ইসলাম এর সুবিচার বনাম সোনার বাংলাদেশ
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০৪:২৪:৩১ রাত
ইসলাম এর বিজয় – প্রচার আর প্রসার হয়েছিল –এইজন্য যে –“ এটা শুধু সামাজিক আচার বা অনুষ্ঠানিকতা নয়, যা অন্যান্য অনেক ধর্মে আমাদের চেয়েও বেশি আছে। ইসলামএর অনুসারীগন সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠা করেছিল- এটা তার এক প্রধান কারণ। প্রসঙ্গত একটা গল্প না বলে পারছি না। খালেদ বিন ওয়ালিদ ( রাঃ) সিরিয়াতে রোমান বাহিনীর মুখোমুখি । উল্লেখ্য, সিরিয়া দীর্ঘদিন রোমান শাসনাধীনে ছিল, সে সময়ের ( ৬৩০ – ৬৪০ খৃষ্টাব্দের কথা – কেবল মাত্র নবীর ( তাঁর প্রতি আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক) ওফাৎ হয়েছে, আবূ বকর ( রা খলিফা, মুসলিম র্যাগ ট্যাগ বাহিনী- সে সময়ের দুই সুপার পাওয়ার – পারস্য আর রোমান আর্মিকে ছিন্নভিন্ন করছে –সাঈফূল্লাহ খালেদ (রা সুযোগ্য নেতৃত্বে । রোমান জেনারেল আর প্রধান পাদ্রী তার এক গুপ্তচর পাঠাল মুসলিম বাহিনীর অবস্থা জানতে, সে আরব খৃষ্টান- । খৃষ্টান-হলেও ভাষা আরবি, দেখতেও একই রকম, (বাংলাদেশে মুসলিম হিন্দু বা খৃষ্টান-কে একই পোশাক পড়িয়ে দিলে কি বলা যাবে কোনজন কোন ধর্মের?) – সে সহজেই আরব বাহিনীতে মিশে গেল এবং পরদিন সব সংবাদ নিয়ে ফিরল। সে যা জানালো, তা হচ্ছে,
ক) এরা দিনে যোদ্ধা, রাতে দরবেশ ( রাত ভর প্রার্থনা করে- কুরআন তেলাওয়াত করে- আল্লাহ্র কাছে সাহায্য কামনা করে)
খ) এদের নৈতিকতা এত মজবুত- যে ওদের সেনাপতির মেয়ে চুরি করলেও ওরা তার হাত কাটবে।
এবার পাদ্রী বলল, এই জন্যই ওরা আমাদের উপরে জয়লাভ করবে! গল্পের সারমর্ম এখানে। মুসলিমদের নৈতিকতা- সুবিচার প্রতিষ্ঠা, অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছেও চরম শ্রদ্ধার বিষয় ছিল, (এক সময়!)।
সৈন্য সংখ্যা রোমানদের প্রায় অর্ধেক, রোমানদের সুসজ্জিত – ‘লিজিয়ন এর বিরুদ্ধে – নাংগা পায়ের বেদুইন- এক একজনের জামা কাপড়- রং আর ধরন- একেক ধরণের- অস্ত্র ও সমরসজ্জা কোন নিয়মিত বাহিনীর ধারে কাছে নয়, যে যেটা হাতের কাছে পেয়েছে- সেটা নিয়েই জিহাদে চলে এসেছে। এই নিয়েই রোমানদের ছিন্ন ভিন্ন করে দেয় মুসলিম বাহিনী। ইতিহাসে অসংখ্য গল্প ছড়িয়ে আছে- এখন সেগুলো বর্তমান মুসলিমদের সাথে তুলনা করলে – নেহায়েত ‘গাল গল্পই মনে হয়। কোথায় সুবিচার আছে বাংলাদেশে? না আছে রাষ্ট্রে – না আছে ঘরে- না আছে বাইরে। আমরা ‘সুবিচার কি তার সংজ্ঞাই হয়তো ভুলে গেছি। ইদানীং কালের বিচারের প্রহসন – স্কাইপী সংলাপে বিচার রহস্য- হাতে নাতে ধরা পড়ার পর আমাদের দেশের বিচার ব্যবস্থা ও আওয়ামী শাসনের স্বরূপ বিশ্ববাসী জেনে গেছে। প্রকাশ্য দিনের বেলায় – অসংখ্য মানুষের সামনে খূন করেও খূনের আসামী তথাকথিত আওয়ামী পার্টির গুন্ডা প্রেসিডেন্ট এর ক্ষমা পেয়ে যায় এবং বেরিয়ে গিয়ে আরও খুন করে এবং করছে। এই হল বিচার ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা । সাধারণ মানুষ ও বোধ হয় মেনেই নিয়েছে – এরকমই হওয়ার কথা – তাই নিজের জীবন জীবিকা নিয়ে তারা ব্যস্ত, সুবিচার হচ্ছে কি না বা তা নাহলে তার প্রতিকার কি- এনিয়ে মাথা ঘামায় না।
খলিফা হযরত উমর ( রাঃ) মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে একবার উপস্থিত জনতাকে জিজ্ঞেস করলেন - আমি যদি আল্লাহ্ ও তার রাসূলের আইন অনুযায়ী হুকুমত না চালাই তাহলে তোমারা কি করবে? জনতা নিশ্চূপ! জনতা বুঝার চেষ্টা করছে – কেন এই প্রশ্ন! আবার প্রশ্ন-করলেন খলিফা! এবারো জনতা নীরব। তৃতীয় বার প্রশ্ন শূনে উন্মুক্ত তরবারী হাতে এক মুসলিম দাঁড়িয়ে গেল, হে উমর ! এই তরবারী দিয়ে তার প্রতিকার করব!”
এই হল সাচ্চা মুসলিম! আল্লাহ্র আইন প্রতিষ্ঠা এমনি এমনি হয়না । আল্লাহ্র রাসূল এর সময়ের উদাহরন আমাদের সামনে। বেলাল ‘আহাদ আহাদ বলে চরম অত্যচার আর নির্যাতনে চিৎকার করছে- আহাজারী করেছে আরও অনেক সাহাবা- আল্লাহর রাসূল তাদের ধৈর্য ধরতে বলেছেন। শেষ পর্যন্ত জন্মভূমি ছেড়েছেন এই অত্যাচার থেকে নিজের এবং অনুসারীদের বাঁচাতে । চরম ধৈর্যের প্রমান দিয়ে, দেশত্যাগ করেও লাভ হয়নি, শত্রু সেখানেও হামলা চালাতে গিয়েছে । শেষ পর্যন্ত অস্ত্র ধরতে হয়েছে- নিজে আহত হয়েছেন, প্রান প্রিয় চাচা- রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় স্বজন কে হারিয়েছেন, তার প্রিয় অনুসারীরা অকাতরে রক্ত ঢেলেছে যুদ্ধের ময়দানে- শেষ পর্যন্ত সুবিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এত গেল ইসলাম প্রতিষ্ঠার সময়ের কথা। এর অনেক পরেও ইসলামের সৈনিকগণ – ইউরোপ জয় করেছে- আফ্রিকা- ভারত বর্ষ জয় করেছে। জোর করে কাউকে মুসলিম বানানো যাবে না – এটা ইসলামের নীতি। বিজয়ী শক্তিকে আমজনতা অনুসরণ করে এটা সত্য, তবে নিজের ধর্ম বা সংস্কৃতি বাদ দিয়ে নয়। কিন্তু ঐ সমস্ত এলাকায় অনেক উদাহরণ ছড়িয়ে রয়েছে- ইসলামের সামাজিক সুবিচার – দেখে – মুগ্ধ হয়ে মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছে। আজ আমাদের অবস্থা দেখে মানুষ ইসলাম থেকে দূরে সরে যাবে। ‘আমি যদি কুরআন কিতাব দেখার আগে তোমাদের দেখতাম তবে কোনদিনই হয়তো ইসলাম গ্রহণ করতাম না’ মন্তব্য করছেন এক আমেরিকান মুসলিম। আরেকজন আমেরিকান নও মুসলিমাহ জিজ্ঞেস করেছেন- “তোমরা কোন কুরআন বা কিতাব অনুসরণ কর” – তোমাদের আচরণ তো কুরআনের সাথে মেলে না! বংশ পরস্পরায় আমরা যারা হাজার বছর ধরে মুসলিম, তাদের জন্য কি চরম লজ্জার নয় বিষয়টা ? এই আমাদের ইসলামিক চরিত্র -? কোথায় আমরা আর কোথায় আমদের কুরআন হাদীস? । ক্ষণস্থায়ী জিন্দেগীকে আখেরাত থেকে এতটাই প্রাধান্য দেই যে- অন্য ধর্মের বা নাস্তিক মানুষরা আমাদের আচরণ দেখে লজ্জা পাবে। পূনরায় কুরআন পড়া শুরু করতে হবে – সিখতে হবে ইসলামিক আচরণ আর ব্যবহার- আক্কীদা আর ঈমান- প্রতিষ্ঠা করতে হবে ইসলামের সুবিচার- যেখানে রাজা ও প্রজায় – শাসক আর শাসিতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই- উভয়ের জন্য একই বিচার। যতদিন না সুবিচার প্রতিষ্ঠা হয়- জালিমের – জুলুমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র সঠিক বিচার করতে সামর্থ হয়- ততদিন আমরা বলতে পারব না আমরা আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় ইসলাম কায়েম করেছি । জালিমের জুলুম আজ সীমা লঙ্ঘন করেছে, রাষ্ট্র যন্ত্র সুবিচার নয়, অবিচার করে চলেছে- আমরা কই তার প্রতিরোধ করছি । ‘কোন অন্যায় অবিচার দেখলে আমার তো হাত দিয়ে প্রতিরোধ করার কথা, নাহলে মুখ দিয়ে – আর তা নাহলে- মন থেকে সে বিষয়কে ঘৃণা করা- যা কিনা ঈমানের তৃতীয় স্তর। আমরা দুই নম্বরে ও নেই, আমরা তিন নাম্বার মুসলিম। অবশ্য অন্যায় অপকর্মকে মন থেকে ঘৃণা করা মুসলিম ও বোধ হয় সবাই নয়, কেউ কেউ তো অন্যায়ের জয় জয়কার দেখে - কোমর বেঁধে সেই অন্যায়ের দেবীকেই পূজা করতে শুরু করেছেন।
যারা ক্ষমতায় আছে তারা তো সীমা লঙ্ঘন করছেই ইসলামের আইনে দেশ না চালিয়ে, যারা ক্ষমতায় যাবার দিন গুনছে- বা যারা এটা মেনে নিয়েছে তারা কি সীমার মধ্যে আছে?
আল্লাহ্ তাদের জন্য বলে দিয়েছেন, “ অতঃপর- তার জন্য – যে সকল সীমা লঙ্ঘন করেছে ; আর এই দুনিয়ার জীবনকেই অধিক পছন্দের করে নিয়েছে, অবশ্যই তার বাসস্থান হবে জাহান্নাম (আল কুর'আন ৭৯; ৩৭~৩৯)
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৫ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আল্লাহ রব্বুল আলামীন আমাদের বুঝার শক্তি বাড়িয়ে দিন এবং সে সাথে কাজ করার তৌফিক ও দিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন