দালাল ভোগ্যা বসুন্ধরা ! !
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১৭ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:১৮:৩২ রাত
সারা পৃথিবীতে আজ দালালদের জয়জয়কার।
সোনার বাংলাদেশ এর মত দরিদ্র দেশেতো বটেই, অন্যান্য উন্নত দেশ গুলোতেও একই অবস্থা। অ্যামেরিকা কানাডার অবস্থাও তাই। বিশ্ববিদ্যালয়এর পাঠ শেষে – আরও উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েও একজনের বার্ষিক আয়, একজন বাড়ি বেচা কেনার দালাল বা ব্রোকার এর চেয়ে খুব বেশী নয়। অনেক ক্ষেত্রে এই দালাল – যে কিনা কলেজের পাঠ ও চুকায়নি- (এক ঠ্যাং এখনও ভেতরে ! কোর্স শেষ করতে পারেনি!) সে হয়তো আরও বেশি ইনকাম করছে। বাড়ীর দাম অনুযায়ী, তার একটা ‘কমিশন থেকে দালালের অংশ হিসেব করা হয়! বাড়ীর যত দাম হবে- কমিশন ও সেভাবে বেড়ে যা্বে! দালালের কমিশন!
আপনি বাংলাদেশের গার্মেন্টস কিনে আমেরিকায় পাঠাতে চান! দালাল রয়েছে! বায়িং হাউস, কাস্টমস ক্লিয়ারিং এজেন্টস- সব মূলতঃ দালাল! যে কোন ব্যবসা কেনা বা বেচা! মধ্যস্বত্ব ভোগী রয়েছে! দালাল। ব্যাংক থেকে ঋণ নেবেন? আপনি সরাসরি ব্যাংকে গেলে ব্যাংক যে রেট দেবে, দালাল নাকি তার চেয়ে কম রেটে একই ব্যাংক থেকে আপনাকে ঋণ পাইয়ে দেবে! দালালে দালালে ধূল পরিমাণ! উন্নত দেশে এমন কি আমেরিকায় কানাডায় প্রফেশনাল তদবিরকারি বা লবিস্ট’ আছে ! বাংলাদেশও যেন কত মিলিয়ন ডলার দিয়েছে অ্যামেরিকান সরকার এর কানে নিজেদের বার্তা পৌছাতে- এই লবিস্ট’ দেরকে ! এরা আর কিছুই নয়- দালাল। জগতটাই যেন এখন দালালদের হাতে! আপনি নিজের বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে সরকারী অফিস – বা রাজনীতিক বা ব্যাংক- কোন জায়গায় কার কাছে যেতে হবে, কাকে ধরতে হবে জানেন না। এরা সেই কর্মটি করে দেবে, কমিশন খাবে! বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতির পাতি নেতারা এই শ্রেণীর দালালের অন্তর্ভুক্ত! অনেক দেশে আইন করে এ ‘পেশাকে বৈধ করা হয়েছে, যেমন লবিস্ট’ আইন সম্মত! বর্তমান জামানায় – মধ্যসত্ব ভোগী দালালরা এতটাই শক্তিশালী যে তারা তাদের সংগঠনও করে ফেলেছে। ক্ষেত্র বিশেষে সাধারন মানুষ তাদের হাতে জিম্মি!
এরা না থাকলে কি হত! এদের অস্তিত্ব না থাকলে সমাজের কোন ক্ষতি তো হবেই না, বরং ক্রেতা ও বিক্রেতাকে- কমিশনের অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হত না, লাভের অংশ নিজেরাই ভাগাভাগি করত!
ইসলামে এই মধ্যস্বত্বভোগীর অবস্থা কি! বিশেষ করে কেণা বেচার ক্ষেত্রে?
একটা হাদিসঃ
আনাস বিন মালিক বর্ণনা করেনঃ “রাসূল(সঃ) নিষেধ করেছেন, যেন কোন শহুরে মানুষ (আল হাদির) কোন গ্রামের মানুষ ( আল বদি)’ র দ্রব্য বিক্রয় করে দেয়ার ব্যপারে মধ্যস্থতা (কমিশন নিয়ে দালালী) না করে, এমনকি যদি সে তার নিজের ভাই ও হয়!
‘আল হাদির অর্থ শহরে বাস করা মানুষ (শহুরে স্মার্ট মানুষ ) আর ‘আল বদি’ অর্থ গ্রামে বা মরুতে বাস করা ( সহজ সরল বোকা মানুষ) - বেদুঈন বা গ্রামবাসী!
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, কোন শহুরে মানুষ যেন গ্রামের মানুষের পক্ষে ( ক্রয় বিক্রয়ের ক্ষেত্রে) মধ্যস্থতা (দালালী) না করে”। শহুরে লোকের জন্য এই দালালী করা উচিত হবে না এইজন্য যে ভাল কমিশন পাওয়ার উদ্দেশ্যে সে অবশ্যই ঐ দ্রব্য বেশী দামে বিক্রয় করতে চাইবে, যার কারনে দ্রব্য মূল্য অপ্রয়োজনীয় ভাবে ঊর্ধ্বগতি হবে । অপরদিকে শহুরে মানুষের জন্য, গ্রামের মানুষ যারা শহুরে পরিস্থিতির সাথে খুব একটা পরিচিত নয়, তাদেরকে exploit করার সুযোগ থাকবে।
কাজেই শহুরে মানুষ গ্রামের মানুষকে তার জিনিষ শহুরে মানুষের জিম্মায় রেখে যেতে এই মর্মে উৎসাহিত করবে না যে, সে তা বিক্রি করে পরে তার দাম গ্রাম বাসীকে পৌঁছাবে । যদি এই প্রক্রিয়া চলতে দেয়া হয়- তবে মধ্যসত্বভোগীরা তাদের নিজেদের স্বার্থের কারনেই বাইরের সামগ্রী সরাসরি বাজারে আসতে দিতে চাইবে না। এবং গ্রামের লোকদের দ্রব্যমূল্যের ‘অজ্ঞতার সুযোগে শহরবাসী মুনাফা লুটবে। রাসূলের এই হাদীস সুযোগ সন্ধানী মানুষের ‘সুযোগ নেয়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এর ফলে গ্রামের মানুষ ( উৎপাদন কারী নিজে) নিজের জিনিষ নিজের হাতে বিক্রী করতে পারবে, লাভের অংশ কারো সাথে শেয়ার করতে হবে না, নিজেই পুরোটা ভোগ করবে এবং দ্রব্য মূল্য অযাচিতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকল না। ইসলামের মহত্ত্ব এই খানে!
বিষয়: বিবিধ
১১১৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এই দালালির কারনেই উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে একটি বিশাল মুল্য পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। উৎপাদক তার উচিত মুল্য পায়না আর ভোক্তা বেশি দাম দিয়ে জিনিস কিনে। দুই এর মাঝে একটি বিশাল অংকের অর্থ নিয়ে যাচ্ছে দালাল শ্রেনি।
মন্তব্য করতে লগইন করুন