ডারউইনের সারভাইভ্যাল ফর্মুলা বনাম দেশে গাড়ী ভাঙ্গার সর্বনাশী খেলা

লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১৫ মার্চ, ২০১৪, ০৪:১৩:৪৪ রাত



অনেক দিন আগে জনপ্রিয় উপস্থাপক হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি দেখেছিলাম। রাস্তায় বেয়াড়া যুবকদের গাড়ী ভাঙ্গার বিষয়টাকে উপস্থাপন করছিলেন তিনি রসিকতার সাথে।

পেটে ব্যাথা করছে– ভাংগ গাড়ি । রাতে ঘুম হয়নি- ভাংগ গাড়ি । ঘরে কাজ কম্ম কিছু করে না জন্য - মা ভাতের বদলে ছাই দিতে চেয়েছে? ভাংগ গাড়ী।

এর সাথে হয়তো আরও অনেক কিছু ছিল- তা আজকের আলোচনায় মূখ্য নয়, মূখ্য হল এর কারণ অনুসন্ধান। কেন একজন উঠতি বয়সের যুবক- যার সামনে জীবন অবারিত পড়ে আছে, যার সামনে অজস্র স্বপ্ন, কল্পনা আর প্রাপ্তির অসীম সম্ভাবনা- সে গাড়ী ভাঙ্গার মধ্যে চরম আনন্দ খুঁজে পাচ্ছে কেন? সে তার মোক্ষ খুজে পাচ্ছে ভাঙ্গার গানে- কেন? কিসের লোভে বা কিসের প্রতিহিংসায় সে এমন কাজে লিপ্ত হচ্ছে? এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়- বহু বছর ধরে দুরারোগ্য ক্যান্সারের মত আমাদের সমাজ বা রাজনৈতিক কালচারের অংশ হয়ে গেছে এই বিষয়টি।

কোন মনোবিজ্ঞানী বা সমাজ বিজ্ঞানী কি এই বিষয়ে গবেষণা করছেন- আমাদের দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ঐ বিষয়ে গবেষণা হয়, অনেক উঁচুমানের গবেষক ও রয়েছেন - যারা শুধু দেশেই নয়, বিদেশেও লেখাপড়া করেছেন, গবেষণা করেছেন- বিশাল থিসিস লিখে – গবেষনা - পত্র লিখে নাম কামিয়েছেন । তারা কি আজকাল এসব নিয়ে ভাবেন?

সমস্ত সিস্টেম ভেংগে গেছে, নিয়ম নীতি বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেও। অনিয়ম হয়েছে নিয়ম। এটা সকল ক্ষেত্রে সম ভাবে হয়েছে। এমন কোন বিষয় নেই যেখানে দুর্নীতি বা নৈতিক অবক্ষয় এর কাল থাবা অনুপস্থিত। পথভ্রষ্ট/ ভ্রষ্টাদের ভিড়ে এর বাইরে কেউ আছে তা ভাবা অসম্ভব হয়ে পড়েছে ।

বাংলা ভাষায় ভাল মাণের কবি সাহিত্যিক আর উঠে আসছে না। গবেষক? প্রাবন্ধিক? বিজ্ঞানী? যাদের এই সম্ভাবনা গুলো ছিল তারা কি এক অজ্ঞাত কারনে তাদের গুরুদের বা সম সাময়িক ভ্রষ্টদের অনুসরণ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলিক গবেষনা করে সময় নষ্ট না করে – ক্ষমতাসীন দলের লেজুর বৃত্তি করলে ‘নগদ নারায়নের সুযোগ বেশী। মৌলিক গবেষনায় প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়, – প্রচুর সময় ব্যায় করতে হয়, এ করেই যে খ্যাতি, একুশে পদক আর রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বা লোভনীয় পদ পাওয়া যাবে তা নয়। বরং লেজুরবৃত্তি করতে তেমন কোন সময় বা শ্রম বিনিয়োগ করতে হয় না, কিন্তু লাভ বহুগুনা! আমাদের মেধাবী প্রফেসরগণ তা ভাল ভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছেন । (ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়, তাদের কাছে মার্জনা চাই, তবে কিনা শতকরা পাঁচ ভাগের কম হলে তারা তো পরিসংখ্যানে অগ্রাহ্য। ) সাংবাদিকগণ অতীতে সত্য প্রকাশে অসম সাহসিকতা দেখিয়েছেন। এখন আম জনতার মত তারাও ক্ষমতাসীনদের আঙ্গুলী হেলনে ‘গায়েব হয়ে গেছে, দু-একজন - ফিতার এপার ওপার করলেও নীতিহীনতা এখনকার আওয়ামী রাজনীতিক বা মন্ত্রীদের মত দুর্নীতিতে ৯৩% ছিল না। আজকে বরং উল্টা হয়ে গেছে সমীকরণ – হাতে গোণা দু’য়েকজন মাহমুদুর রহমান আছেন- বাকীরা কলম বিক্রী করে দিয়েছেন দলের ব্যানারে। রুটির কোন পাশে মাখন – এরা খুব ভালই জানেন। নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা বাংলাদেশে এখন বাঘের দুধের মতই দুস্প্রাপ্য।

একসময় এদেশটা এত সম্পদশালী আর লোভনীয় ছিল- যে ইংরেজরা বাংলার রাজধানী কোলকাতাকেই তাদের তৎকালীন ‘ব্রিটিশ ইন্ডিয়ার’ রাজধানী বানিয়েছিল। দলাদলি কোন্দল যে ছিল না তা নয়, তবে দেশজুড়ে এত বিভেদকামী জ্ঞানপাপী ছিল না- যারা ঘোলা পানিতে মৎস্য শিকারেই অতি আগ্রহী। দেশ জাহান্নামে গেলে তাদের কি- নিজে বাঁচলে বাপের নাম! ডারউইন এর এই সারভাইভেল এর ফর্মুলায় – নেতা ব্যবহার করছে পাতি নেতাকে- পাতি নেতা ব্যবহার করছে-উঠতি নেতাকে, আম জনতা-চোর ছ্যাঁচড়- বেকার, ভ্যগাবন্ডও রাজনীতির হরিলুটের মধ্যে তার হিস্যা পাওয়ার চেষ্টা করছে। ছাত্রনেতা –এখন একটা প্রফেশনের নাম- তাদের সংজ্ঞা ‘ছত্রনম অধ্যায়নম তপঃ নয়, তাদের সংজ্ঞা, রাজনৈতিক দলের বন্দুকবাহী – তারা ক্ষমতায় কুলালে প্রতিপক্ষকে ‘সাইজ করবে,চাঁদার রাম রাজত্বকায়েম করবে। নিজেদের বা দলের ক্ষমতায় না পারলে- প্রজাতন্ত্রের পুলিশ বা প্রতিরক্ষাবাহিনীর সহযোগী হয়ে তারা ময়দানে নামে । তাদের গাড়ি বাড়ী ব্যবসা আছে। এরা সব করে – খালি পড়াশুনাটাই কেবল করে না।

প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারী বা কম যায় কেন? রাঘব বোয়ালগণ গলা ‘দেগ মে ডুবিয়ে খাচ্ছে, চুনো পুঁটী ও পিছিয়ে নেই। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী দেশের ট্রেজারি থেকে বেতন পেলেও, নগদ নারায়নের কৃপায় এখন ‘দলীয় কর্মচারী বনে গেছে। এরা দেশের জনগণের অধিকার বা স্বার্থ দেখেনা – যা দেখে, তা নিজের স্বার্থ – আর তার জন্য বিবেক কুরবানী দিয়ে দলীয় প্রভাবশালীদের পকেটে উঠে গেছে। দলের স্বার্থ দেখাই তাদের ধর্ম, দেশের নয়। শুনা যায়, নিরীহ জনগণ, যাদের এমনকি বিরোধী দলের সাথে সংশ্লিষ্ট করা যায় না – তারা পুলিশের হাতে পড়লে ‘ছত্রিশ ঘা এর বদলে ৭২ঘা এর শিকার হয়। “এত টাকা দিলে তুমি মুক্তি পাবে – নইলে হুজি’র সদস্য হিসেবে সদরে চালান করা হবে”! মাফিয়াদের ব্যবসা বাঙ্গালী পুলিশ ভালভাবেই রপ্ত করছে। দেশের জনগণ আর সম্পদ রক্ষার চাইতে এদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিরোধী দলকে ঠেঙ্গান- আর এই প্রক্রিয়ার সুযোগে অবৈধ ভাবে নিজের পকেট মোটা করা। বিচার চাইবেন? বিচারক এর বিচার ও কেনা যায়। অর্থ বা ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে রায় নেয়া যায় নিজেদের পক্ষে। সাক্ষী প্রমাণের আগেই রায় লেখা হয়ে যায় অনেক ক্ষেত্রে, বিশ্বাস নাহলে “স্কাইপ” দেখার কথা বলবে অনেকে।

এই গাড়ী ভাঙ্গার যে ধংসাত্মক প্রক্রিয়া, তা শুধু গাড়ী ভাঙ্গাতেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, ভেঙ্গে ফেলেছে সমাজ, রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে। সামগ্রীক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছে পুরো ব্যবস্থা, অব্যবস্থাই এখন ব্যবস্থা- অনিয়মই হয়েছে নিয়ম- ভাল মন্দের মধ্যে প্রভেদ নেই । হারাম হালাল এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই- গোগ্রাসে হারাম গলাধঃকরনের রেস শুরু হয়েছে, ভুখা নাংগা মানুশের পাশাপাশি পেটমোটা মানুষের সংখ্যা কি রাস্তায় কম? হারাম না খেলে এত দ্রুত পেট মোটা হওয়ার কথা নয়! চলছে রেস! কে কাকে টেক্কা দেবে এই রেস অলিপমিকের ১০০ মিটারের স্প্রিন্টকে ছাড়িয়ে গেছে। মন্ত্রী টেক্কা দিচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে – আমলা টেক্কা দিচ্ছে- মন্ত্রীকে- পুলিশ টেক্কা দিচ্ছে ওসি কে- আর ওসি টেক্কা দিচ্ছে এস পি কে! ছাত্রনেতা টেক্কা দিচ্ছে ভিসি কে-অরাজকতার দেশে মানুষ সুস্থ থাকবে কিকরে ?

১৯৭১ স্বাধীন হয়েছে দেশ, প্রেসিডেন্ট জিয়ার আমলের কিছু সময় ছাড়া দেশের আম জনতা – শান্তিতে ঘুমাতে পারেনি। দেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা নিয়েছে অনেকেই অনেক বার – কিন্তু গড়ে নিয়েছে নিজেদের ভবিষ্যৎ।

কোন নূতন ভবন তৈরী হয়েছে যেখানে গৃহহীন মানুষরা আশ্রয় পাবে? রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতায় এমন কোন কল কারখানা তৈরী হয়েছে যেখানে দেশের বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হবে? এমন কোন রিক্সা ওয়ালা নেই যার হাতে চেল ফোন নেই। এই সেল ফোনের একটা স্ক্রু তৈরী করার মত কোন প্রতিষ্ঠান তৈরী হয়েছে? কোন নূতন আবিস্কার হয়েছে- নূতন কোন পেটেন্ট – যা দিয়ে নূতন একটা শিল্প কারখানা স্থাপিত হবে –বিদেশের উপর নির্ভরশীলতা কমবে – বরং বাংলাদেশের পণ্য বিদেশে যাবে? বরং সীমাহীন দুর্নীতির অর্থে একটা ভোক্তা শ্রেণী সম্পূর্ণ বিদেশ নির্ভর বাজার ব্যাবস্থা গড়ে তুলছে । নিজেদের স্বয়ং সম্পূর্ণ করার কোন ব্যবস্থাই গড়ে উঠেনি, গড়া হয়নি। যখন নিজেরা কেউ কিছু গড়তে পারছে না তখন শুরু হয়েছে ভাঙ্গা, ভাঙ্গার প্রতিযোগিতা- ভেঙ্গে ফেলছে সবকিছু – সিস্টেম- অথনীতি – ব্যষ্টিক বা সামষ্টিক। কেউ ব্যাক্তি প্রচেষ্টা দিয়ে কিছু করলেও – রাষ্ট্র তা দলীয় অনুসারীদের সাথে নিয়ে – একজোটে তা ভেঙ্গে ফেলছে। ডক্টর ইউনুস বাংলাদেশে যেন ভুল করে জন্মেছেন, বাংলাদেশ বন্ধ্যা হেব না কেন?

কাজেই ভাংগ গাড়ী । যুবক, এর সাথে তুমি নিজের কপালটা ও কিন্তু ভাঙ্গছ – ভুল না

বিষয়: বিবিধ

১৩৪০ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

192405
১৫ মার্চ ২০১৪ সকাল ০৭:১১
গৃহস্থের কইন্যা লিখেছেন : আপনি বলেছেন- "সমস্ত সিস্টেম ভেংগে গেছে, নিয়ম নীতি বলে আর কিছু অবশিষ্ট নেও। অনিয়ম হয়েছে নিয়ম।"


ঠিক, শতভাগ সহমত। এই তো সে দিন দেখলাম রাস্তা বন্ধ করে মানুষ দিব্যি জুমার নামাজ পড়ছে।
198080
২৬ মার্চ ২০১৪ রাত ০৪:২৮
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : নিউ ক্যাসলে কয়লা নিয়ে যাচ্ছি কিনা বুঝতে পারছি না, তবে একটা হাদিস মনে পড়ল। রেফারেন্স মনে নেই, তবে এর মূল ভাবানূবাদ নিম্ন রূপঃ
এক বার কয়েকজন রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন । রাসূল ( সাঃ) সে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের দেখে থেমে গেলেন এবং বললেন,রাস্তাকে তার ‘অধিকার’ দাও। আর এই অধিকার হচ্ছে – 'রাস্তা মানুষ চলাচল করার জন্য, ইচ্ছে করে রাস্তায় মানুষ চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা ইসলাম সমর্থন করে না। রাস্তায় দাঁড়িয়ে গল্প করা হচ্ছে রাস্তার অধিকার খর্ব করা, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ! মানুষের অসুবিধা সৃষ্টি করে বা মানুষকে কষ্ট দেয় এমন বিষয় কে ইসলাম ‘পাপ বলে চিহ্নিত করেছে। সব থেকে ঘৃণিত মানুষ সে (তারা) যে ( যারা) সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে!
তবে মানুষ যদি সবাই মুসলিম হয়, এবং জুম্মার নামাজ পড়ার আর কোন বিকল্প জায়গা ও না থাকে, তবে সবাই মিলে যদি রাস্তায় নামাজ পড়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে আপত্তি করার কেউ আছে কি!
200173
৩০ মার্চ ২০১৪ সকাল ১১:৩৮
আবদুল্লাহ বাংলাদেশী লিখেছেন : তোশামদ না করে এখন কিছুই হয় না। ভালো লাগলো।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File