বিশ্ব ইজতেমা ও তাবলীগ জামাতের অবদান
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০৯ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৫:১২:৫৬ সকাল
[img]
গত ১৪শ বছর ধরে ইসলাম নামক এই প্রগতিশীল ধর্মের শরীরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। আক্কিদাগত পরিবর্তনের কথা হচ্ছে না, উদ্দেশ্যগত বা নিয়তের পরিবর্তনের কথা বলছি।
দাওয়াতের ধারা পরিবর্তিত হয়েছে বা হচ্ছে। দেখছি, কানাডার সবচেয়ে বড় শহরের সবচেয়ে বড় শপিং মলের বাইরে দাঁড়িয়ে এক ভাই অমুসলিমদের হাতে ফ্রি ‘কুরআনের অনূবাদ’ বই তুলে দিচ্ছেন। এমন হতেই পারে, সে ব্যক্তি বাসায় গিয়ে সেই ‘অনূবাদ পড়ল না, কাউকে দিয়ে দিল; বা এমনকি আবর্জনার মত ফেলে দিল! এমন তো হতেও পারে, সে তা পড়ল, তার জানার ইচ্ছে আরও বেড়ে গেল, জানার প্রক্রিয়ায়, এক সময় সে মুসলিম হয়ে গেল! এমন অনেক মুসলিম রিভার্ট ( তারা নিজেদের কনভার্ট বলে না, বলে রিভার্ট! ) রয়েছে এখানে।
উপমহাদেশের চিত্র কি? হাজার হাজার মানুষ নিজের নাম লিখতে পারে না, কুরআন হাদিস পাঠ করা তো অনেক দূরের কথা! তাবলীগ জামাতের কল্যাণে হাজার হাজার নয়, এমন লক্ষ মানুষ কালিমাটা শুদ্ধ ভাবে বলতে শিখেছে , কিছু সূরা কালাম শুদ্ধ ভাবে পড়তে শিখেছে, নামাজ পড়ছে, রোজা করছে। নিজের পরিবারকেও ধর্ম মেনে চলতে তাগাদা দিচ্ছে!
যাদের অবদানে এই পরিবর্তন গুলো হচ্ছে, আমি এই মানুষগুলোর প্রতি সর্বদা আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আমি যা পারছি না, তারা সেটা করছে! এর ফলে যে উপকার, সেটাও চোখের সামনে দেখছি!
হ্যাঁ, এদের কেউ কেউ ভাবতে পারে, তাবলীগ জামাতের সাথে চিল্লা না দিলে সে আবার কেমন মুসলমান! ; কেউ কেউ ভাবতে পারে, হজ্জের পরেই বৃহত্তম এই জমায়েত ‘ ছোট হজ্জের মত! কেউ কেউ ভাবতে পারে, ‘মুজাহিদ সংগঠন গুলোর সাথে না যোগ দিলে আর কেমন মুসলমান? কেউ ভাবছে নামাজ পরে না, মুখে দাড়ি নাই, পাগড়ী পরে না – এ কেমন মুসলমান! এক এক জন নিজের দৃষ্টিকোণ থেকে তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে মন্তব্য করছে! আমরা সহজেই জাজ হতে পারি, এটা আমাদের মজ্জাগত।
আমার প্রশ্ন, এদের কেউ কি বলছে- শেষ বিচারের দিনে, তার জান্নাত এর ফায়সালার ব্যাপারে সে নিশ্চিত হয়ে গেছে?
এ দাবী কেউ করছে কি যে তারা কি পারফেক্ট? আমি কি পারফেক্ট ? আমরা কি পারফেক্ট?
আমরা কেউ জানিনা সেটা! আমি কি করছি সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ অবশ্যই। তবে অন্যদের যদি কেউ পবিত্র অন্তঃকরনে ইসলাম এর প্রচার, প্রসার এর জন্য কাজ করে, এবং নিজেও তার অনুশীলন করে- তাদের সমালোচনা করা জ্ঞানী মানুষদের জন্য উচিত নয়। প্রথম্ তারা যা করছে, তার জন্য তাদেরকে ধন্যবাদ দেয়া দরকার! ভুল সবার মধ্যেই থাকতে পারে। তা ধরিয়ে দেয়ার জন্য সমালোচনার পথ ধরা বা বক্রোক্তি বা আক্রমণ কক্ষনো সুফল বয়ে আনবে না!
কাউকে ভাল কাজ করতে দেখলে আগে তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়া জরুরী! এর পর পদ্ধতিতে কোন ক্রুটি থাকলে, যাদের সেই যোগ্যতা আছে – তারা সেটা নিয়ে আদবের সাথে কথা বলবেন! অবশ্যই আক্রমণ করে নয়! আমাদের মনে রাখতে হবে, মুসলমান ভাই ভাই! আমার ভাই তো আমার শত্রু নয়?
বুঝলাম, আমাদের মধ্যে কিছু মতভেদ বা মতপার্থক্য রয়েছে! যেখানে এক মসজিদে এক ইমামের পেছনে নামাজ পড়তে আমার সমস্যা হয় না, ঐক্যের মাহাত্ম্য ঠিকই বুঝি, তাহলে, আমি একতার জন্য তাদের সাথে অন্ততঃ যে বিষয় গুলোতে পার্থক্য নেই সেই বিষয় গুলোতে - একাত্মতা প্রকাশ করতে অসুবিধা কোথায়?
আমি বা আমরা ঐ জামাতে যোগ দিলে জামাত কি আরও বড় হবে না? সারা পৃথিবী আজ ইসলামের বিরুদ্ধে একাট্টা! এখনও কি আমরা নিজেদের মধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মত পার্থক্য নিয়ে বাহাছ করতে থাকব?
কোথাও পড়েছিলাম – হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণের সময় উলামাদের মধ্যে বাহাছ চলছিল- মশার রক্ত হারাম নাকি হালাল তা নিয়ে! অবশ্য উলামাদের মধ্যে যত মতভেদ থাকুক, হালাকু খান সবার রক্তই হালাল করে ফেলেছে!
প্রতিটি বিষয়ের ‘প্রায়োরিটি’ ঠিক করে নেয়াটা জরুরী। এই মুহূর্তে মুসলিমদের ‘প্রায়োরিটি’ ‘ঐক্য! এর বাইরে অন্য কিছু চিন্তার বিলাসীতা এখন একেবারেই নেই !!
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৮ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রগতিশীল ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করে দেয়ার অনুরোধ রইলো।
একতা এখন জরুরী ।
আমার চিন্তাঃ
মুসলমানদের একতার জন্য চেষ্টা অনুযায়ী কাজ করি,
কিন্তু এমন কোন কাজ না করি যাতে মুসলমানদের একতার ক্ষতি বিন্দু পরিমান হয়।
হায় আমাদের রব আমাদের কে হকের উপর এক করে দিন।
ঐক্য বিষয়ে পেরণামুলক সুন্দর করে গুছানো লেখাটার জন্য আন্তরিক মোবারকবাদ। পারলে ঐক্যর জন্য আরও লিখুন।
জাযাকাল্লাহ খায়ের
নিজের হাতের একটা আঙ্গুল চোখের সামনে ধরলেই দূরের পাহাড়ও আড়াল হয়ে যায়! তাবলীগ জামাত তো কমপক্ষে ১০০ টা দেশের লোককে এক তাঁবুর নিয়ে এসে এক লাইনে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়াতে পারছে! বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের এক নমুনা দাঁড় করিয়ে ফেলেছে! আমি কি ভাবছি, আমার অবদান কতটুকু?
সেভাবে বলতে গেলে ঐ সব উলামাদের বিরুদ্ধে বলতে হয়! তবে, তারাও তো ফেরেশতা নন, আপনার আমার মত মানুষ! তাদের ভুল থাকতে পারে না?
মাদ্রাসায় যারা পড়াশুনা করছেন, আধুনিক বিজ্ঞান সম্বন্ধে তাদের অনেকেরই কোন ধারনা নেই। দর্শন, বিজ্ঞান- গণিত, রসায়ন, জীব বিদ্যা, পদার্থবিদ্যা- ইতিহাস, যার ভিত্তি প্রস্তর অনেকটাই মুসলিম বিজ্ঞানীদের হাত দিয়ে হয়েছে, তাদের নাম ও জানেন না এ সময়ের অনেক উলামা ! এবং ঐ জ্ঞান ছাড়াই তারা ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছেন! ইসলামের একটা অংশ বা পার্টকে ইসলাম বলে আঁকড়ে ধরছেন ! এখানে সেখানে, এদিকে সেদিকে অন্ধের হস্তি দর্শনের মত, খণ্ড ইসলামের চর্চা চলছে! পার্ট টাইম চাকুরীর মত ‘পার্ট টাইম ইসলাম’! একটা পরিপূর্ণ জীবন বিধানকে আমাদের ভাইয়েরা কত সহজ ভাগ করে ফেলেছে ! আমি একটা পার্ট করেই ভাবছি, আর আমি তো অমুকদের চাইতে ভাল, ওরা তো এটা করছে না! অমুক ভাবছে, আমিই ভাল ওদের চাইতে, ‘ওরা তো এটা করছেনা! আমাদের সবার আত্মোপলব্ধি হওয়া দরকার এই মর্মে- আমি কি পারফেক্ট? আল্লাহ্ আমাদের সব্বাইকে সে আত্মোপলব্ধি দান করুন!
জী, ‘ঐক্যের কোন বিকল্প নেই! জামাতে নামাজ পড়লে ২৭ গুণ বেশী সওয়াব, এর অন্তর্নিহিত মেসেজ আমরা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছি !
আমরা জাতি হিসেবে খুব একটা কর্মী জাতি নই, কাউকে গঠনমূলক কিছু করতে দেখলেও, তাকে উৎসাহ দেয়া দূরে থাক, সর্বশক্তি দিয়ে তার বিরুদ্ধে লেগে যাই। মাথায় ঘুরতে থাকে- কিভাবে তাকে ধ্বংস করা যায়।
তাবলীগ জামাতের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ‘বেসিক। তাদের বাধা দেয়ার কথা আসছে কেন? তারা নিজের খেয়ে বনের মোষ তাড়াচ্ছে- হাজার হাজার মানুষকে মসজিদে নিয়ে আসছে। নেহায়েত মূর্খ, অশিক্ষিত মানুষ দ্বীনের উপরে আমল শুরু করেছে। এটা একটা বিরাট কাজ।
ক্রুটি বিচ্যুতি থাকতেই পারে। আক্কিদাগত সমস্যা হলে অবশ্যই সংশোধন করা প্রয়োজন।
আর মানুষের চোখ কান খুলে যাচ্ছে ক্রমেই,– এর পরে তাদের ভুল গুলো নিয়ে মানুষ চিন্তা ভাবনা করবে। অনেকে লেখালেখি করছে। আলোচনা হচ্ছে। যাদের ‘আক্কল রয়েছে তারা ভুল সংশোধন করে নিচ্ছে। হাতে নোংরা লাগলে তা ধুয়ে ফেললেই হল, হাত কেটে ফেলার দরকার নেই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন