ইজ ল্যাম হালাল?
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০৫ জানুয়ারি, ২০১৫, ০৯:০৫:৫২ সকাল
অফিসের পিকনিক। খাদেম ভাই বেশ ব্যস্ত, সমাজ সেবা নামক রোগের বাতিক আছে জন্য নিজের উদ্যোগে অফিসের ‘জনগণের জন্য কাজ করেন। বেশির ভাগ শ্বেতাঙ্গ কর্মচারী/ কর্মকর্তাদের ভীড়ে দু ‘একজন উপমহাদেশীয়দের মুভমেন্ট সহজেই নজর কাড়ে, বিশেষ করে পাবলিক ইভেন্টস গুলোতে। বেশীর ভাগ বাঙালী হয় ‘কুঁড়ের বাদশা, নয় লাজুক, প্রোএকটিভ নয়! ভালই লাগে এই রকম দুয়েকজন ‘কর্মী মানুষকে দেখলে। যেহেতু তিনি সবার জন্য,- অনেকটা উপমহাদেশীয় প্রতিনিধির মত, হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন, স্বভাবজাত প্রতিক্রিয়ায় অন্যরাও তার জন্য ‘ফিল করে।
বাজার করা হচ্ছে বড় এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে, আজকাল মুসলিম খদ্দেরদের চাহিদার কারনে উত্তর আমেরিকার বড় শহর গুলোতে ‘মূল ধারার স্টোর গুলোতেও বিভিন্ন পদের হালাল মাংস দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
যেহেতু এদেশে এদের সাথে মিলে মিশে চলতে হয়, আমাদের হালাল খাবার দাবারের আলাদা বিধি ব্যবস্থাও আমাদেরই নিশ্চিত করতে হয়। এদেশের ‘সংখ্যাগরিষ্ট শ্বেতাঙ্গ মানুষদের বেশির ভাগই খাবার দাবার বিষয়ে আমাদের সংবেদনশীলতার কথা জানে; ডিটেইল না জানলেও হালাল শব্দটা তাদের অপরিচিত নয়। তারা জানে আমরা শূয়রের মাংস বা ‘পোর্ক খাই না, হালাল মাংসের মধ্যে চিকেন, ল্যাম্ব, মাটন বা বীফ আমরা সাধারণত খেয়ে থাকি, অনেকের জানার দৌড় ঐ পর্যন্তই!
মাংস সেকশনে দায়িত্ব পড়েছে স্যাম (স্যামুয়েল), জন আর ডেভিডের। তারা পোর্ক রিব, ভিল ( veal, অল্প বয়সী বাছুর) আর বীফ এর আইটেম গুলো নিয়ে ব্যস্ত, অফিস বার বি কিউ এর মেইন আইটেম গুলো মাংসের হয়। বার্গার, চপ, স্লাইস, রিব ইত্যাকার রকমারি প্রক্রিয়াজাত মাংস। বাজারের কার্ট গুলো প্রায় উপচে পড়ছে। হঠাৎ করে স্যামের মনে পড়ল – খাদেমদের জন্য হালাল মাংস নিতে হবে। পাশেই ল্যাম্ব বা ভেড়ার মাংসের প্যাকেট দেখা যাচ্ছে। সে ঘাড় ঘুরিয়ে খাদেমকে খুঁজল, খাদেম ভাই ও পাশে ‘ওয়ান টাইম ইউজ’ এর প্লেট, গ্লাস ইত্যাদি ইউটেন্সিলস নিয়ে ব্যাস্ত, লিস্ট অনুযায়ী থরে থরে কার্টের উপর সাজিয়ে নিচ্ছেন।
খাদেমকে দেখে স্যাম গলা উঁচিয়ে হাঁক দিল।
“খ্যাডেম! ইজ ল্যাম্ব হালাল”?
সে জানে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিমরা ল্যাম্ব বা ভেড়ার মাংস বলতে অজ্ঞান। গ্রোসারী সেকশনের ভিড়ে – শব্দ গুলো ‘ইকো হয়ে খাদেম ভাইয়ের কানে পৌঁছুল- ইজল্যাম হালাল?
এদেশে ‘ইসলাম শব্দটি ইংরেজীতে সাধারনভাবে ‘ইজল্যাম’ উচ্চারিত হয়, যেমন খাদেম হয়ে গেছে ‘খ্যাডেম।
ব্যস্ততার মধ্যে খাদেম ভাই বুঝলেন, প্যাকেটের গায়ে ‘স্লটারড ইসলামিক্যালী - ( যা হালালের সমার্থক) অর্থাৎ ওটা হালাল কিনা স্যাম তাই জানতে চাইছে!
তিনি বললেন, ইয়েস, ইসলামিক মিনস হালাল!
খাদেমের কাছ থেকে নিশ্চিত হয়ে কয়েক প্যাকেট ল্যাম্বের মাংস স্যাম ও তার গ্রুপ, তাদের কার্টে উঠিয়ে নিল।
বার বি কিউ চলছে। হাতে সফট ড্রিংকের ক্যান নিয়ে ঘুরছে লোকজন, যারা বিবিকিউ এর দায়িত্বে – তাদেরকে আগে বলে রাখায় ভেজি বার্গার ( ভেজিটেবল বা সয়াবিন সহ অন্যান্য সব্জির পেস্ট মেশানো বার্গার, আমি বলি প্লাস্টিক বার্গার!) এবং হালাল মাংসের জন্য আলাদা বিবিকিউ এর চুলা ব্যবহার করছে। ভারতীয়দের অনেকে নিরামিষ ভোজী, এদিন তারা কেবল ভেজি বার্গার খায়, এর সাথে সালাদ, কেক বা আইসক্রিম ! ভেজি হলেও চলে, তবে ‘পোর্ক রোস্ট করা হয়েছে যে চুলায়, কোন মুসলিম তো সেই জায়গায় হালাল মাংস পুড়িয়ে বা রোস্ট করে খাবে না । কাজেই আলাদা ‘হালাল চুলা!
যাহোক, ল্যাম্বের মাংস – স্যামের নেতৃত্বে হালাল সার্টিফিকেট পেয়ে ‘হালাল চুলায় রোস্ট হতে থাকল। সময় এলে আমাদের খাদেম ভাইও ‘হালাল মার্কিং দেয়া চুলা থেকে মাংস নিয়ে খাওয়া শুরু করলেন। একবার প্লেট খালি করে আবার নিতে এগিয়ে গেলেন। তেল উপচে পড়ছে, খেতে মজা লাগছে! পাশের আরেক চুলায় ‘প্রকৃত হালাল চিকেন রোস্ট হচ্ছে। এবার ল্যাম্বের মাংস নিয়ে, খাদেম ভাই দুটো চিকেনের পুড়ানো ঠ্যাং নিতে ‘চিকেনের চুলার দিকে এগিয়ে গেলেন। চিকেনের পুড়ানো নরম মাংস খুব সুস্বাদু! লোভনীয় গন্ধে ম ম করছে এই এলাকা! জিভে জল ( থুক্কু পানি) এসে যাচ্ছে!
হিজাব পড়া এক মুসলিম সহকর্মী – পাকিস্তানী সাবেরা, তার সামনে। চিকেন নিতে ব্যস্ত।
সে ভ্রু উঁচিয়ে খাদেমের দিকে একবার তাকিয়ে তার প্লেটের দিকে তাকালো। সাবেরা খাদেম ভাইকে ‘চর্চাকারী মুসলিম’ ( Practicing Muslim) হিসেবেই জানে। এদেশে অনেকেই non Practicing Muslim বা নামে মাত্র মুসলিম, হালাল হারামের প্রশ্নে আধাআধি- অর্থাৎ শূয়র খায় না, মদ খায়। ব্যাক্তি স্বাধীনতার কারনে কাউকে বলা যায় না, বলা উচিৎ ও নয়, অন্তঃত এই পাবলিক প্লেসে!
আবার সে খাদেমের মুখের দিকে তাকাল। খাদেম ভাই সে দৃষ্টিতে প্রশ্ন দেখতে পেল!
খাদেম, ডু ইউ নো – দ্যাট ল্যাম্ব ইজ নট হালাল?
হাউ? আর ইয়ু সিউর?
ইয়া, আই হ্যাভ সিন দ্যা প্যাকেট!
রিয়েলী! খাদেম ভাইয়ের আক্কেল গুরুম হয়ে গেল! দ্রুত এগিয়ে গিয়ে চুলার লোকজনকে জিজ্ঞেস করল, এটা কি হালাল মাংস নয়। উত্তর এলো, ‘ইট সুড বি হালাল। জিজ্ঞেস করে দেখ স্যামকে।
স্যামকে পাওয়া গেল। হাই স্যাম! তুমি হালাল ল্যাম্ব কিনেছ তাই না? ইয়েস! মজবুত জবাব স্যামের! আই কনফার্মড উইথ ইউ! রিমেমবার?
এইবার খেয়াল হল খাদেম ভাইয়ের, সে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘ইজ ল্যাম্ব হালাল?
‘উচ্চারনের ফাঁকে ‘ব উবে গিয়ে ইসলাম হালাল? শুনেছিলেন খাদেম ভাই!
এবার সাবেরা বুঝল ঘটনা!
যো হুয়া সো হুয়া খাদেম ভাই। ঘাবড়াইয়ে মাত! উত্তেজনায় মাতৃভাষা উর্দু বেরিয়ে এলো সাবেরার মুখ থেকে! এই চিকেন নিয়ে নাও। এটা ‘কনফার্মড হালাল ! ঐ যে দেখ আমি প্যাকেট উল্টে রেখেছি!
আর নিশ্চিত হয়ে কি হবে! মনের মধ্যে বিবমিষা নিয়ে আস্তে করে সরে এলেন খাদেম ভাই।
হরিষে বিষাদ !
বিষয়: বিবিধ
১২২৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ এরা এশিয়াকেও উচ্চারন করে এইশা বলে । রাশিয়াকে বলে রাশা।
ভেড়া হালাল হলেও - এগুলোরও জবাই কিন্তু আল্লাহর নামে হতে হবে ।
ভাল্লাক্সে।ধন্যবাদ ভাইয়া।
মন্তব্য করতে লগইন করুন