জাতি দুশো বছরের দাসত্ব করেছে, এই নফরের বাচ্চাগুলো তার মূর্তিমান প্রমান; এদের সালাম শ্রদ্ধার প্রমান নয়, নগদ প্রাপ্তি যোগের জন্য মাত্র! প্রথা থাকলে হয়তো, এই সেবাদাস গুলোকে নূতন পিরামিড তৈরি করে, ফিরাউনের দাসদের মতই, নেত্রীর সাথে কবর দেয়া হত!)- আপাদ মস্তক তোষামোদকারীর মত জী হুজুর জী হুজুর জিকির তুলে – দুনিয়া ভুলে যেতে পারে কিনা!
২। হারাম বা হালাল কোন বিষয় নয়, কোন পথে অর্থ উপার্জিত হয়েছে সেটা বিবেচ্য নয়, ‘হবু নেতা’র মাল কড়ি আছে কি না সেটা গুরুত্বপূর্ণ! পরের ‘গাঁট কেটে আসুক, কিম্বা সুদ ঘুষ চাঁদাবাজি বা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত হোক – সেটা কোন বিষয় নয়। অবশ্য এর সাথে তিন নম্বর ধারাও সংযুক্ত রয়েছে অদৃশ্য ভাবে।
৩। হুকুম পেলে, জেল জুলুম জরিমানা গুম খুন যেভাবে হোক, বিরোধী মতকে গলা টিপে ‘চুপ করিয়ে দিতে পারবে কিনা, অর্থাৎ সে ব্যাক্তির পোষা পেশাদার গুন্ডা বাহিনী আছে কিনা।
যারা আজকের দিনে প্রতিনিয়ত বুদ্ধি বা জ্ঞানের চর্চা করেন, আমার বিশ্বাস তাদের অনেকেই ব্লগের জগতেও ঘুরা ফিরা করেন। আসুন সবাই মিলে একটা মত বিনিময়ের খেলা চালু করা যাক। বাংলাদেশ একটা ছোট্ট দেশ, পৃথিবীর অনেক বড় দেশগুলোর- একটা জেলার থেকেও ছোট। সেই ছোট্ট ভুমিতে ১৬ কোটি লোকের বাস। কেন ?
কোন এক মুখ পোড়া হনুমান বলেছে, বাংলাদেশে দম্পতিদের বিনোদনের কোন ব্যবস্থা নেই, এক মাত্র বিনোদন হল -----! ‘জনসংখ্যা বিস্ফোরণের এই নোংরা, অবমাননাকর ব্যখ্যা আমরা গ্রহণ করব না। এই দেশের মাটি অসম্ভব রকমের উর্বর। বছরে তিনটে ফসল ফলে – পৃথিবীতে এমন মাটি সমৃদ্ধ দেশ কয়টা আছে? ১৬ কোটি মানুষের খাবার এখনও উৎপাদন করছে এদেশের অবহেলিত কৃষকরা। সেজন্যই ‘সোনাফলা এ মাটিতে একবার যে এসেছে, সে আর চলে যাওয়ার চেষ্টা করেনি। নাতিশীতোষ্ণ জল হাওয়ার সাথে মানুষের ‘উষ্ণ আচরণ, তাদেরকে থেকে যেতে আগ্রহী করেছে। এজন্য গন্ধ শুঁকে ‘দস্যু জাতিদেরও আবির্ভাব হয়েছে এদেশে, পরিস্থিতির চাপে না পড়লে ‘ইংরেজরা হয়তো এখনও এদেশে থেকে যেত, সন্দেহ নেই! কাজেই বিদেশী প্রেসক্রিপশনে জনসংখ্যাকে অভিশাপ বলে- আমরা স্বীকার করব না। জনসংখ্যাকে অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ ! আজ যদি আমাদের বিশাল জনসংখ্যার বড় একটা সংখ্যা প্রবাসে না থাকত, তাদের ঘামে অর্জিত মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা নিয়মিত না পাঠাতো, এই দেশের আজ কি পরিণতি হত?
যাহোক, ভূমিকা শেষ । মূল কথায় আসি। প্রস্তাবনার দুই পর্ব।
একঃ
প্রতিটি ব্লগার – যাদের মৌলিক ভাবে চিন্তা করার সামর্থ রয়েছে, কোন দলের প্রতি ‘অন্ধ আনুগত্য যাদেরকে দেশের মঙ্গল চিন্তা করতে বাধা দেয় না; সবার উপরে দেশ বড়, দেশ ও দেশের মানুষের মর্যাদা রক্ষায় যারা নিজেকে তুচ্ছ করার মানসিকতা রাখে, তারা লিখবেন – আমাদের দেশের জন্য ‘কাঙ্খিত নেতার -পাঁচ থেকে সাতটি বৈশিষ্ট ।
সবার লেখা থেকে – দৈব চয়ন নয়, বরং ‘সাধারন’ বৈশিষ্ট গুলো, যে গুলোতে বেশীর ভাগ ব্লগার এক মত হবেন, সে গুলো নিয়ে আমরা চূড়ান্ত পর্ব লিখব, লিখব না বলে, ‘সংযোজন - করব। অবশ্য ‘সম্পাদক সাহেবকে ‘পদাধিকার বলে এক্ষেত্রে ‘মডারেটর বানালে মন্দ হয় না।
দুইঃ
যে বৈশিষ্ট বা গুণ গুলো আমি আমার দেশের ‘ কাঙ্খিত নেতার মধ্যে দেখতে চাই, সে গুণ গুলো আমাদের মধ্যে রয়েছে কিনা, এনিয়ে আমাদের আত্মসমীক্ষা দরকার। বিশেষ করে তরুণ /যুবকদের জন্য তা অতি জরুরী! নেতৃত্বের বৈশিষ্ট জন্মগত খানিকটা থাকে তা সত্য, কিন্তু তাকে ‘ শাণিত করতে হয় শিক্ষা আর অভিজ্ঞতার আলোকে। কারো যদি তা না থাকে, ঐ চারিত্রিক গুণাবলী অর্জনের জন্য আমাদের কি কি করনীয়? জ্ঞান অর্জন! হ্যাঁ। বই পড়া- হ্যাঁ। বড় বড় রাজনীতিক/ নেতার জীবন থেকে শিক্ষা নেয়া- হ্যাঁ! আর কিছু? নিজেদের উদ্ভাবনামূলক কৌশল থাকতেই হবে। বিশেষ করে এ ‘অস্থির সময়ে!
ইরান যেন পরমাণু গবেষণা না করতে পারে তার জন্য ‘অর্থনৈতিক অবরোধ, সামরিক আক্রমণের হুমকি, সৌদি আরবকে দিয়ে পেট্রোলিয়ামের মূল্য ২০১৫ সালে এসে, ১৯৬০ এর দশকের দামে বিক্রয় করানো, অন্য হাতে, ভারতের কাছে পরমাণু কারখানার জন্য তিন হাজার টণ ইউরেনিয়াম বিক্রয়, বাসার আল আসাদের গণ হত্যার বিরুদ্ধে আঙ্গুল না তূলে ‘আই এস বা আল নুসরা- যারা আসাদের বিরুদ্ধে লড়ছে নিজেদের রক্ত দিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে বহুজাতিক বাহিনীর বিমান হামলা, মূখে গণতন্ত্রের বাহাণা আর মিশরে গণতান্ত্রিক সরকার উৎখাত করে, সামরিক শাসক বসানো, সৌদি কাতার কুয়েতকে বোমা হামলায় লাগিয়ে দিয়ে মধ্য প্রাচ্যে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলার রাজনীতি, এসব বুঝার যোগ্যতা ও এসব থেকে বাঁচতে, নিজের কৌশল নির্ধারণ করার মত জ্ঞাণ না থাকলে, ঐ রকম নেতা দিয়ে বাংলার উন্নতি আরও পঞ্চাশ বছরে কেন, পাঁচশো বছরেও হবে কিনা বলা মুশকিল!
বিষয়: বিবিধ
১৫৭৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন