জ্ঞানীদের কথা -২ নাস্তিকের জবাব
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৪, ০৬:১৫:১২ সকাল
বাগদাদ এক সময় ছিল সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র। মুসলিম শাসন ব্যবস্থা ও শিক্ষা ব্যবস্থা- দুটোই উন্নতির শিখরে ! নাস্তিকের উপস্থিতিও ছিল সেখানে, ইসলাম মুক্ত চিন্তার বহিঃপ্রকাশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এমনি এক নাস্তিকের গল্প শুনা যাক আজকে!
আজকাল বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে যেমন দেখা যাচ্ছে, বাগদাদে সেই রকম এক নাস্তিক বাগদাদের রাস্তা গরম করে ফেলল। তার ঘোষণা, সে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করে না । তার মতে সৃষ্টিকর্তা বলে কোন কিছু নেই। যাকে দেখা যায় না, যার কথা শুনা যায় না, যাকে ধরা যায় না- ছোঁয়া যায় না, তার অস্তিত্ব নেই! সাফ কথা!
“যদি তোমাদের মধ্যে এমন কেউ রাজী থাকে আমার সাথে এই বিষয়ে বিতর্ক করতে, নিয়ে এসো তাকে, তখন বুঝব তোমাদের কেমন জ্ঞান! সে চ্যালেঞ্জ করল!
এমন মানুষ পাওয়া খুব কঠিন মনে হল, এই লোক নামকরা বাগ্মী, বিভিন্ন বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান রাখে, তার বিরুদ্ধে বিতর্কে দাঁড়াবে এমন সাহস বাগদাদে খুব বেশী লোকের নেই।
এক তরুণ রাজী হল; দাঁড়ী গোঁফের রেখা দেখা যায় কি যায় না, ঐ লোকের তুলনায় নেহায়েত নাবালক । একজন লোক পাঠানো হল তাঁকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানে হাজির হওয়ার এত্তেলা দিয়ে! তাইগ্রিস পেরিয়ে যেতে হবে তাকে!
নির্দিষ্ট দিনে সে নাস্তিক হাজির হয়ে গেল সময় মত! তার প্রতিদ্বন্দ্বীর দেখা নেই! প্রথমে উৎকণ্ঠা এরপর ক্রমে হতাশা দেখা দিল মুসলিম শিবিরে! এই নামকরা নাস্তিকের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ঐ বাচ্চা ছেলে কি ভয় পাচ্ছে! তাকে দোষ দেয়া যায় না! সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, ঐ ছেলের দেখা নেই! সবাই ভাবতে শুরু করল, আজ বোধ হয় মুসলিম শিবিরের বে-ইজ্জতি কেউ ঠেকাতে পারবে না! নাস্তিক তাদের কাটা ঘায়ে লবণ ছিটিয়ে দিল; “ সে ভয় পেয়েছে, সে জানে তার কোন যুক্তি দিয়েই সে প্রমাণ করতে পারবে না সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব আছে, কাজেই সে আর আজ আসছে না’ হাসতে হাসতে বলল সে। ‘ আমি গ্যরান্টি দিয়ে বলছি, আজ আর তার দেখা তোমার পাবে না’।
সবাই যখন হতাশ হয়ে উঠে যাবে ভাবছে, এমন সময় তাঁকে আসতে দেখা গেল। উত্তেজিত জনতা এমন আচরণের ব্যাখ্যা দাবী করল। নাস্তিক সহ সবার কাছেই তিনি ক্ষমা চাইলেন এবং ব্যখ্যা করতে চাইলেন- যে কেন তার দেরী হল।
‘ যখন নদী পার হওয়ার জন্য আমি ঐ তীরে এসে পৌঁছুলাম, ধারে কাছে কোন নৌকা ছিল না, একটাও ! কোন মাঝি মাল্লাও নেই যাকে আমি অনুরোধ করতে পারি আমাকে পার করে দেয়ার জন্য! আমি তো হতাশ হয়ে গেলাম, হঠাৎ দেখি মাঝনদীতে অনেক গুলো ফাঁড়াই করা বড় কাঠ ভেসে উঠল! এবং এগুলো পরস্পর গায়ে লেগে একটা নৌকার আকৃতি নিতে থাকল! আমি তো অবাক! এরপর যা ঘটল আমি তাতে হতবাক হয়ে গেলাম। নদীর তলা থেকে লোহা উঠতে থাকল এবং কোন রকম হাতুড়ির ধাক্কা ছাড়াই ঐ কাঠের টুকরা গুলোর মধ্যে প্রথিত হতে থাকল! আমি বুঝতে পারছি না এটা কিভাবে সম্ভব!
নাস্তিকের বাঁকানো ঠোঁটে অবিশ্বাসের হাসি দেখা গেল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী থামল না- বলে চলল!
এরপর যা ঘটল তাতে আমি অবাক হতেও ভুলে গেলাম। নদীর ভেতর থেকে এক ধরণের আঠাল পদার্থ উঠতে থাকল এবং কাঠের জোড়া গুলোর মধ্যে যে ফাঁকা জায়গা ছিল তা ভরাট করে ফেলল! আমি ভাবছি, এ আমি কি দেখছি!
এ সময়ে হঠাৎ করে আকাশ থেকে একটা পাল পড়ল এবং নৌকার মাঝখানে লেগে গেল! আমি তো স্তম্ভিত! আমাকে আরও স্তম্ভিত করে দিয়ে নৌকাটা আমার দিকে ভেসে এল! কি আর করা, ভয়ে ভয়ে আমি নৌকায় উঠে বসলাম । কোন মাঝি ছাড়াই নৌকাটা আমাকে এপারে নিয়ে এল। আমি যখন নিচে নেমেছি, বললে হয়তো বিশ্বাস করবেন না, সেই নৌকাটি সাথে সাথে অদৃশ্য হয়ে গেল!
‘এমন ধরণের গাঁজাখুরি গল্প আমাকে তুমি বিশ্বাস করতে বল? ক্ষিপ্ত হয়ে নাস্তিক বলল। একটা ছোট বাচ্চাও কি বিশ্বাস করবে যে মাঝ নদীতে কাঠ এমনি এমনি জোড়া লেগে যায়, লোহা প্রথিত হয়ে যায়, আর আঠালো পদার্থ দিয়ে কাঠের জোড়া গুলোর ফাক বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি আকাশ থেকে পাল পড়ে যায় নৌকার মাঝখানে আবার তা তোমাকে কোন মাঝি ছাড়াই পার ও করে দিয়েছে!
বিশ্বাস করা না করা আপনার ইচ্ছা, আমার দেরি হওয়ার কারন কি সেই ব্যখ্যাই কিন্তু আমি আপনাকে দেয়ার চেষ্টা করেছি!
এবার নাস্তিক অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল, ‘তোমার মস্তিষ্কের সুস্থতা নিয়েই তো আমার সন্দেহ হচ্ছে হে ছোকরা’ !
তাহলে এ গল্পের কোন অংশই আপনার বিশ্বাস হয় নাই? একটা মাত্র নৌকা এমনি এমনি সৃষ্টি হতে পারেনা! বা মাঝি ছাড়া তা চলতেও পারে না!
অবশ্যই! এর একটা শব্দ ও আমি বিশ্বাস করি না!
এগুলো যদি আপনার বিশ্বাস না হয়, তবে আপনি কিভাবে বিশ্বাস করলেন যে, এই পৃথিবী, এই চাঁদ, সূর্য, গ্রহ নক্ষত্র এগুলো কোন সৃষ্টিকর্তা ছাড়াই - এমনি এমনি সৃষ্টি হয়েছে আর তা পরিভ্রমণ করছে নিজ নিজ কক্ষ পথে!
নাস্তিকের বিতর্কের আকাঙ্খা ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে এবং তার আর টিকিটিও দেখা গেল না!
সেই তরুন বিতর্ককারীর নাম ছিল নুমান ইবনে সাবিত ! তাঁকে আমরা অনেকেই জানি, আল ইমাম আল আজম, আবু হানিফা হিসেবে!
৮০-১৪৮ হিজরি মোতাবেক ৬৯৯- ৭৬৭ খ্রিষ্টাব্দ ছিল তার জীবন কাল! সম্ভবত আফগান – ফারসি বংশদ্ভুত এই জ্ঞান তাপসের অনেক কাহিনীই ছড়িয়ে আছে ইসলামের ইতিহাসে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৯ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
A PHP Error was encountered
Severity: Notice
Message: Undefined offset: 10348
Filename: views/blogdetailpage.php
Line Number: 917
"> মুক্তিযুদ্ধের কন্যা লিখেছেন : সুন্দর ও শিক্ষনীয় বটেই!!এই যুক্তিটি এইবার আপনার আল্যার ক্ষেত্রে প্রযোগ করেন। নাকি আপনার উনি এমনি এমনি পয়দা হয়ে গেল??? উত্তর দিন।
গণিতশাস্ত্রে বা পদার্থবিদ্যায় Infinity বলে একটা বিষয় আছে। বিষয়টার মর্মাথ হচ্ছে সীমাহীন বা অগণনীয়। যখন কোন বিষয়ে শেষ বা স্হির মান নির্ণয় করা যায়না তখন সেটাকে Infinity ধরে নিয়ে অন্যন্য সমাধানে পৌঁছতে হয়। এজন্য গণিতশাস্ত্রে বা পদার্থবিদ্যায় কোন কোন ক্ষেত্রে Infinity বলে ছেড়ে দিতে হয়। তেমনি এই বিশ্বচরাচরের সৃষ্টিকর্তা মহান রবের বিষয়ও আমরা মানবজ্ঞানের নিকট তাই। মহান রবকে Infinity ধরে নিয়ে আমরা অন্যন্য সমাধানে পৌঁছতে পারি। আমরা মহান রবের উপস্হিতি বিশ্বচরাচরের প্রতিটি পরতে পরতে অনুভব করতে পারি।
যৌক্তিক আলোচনায় গালমন্দ, ঠাট্টা কিংবা বিদ্ধেষিতা দৈন্যতার পরিচায়ক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন