বিজ্ঞান এবং ধর্মঃ শত্রু না মিত্র?
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০৫ এপ্রিল, ২০১৫, ০২:১৭:০৩ রাত
বিজ্ঞান আর ধর্ম নিয়ে মরিস বুকাইলির গ্রন্থ অনেক কিছুই বলেছে। কাজেই সে নিয়ে আমাদের কথা বলার দরকার নেই। তবে ধর্ম আর বিজ্ঞানের তুলনামূলক আলোচনার সারাংশ গুলো মনে করিয়ে দিলে অনেকেরই জন্য তা মনে রাখা সহজ হবে বলে মনে করছি। আজকের আলোচনা সেটা নিয়েই।
১। বিজ্ঞান মানুষকে ‘লজিক নির্ভর বা যুক্তিবাদী হতে সাহায্য করে। কিন্তু অনেক মানুষই যারা বিজ্ঞান মনস্ক বলে দাবী করে তারা যুক্তি মানে না! উদাহরণ দেইঃ এই যে গাড়ী বাড়ি, কল কারখানা – এগুলো কি এমনি এমনি হয়েছে নাকি কেউ তা বানিয়েছে? তারা বলবেন- অবশ্যই, এটা কেউ না কেউ বানিয়েছে। এমনি এমনি ভুঁই ফুঁড়ে এগুলো রাতারাতি বের হবে না! অতি উত্তম যুক্তি!
তাদেরকে আবার জিজ্ঞেস করুনঃ এই দুনিয়া, নদী সাগর, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড, সৌর জগত, গ্রহ নক্ষত্র – আমাদের জীব জগত (জীবের পুরো শরীর নয় – একটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ – যেমন চোখ বা নাকের গঠন বৈচিত্র এতই জটিল যে এক একটা বিষয় নিয়ে লিখতে গেলে- থিসিস হয়ে যাবে) এগুলো কি কেউ বানিয়েছে নাকি এমনি এমনি হয়েছে? এদের অনেকেই বলবেন- কেউ বানিয়েছে- বানানে ওয়ালা আছে একজন, (আমরা বলব আল্লাহ্ পাক বানিয়েছেন), আর এই তথাকথিত বিজ্ঞান মনস্কদের মধ্য থেকেই কতিপয় আঁতেল’ বলবেন, এমনি এমনি হয়েছে! নেচার- প্রকৃতি! তারা ‘বিগ ব্যাং থিওরী’ দিয়ে, বিবর্তন বাদ দিয়ে আপনার কান ঝালাপালা করে দেবে ! এদের কোন যুক্তি দিয়ে বুঝানো যাবে?
২। বিজ্ঞানের সত্য আপেক্ষিক, Absolute নয় ! স্থান, কাল, পরিবেশ- পরিস্থিতিতে তা পরিবর্তিত হয়। বিজ্ঞানের সুত্রের পরিবর্তন হয়- ব্যতিক্রমকে স্বীকার করে নেয়া হয়। অবস্থার পরিবর্তন হলে বিজ্ঞানের সত্য পরিবর্তিত হয়। ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পানি ফুটতে থাকে, পাহাড়ের মাথায় চড়ে দেখুন, ঐ তাপে পানি ফুটবে না।
ধর্মের সত্য পরিবর্তিত হয় না, এটা Absolute, তা মেনে নেয়া হয়; যুক্তি তর্কের দরকার পড়ে না।
৩। বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের সংঘাত নেই, মেনে নেয়ার প্রবণতা থাকলে। অন্যথায় আছে। বেহেশত বা দোজখ মেনে নিলে আছে, যারা মানে না তাদের কাছে নেই! জ্ঞানের স্বল্পতার কারনেও এটা হয়। মিরাজের ঘটনা ‘আবু বকর সহ অন্য ‘বিশ্বাসী মুসলিমগণ বিশ্বাস করে নিয়েছেন, কারণ তাঁরা রাসূলকে বিশ্বাস করেন, রাসূল যা বলেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন । কিন্তু সপ্তম শতকের আরবের মানুষ – যাদের আলোর গতি যে ১৮৬০০০ মাইল এ সম্বন্ধে কোন ধারনাই ছিল না, সেই অবিশ্বাসীরা ধর্মের বিপক্ষে এই ঘটনাকে ‘এক প্রমান’ হিসেবে তা আবু বকরের সামনে উপস্থাপন করেছে। এমনকি এই ২০১৫ সালেও অনেকে বিতর্ক করছে- হয়তো স্বপ্নে ঘটেছিল এই মিরাজ! টাইম এবং স্পেস সম্পর্কে মানুষের এত জ্ঞান অর্জনের পরেও বিতর্ক চলছেই। অনেক কিছু জানলেও ‘সব কিছু তো জানা হয়ে যায় নি, তাই না! ‘জ্ঞান তোমাদেরকে খুব অল্পই দেয়া হয়েছে’ কে বলেছেন এটা? যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন কম জ্ঞান দিয়ে, তিনি নিজেই বলেছেন, আল কুরআনে!
৪। ধর্মের ক্ষেত্রে মেনে নেয়ার ব্যাপারটা মুখ্য, যুক্তি থাকুক বা না থাকুক। যুক্তি দিয়ে বুঝানো গেলে ‘বিশ্বাসটা মজবুত হয় – এটুকুই। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ও মেনে নিতে হয়, তবে তা হিসেব নির্ভর বা প্রমান নির্ভর। আগুনে হাত দিলে হাত পূড়ে যাবে, এটা বিশ্বাস নয়, এটা প্রমানিত। কিন্তু ইব্রাহীম (আঃ) আগুনে পুড়লেন না । এটা বিশ্বাস, বিজ্ঞানের যুক্তির বাইরে। তাই দেখে কি হাজার হাজার মানুষ লাফ দিয়ে অগ্নিকুন্ডে পড়ে গিয়ে দেখতে চাইবে?
বাবা মায়ের মিলন না হলে সন্তান হয় না- এটাও প্রমানিত সত্য। যীশু বা ঈসা (আঃ)র ক্ষেত্রে তা হয়নি। - পিতা ব্যাতীত জন্মেছেন তিনি ! এটা প্রচলিত প্রমানিত বিশ্বাসের উল্টো সারিতে ।মিরাকল! তার ফলে কি বিজ্ঞান মিথ্যে হয়ে যাবে ? না। সবাই যদি ‘অবিবাহিত থাকে- তো আরও যীশু আল্লাহ্ পয়দা করবেন- বিষয়টা এমন নয়। এ বিষয়টাকে ধর্মীয় বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত করা হবে, এবং বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যুক্তি বহির্ভূত ‘ব্যাতিক্রম হিসেবে চিহ্নিত করা যাবে। তবে যত যুক্তি দিয়েই বুঝানো হোক, ; অবিশ্বাসীকে ধর্মে বিশ্বাস করানো যে সহজ নয়, তার প্রমান এখনও পৃথিবীর প্রায় ১৬% মানুষ ধর্ম অবিশ্বাস করে, যদিও সামাজিক ভাবে মানব জাতির বড় একটা অংশ ‘কোন না কোন ধর্মের সাথে জড়িত। বাঁকি ৮৪% এটা মেনে নেয় যে ‘সৃষ্টিকর্তা একজন আছেন। তবে – প্রত্যক্ষ ভাবে, পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে নিজের জীবনে, সমাজ বা রাষ্ট্রে, ধর্মের অনুশীলন যারা করেন তাদের শতকরা হার খুব বেশী নয়! ২৩০ দেশের এক জরীপে দেখা গেছে প্রায় পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় এক চতুর্থাংশ মুসলিম। কতজন প্রতিনিয়ত এর অনূশীলন করেন! বাংলাদেশে ৯০ ভাগ মানুষ মুসলিম, ১৫ কোটি ৯৯ লক্ষ ৮৫ হাজার ১০০ ( এপ্রল ০৪, ২০১৫ জি এম টি ৮:২৩ মিনিট) মানুষের মধ্যে ১৪ কোটি ৩৯ লক্ষ ৮৬ হাজার ৫৯০ জন মুসলিম। কতজন ধর্মের পরিপূর্ণ বিধান মেনে চলে? বাদ দিন, কতজন আংশিক মেনে চলে? তবে স্বীকার করতে হবে ইউরোপ আমেরিকার তুলনায় এশিয়া তথা ভারত উপমহাদেশে ধর্ম হচ্ছে জীবনের একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, এখনও পর্যন্ত! ইউরোপ আমেরিকার বহু মানুষ ধর্ম মানে না- তাতে কি হয়েছে, তারা উন্নত জীবন গড়েছে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে, মানুষের ‘স্বাভাবিক মৃত্যু নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশের ন্যায় মানুষকে কুকুর বিড়ালের মত মরতে হয় না। পুলিশ বা আইন রক্ষাকারী বাহিনি দের হাতে ক্রস ফায়ারে মরতে হয় না নিরীহ মানুষদের! তারা দেখিয়েছে, ধর্ম না মেনেও সভ্য জীবন যাপন করা যায়! বিজ্ঞান নির্ভর! তাদের কি অনৈতিকতা’ নেই ? হয়তো আছে, কিন্তু আমাদের ধর্মকে গুরুত্ব দেয়া জনসমষ্টির মত ভণ্ডামি তারা করছে না!
৫। বিজ্ঞানের ক্ষেত্র অসীম নয়, সসীম। ল্যাবের গবেষণার আওতায় যতটুকু আনা যায় কিম্বা পরিমাপ করা যায়, গনিতের হিসেব বা থিওরামের আওতায় যা ফেলা যায় তত টুকু। কিন্তু ধর্মের আওতা বা ক্ষেত্র আরও অনেক বেশী। মানুষের অন্তরকে কি বিজ্ঞান দিয়ে ব্যখ্যা করা যাবে? কিম্বা আত্মা কি – এর ব্যখ্যা বিজ্ঞান কিভাবে দেবে? ‘জীবন কি’ এর ব্যখ্যা দিতে গিয়ে বিজ্ঞান হিমশিম খায়। প্রটোপ্লাজমের একশন’ বলে কি জীবনের পুরো ব্যখ্যা দেয়া সম্ভব? বিজ্ঞান যা দেখতে পায় না – ধরতে পারে না- ওজন করতে পারে না-পরিমাপ করতে পারে না – ফর্মুলায় ফেলতে পারে না- তার অস্তিত্ব নিয়ে মাথা ঘামাতে পারে না! আপনি নিজে চিন্তা করুন, একজন জীবিত মানুষের শরীর থেকে কোন ‘বস্তু’ বেরিয়ে গেলে, আমরা সে দেহকে মৃতদেহ বলছি? জীবন বলতে কি বুঝায়? কেউ বলবে ‘বাতাস’। যদি তাই হয়, ‘বাতাস’ বেরিয়ে গেলে বেলুনের ওজন কমে যায়, মৃত্যুর পরে মানব দেহের ওজন কিভাবে বেড়ে যায় ? কল্পনা নির্ভর অনুমানের বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা কি! কথায় বলে, বিজ্ঞানের যেখানে শেষ, দর্শনের সেখানে শুরু! অবশ্য জ্ঞানের পরিধি বাড়ার ফলে বিজ্ঞানের পরিধি ও বাড়ছে- অস্বীকার করা যাবে না! এক সময় কলেরা বসন্তের চিকিৎসার জন্য ওলা দেবীর পূজা বা ওলা বিবির জন্য মানত করা হত, ঘড় বন্ধ করা হত মৌলবি বা বামুন ডেকে, যাদের আমরা ধর্মীয় গুরু বলে মনে করি; এখন এমন কাজ কেউই করে না, কারণ অনুবীক্ষন যন্ত্র আবিস্কারের ফলে ঐ রোগের প্রকৃত কারণ সমূহ মানুষ জেনে গেছে। ঐ ধরনের বামুন বা মোল্লাদের কাজকে ‘ব্যখ্যাতীত জিনিষকে ব্যখ্যা করার একটা প্রচেষ্টা মাত্র’ বলে ধরে নেয়া যায়, তার জন্য ধর্মকে অবজ্ঞা করার কোন কারণ নেই।
সেক্যুলার ধারনায়, ধর্মের প্রচেষ্টা এই যে, দুনিয়ায় সকল প্রাণী গুলো যেন সুখে থাকে, সবাই মিলে মিশে ভাল ভাবে বাস করে, শৃঙ্খলার মধ্যে থাকে, নিয়ন্ত্রনের মধ্যে থাকে – সীমার মধ্যে থাকে। কিন্তু মানুষের মাঝে ‘সীমানা পেরিয়ে যাবার প্রবণতা, নূতন সীমা তৈরী করার প্রবণতাও সৃষ্টিকর্তাই দিয়ে দিয়েছেন। কাজেই একটা ‘কনফ্লিক্ট বা সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে । সবাই যদি সীমার মধ্যে থেকে যেত – তাহলে মানুষ নিত্য নূতন আবিস্কারের চিন্তা করত না। সবাই যদি ‘আত্মসন্তুষ্ট হয়ে গৃহ বন্দি হয়ে থাকত, তাহলে আমেরিকা আবিস্কার হত না, মানুষ চাঁদে বা অন্য কোন গ্রহে যাওয়ার প্রেরনা পেত না! কাজেই নূতনকে জানার যে প্রেরনা বিজ্ঞান দিয়েছে তা মানব জাতিকে অগ্রসরতার দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্যই। আর চেষ্টা সত্ত্বেও, যদি তা সম্ভব না হয়, এক সময়ে থেমে যেতে হয়, তাহলেও যেন মানুষ হতাশ না হয়, সহিংস না হয়ে যায় – তারা যেন সান্তনা পায়, আত্মনিয়ন্ত্রন করতে পারে- ধর্ম এই সীমা নির্দেশ করে দিয়েছে। কাজেই বিজ্ঞানকে ধর্মের বিরুদ্ধ শক্তি না ভেবে- সহায়ক শক্তি ভাবলেই সব দিক থেকে মঙ্গল। আরও ভাল হয়, দুই বিষয়কে একই দাঁড়ি পাল্লায় না মাপলে, কারণ তা একই মাত্রায় নয়, এবং 'তিন মাত্রা'র পরিমাপক দিয়ে চতুর্থ মাত্রা পরিমাপ করা যায় না।
বিষয়: বিবিধ
২০৮৯ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
"স্বাভাবিক মৃত্যু নিশ্চিত করেছে, বাংলাদেশের ন্যায় মানুষকে কুকুর বিরালের মত মরতে হয় না। পুলিশ র্যাববের মত আইন রক্ষাকারীদের হাতে ক্রস ফায়ারে মরতে হয় না নিরীহ মানুষদের! তারা দেখিয়েছে, ধর্ম না মেনেও সভ্য জীবন যাপন করা যায়! বিজ্ঞান নির্ভর! তাদের কি অনৈতিকতা’ নেই ? হয়তো আছে, কিন্তু আমাদের ধর্মকে গুরুত্ব দেয়া জনসমষ্টির মত ভণ্ডামি তারা করছে না!
ভাইয়া এই তথ্যটি সেভাবে সঠিক না। পশ্চিমা সমাজ মানুষকে এত কিছু দেয়ার পরেও সেখানে মানুষ মোটেও নিরাপদ না। বিশেষত বর্ণবাদের জন্য পুলিশের গুলিতে নিগ্রো হত্যা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার যেসবের বিচারও অধিকাংশ সময় হয়না। সম্ভবত আপনার আমেরিকার আমেরিকার লুজিয়ানায় হ্যারিকেন ক্যাটরিনার কথা মনে থাকার কথা। সেনাবাহিনী ও পুলিশ দুর্গত মানুষের পাশে দাড়ান থাক সেখানে তারা লুটপাট, ধর্ষণ, দমণে নেমেছিল কারণ মানুষগুলো ছিল নিগ্রো। আমরা ধর্মহীন পশ্চিমা সমাজে ব্যাপকভাবে আত্নহত্যা, ধর্ষণ এমনকি পরিবারের রক্তসম্পর্কের আত্বীয় দ্বারা ধর্ষণের ব্যাপকতাও দেখি। Click this link
এই ডকুমেন্টারি টা দেখলেই ব্যাপারটার ভয়াবহতা কতখানি তা বুঝবেন। হ্যা তারা আইনের শাসন কায়েম করতে পেরেছে কিন্তু সেই আইনে কি হত্যা, ধর্ষণ, বর্ণবাদী সহিংসতা কোন কিছু কি কমাতে পেরেছে? আমরা নিয়মিত দেখতে পাই স্কুলছাত্র তার সব সহপাঠী, শিক্ষক, মা-বাবাকে হত্যা করে নিজেও আত্বহত্যা করেছে। শপিংমলে বন্দুকধারীর আক্রমণ অতঃপর নিজের আত্বহত্যা। পারিবারিক বিলুপ্তি,তাদের সমৃদ্ধি ও নাস্তিকতা যে তাদের জীবনে মোটেও শান্তি আনেনি সেটাই প্রমাণ করে। ধন্যবাদ ভাইয়া এত সুন্দর একটা লেখা উপহার দেয়ার জন্য।
লক্ষ্য করুনঃ “অনৈতিকতা তাদের সমাজে কি নেই? আছে!”
এদের সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমি নিজেও লিখি, লিখছি। হিন্দুদের জাত বৈষম্য আর শ্বেতাঙ্গদের বর্ণ বৈষম্য – মানব জাতির জন্য অভিশাপ! ইসলাম এর ‘চিকিৎসার আঞ্জাম দিয়েছে। হয়তো একারনেই, হিন্দু আর শ্বেতাঙ্গদের একটা বড় অংশ ইসলাম এর বিরুদ্ধে খড়গ হস্ত! বর্ণবাদের ভূত এত সহজে কি যাবে?
কিন্তু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় – (কিছু বর্ণবাদি জাজ এর রুলিং বা কিছু ব্যতিক্রমের ঘটনা বাদ দিলে –) এরা আমাদের থেকে অনেক এগিয়ে! এরা পৃথিবীর যেকোন দুর্যোগে আগে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। ইবোলার মহামারী রোধে মুসলিম কয়টা দেশ এগিয়ে এসেছে? বড় বড় রোগের চিকিৎসা এরাই আবিস্কার করছে – চেষ্টা করছে, এরা নেতৃত্ব দিচ্ছে! বর্তমান দুনিয়ায় মুসলিমদের অবদান কোথায়! এমনকি আত্মরক্ষা করার মত অস্ত্র আজ মুসলিম তৈরী করতে পারে না, আত্ম নির্ভরশীল নয়; ন্যায়ের প্রশ্নে অন্যদের সাহায্য করা তো ‘ দূর অস্ত’ । আমরা এক কেতাবী ‘ ইউটোপিয়ায় বাস করছি। মুসলিমদের নৈতিকতার মান দন্ড অনেক নিচে নেমে গেছে। অত্যন্ত দুঃখ জনক, মুসলিম আজ আর ‘আদর্শ নয়, দিশারী নয়, অভিযাত্রী নয়, ইন্টারপ্রেনর নয়, এক পশ্চাদপদ, অনগ্রসর – পরনির্ভরশীল সমাজ! ‘যে জাতি নিজের উন্নয়নের চেষ্টা করে না, আল্লাহ্ তাকে সাহায্য করেন না’ এটা মুসলিম ভুলে গেছে, তাদের ‘কিতাব পড়ে দেখার সময় কোথায়, কিতাব এর বাস্তবায়ন তো অনেক দূরের কথা। এক আমেরিকান কনভার্ট এর মন্তব্যঃ “ যদি কুরআন না পড়ে, তোমাদের মুসলিমদের আচরণ দেখতাম, তাহলে কখনো ইসলাম গ্রহণ করতাম না! এশিয়ার মুসলিম প্রধান দেশগুলো ঘুরে এসে, আরেকজন বলেছে, ‘সেখানে ইসলাম রয়েছে, মুসলিম নেই’। এর উপযুক্ত কোন জবাব আছে আমাদের কাছে?
ভাইয়া পশ্চিমারা মধ্যযুগকে বলে অন্ধকার যুগ কারণ তারা ছিল অন্ধকারে। ভারতের মুঘল সুলতানদের ইতিহাসেই বলা হয়েছে, ব্রিটিশরা যখন ভারতে আসে তখন তাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের ধারণা, কালচার মোঘলদের ধারে কাছেও ছিলনা। আপনার নিশ্চয়ই জানার কথা পদার্থবিদ্যার বিভিন্ন সূত্র, ল্যাবের যন্ত্রপাতি এসব মুসলিমদের হাতেই গড়ে ওঠে আলো সম্পর্কে সর্বপ্রথম সঠিক ধারণা দেন হাসান ইবনে হাইসাম। কেমিস্ট্রি নামটাই এসেছে আরবি নাম আল-কেমি থেকে কারণ আল-কেমি বা রসায়ন ছিল আরবদের বিদ্যা। এলজ্যাবরা মূলত আল জাবেরের নামের বিকৃত পশ্চিমা রূপ কারণ আল জাবের এই বিদ্যার জনক। অ্যালগরিদম শব্দটি এসেছে মুসলিম গণিতবিদ ‘মুসা আলআল খোয়ারিজমি থেকে। চিকিৎসাবিদ্যায় ইবনে সিনা, আল রাজী। যাইহোক ভাইয়া আপনি তখন দেখবেন মানবকল্যাণেও মুসলিমরা ছিল সবচাইতে এগিয়ে। আপনি পশ্চিমাদের আইনের শাসনের প্রসংসা করছেন আর আমরা দেখতে পাই তখন মুসলিম ভূখন্ডগুলিতে বসবাসকারী অমুসলিমরা ছিল সবচাইতে নিরাপদ। পশ্চিমাদের মাঝে যখন ছিল ইহুদি বিদ্বেশ তুঙ্গে তখন তুর্কি খলিফাদের কাছে ইহুদিরা ছিল পরম আদরে এমনকি তারা রাষ্ঠ্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও নিয়োজিত ছিল। কারণটা সহজ তখন পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ ও নেতৃত্বে ছিল মুসলিমরা যখন পশ্চিমারা ছিল পশ্চাদমুখী এক সম্পদায়। কিন্তু আজ পশ্চিমারা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের ভূমিগুলো লুটপাট করছে, আমাদের উপর যুদ্ধে ঝাপিয়ে পরছে। আমাদের শাসকদের নিয়ন্ত্রণ করছে। কাজেই বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা ও নেতৃত্বও আজ তাদের হাতে। ব্যাপারটা খুব সিম্পল। অতীতে গ্রীক, মেসোপটেমিয়া, রোমান,মিশর যারাই পৃথিবীতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে সক্ষম হয়েছে, বিজ্ঞানের নেতৃত্বেও তারা ছিল। কাজেই ব্যাপারটা নেতৃত্ব নির্ভর।
তুরস্কে ১৯২৪ পর্যন্ত ওসমানী বা অটোমান খিলাফত দূর্বলভাবে টিকে ছিল। যদিও সেই অপরিপূর্ণ খেলাফত ব্যাবস্হাও ছিল পৃথিবীতে তৎকালীন সময়কার পরাশক্তি ও পশ্চিমাদের ভীতির কারণ। বৃটিশদের ষড়যন্ত্রে তা নড়বড়ে হয়ে পরে। বৃটিশদের আর্থিক ও সামরিক সহায়তায় সৌদি আরবরের জন্ম হয়, বিরাট আরব এলাকা তুর্কি খেলাফতের হাতছাড়া হয়ে যায় অবশেষে তুর্কি গাদ্দার সেনাবাহিনী বৃটিশদের সাথে হাত মিলায় এবং মোস্তফা কামাল পাশা ১৯২৪ সালে তুর্কি খেলাফত উচ্ছেদ করে। তখন উপমহাদেশ সহ এশিয়ার অধিকাংশ মুসলিম ভূখন্ড বৃটিশরা দখল করে নেয়। আরব এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণও চলে যায় বৃটিশ ও অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর হাতে। আফ্রিকান মুসলিম দেশগুলো দখল করে নেয় ফ্রান্স, ইতালিসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশ।
#বৃটেনের প্রাইম মিনিষ্টার willam gladstone (১৮৯৪) বলেছিলেন: পাচ্যে আমরা ততদিন পর্যন্ত সফল হবোনা যতদিননা, আমরা মুসলিম নারীদের শরীর থেকে হিজাব খুলতে পারি এবং সেই হিজাব দিয়ে কোরানকে ঢাকতে পারি।
খিলাফত বিলুপ্তে সফল হওয়ায় জর্জ কার্জন, the British secretary of state for foreign affair (1911-1921) তিনি বলেছিলেন, we must put an end to anything which brings about any Islamic unity between the sons of the Muslims. As we have already succeeded in finishing off the Khilafah, so we must ensure that there will never arise again unity for the Muslims, whether it be intellectual or cultural unity
তাই ব্যাপারটা এমনই। পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ যারা হাতে থাকবে, পৃথিবীর সব কিছু তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হবে। আপনি কি জানেন ভাইয়া তুর্কি খেলাফতের সেনাবাহিনী কত শক্তিশালী ছিল? তাদের সেই সময়ে বিমানবাহিনী পর্যন্ত ছিল। মুসলিম ভূখন্ডগুলির নিরাপত্তার জন্য তা গড়ে তোলা হয়েছিল কিন্তু সেই বাহিনীই খিলাফত বিলোপ করে। কাজেই বাস্তবতা সামনে আনা উচিত আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা উচিত না।
হলে চলবে কি করে!
আপনার কাছে একটা হেল্প দরকার! কোনো এক লেখায় কোরআনের ৪০% শব্দের অর্থ জানলে পুরো কোরআন শরীফ পড়া যায় এমন একটা লিংক দিয়েছিলেন। আবার পারলে লিঙ্কটা
একটু শেয়ার করবেন প্লিজ
মন্তব্য করতে লগইন করুন