সেক্যুলারিজম
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ০১ নভেম্বর, ২০১৪, ১০:৫২:১৮ রাত
সেক্যুলার অর্থ সাময়িক (চিরকালের বিপরীতে) , ধর্মের সাথে সংশ্লিষ্ট বা সম্পর্কিত নয়, চার্চএর নিয়ন্ত্রনাধীন নয়, দুনিয়াভি বিষয় সংশ্লিষ্ট, আধ্যাত্মিক আওতার বাইরে, কোন ধর্মীয় সংশ্রব নেই বা কোন ধর্মীয় আইনে সীমাবদ্ধ নয়।
আজকাল নয়া ‘ঢং বাজারে এসেছে। কেউ কেউ জোরে সরে ঢোল পিটিয়ে বলছেন তারা কোন ধর্মের অনুসারী নয়, তারা সেক্যুলার। এটা তাদের আধুনিক ধর্ম! যদি কোন ধর্ম মানতেই হয় তবে তা প্রাকৃতিক ধর্ম ( NATURE) বা মানবতার ধর্ম ! তাদের বক্তব্যের তোড়ে, তাদের যুক্তির হাই ভোল্টেজে আমার মত দুর্বল চিত্তের অনেকেই ভেসে যান। মনে হয় প্রাকৃতিক ধর্ম (NATURE) বা মানবতার ধর্মই তো ভাল ! আর যদি তা অত্যাধূনিক হয় তবেতো সনায় সোহাগা ! এই হাল ফ্যাশনের ধর্ম খুব চকচকে ঝকঝকে, টিপটপ মনে হচ্ছে! হালের মেধাবী, অগ্রসরমান ব্যাক্তি সকল এর অনুসারী! তারা প্রচলিত ধর্মের বিরুদ্ধে অনেক যুক্তি দেখান, যুদ্ধ- অশান্তি- সব ধর্মের কারনে হয়, তাঁরা বলছেন। আমাদের যুক্তি- এগুলো মানুষের লোভের কারনে হয়, ধর্মের কারনে নয়। ঐ সব সেকুলার মানুষ আর আর ধর্মের নাম ব্যবহার কারী মানুষের লোভের মধ্যে কোন তফাত নেই। ধর্ম অশান্তি সৃষ্টি করাকে সর্ব বৃহৎ পাপ বলে মনে করে। আর এর তুলনায় প্রাকৃতিক ধর্ম কি খুব ভাল জিনিষ? একটু তলিয়ে দেখা যাক!
প্রাকৃতিক ধর্ম হল প্রকৃতি তার নিজের পরিবেশ বা অবস্থায় যেমন থাকে – বাইরের হস্তক্ষেপ অর্থাৎ মানুষের হস্তক্ষেপ ব্যাতীত যে রূপটি পৃথিবীতে বিরাজমান- সেটাই হল প্রাকৃতিক ধর্ম। ধরা যাক, একপাল গরু চড়ছে মাঠে। প্রাকৃতিক ধর্ম হিসেবে শক্তিশালী গরু, পাতলা গরুকে গুঁতো দিয়ে নিজের রাস্তা করে নেবে, তার ঘাস টুকুও সে খাবে, এটাই স্বাভাবিক। মানব জাতি কি এর চেয়ে বেশী মহৎ? এখনকার দেশের রাজনীতিক- নেতা – পাতি নেতা বা তাদের চামচাদের কথা ভাবুন! যাদের কোন প্রতিরক্ষা নেই- তারা নির্যাতিত হচ্ছে কি হচ্ছে না আমাদের সমাজ ব্যবস্থায়। অ্যামেরিকা বা ইজরায়েল কে দেখুন। মারনাস্ত্র আর সামরিক শক্তির সাবল্যের কারনে এরা যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছে না? এই হচ্ছে প্রাকৃতিক ধর্ম । মাইট ইজ রাইট।
কিন্তু আল্লাহ্র ধর্ম এর উল্টো । শক্তিশালী যেন দুর্বলের উপর অত্যচার না করে তার জন্য জবরদস্তি বা জুলুমকে ‘নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আল্লাহ্ জানেন এমন ঘটনা ঘটবে, জীব এর প্রকৃতিই (nature ) এমন যে তাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করবে, যার সুযোগ আছে, তাদের অনেকেই সুযোগ নেবে। আর এজন্য তিনি বিধান নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। কেয়ামতের দিন দুর্বল গরুকে ক্ষমতা দেয়া হবে- শক্তিশালী গরুকে গুঁতো দেয়ার, দুনিয়াতে তার উপর করা জুলুমের প্রতিশোধ নেবে দুর্বল গরু। দুনিয়াতে জুলুম করার শাস্তি বা জরিমানা মানুষকেও দিতে হবে। কোন কোন শক্তিশালী মানুষ প্রচুর ‘পুন্য নিয়ে কেয়ামতের দিন হাজির হবে- দান, ধ্যান হজ্জ, যাকাত এর পুণ্য ! কিন্তু দিন শেষে যাদের উপর সে জুলুম করেছে তাদের পাওনা পরিশোধ করতে গিয়ে তার পূন্য এক সময় শূন্য হয়ে যাবে, এরপর মজলুমের পাপ গুলোকেও এই শক্তিশালী পুণ্যবানের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া হবে! শেষে জাহান্নাম ছাড়া তার যাওয়ার কোন জায়গা থাকবে না। রাসূল ( সাঃ) এ ধরণের মানুষকে বলেছেন- প্রকৃত দুঃস্থ, সম্বলহীন মানুষ।
তাহলে কি দেখা গেল? প্রাকৃতিক ধর্ম এমন কোন ভাল সিস্টেম নয়, এটা সত্যি সত্যি দুষ্টের দমন করবে না । সেক্যুলার মানুষ এ ধর্মেরই সারবত্তা প্রমানের চেষ্টা করে!
আজকের দুনিয়ায় সেক্যুলারইজম এর অনুসারীগন খুব শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন – মিডিয়া বা প্রচারযন্ত্র তাঁদের পক্ষে। তারা আর একটা ‘ধর্ম সৃষ্টি করেছেন বা তা মেনে চলছেন এতে সমস্যা ছিলে না। সমস্যা হল, তারা অন্যান্য প্রচলিত ধর্মের বিরুদ্ধে খড়গ হস্ত হয়ে উঠেছে। অন্য ধর্ম বিশেষ করে ইসলামের বিরুদ্ধে এদের বিষোদগার মাত্রা ছড়িয়ে গেছে। মুসলিমদেরকে এরা রক্ত পিপাসু জাতি বানিয়ে ছেড়েছে । অথচ গত ৫০ বছরের ইতিহাসে পৃথিবীতে সবচেয়ে নির্যাতিত জাতি হচ্ছে মুসলিম। মিডিয়া আর প্রচারের কারনে শক্তিশালীরা যা বলছে তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলার থাকলেও বলা যাচ্ছে না। কেউ বললেও তাদেরকে আগ্রাসী আক্রমনের শিকার হতে হচ্ছে, জেল জুলুম ফাঁসি সব কিছুই এই ‘মজলুমদের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হচ্ছে। তথাকথিত সেক্যুলারদের আজ জয় জয়কার!
তবে এই দুনিয়ায় চিরস্থায়ী জয় বলে কোন কথা নেই। কত মহাশক্তিশালী জাতি কালের পরিক্রমায় ধবংস হয়ে গেছে, তাদের আজ কোন অস্তিত্বও নেই। কেয়ামত তো অনেক দূরের কথা। এই তথাকথিত সেক্যুলারদের সময় ও এক সময় শেষ হয়ে যাবে । সময়ের ব্যাপার! তবে এই দুনিয়াতেও সেক্যুলারদের জিল্লতী কম হয় না!
একটা তথাকথিত সেক্যুলারের গল্প দিয়ে শেষ করি।
একটা মৃতদেহ পাওয়া গেল। শহরের বেওয়ারিশ লাশের সৎকার এর পদ্ধতিতে রাজউক ব্যবস্থা নিল। এক ডোমকে দায়িত্ব দেয়া হল । অজ্ঞাত মানুষের লাশের সৎকার এদের সাহায্যেই হয়ে থাকে। প্রথমেই মুসলমান গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হল কারণ এদেশে প্রতি দশটা মৃত্যুতে ৯জন মুসলিম হবে – এই হিসেবে। কিন্তু হুজুরগণ একটা বাহ্যিক ‘অটপসি করে ফেললেন। দাঁড়ী নেই গোঁফ নেই, ক্লিন শেভড, কপালে বা পায়ের টাকনূতে নামাজের চিহ্ন দৃশ্যমান নয়। ‘এ লাশ কোন মুসলিমের নয়’, হুজুর ঘোষণা দিলেন।
ডোম বেচারার বিপদ। সে খৃষ্টান কবরস্থানে রওনা হয়ে গেল।
পাদ্রী মহোদয়ও নানা ভাবে বুঝতে চেষ্টা করলেন এর সাথে তার গির্জার কোন সংশ্রব আছে কিনা। অবশ্য সংখ্যা লঘু হিসেবে অনেককে মুখ দেখেই তিনি চেনেন। না - এটা তেমন নয়। গলায় ক্রুশ নেই। আর কোন চিহ্ন বা ট্যাটু’ আছে কিনা বুঝতে চেষ্টা করলেন। বুঝা গেল না। তিনি ঘোষণা করলেনঃ না, এ লাশ আমাদের যীশু ভক্ত কমিউনিটির কারো নয়।
এবার ডোম রওনা দিল শ্মশানের দিকে। শ্মশান এর তত্বাবধায়ক একই ভাবে চিনতে চেষ্টা করলেন, চোখ মুখ নাক- গলা,হাত- নাহ, তিনি ও নিশ্চিত হতে পারলেন না। না আছে পৈতা বা রুদ্রাক্ষের মালা, কাপড় চোপড় ও ধুতি নয়, আধুনিক- সেক্যুলারের ! শেষমেশ সিদ্ধান্ত দিলেন, এই লাশকে হিন্দু বলে মনে হচ্ছে না, কাজেই হিন্দু শ্মশানে এই লাশ পুড়ানো যাবে না।
ডোম বেচারা পড়ল বিপদে। সে তার রাজউকের ‘কেরানী বস’কে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে সবকিছু অবহিত করল এবং কি করা যায় তার পরামর্শ চাইল।
কেরানী এ ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত দেবে, সে যা বেতন পায় তাতে এত মাথা ঘামানো পোষায় না। সারা দিনের নিয়মিত কাজ নিয়েই উপরওয়ালার ঝাড়িঝুড়ি খেয়ে হয়রান ! এমনিতেই জীবন চলে না, তার উপর গোঁদের উপর এই বিষ ফোঁড়া ! কেরানি ভাবল, ‘অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এই লাশ কোন সেক্যুলার লাশ’ !
কেরানী শেষ মেষ বলল, বাওয়া, তোরা শহরের আর সকল নোংরা মানে যেগুলো এই ‘সেক্যুলার নোংরা আর কি - সে গুলো কোথায় ঢালিস ?
পুরাতন দিনের এক মহিষের গাড়িতে করে আর এখন ট্যাংক ভর্তি ‘ দুর্গন্ধী মাল পেছনে টেনে নেয়া ইঞ্জিনের কথা মনে পড়ল ডোমের । বলল, শহরের আর সব মাল তো ভাগারেই ফেলি- ঐ মালে তো আর সিল ছাপ্পর থাকে না! কেউ আপত্তি ও করে না।
তাহলে তো উপায় পেয়েই গেলি বাবা, ঐ সেক্যুলার লাশকেও ঐ ভাগাড়েই ফেলে আয় বাবা, তুইও বাঁচ – আমিও বাঁচি।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
Excellent উদাহরণ
http://worldcelebinfo.blogspot.com/2014/11/blog-post.html" target="_blank" target="_blank" rel="nofollow"> http://worldcelebinfo.blogspot.com/2014/11/blog-post.html
মন্তব্য করতে লগইন করুন