পেটা'র ফতোয়াঃ কুরবানী বন্ধ করুন!
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১৫ অক্টোবর, ২০১৪, ১১:৪৯:২৩ রাত
পেটা- অর্থ পেটানো নয়! PETA - people for the ethical treatment of Animals।
বড় বড় সেলিব্রেটী, যাদের অর্ধনগ্ন বা পুরো নগ্ন ছবি পৃথিবীর মানুষ এই কর্মে দেখে ফেলেছে- পশুর চামড়া দিয়ে পোশাক বানানো বন্ধের জন্য তারা ‘কাপড় খুলে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ায়, আর পত্রিকার বিক্রি বাড়ে । উদ্দেশ্য নিয়ে কজন মাথা ঘামায়, তাদের ‘দেখানোর অসুখ আর কারো দেখার ‘সুখ! আমরা আমজনতা চক্ষুলজ্জা ঢাকতে – হেডলাইন ছেড়ে উপসম্পাদকীয়তে নজর বুলাই।
তো, এবার তারা কুরবানীর বিষয়ে ‘মুফতে মুসলিমদেরকে কিছু জ্ঞান দিয়েছে! তারা পশু জবাই এর মত ‘নিষ্ঠুর পন্থা বন্ধের পক্ষে। তারা কি সত্যই পশু প্রেমিক? মানব প্রেমের কি হল? প্যালেস্টাইনে গাজায়- ইরাকে সিরিয়ায় মানব জবাই হলে এরা – মানুষের ethical treatment নিয়ে কথা বলে না, মুখে তালা মেরে রাখে, অথচ পশুর জন্য দরদে কুম্ভীরাশ্রু বর্ষণ করছে! বাড়াবাড়ি নয় কি?
PETA, Vegan –প্রভৃতি পৃথিবীর বিভিন্ন Cult এর মত এক ধরণের cult হিসেবে তাদের প্রচার প্রসারের জন্য উদ্ভাবনা মূলক কলাকৌশল অবলম্বন করছে।
১। তাদের কর্ম গুলো ‘প্রকৃতি বিরোধী (Act against nature) ও আন এথিক্যাল (Un – ethical ) হলেও স্বপক্ষীয় প্রচার যন্ত্র- আর প্রভাবশালী সমর্থকদের সমর্থনে নিজেদেরকে প্রকৃতি প্রেমিক বা পশুপাখি প্রেমিক বানিয়ে ফেলেছে। আর যারা প্রকৃতপক্ষে দায়িত্বশীল ও এথিক্যাল মানুষ (এরাই সংখ্যাগরিষ্ট!) তাদেরকে ‘নিষ্ঠুর’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে, আক্রমণ করছে। অবশ্য এ কৌশল তাদের উদ্দেশ্য সফল করার LINE OF ACTION – এর ফলে এই সংখ্যাগরিষ্ট মানুষদের কিছু তাদের Guilty feeling এর কারনে হয় ঐ CULT কে সমর্থন করবে, আর তা না করলেও সরাসরি ওদের বিরুদ্ধে কোন কিছু বলবে না, মৌন থেকে ওদের অপপ্রয়াসকে পরোক্ষ সমর্থন দেবে।
৩। PETA, Vegan দের যুক্তি – আমরা যারা মাংস খাই, তাদের খাবারের জন্য প্রানী হত্যা বন্ধ করতে হবে ! তাদের মত Vegan হতে হবে। আমরা মাংস না খেয়েও সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে পারি। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এটা জরুরী।
আমাদের যুক্তি-
ক) আমরা প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলছি। মানুষ একমাত্র প্রানী যার কর্তন, ছেদন ও পেষণ দন্ত রয়েছে। গরু বা তৃণভোজী প্রানীর যে দাঁতের প্রয়োজন হয় না – বাঘ বা সিংহের জন্য তা অতি জরুরী। মাংসাশী প্রানীর মতই মাংস হজম করার মত এনজাইমও আল্লাহ্পাক মানুষকে দিয়েছেন। শরীরের অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান প্রানী ছাড়া, শুধু উদ্ভিদ থেকে আসবে না। এছাড়া গড়পড়তা মানুষের প্রয়োজনীয় ক্যালরি যোগাতে Vegan মানুষকে পরিমাণে অনেক বেশী খেতে হবে! ঠাণ্ডার দেশে যেখানে কয়েকমাস সবজি জন্মায় না- তারা কি খেয়ে বাঁচবে ? বাঘ সিংহ বা মাংসাশী প্রানীকে ভেজিটেবল সূপ খেতে দিলে তারা কি তাতে সন্তুষ্ট হবে? বা তাদের চাহিদা কি তাতে মিটবে? এটা প্রকৃতি বিরোধী নয় কি?
গরু ছাগল Vegan, ওরা মাংস খায় না। এখন মানুষ একেবারেই মাংস খাওয়া ছেড়ে দিলে গরু ছাগলের মত ঘাসের বা উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল হয়ে যাবে! যা গরু ছাগল বা অন্য তৃণ ভোজীদের খাদ্যের সরবরাহের সাথে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক। ওরা কি প্রকৃতই পশু প্রেমিক? পশু পাখির প্রয়োজন আছে জন্যই আমরা তাদের গুরুত্ব বুঝি, তাদের বাচিয়ে রাখা- রোগ শোকে যত্ন - সবই করি। PETA, Vegan দের সুপরামর্শে যদি ওদের ‘উপযোগ’ মানুষের কাছে ফুরিয়ে যায় তখন ওদের কপালে কি জুটবে! PETA যে দেশে এ আন্দোলন শুরু করেছে- সেখানে বুড়োবুড়ি যারা এদের অর্থনীতিতে অপ্রয়োজনীয়’ হয়ে পড়েছে, তাদের দুরবস্থা দেখে আমার ভয় হয়, সেই 'অপ্রয়োজনীয় প্রানীদের না আবার জাহাজে ভর্তি করে সমুদ্রে জ্যান্ত ডুবিয়ে মারা হয়! ওদের ‘এথিক্যাল ট্রিটমেন্ট’ কি এরকমই হবে!
খ) PETA, Vegan গ্রুপ কুরবানী বন্ধের ‘ফতোয়া দিয়েছে। দু-একজন হিজাব পরিহিতা ও মুসলিম নাম ধারী প্রকৃতি প্রেমিকও ঐ দলে নাম লিখিয়েছে – বুঝে অথবা না বুঝে।
কুরবানী দেয়া হচ্ছে সৃষ্টিকর্তার আদেশ মানার নিয়তে, যারা তা করছে তারা তাঁদের বিশ্বাস অনুযায়ী সৃষ্টিকর্তার নামে আরেক তৃণভোজী জন্তুকে উৎসর্গ করছে, সৃষ্টিকর্তার বিধি বিধান মেনেই । লাউ কদু কুরবানী করার বিধাণ নেই । এরাতো Vegan দের জন্য ফতোয়া দিচ্ছে না, বা বলছে না – এসো, আমাদের উৎসর্গকৃত মাংস খেয়ে যাও! তোমাদের তৃণভোজী প্রানীর মত শাক পাতা চিবানো দু একদিনের জন্য বন্ধ রাখো! মাংস ভোজনের যা মজা তাকি আর ঘাস পাতায় মিলবে! বলছে না!! কাজেই ‘ভেজান গ্রুপের অতিমাত্রায় ‘সভ্য হয়ে উঠা অভ্যাস অন্যদের মধ্যে বিলানোর এই অপপ্রচেষ্টা কেন? পেটা কার বিধান অনুসারে তা করছে! ন্যাংটো সেলিব্রেটিদের!
যখন মানুষ গুহাবাসী ছিল তখনও শিকার করে মাংস খেয়েছে। “পরিমিত মাত্রার” মধ্যে থেকে মাংস খাওয়াটাও বিজ্ঞান তথা স্বাস্থ্য সম্মত! তবে জ্ঞানপাপীদেরকে বিজ্ঞান শেখানোর আগ্রহ বোধ করছি না। ইচ্ছে করে, খাদ্য শিকল বা ফুড চেইনের কোন লিঙ্ক ‘নষ্ট করার প্রচেষ্টা কোন ‘প্রকৃতি প্রেমিকের কি সাজে! কোন ধরণের এথিকস এটা!
গ) শুধু প্রানীদের প্রান আছে, উদ্ভিদের কি প্রাণ নেই? খাবারের জন্য আমাদেরকে প্রানী বা প্রাণ হত্যা করতে নিষেধ করা হলে- Vegan বন্ধুরা কি খাবেন! পানি!!
ঘ) বরং এটা ভাবলেই সবার জন্যই সহজ হবে যে- আমরা পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছি কতক গুলো সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব নিয়ে ! আমাদের জন্য ‘কোড অভ কন্ডাক্ট ও ঠিক করে দেয়া আছে! আমাদের জন্য ঐশী গ্রন্থে- সেগুলো বলাও হয়েছে। সেটা সবাই অনুসরণ করলে ( কমপক্ষে তাতে বাধা সৃষ্টি না করলেও) পৃথিবীটা আরও শান্তিপূর্ণ – আরও বাসযোগ্য হবে, সবার জন্য।
কোন জন্তু কি হেলফায়ার মিশাইল বানাচ্ছে? –আণবিক বোমা বানাচ্ছে আরেক জন্তুকে মারার জন্য? অধিকাংশ প্রাণী – অন্য প্রানীকে হত্যা করে খাদ্যের প্রয়োজনে। আর সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী -‘অতি সভ্য’ মানুষ, অন্য মানুষকে খুন করছে, গণহত্যা- ম্যসাকার করছে তার প্রভাব প্রতিপত্তি বাড়ানোর জন্য, অন্যদেরকে নিজের ইচ্ছেমত- নিজের সুবিধামত চালানর জন্য। আর সেইসব মানবরুপী পশুদের আশেপাশে থেকেই – মানুষ নয়, পশু বাঁচানোর নামে ধুঁয়া তুলছে কোন কোন ভণ্ড ! হয়তো সে পড়ে রেশমের পোশাক, পায়ে চামড়ার জুতো, বসে থাকে চামড়া মোড়া চেয়ার বা সোফায়, শীতের সময় পড়ে চামড়ার হাত মোজা- টূপী, যার সবগুলো এসেছে কোন না কোন প্রানীর প্রাণ হরণের মাধ্যমে! আদিখ্যেতা আর কাকে বলে!
এদের যুক্তি থাকতে পারে – আমার এখন থেকে কোন প্রানীজ উপাদান ব্যবহার করব না। আচ্ছা! তবে কি প্লাস্টিক – পলিথিন আর কৃত্তিম তন্তু ! সাময়িক সুবিধা দিলেও, ওগুলো গোটা পৃথিবীতে আরও বড় অভিশাপ বয়ে আনছে। প্রাকৃতিক উপাদান কত সহজেই না প্রকৃতিতে মিশে যায়! চামড়াও! ঐ শিক্ষিত মূর্খ গুলোকে কে বুঝাবে তা!
প্রানীজ বস্তু – খাদ্য- চামড়া- তন্তু – এর সবগুলোর সাথে জড়িত হাজারো মানুষের রুটি রুজী! আম জনতার খাবারের কথা না ধরলেও। ঐ লোক গুলো বেকার হয়ে যাবে নাকি! ওদের কাজ যোগাবে কে! PETA, Vegan এর মত cult !
শেষ কথা, উদ্ভাবনামূলক বিষয় গুলো সবক্ষেত্রে খারাপ না! বরং অনেক ক্ষেত্রে এতে মানব জীবনের উপকার হয়! আমরা বাস করছি এমন এক জগতে যা আমরা তৈরী করি নি, সুতা ছাড়া ঝুলে আছে গ্রহ নক্ষত্র গুলো, কিন্তু অতি নিখুঁত ভাবে তারা পরিভ্রমণ করছে, আমাদের গ্রহ, পৃথিবী ও ঘুরছে, এর প্রতিটি মুভ- আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি – ঘূর্ণনের সময় কোন এলাকায় কতটুকু সূর্যালোক পড়বে- তাও নির্ধারিত! পৃথিবীতে রয়েছে ‘ইকো সিস্টেম’ প্রানীকূল, উদ্ভিদকূল- বাতাস – পানি – সূর্যালোক – এর উপাদান। সব মিলিয়ে এ এক অবাক করা ভারসাম্য! এই ভারসাম্য রক্ষা করে জীবনধারনই মূল কথা! PETA, Vegan গ্রুপদের ভারসাম্য বিহীন কথা বা কাজ – সারা পৃথিবীর জন্যই অমঙ্গল বয়ে আনবে। অবশ্য একটা কাজ হতে পারে, প্রচারণার যুগ এটা, প্রচার কৌশলের উদ্ভাবনায় ‘মুগ্ধ হয়ে কিছু ‘আদম তাদের দলে যোগ দেবে আর তোতা পাখীর মত শেখানো কিছু বড় বড় বুলি আওড়াবে ।
টরোণ্টো
১৫ অক্টোবর ২০১৪
বিষয়: বিবিধ
১২৯৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইবলিশের কলাকৌশল এবং তার অনুসারীদের স্বভাব ও স্ববিরোধিতার বৈচিত্র কিয়ামত পর্যন্তই থাকবে-
আর ন্যায়পন্থী মানুষেরা ওদের মোকাবিলা করে করে আল্লাহতায়ালার নৈকট্যঅর্জনে সচেষ্ট থাকবে
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, জাযাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন