প্যারিসে ব্যঙ্গ পত্রিকায় আক্রমণ !! ইটের বিরুদ্ধে পাটকেল?

লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০৮ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৪:২৪:৪৫ রাত



[img]

পশ্চিমা রাজণীতিক ও মিডিয়া একযোগে প্যারিসে ব্যঙ্গ পত্রিকায় আক্রমণকে ইতোমধ্যে ‘অল আউট এটাক’ করেছে। ব্যঙ্গ পত্রিকায় আক্রমণকে যেমন ভাষায় এখন তারা আক্রমণ করেছে, তারা এই পত্রিকার ‘অপকীর্তি’ সমূহকে সেই একই সূরে আক্রমণ করতে পূর্বে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল।

এ ঘটনায় এখনো কেউ ধরা পড়েনি কিম্বা কেউ এ ঘটনার জন্য দায় স্বীকার ও করেনি। তবু এই ‘রাজনীতি ব্যবসায়ীর দল ও পশ্চিমা মিডিয়া একযোগে ইসলামের অনুসারীদের দায়ী করেছে। যদিও এই ব্যাঙ্গাত্মক পত্রিকা শুধু মুসলিম নয়, ইতিপূর্বে তারা ক্যাথলিক, খ্রিষ্টান ও ইহুদীদেরও তাদের ‘অপকীর্তি’ দ্বারা উত্যক্ত করেছে। তারাও কেউ এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে! তারা প্রত্যক্ষ দর্শীর ( আমি কোন নাম দেখিনি !) বরাত দিয়ে – আক্রমণকারীগণ পালিয়ে যাওয়ার পূর্বে ‘আল্লাহূ আকবর’ ধ্বনি দিয়েছে এবং এই ঘটনাকে ‘নবীর অপমানের প্রতিশোধ’ বলে উল্লেখ করেছে! যদিও তা প্রমাণ সাপেক্ষ!

প্রতিটি ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে! এটা শুধু পদার্থবিদ্যা নয়, অন্যত্র ও খাটে। সত্য কথা বলতে কি, আজকের ব্যঙ্গ পত্রিকায় এটা আক্রমণ নয়, সত্যই যদি তা ‘তথাকথিত মুসলিমদের দ্বারা হয়ে থাকে, তাহলে, এটা ছিল প্রতি- আক্রমণ; অবশ্যই আক্রমণ নয়!

যখন এই পত্রিকা ইসলামের নবী মুহাম্মদের বিরুদ্ধে তাদের ‘নোংরা আক্রমণ’ চালিয়েছে, তাদের এই পশ্চিমা দোসরগণ তখন ফ্রান্সের ‘বাক স্বাধীনতা’র দোহাই দিয়ে, চুপ থেকেছে, যেন এর রস উপভোগ করেছে ! মুসলিমগণ আইনের দ্বারস্থ হয়েছে। আইন এর বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে! কেন?

কারণ ফ্রান্সে ব্লাসফেমি আইন ‘ক্যাথলিক, খ্রিষ্টান ও ইহুদী ধর্মের বিরুদ্ধে কার্যকর, ইসলামের কথা এখানে উল্লেখ নাই। কাজেই ফ্রান্সে যে কেউ ইসলামের অবমাননা করে হাসি মুখে কোর্ট থেকে বেরিয়ে যেতে পারে! কেন প্রয়োজনীয় আইন বানানো হল না? বা একটা সংশোধনী এনে ইসলামকে জুড়ে দেয়া হল না? পাচ মিলিয়ন মুসলিম সংখ্যালঘূ কি তাহলে ফ্রান্সে বিচার পাবে না?

হ্যাঁ, এটাই পশ্চিমাদের দূমুখো নীতি! সমস্ত ইউরোপিয়ান ও আমেরিকান দেশ গুলো রাতারাতি ‘এণ্টী টেরর’ আইন বানাতে দেরী করে নাই। কিন্তু মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করলে, তার বিচারের কোন ব্যবস্থা এখাণে থাকে না! এতে কি পরোক্ষ ভাবে মুসলিমদের ‘ আইন নিজে হাতে তূলে নেয়ায় ‘ উস্কানি দেয়া হল না?

যাহোক, রুচি বিকৃত কার্টুনগুলো ছাপানোর জন্য – বা মুসলিম ধর্মামানূভুতিতে আঘাত করার মত জঘন্য কর্মের জন্য এই রস- পত্রিকা ‘চার্লি হেবডো’কে কোন দায় বহন করতে হয়নি! মুসলিমদের প্রতি এই উস্কানীমূলক ‘ক্রিয়ার একটা প্রতিক্রিয়া হতেই পারে, এটা সারা বিশ্বের কারো অজানা নয়! তাদের ‘ক্রিয়া’ হয়েছে ‘কলম’ দিয়ে, আর প্রতিক্রিয়া হয়েছে বন্দুক দিয়ে – এজন্যই কি পশ্চিমাদের ‘অশ্রু ঝরছে ?

অস্ত্র দিয়ে একজন মানুষকে খুন করা যায় একবার, কলম দিয়ে একটা জাতিকে বহু বছর ধরে খোঁচানো যায়! এই অব্যক্ত যন্ত্রণা একটা জাতি কত বছর ধরে সহ্য করতে পারে? কলমের অপ-ব্যবহার বা বাক স্বাধীনতার ধুয়া তুলে শুধু ইসলামের বিরুদ্ধে বা মুসলিমের বিরুদ্ধে তারা ক্ষমা পেয়ে যায়? তারা তো ইহুদীদের বিরুদ্ধে এমন কিছু লিখে বা এঁকে সাহস পায় না? মুসলিমরা বাক স্বাধীনতার ‘ বলির পাঁঠা হচ্ছে দীর্ঘ দিন ধরে! সারা দুনিয়া জুড়ে আজ বঞ্চনা, অবমাননা আর অত্যাচার এর শিকার হচ্ছে মুসলিম! কেউ কেউ তো প্রতিক্রিয়াশীল হতেই পারে? এর দায় কি যারা প্রতি নিয়ত উস্কানী মূলক ‘ক্রিয়া করে চলেছে, তাদের নেই?

তাহলে সেই (অপ) ‘ক্রিয়াকে ঠেকানোর কোন আইনগত রাস্তা নেই কেন? এর কারণ একটাই ! হোমোফোবিয়া- বা রেসিজম এর রোগ এই সকল জাতির মধ্যে পুরো দমে বর্তমান! মুসলিম বা ইসলাম বিরোধী ক্রুসেড এখন ও চলছে– একটু ভিন্ন কায়দায়, একটু ভিন্ন আঙ্গিকে! আইসিস বা আই সি এল কে অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে, তাদেরকে সংগঠিত করেছে কে? আবার তাদেরকে ধ্বংস করার নামে বুশের ইরাক অভিযানের ১১ বছর পর, আবার মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সসস্ত্র হামলা কেন হয়? এর কারণ কি মুসলিমরা অবগত নয়?

বিকৃত রুচির কার্টুন যা ছাপার অযোগ্য, ( গুগল ইমেজ সার্চ করলেই পাওয়া যাবে) এটা নেহায়েত হাস্য রস সৃষ্টির জন্য নয়, বরং মুসলিম বিরোধী বিকৃত মানসিকতা বা ইসলামের প্রতি ঘৃণা এর উৎস। পত্রিকা ‘চার্লি হেবডো’র এডিটর Stéphane Charbonnier একবার বলেছিলেন, "Muhammad isn't sacred to me. I don't blame Muslims for not laughing at our drawings.'.

“মুহাম্মদ আমার কাছে ‘পবিত্র কেউ নয়। আমাদের এই ড্রয়িং দেখে না হাসার জন্য মুসলিমদের আমি দোষ দেই না”!

সাধারন অর্থে, বুঝতে বাকি থাকে না, মুহাম্মদের প্রতি ঘৃণা থেকেই এই সকল কার্টুনের উৎপত্তি! আর এমন ACTION এর REACTION তো হতেই পারে! এখন কেউ কেউ তো সেই এডিটর এর প্রতিধ্বনি করে বলতেও পারে, ‘এমন প্রতি- আক্রমণে পশ্চিমাদের না হাসার জন্য আমরা দোষ দেই না!’

এটা সত্য, পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে কোন নিরাপরাধ মানুষ খুন হলে আমরা তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাই। কিন্তু “ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হয়” ! এটাও মনে রাখা উচিত!

বিষয়: বিবিধ

১১১৬ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

299761
০৮ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ০৬:২৭
কাহাফ লিখেছেন :
আপনার কথায় সুন্দর যুক্তি আছে!
সহমত আপনার উপস্হাপনার সাথে!!
299789
০৮ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১০:৫২
বেআক্কেল লিখেছেন : এক্কেবারে ঠিক কথা কইছন, আমনের কথার কোন জুড়ি নাই।
299799
০৮ জানুয়ারি ২০১৫ সকাল ১১:১৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো
অশ্লিল ফালতু মন্তব্যগুলি মুছে দিলে ভাল হয়।
তবে এই আক্রমন সমর্থনযোগ্য নয়। এর প্রতিবাদ এর অন্য পন্থাও আছে। প্রাপ্ত খবর হচ্ছে এই আক্রমনে একজন মুসলিম পুলিশ অফিসারও নিহত হয়েছেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File