বাক স্বাধীনতার সীমা নির্ধারণ ও রাসূলের অবমাননা
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫, ১১:৩৭:৩৫ রাত
চার্লি হেবডো ইস্যু নিয়ে দুনিয়া তোলপাড় হয়ে গেল! চার্লি হেবডো বা শার্লি হেব্দো যাই হোক, তাদের ঐ অপকর্ম শুধু রাসূল (সাঃ) এর চরম অবমাননা করেই শেষ হয়নি, এর দ্বারা বিশ্ব মুসলিমকেও তারা আঘাত করেছে চরম ভাবে ! “একজনের পিতা বা মাতাকে গাল দিলে, সে ব্যাক্তি একটা ঘুসি খাওয়ার যোগ্য, এটা খ্রিষ্টানদের পোপও সর্ব সমক্ষে স্বীকার করেছেন” । তাহলে শার্লি হেব্দোর প্রাপ্য কি?
পৃথিবীর মুসলিমদেরকে ক্ষিপ্ত করে তুলা আর মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ানো ছাড়া তাদের এই কার্টুনের অন্য কোন উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যায় নি! অবশ্য রিপ্রিন্ট করে তারা কিছু অর্থও কামিয়ে নিয়েছে সুযোগ বুঝে, এক অখ্যাত পত্রিকার লাইম লাইটে আসার সুযোগ হয়েছে এই ঘটনার মাধ্যমে। চটকদার বিষয় প্রকাশ করে দৃষ্টি আকর্ষণ- যাকে বলে হলুদ সাংবাদিকতা কিম্বা কোন সেলিব্রেটি মহিলা যেমন হঠাৎ বুকের কাপড় ফেলে দিয়ে পত্রিকার ‘হেড লাইন বণে যায়, এমন ধরণের এক স্টান্ট ছিল এটা ! তবে দুনিয়ার অন্যান্য আরও অনেক বিষয়ের মতই, মুসলিমরা তাদের রাসূল (সাঃ) এর চরম অবমাননার ক্ষেত্রেও অনেক দলে বিভক্ত! তার বহিঃপ্রকাশ হয়েছে এভাবে!
১। “আই এম চার্লি” মুসলিমঃ একদল স্ববিরোধী মুসলিম – যারা ফ্রান্সের “আই এম চার্লি” স্লোগানের বন্যায় ভেসে গেছে, নিজেরাও সেই ব্যানার খ্রিস্টান ইহুদী ফ্রেঞ্চদের মাথাকে ছাড়িয়ে আরও উপরে তুলে ধরেছে ! ব্যানারটা একটু নীচে ধরলে যদি ফ্রেঞ্চরা তাদের ‘মিস করে! যদিও ফ্রেঞ্চ তথ্য অনুযায়ী এই পত্রিকা ছিল জায়নবাদি, মুসলিম বিরোধী! বাঁশ এর চাইতে কঞ্চি শক্ত! উদ্দেশ্য, সংখ্যা গরিষ্ট ফ্রেঞ্চদের বুঝানো, আমাদের আবার কিছু বলিস না ভাই, আমরা তোদের মতই! চার্লির শোকে আমাদের বুক ভেঙ্গে যাচ্ছে, রাসুলের অবমাননায় আমাদের যায় আসে না! তোমাদের জন্য বাক স্বাধীনতা থুক্কু আমাদের রাসুল কে অমর্যাদা করার স্বাধীনতা এই দুনিয়ায় মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ! তোমাদের সাথে আমরা হাজারবার একমত, লক্ষ বার একমত! এই নাকে খত দিচ্ছি! যারা ঐ অবমাননার প্রতিশোধ নিয়েছে নবীর দুশমনদের উপরে, শার্লি হেব্দুর কার্টুনিস্ট মহামানবদের গুলি করে মেরেছে – ওরা আমাদের মতনয়, এমন কি মুসলিমও নয় (!), আমরাই আসল জিনিষ! নোংরা দিয়ে কার্টুন নবীর অবমাননা দূরে থাক, আমাদের পাছায় লাথি মেরে দেখ, আমরা তোমাদের পায়ে চুমু খাব! এই দেখ আমাদের আই এম চার্লি ব্যানার তোমাদের ব্যানারের উপরে তুলে ধরেছি! এ থেকে কি বুঝতে পারলে না আমরা তোমাদের অনুসারী। এক সময়ের মহানবীর অনুসারীগন এখন পশ্চিমাদের গর্ব ভরে অনুসরণ করছে, যদিও তা নিজের নাক কেটেও হয়!
২। "আই এম আহমেদঃ এরা মধ্যম পন্থী মুসলিম, তারা কষ্ট পেয়েছে রাসূলের অবমাননায়, কিন্তু “আই এম চার্লি”র দলের সাথে যোগ দিয়ে একজন মুসলিমের পক্ষে ন্যক্কারজনক ভুমিকায় নামা থেকে সযত্নে দূরে থেকেছে। একজন মুসলিম পুলিশও যে এই ঘটনায় মারা গেছে- পশ্চিমা মিডিয়া/ পত্রিকায় প্রায় ধামা চাপা পরে গেছে, ঘটনার ২য় দিনের আগে যা ভালভাবে বুঝতেই পারেনি অনেকে! তারা সেটাকে হাইলাইট করেছে, এবং বলেছে- বাক স্বাধীনতা ভাল জিনিষ, তবে তার সীমা থাকা দরকার। আমরা প্রতিশোধের স্পৃহায় অন্ধ হয়ে পাইকারি খুনে খুশী নই, তবে আমরা আমাদের রাসুলের অবমাননায় অসন্তুষ্ট ।
৩। ছাগলের তৃতীয় বাচ্চা মুসলিমঃ এ জাতের মুসলিম, নিজেদের আত্মমর্যাদা বোধ বহু আগেই বিশেষ পানীয়ের সাথে গুলে খেয়ে ফেলেছে! এরা পিতৃ প্রদত্ত মোহাম্মদ নাম বদলে ‘মো’ হয়েছে, মাকসুদ হয়েছে ম্যাক, জাকারিয়া হয়েছে জ্যাক! এরা মুসলিম নামে পরিচয় দিতে লজ্জা বোধ করে, এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলে মুখ ঘুরিয়ে পালিয়ে যেত! এদের মতে, “আমাদের কিছুতেই কিছু যায় আসে না, রাসুলের অবমাননা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই, তোমরা আমাদের মা বাপ! তোমরা যেটা বল সেটাই ঠিক- ! যদি তোমরা বল বাক স্বাধীনতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, অবশ্যই! সেটাই দরকার সবচেয়ে আগে! যদি বল তোমাদের সাথে যোগ দিতে চাইলে আমাদের হিজাব খুলতে হবে- ওটা পশ্চাদপদতা, আমরা আরও অনেক কিছু খুলে ফেলব, দেখিয়ে দেব আধুনিকতা কাকে বলে!
৪। প্রতিক্রিয়াশীল (ওদের ভাষায়) মুসলিমঃ এই দলের মতে, ঠিক হয়েছে! ব্যাটা কামের কাম করেছে! ফাজলামি করো! রাসূলকে নিয়ে মশকরা ! সারা পৃথিবীর মুসলিমদের উপর জুলুম অত্যাচার করে তৃপ্তি হয় নাই, ১৪০০ বছর আগের এক মৃত মানুষকে নিয়ে মশকরা! উচিত বিচার হয়েছে! এতে যদি এখন অন্যদের শিক্ষা হয় – যে, বাক স্বাধীনতার নামে আমাদের পরম শ্রদ্ধার পাত্রকে অমর্যাদা করে তোমরা পার পাবে না!
কেউ যদি এই নোংরা কাজ আবার করে, তাদের যদি কেউ নাও মারে, অন্ততঃ প্রতিদিন মৃত্যুভয়ে কাঁপতে থাকবে মরার পূর্ব পর্যন্ত - এই বুঝি কেউ তাদের মারল! এটাই তাদের শাস্তি!
আপনি কোন দলে এ প্রশ্ন করছি না, আসুন কয়েক শত বছর পেছনে ফিরে যাই! রাসূলকে অবমাননা করেছিল আরেক ব্যাক্তি! তার প্রেক্ষিতে দুই তরুণের প্রতিক্রিয়া আমরা তুলে ধরব এখানে!
যে দশ জন ব্যাক্তি দুনিয়াতে বেঁচে থাকা অবস্থায় বেহেশতের খোশখবর শুনে গিয়েছেন, তাদের একজন – আব্দুর রহমান ইবনে আউফের জবানীতেঃ
“বদরের যুদ্ধের দিন আমি সৈন্যদের সারিতে ছিলাম। এমতাবস্থায় হঠাৎ ডানে এবং বামে অল্প বয়স্ক দুজন যুবককে দেখতে পেলাম। তাদের উপস্থিতিতে আমি নিজেকে নিরাপদ মনে করতে পারলাম না । এমন অবস্থায় ওদের একজন তার সঙ্গীকে এড়িয়ে আমার কাছে এসে বললোঃ “চাচাজান, আবু জাহল কোন জন, আমাকে দেখিয়ে দিন”!
আমি বললাম, ভাতিজা, তাকে তোমার কি প্রয়োজন?
সে বলল, “আমাকে বলা হয়েছে, সে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে মন্দ বলেছে। সেই সত্ত্বার কসম ! যার হাতে আমার জীবন, যদি আমি তাকে দেখতে পাই, তাহলে যতক্ষণ আমাদের মধ্যে যার মৃত্যু পূর্বে অবধারিত হয়েছে সে মৃত্যুবরণ না করবে, ততক্ষণ আমার অস্তিত্ব তার অস্তিত্ব থেকে পৃথক হবে না!”
তিনি বলেছেন যে, ‘আমি তার এ কথায় একদম অভিভূত হয়ে পড়লাম” । তিনি আরও বলেছেন, ; “দ্বিতীয়জন এসেও ইংগিতে আমাকে ঐ একই কথা বলল। তারপর আমি প্রত্যক্ষ করলাম যে, আবু জাহল তার লোকজনদের মাঝে চক্কর দিয়ে বেড়াচ্ছে । আমি তাদের উদ্দেশ্য বললাম, “আরে দেখছ না, ঐ যে তোমাদের শিকার যার সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞেস করছিলে ।“
তিনি বর্ণনা করেছেন, “এ কথা শুনা মাত্র তারা উভয়ে তরবারী নিয়ে লাফ দিয়ে এগিয়ে চলল এবং সেই কুখ্যাত নরাধমকে হত্যা করে রাসূল ( সাঃ) এর নিকট প্রত্যাবর্তন করল।“
নবী করিম ( সাঃ) বললেন, “তোমাদের উভয়ের মধ্যে কে তাকে হত্যা করেছ?
তারা উভয়েই বলল, আমি হত্যা করেছি!
নবী করিম ( সাঃ) পুনরায় বললেন, “তোমরা কি নিজ নিজ তরবারি মুছে ফেলেছ?
তারা বলল, না।
নবী করিম (সাঃ) উভয়ের তরবারি দেখলেন এবং বললেন, “তোমরা উভয়েই তাকে হত্যা করেছ।‘
এই দুই যুবকের নাম ছিল ১। মু’আয বিন আমর এবং মু’আয বিন আফরা।
ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন, মু’আয বিন আমর বলেছেনঃ আমি মুশরিকদিগকে আবু জাহল সম্বন্ধে বলতে শুনলাম যে, সে ঘন গাছপালার মত বর্শা ও তরবারির ভিড়ের মধ্যে ছিল। তারা একথাও বলছিল যে, আবুল হাকাম ( আবু জাহল এর আসল নাম) পর্যন্ত কেউ পৌঁছুতে পারবে না!
মু’আয বিন আমর আরও বলেছেন, “যখন আমি একথা শুনলাম তখন তাকে আমার লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে নিলাম এবং তার প্রতি মনোযোগ নিবদ্ধ করে রাখলাম। তারপর যখন সুযোগ পেয়ে গেলাম তখনই আক্রমণ করে বসলাম—।“
কিন্তু তার প্রথম প্রশ্নটি প্রণিধান যোগ্য!
“আমি বললাম, ভাতিজা, তাকে তোমার কি প্রয়োজন? সে বলল, “আমাকে বলা হয়েছে, সে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে মন্দ বলেছে।“
এ বিষয়ে আজ আমাদের অবস্থান কোথায়?
বিষয়: বিবিধ
১৩৭৯ বার পঠিত, ৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নাস্তিকগুলার কাছে মহানবীর (সাঃ) এর ব্যঙ্গ করা আঁকা কার্টুনিস্টদের হত্যা করাটা বিশাল অন্যায় হয়ে গেছে।
কি দরকার ছিল তার ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন ছাপানোর?
রাসুলের দোষটা কি ছিল যে তারা রাসুলকে ব্যাঙ্গ করবে?
যদি তারা বিনা কারনেই মহানবীর ব্যঙ্গচিত্র আঁকেন তাহলে তাদের ঐ বিনা কারনেই হত্যা করা মুসলমানদের অপরাধ হয়নি কারন তারাও তাদের স্বাধীনতা দেখিয়েছেন।
আমি জাতীয় কবির এই ছন্দটুকু ফ্রান্সের ঐ মুসলমানদের জন্য রেখে যেতে চাই যারা আই এম শার্লী বলে ব্যানার উচু করে রেখেছিল:
রাসুলের অপমানে যদি না কাঁদে তোর মন,
মুসলিম নয় মুনাফিক তুই,রাসূলের দুশমন।
সংরক্ষিত নামক একটা কথা আছে ।
তাই ধর্মীয় ব্যাপারেও সবাই একটা লিমিট মেনে চলে স্বাধীন হবার পরেও ।
যে লোক রাসূল (সাঃ)কে নিয়ে নোংরা লেখা ছাপছে সে কি তার ও তার মায়ের সামনে তার মায়ের ব্যাপারে কেউ নোংরা বললে তা বরদাস্ত করতে পারবে ?
মন্তব্য করতে লগইন করুন