পা ধোয়া নিয়ে কথকতা
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪, ০৬:২৪:৪৪ সকাল
চতুর্দশ শতকের কথা । এক ইংরেজ লর্ড এর গরবিনী গর্ব করে তার এক সখীকে বলছেন, জানো – আমার বাসার কাজের লোকটা পা ধোয় ! এ রেকর্ড থেকে প্রতিভাত হয়- লর্ডের গরবিনী যে কক্ষনও পা ধুতেন না তা পরিষ্কার । সে সময়ে স্প্যানিশ ইণকুইজিশণ হয়ে গেছে, মুসলমানদের কচুকাটা করেছে ওরা – নাহলে ধর্মান্তরিত হতে হয়েছে। কিছু মুসলমান এ সময়ে অন্য ইউরোপিয়ান দেশগুলোতে মাইগ্রেট করে। এদেরই একজনের কথা এখানে উঠে এসেছে- লর্ডের বাড়িতে কাজ করত। মুসলমান অজু করবে- হাত মুখ পা ধোবে এ হাইজিন- অন্য জাতির জন্য পরবর্তীতে ‘অনুকরণীয় হয়েছে। হাত না ধুয়ে যেন খাওয়া যায়- সেজন্য কাঁটা চামচ জরুরী ছিল। এ অভ্যাসটাই ইউরোপিয়ানদের জয় জয়কারের পর পৃথিবীর কাছে ‘শালীন বা অভিজাত হয়ে উঠে । অথচ ইউরোপীয়ানরা গোসল ও করত না নিয়মিত। নবম থেকে ১২ শতকের মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে আসা ইউরোপের ক্রুসেডারদের গায়ের গন্ধে ভূত পালাতো – এর অনেক রেকর্ড এখনও রয়ে গেছে। মুসলিম হাম্মাম থেকে এরা গোসলের গুরুত্ব বুঝতে শেখে । যাহোক- মূল কথা – নামাজ পড়তে হলে মুসলমান অজু করবে আর অজু করতে হলে তাকে পা ধুতে হবে।
অনেক বছর ধরে নায়েগ্রা জলপ্রপাত আমাদের অতি পছন্দের ডেসটীণেশণ – অতি প্রিয় পিকনিক স্পট । সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে বিশেষ করে গরম কালে- BBQ এর গ্যাস গ্রিলটা আর মেরিনেড করা হালাল মাংসের পাত্র – মুরগীর ঠ্যাং আর গরুর স্টেক – সাথে ভূট্টা (BBQ এর পোড়া ভুট্টার মোচার মজাই আলাদা) আর কিছু সবুজ সবজী – গাড়িতে নিয়ে ছুটলাম । নায়েগ্রা জল প্রপাত এর পশ্চিম পাশের পার্কিঙ লটে গাড়ী রেখে পাশের পার্কে ত্রিপল বিছিয়ে বসে গেলাম। BBQ এর চুলা জ্বালিয়ে মাংস ছেঁকা হল আগে- এরপর ভুট্টা মোচা ও অন্যান্য বস্তু। মোটা ইতালিয়ান রুটি গরম করে মাংস রুটি আর সালাদের – সিম্পল খাওয়া দাওয়া! শুধু নিজের হাত পুড়িয়ে করার জন্য- তাই মনে হয় অমৃত।
আমসত্ত দুধে ফেলি – তাহাতে কদলী দলি,
‘সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে,
হাপুশ হুপুশ শব্দ –
চারিদিক নিস্তব্ধ পিঁপড়া কাঁদিয়া যায় পাতে, ‘র মত অবস্থা!
তবে এই শীতের দেশে মশা মাছি নেই বললেই চলে- পিঁপড়া বোধ হয় দ্বীপান্তরে গেছে। এখানে BBQ সাবাড় – হজমের জন্য - পাশেই শামিল এমিল এর সাথে ফুটবল- সময়ে ভলিবল বা ব্যাডমিন্টন – অনেক সময় ক্রিকেট ও খেলা হয়। নির্ভর করে দলে কয়টা পরিবার যোগ দিয়েছে আর তাদের কয়জন খেলার বয়সী সদস্য রয়েছে তার উপর। এরপর আসে প্রাকৃতিক প্রয়োজন –! প্লাস এর পর মাইনাস- (জল) বিয়োগ বা আরও বেশী কিছু! গন ওয়াশরুম – অতি ব্যস্ত ট্যুরিস্ট ডেসটীণেশণ জন্য অতি পরিচ্ছন্ন ! একটাই সমস্যা হত অজু করা নিয়ে, বিশেষ করে পা ধোয়ার জন্য। । আমরা যারা বাসা থেকে অজু করে আসি তাদের সমস্যা হয় না- মোজার উপরে ‘মোছেহ করে কাজ চালাই, অন্যান্যরা, অতি দৃষ্টি কটু হলেও – হাত মুখ ধোয়ার সিংকে পা তুলে ধুতে থাকেন- নামাজ বলে কথা! (অনেক বাঙ্গালী মুসলিম লজ্জায় পা পাবলিকের সামনে সিংকে পা তুলে না - তইম্মুম করে কাজ সারে- তবে পাকিস্তানীরা এব্যাপারে সাহসী- বলতেই হয়! ) এর ফলে সিংকের আশেপাশে যে বন্যা বয়ে যায় – তার দিকে তাকিয়ে অন্যান্যদের গাত্র দাহ হয়, এর তাপ আমাদের গায়েও লাগে, লজ্জায়-মাথা হেট হয়! এ লজ্জা- এশিয়ান হিসেবে- মুসলিম হিসেবে!
তো এভাবেই চলছিল। কাপড় চোপর এর দিক থেকে এই ডেসটীণেশণটি অতি ভদ্র- অন্যান্য এলাকা বা sea beach এর মত নয়, তাপমাত্রা নিচের দিকে- বিধায় এখানে অনেক মুসলিম জনগণের আগমন ঘটে এবং এই ‘পা ধোয়ার ব্যাপারটা এন্তার চোখে পড়ে।
এবার ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখি – একপাশে পা ধোয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ ! আমার চক্ষু তো চড়ক গাছ। বুঝিল কেমনে ! যাহোক কর্তৃপক্ষকে দিল থেকে মোবারকবাদ (নাকি জিন্দাবাদ!) দিলাম। গণ প্রচারণা শুরু করলাম –যাকে পাই তাকেই বলি – ভাই নয়া ব্যবস্থা হয়েছে, আর পা সিঙ্কে তুলতে হবে না। এর মাঝেই দেখি এক ‘আন্ধা ( চোখ থাকিতে!) পাকি ভাই পাশের সিংকে পা তুলে ‘ ওয়াশ করছে- ! হয় পুরাতন অভ্যাস- নয় পা ধোয়ার খাস জায়গা চোখে পড়েনি ! হায় হায় ! প্রচারনার গুরুত্ব কতটুকু হারে হারে টের পাচ্ছি ! এজন্যই ‘মিডিয়ার সাহায্য নেয়া!
যদি কেউ নায়েগ্রা জলপ্রপাত দেখতে যান আর অজু করার দরকার পড়ে, ওয়াশ রুমে গিয়ে আগে দয়া করে লক্ষ করবেন- পা ধোয়ার জায়গা আছে কিনা। ছবি দেখুন। এবং একটা উপকার করুন- মানুষকে এ তথ্য জানার সুযোগ করে দিন!
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১২৪৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন