পরিচ্ছন্ন হৃদয় - Clean heart

লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৪:৫৬:৪৮ রাত



প্রতিটি ব্যাক্তির সম্মান বা মর্যাদাই ( honor) আমানত । আমরা আমাদের সকল মুসলিম ভাই বোনদের উপযুক্ত মর্যাদা দেব, সম্মানের চোখে দেখব- এটা আমাদের পবিত্র কর্তব্য - এটা যেমন তেমন বা ফেলনা কোন করনীয় নয়। কারো বিরুদ্ধে একফোঁটা পরিমান কূধারনাও যেন আমাদের অন্তরে স্থান না পায়। আমাদের নবী করিম ( সঃ) সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল যেন ভালবাসা, বন্ধুত্ব আর ভ্রাতৃত্ববোধের চর্চার মাধ্যমে আমাদের মধ্যে পরস্পরের প্রতি ঘৃণা – ঈর্ষা – হিংসা বা প্রতিদ্বন্দ্বীতা র মনোভাব বিলীন হয়ে যায়। একবিন্দু ঘৃণা – ঈর্ষা – হিংসা ও যেন মুসলিমদের অন্তরে অবশিষ্ট না থাকে।

মুসলিম সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে ভ্রাতৃত্ববোধের উপর ভিত্তি করে। রাসুল ( সাঃ) উপদেশ দিয়েছেনঃ ‘ঈমানদারগন একটা সুসংগঠিত দেহ এর মত– যেখানে স্বভাবতই এক অঙ্গ, অন্য অঙ্গকে সহায়তা করে ! ঈমানদারগন পারস্পরিক সমঝোতা, বন্ধুত্ব, দয়া আর ভালবাসার ভিত্তিতে একটা একক দেহ, এক জায়গায় ব্যাথা পেলে সমস্ত শরীরে তা অনুভূত হবে। ( দ্রষ্টব্য আল হাদীস – আল বুখারী, মুসলিম)

রাসুল ( সাঃ) বলেছেনঃ ‘একভাই আর এক ভাই এর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করো না , একজন আরেকজন থেকে মুখ (ঘৃণায়) ফিরিয়ে নিও না- একজন আরেকজনকে ঘৃণা করো না – ঈর্ষা করোনা – ও আল্লাহ্‌র বান্দারা- একজন আরেকজনের ভাই হয়ো ! (আল বুখারী)

আনাস বিন মালিক ( রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, “ একদিন আমরা যখন রাসুল ( সাঃ) এর সান্নিধ্যে বসেছিলাম, তিনি বললেনঃ ‘বেহেশতের একজন বাসিন্দা আসছে” । তিনি যখন এটা বলছেন, তখন আনসারদের একজনকে আসতে দেখা দেখা গেল, তার দাড়ি বেয়ে অজুর পানির ফোঁটা ঝরছে আর বাম হাতে রয়েছে জুতা । ২য় দিন একই বিষয়ের পুনরাবৃত্তি হল, রাসুল (সাঃ) একই বাক্য বললেন আর আগের দিনের মত, একই আনসারীকে একইভাবে আসতে দেখা গেল। ৩য় দিনেও একই ঘটনা, রাসূল ( সাঃ) একই বাক্যের পুনরাবৃত্তি করলেন; সে একই ব্যাক্তিকে একইভাবে- আগের অবস্থাতেই আসতে দেখা গেল। যখন রাসূল ( সাঃ) উঠে গেলেন- আবদুল্লাহ ইবনে আমর ( রাঃ) ঐ আনসার সাহাবাকে অনূসরণ করলেন। এবং তার বাড়ি পর্যন্ত গেলেন।

“আমার পিতার সাথে মনোমালিন্য হয়েছে, আমি প্রতিজ্ঞা করেছি তিনদিন বাড়ি ফিরব না” তিনি আনসারীকে জানালেন, ‘আমাকে এই তিনদিন কাটানোর জন্য কি আপনার বাড়ীতে আশ্রয় দেবেন?

“অবশ্যই, কোন সমস্যা নেই” আনসারী উত্তর দিলেন ।

আনাস বিন মালিক ( রাঃ) বর্ণনা করেছেন , আবদুল্লাহ বিন আমর ( রাঃ) বলেছেন, তিনি তিন রাত ঐ আনসারীর বাড়ীতে তার সাথে ছিলেন – কিন্তু তিনি তাকে রাতে এবাদত করতে দেখেন নাই, কেবলমাত্র ঘুমের মধ্যে পার্শ্ব পরিবর্তন করার সময় তিনি শুধু আল্লাহ্‌র প্রশংসা সুচক বাক্য সমূহ ( সুবহান আল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ্‌) – এবং ‘আল্লাহু আকবর বলেছেন- ফজরের জন্য ঘুম থেকে উঠার আগ পর্যন্ত। আবদুল্লাহ বিন আমর ( রাঃ) বলেন, আমি তাকে ভাল ছাড়া আর কোন 'কথা' বলতে শুনি নাই। তিনদিন ধরে তাকে পর্যবেক্ষণ করে আমি দেখলাম, তার নিয়মিত- আমল খুব সাধারন পর্যায়ের এবং আমি তাকে বললাম, “ও আল্লাহ্‌র বান্দা, প্রকৃতপক্ষে আমার পিতার সাথে আমার কোন ঝগড়া হয় নাই কিন্তু আমি যখন রাসুল ( সাঃ) কে বলতে শুনলাম, - ‘ একজন বেহেশতবাসী আসছে এবং এরপর আপনাকে আসতে দেখলাম। পরপর তিনবার; তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে, আমি আপনার সাথে থেকে আপনার বিশেষ আমল গুলো দেখব যা আপনাকে এই ‘পর্যায়ে তুলেছে । যাই হোক, আমি তো আপনাকে কোন ‘বিশেষ আমল করতে তো দেখি নাই । কি সেই ‘বিশেষ আমল –যা আপনাকে এই মর্যাদায় উন্নীত করেছে, রাসূল (সাঃ) যার উল্লেখ করেছেন?

আনসারী উত্তর দিলেন, ‘আমার কোন বিশেষ আমল নেই – কেবল যা আপনি দেখেছেন ! আবদুল্লাহ বিন আমর ( রাঃ) বলেছেন - যখন আমি ফিরে আসছি, তখন তিনি আমাকে আবার ডাকলেন, এবং বললেন “ আমার কোন বিশেষ আমল নেই, কেবল যা আপনি দেখেছেন তা ছাড়া, তবে, কোন মুসলিমের জন্য আমার হৃদয়ে কোন কূ ধারনা নেই, আর, আল্লাহ্‌তায়ালা হয়তো বিশেষ কাউকে রহম করেছেন বলে, আমি কারো প্রতি ঈর্ষান্বিত ও নই’।

আবদুল্লাহ বিন আমর ( রাঃ) বলেন, এই সে আমল, যা আপনাকে ঐ মর্যাদায় তুলেছে- আর এটাই সেই বিষয় যা আমাদের সাধ্যের বাইরে ( মুসনাদ আহমদ, মুন্তাখাব হাদিস) ।

গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাঃ

ক) কোন মানুষের সম্বন্ধে কূধারনা বিশেষ করে মুসলমানদের সম্বন্ধে কূ ধারনা পোষণ না করার গুরুত্ব

খ) অন্যদের সম্পদ বা মাল দেখে ঈর্ষান্বিত না হওয়ার গুরুত্ব। আজকের দিনে আমরা এই গূন বা বৈশিষ্টের পূর্ণ গুরুত্ব উপল্বব্ধি করতে পারি যখন দেখি এমনকি এক মায়ের পেটের ভাই, অন্য ভাইয়ের সম্পদ দেখে ঈর্ষা অনূভব করে।

গ) গীবাত আর মানুষের বিরুদ্ধে মন্দ কথা বলার মূল কারণ সম্ভবতঃ এই কু-ধারনা আর ঈর্ষা বিদ্বেষ । ঐ ব্যাক্তি ‘ভাল ছাড়া কোন মন্দ কথা বলে নাই’ এ বিষয়টা প্রণিধানযোগ্য ।

ঘ) অনেক সময় আমাদের ধারনা হয়- একজন মানুষের দ্বীনদারী বলতে তার নফল এবাদত, এবাদতে রাত্রি জাগরণ – নফল রোজা নামাজ বা তিলাওয়াত – বিশেষ কোন আমল তাঁকে উঁচু মর্যাদায় উঠিয়ে দেয়- কিন্তু এ হাদিসটি আমাদের শেখায় যে একজনের ‘পরিষ্কার, পবিত্র অন্তর কত খানি গুরুত্বপূর্ণ ।

অবশ্য পবিত্র কূর’আনে কেয়ামতের দিন সম্বন্ধে বলতে গিয়ে এ বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছেঃ

--- ইউমা লা- ইয়ান ফা’উ মা-লূ ওয়া লা বানু-ন, ইল্লা মান আতাল্লাহা বি ক্কালবিন সালিম!

--- সে দিন সম্পদ আর সন্তান কোন উপকারে ( কোন ব্যাক্তির) আসবে না কেবল মাত্র সে ব্যাতীত, যে আল্লাহ্‌র মুখোমুখি হবে শুধু পরিচ্ছন্ন (পবিত্র) হৃদয় নিয়ে”। ( আল কূর’আন সূরা ২৬; আয়াত ৮৮-৮৯)

বিষয়: বিবিধ

১২৯৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

198526
২৭ মার্চ ২০১৪ রাত ০১:৫২
বৃত্তের বাইরে লিখেছেন : পরিবারের বড়দের কাছে শিখেছি সম্মান কেউ কাউকে দেয়না অর্জন করে নিতে হয়। কিন্তু বর্তমান সমাজে এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা না জেনে অন্যের সম্পর্কে কুধারনা করা। সামান্য তর্কে জেতার জন্য নিজের ধারনাকে অন্যের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে যেয়ে নিজেদের পারিবারিক শিক্ষা, নৈতিকতা সব ভুলে যাই। খুব সহজেই নিজেদের ব্যবহারের দ্বারা অন্যের কাছে তুলে ধরি কে কেমন পরিবার থেকে এসেছি, কার শিক্ষা কতটুকু!

আপনার লেখার মাধ্যমে জানতে পারলাম একজনের পরিষ্কার,পবিত্র অন্তর কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যবান হাদিসটি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে Good Luck Good Luck
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ রাত ০১:১৮
207648
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File