শীর্ষ অস্ত্র উৎপাদনকারীদেশ, বিশ্বময় সংঘাত নিরসন ও শান্তি প্রতিষ্ঠা
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১৪ আগস্ট, ২০১৪, ০৪:০২:২৬ রাত
জাতিসংঘ সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল – পৃথিবীতে হানাহানি আর সংঘাত বন্ধ করা। - অথবা –সেই সময়ে সেটাই মানুষকে বুঝানো হয়েছিল। যারা জাতিসংঘ সৃষ্টির সবচেয়ে প্রভাবশালী পাঁচ মোড়ল, তারাই এখনও বিশ্বের বৃহৎ অস্ত্র উৎপাদনকারী। এ অস্ত্র কোন কাজে ব্যবহৃত হবে? সংঘাত নিরসনে ? আপনার কি মনে হয়? একটা দুধের বালক কি বিশ্বাস করবে তা? অস্ত্র রপ্তানীর শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া । তাদের আয়ের একটা বড় অংশ আসে অস্ত্র ব্যবসা থেকে। এরাই ভেটো ক্ষমতার অধিকারী? এদের বিরুদ্ধে কি কেউ ‘ভেটো দিতে পারবে- যে এরা জাতিসংঘের হর্তা -কর্তা বিধাতা হতে পারবে না? পৃথিবীতে আর যে সব রাষ্ট্র রয়েছে- যারা এই NATO বা রাশিয়ান প্রভাব বলয়ের বাইরে, তাদের কি এমন কোন বিজ্ঞ রাষ্ট্র প্রধান বা জনগণ এই বিষয়ে একাত্ম হবে – যে যারা সবচেয়ে বেশী মারনাস্ত্র উৎপাদন বা ব্যবসা করে- তাদের হাতে আর যাই হোক, বিশ্বের শান্তি বজায় রাখার ভার দেয়া যাবে না! জাতি সংঘে এমন কোন প্রস্তাব এখনও উঠে নাই। কোনদিন উঠবে বলেও মনে হয় না। হয়তো পৃথিবী বন্ধ্যা হয়ে গেছে, আর কোন বুদ্ধিমান প্রজাতির জীবের জন্ম দিচ্ছে না! কুইনিন জ্বর সারাবে বটে, তবে কুইনিন সারানোর ব্যবস্থা কি?
২০১৩ সালের অস্ত্র ব্যবসার ইতিবৃত্ত দেখা যেতে পারে সুইডেনের Stockholm international Peace research Institute ( SIPRI Arms Transfers Database) এর ওয়েবসাইটে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৬৬ বিলিয়ন অস্ত্র ব্যবসা করেছে ( নিউ ইয়র্ক টাইমসের হিসেবে, তবে এরা বলেছে অনেক কম, ( এর ব্যখ্যা জানতে গেলে আরও গভীরে যেতে হবে, ধরা যাক, ১০০ টাকায় একটা যুদ্ধ বিমান বিক্রী করল যুক্ত রাষ্ট্র, , এর জন্য স্পেয়ার পাটস, অস্ত্র দিয়ে সাজানো, রিপেয়ার প্রভৃতির হাজারো ব্যবসা এর সাথে যোগ হবে) মাত্র ২৬.৯ বিলিয়ন। অপরপক্ষে, রাশিয়া ২৯.৭ বিলিয়ন। ইত্যাদি । গত বিশ বছরে যে সকল রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রে আগ্রাসন চালিয়েছে- তার মধ্যে এই পাঁচ পাণ্ডবদের নাম রয়েছে সর্বাগ্রে। ইরাকে মিথ্যা অজুহাতে হামলা এবং দেশটার অর্থনীতি সহ আর্থসামাজিক অবকাঠামো পূরো ধ্বংস করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করা হয়নি বা এর জন্য তাকে কোন ক্ষতিপূরণ ও দিতে হয়নি । ইরাকী তেলের ইজারা পেয়েছে যুক্ত রাষ্ট্রের কোম্পানি গুলো, এর সাথে শুধু গত বছর ( ২০১৩) সালে যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে অস্ত্র বিক্রি করেছে ৯১৬ মিলিয়ন ডলার। আফগানদের মত হত দরিদ্র দেশ ও ১.৩ বিলিয়ন (!) ডলার এর অস্ত্র কিনেছে দুই বগ ব্রাদার এর কাছ থেকে, এর মধ্যে এক বিলিয়ন যুক্ত রাষ্ট্রের । বাংলাদেশ এর মত দরিদ্র দেশ ও পিছিয়ে নেই; যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থেকে প্রায় ৯৯,৮১০,০০০ ডলার এর অস্ত্র কিনেছে, রাশিয়া থেকে কিনেছে প্রায় ৭৮ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র। কাদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবে এই অস্ত্র? দেশের শান্তি রক্ষার জন্য এসব অস্ত্র কিনছে বিশ্বের দরিদ্র দেশ গুলো ? যারা বিশ্ব শান্তির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি – তারাই আজ ‘বিশ্ব শান্তিরক্ষার নামে অস্ত্রের রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে! জাতিসংঘের ভূমিকা কি এখাণে? যুক্তি দিয়ে বিচার করলে - এতদিনে বিশ্বের শান্তিকামী জনগণ জাতিসংঘ থেকে এদেরকে লাথি মেরে বের করে দেয়ার কথা, অন্যথায় নিজেরা এর সদস্যপদে ইস্তফা দিয়ে, এই ‘অস্ত্রধারীদেরকে ঠেকানোর জন্য নিজেরা অন্য কোন সংঘ বানিয়ে ফেলার কথা। কিন্তু তা হয়নি। ছাগল শ্রেণীর জনগণ – চোখে ঠূলী পরে শান্তির অপেক্ষায় বসে আছে- যেন এই বীগ ব্রাদাররা কবে দয়া পরবশ হয়ে দু চার কিলো শান্তি এদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে দেবে, কাঙালের বাতাসা ছুঁড়ে দেয়া- হরি লুটের মত।
বিষয়: বিবিধ
১৩৮৭ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
খৃষ্টানদের লেখা একটা কাহিনী মনে পড়ে গেল!
যীশু একবার বিপন্ন মানুষের দুর্দশা দেখে খুব ব্যাথিত হলেন – সৃষ্টি কর্তার কাছে আর্জি করলেনঃ হে প্রভূ! এই মানুষগুলো এত কষ্ট করছে, তুমি কি এদের দুর্দশা লাঘব করতে পার না!
প্রভূ উত্তর দিলেনঃ সেজন্যই তোমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে।
কাহিনীর সারকথাঃ আমাদের যার যেমন সামর্থ – সে অনুযায়ী, মানব সেবার জন্য – শান্তির জন্য - দায়িত্ব পালন করা দরকার । আঙ্গুল তুলে ও কি করল, ও কেন করছে না এই নিয়ে সমস্ত সময় পার না করে – আমি কি করছি বা কতটুকু করছি- এটা ভাবা দরকার আগে!
চমৎকার একটি লেখা। লিখতে থাকুন। ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন