Friday the 13th! What!

লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ২৮ জানুয়ারি, ২০১৪, ১২:০৪:০২ রাত

ফ্রাইডে দ্য থার্টিন

প্রথম ক্রুসেড এর সময়ে, ১০৯৯ সালে, ইউরোপীয় খৃষ্টান অনুপ্রবেশকারীরা, সেসময়ে মিশরের ফাতিমিদ সুলতান এর শাসনাধীনে থাকা জেরুজালেম দখল করে। কথিত আছে বিজয়ের পরে ক্রুসেডার বাহিনী নারী শিশু কাউকেই রেহাই দেয় নি, হতভাগা মুসলিমদের রক্তে খুনীদের ঘোড়ার পায়ের হাঁটু পর্যন্ত ডুবে গিয়েছিল। ফরাসী ক্রুসেডার গডফ্রি অফ বুইলোণ কে ‘পবিত্র ভূমির রক্ষক - defender of Holy sepulchre - বানানো হয়। জেরুজালেম দখল করে নেয়ার অব্ব্যহিত পরে তাঁর প্রত্যক্ষ মদদে ‘প্রায়োরী অব সায়ন নামক এক খৃষ্টান সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয়। খৃষ্টান ধর্মের কিছু ‘গোপন (secret) বিষয়কে পাহারা দিয়ে রাখার জন্য, নয় জন নাইট কে নিয়ে এই ভ্রাতৃ সঙ্ঘ প্রতিষ্ঠিত হল, তারা ‘অর্ডার অব দি পুওর নাইটস অফ খৃস্ট অফ দ্য টেম্পল অফ সলোমন’ নামে পরিচিত হয়, তবে সাধারনভাবে এরা ‘নাইট টেম্পলার হিসেবে পরিচিত ছিল। (এদের নিয়ে বর্তমান জামানায় ‘ফিকশন লেখা হচ্ছে- ড্যানিয়েল ব্রাউন বা ড্যান ব্রাউন, দ্য ভিঞ্চি কোড, (যার বিশ কোটী বই বিক্রীত হয়েছে- অল্পদিনেই; মুভি ও হয়েছে ব্যবসা সফল )অ্যাঞ্জেলস ও ডেমন্স লিখছেন, কিন্তু ওতে তেমন সত্যতা নেই, সত্যের অপলাপ মাত্র- ‘ফিকশন!) ।

তাদের সংরক্ষিত খ্রিষ্টান ধর্মের গোপনীয় বস্তু/দলিল পত্র / বিষয়ের কারনে তারা খুব প্রভাবশালী হলেও –প্রথম দিকে বেতন ভাতা বিহীন দরিদ্র নাইটদের থাকা খাওয়ার জন্য তেমন ব্যবস্থা ছিল না। ২য় ক্রুসেড এর সময় তাঁরা সম্রাট ২য় বল্ডউইন কে অনুরোধ করে – তাদেরকে যেন মন্দিরের ভেতরে থাকতে দেয়া হয়। সেখানেই তাঁরা থাকার অনুমতি পায়। সলোমন টেম্পলের নীচে – পাথরের নিচে থেকে তাঁরা গোপন সম্ভার / দলিল দস্তাবেজ খুঁজে পায়, এর মধ্যে আরও কিছু বিশেষ ‘টপ সিক্রেট বিষয় যাকে ‘হোলী গ্রেইল বলা হয়, তা তাঁরা খুঁজে পায়। তাঁরা খৃষ্টান ধর্মের জন্য নিবেদিত প্রাণ ভলান্টিয়ার – ধর্মের সেবায় আত্মনিয়োগ করেছে জন্য, খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী সবাই তাদেরকে খুবই শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখত। যারা পবিত্র চার্চ পরিদর্শনে আসে (pilgrimage) তারা এখানে যে টাকা পয়সা দান করত, (মন্দিরে মসজিদে গির্জায় দান করা পুন্য কর্ম, এখন পর্যন্ত এটা চালু আছে) এটা তাদের হাতেই যেত, এবং নিজেদের খরচ বাদে যা জমত, তা এদের হাতেই জমা থাকত।

এসময় পোপ ২য় ইনোসেন্ট একটা পাপাল অর্ডার ইস্যু করেন- তাতে তাদেরকে সীমাহীন ক্ষমতা দেয়া হয়- তারা নিজেরাই ‘স্বয়ং আইন’ হয়ে যায়। এতে এরা প্রচুর স্বাধীনতা ভোগ করে, সংখ্যায় ও প্রভাবে বেড়ে যেতে থাকে, এদের শাখা এক ডজনের ও বেশী দেশে জাঁকিয়ে বসে। মানুষের দান করা অর্থে এদের পকেট ফুলে উঠতে ছিল। তাদের হেদ অফিস যেহেতু জেরুসালেম, আর শাখা গুলো ইউরোপের বিভিন্ন শহরে, রাস্তা ঘাট এত নিরাপদ ও ছিল না, দীর্ঘ দিনের তীর্থ যাত্রায় জীবনই নিরাপদ নয়, টাকা পয়সা ছিনতাই হওয়া তো হরদম ঘটত। তাই ইউরোপের তীর্থ যাত্রীরা এই শাখা গুলোতে টাকা জমা দিয়ে হুন্ডির মত- একটা হাতে লেখা রসিদ নিয়ে- জেরুসালেম রওনা করত, অখানে পৌঁছে ‘রসিদ দেখালে তারা তাদের টাকা পেয়ে যেত। এই টাকা পয়সা ‘ নাইট টেম্পলাররা লগ্নী করতে শুরু করে- ভাল বাংলায়, বিনিয়োগ শুরু করে। তারা ব্যবসায়ী বা দেউলিয়াদেরকে চড়া সুদের বিনিময়ে ঋন দেয়া শুরু করে, ফলতঃ নিজেদের সম্পদ বাড়াতে শুরু করে ও আধুনিক ব্যাংকের গোড়াপত্তন করে। প্রায় দুশো বছরে এদের অর্থ বিত্ত ও অর্থের সাথে প্রতিপত্তি ও প্রভাব চরম ভাবে বেড়ে গিয়েছিল- প্রথম দিকে এদের ধর্মের আকর্ষণ থাকলেও পরবর্তী কালে – তা নেহায়েত অর্থ-সর্বস্ব হয়ে গিয়েছিল। চার্চ এর ‘অফিসিয়াল ধর্মীয় গুরু তথা পোপ এবং রাষ্ট্রের রাজার চেয়ে এরা বেশী ক্ষমতাশালী হয়ে উঠেছিল ।

১৩০০ সালের মধ্যে এদের ক্ষমতা এত বেড়ে গেল যে, ভ্যাটিকানের পোপ পঞ্চম ক্লেমেন্ট এদের বিরুদ্ধে কিছু একটা করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ফ্রান্সের রাজা চতুর্থ ফিলিপের সাথে একজোট হয়ে পোপ পঞ্চম ক্লেমেন্ট এক সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনা করলেন, এটা এ যুগে সি আই এর ষড়যন্ত্রকেও হার মানায় । তাঁরা গোপন সামরিক কৌশল হিসেবে – একটা করে সিলমোহর করা চিঠি পাঠালেন বিভিন্ন দেশে, যা সমগ্র ইউরোপের রাজা/ তার সেনাপতি - সৈন্যগন একত্রে খুলেছিল – শুক্রবার ১৩ ই অক্টোবর – ১৩০৭ সাল।

১৩ তারিখের শুক্রবারের ভোর বেলায় সিল মোহর করা চিঠি খুলে জানা গেল, পোপ ক্লেমেণ্ট দাবী করেছেন, ঈশ্বর তাকে ( স্বপ্নে!) দেখা দিয়ে বলেছেন, নাইট টেম্পলারগন জঘন্য ভাবে শয়তান এর পূজা অর্চনা করছে, সমকামিতা, ক্রুশের অপব্যখ্যা সহ নানা পাপ কাজ সহ তারা ঈশ্বর নিন্দায় লিপ্ত হয়েছে। পোপ ক্লেমেণ্টকে ঈশ্বর নির্দেশ দিয়েছেন, সব নাইটদের ধরে এনে নির্যাতন করে তাদেরকে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অপরাধের স্বীকারোক্তি আদায় করে সব কিছু শুদ্ধ করতে হবে। ফাদার ক্লেমেণ্ট এর এই ম্যাকিয়াভেলীয়ান অপারেশন ঠিক ঘড়ির কাঁটা ধরে শুরু হল। সেদিন অসংখ্য নাইটকে ধরা হল, এবং প্রচন্ড নির্যাতনের পর- স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়- অনেক ক্ষেত্রে তার দরকারও পড়েনি - ধর্মদ্রোহিতার অপরাধে তাদেরকে পুড়িয়ে মারা হয়। রাজা ও পোপ এর ক্ষমতার প্রতি হুমকী হয়ে উঠা এই তৃতীয় শক্তিকে এভাবেই ধ্বংস করা হয়েছিল। এই ট্রাজেডির প্রতিধ্বনি আজও আধুনিক সংস্কৃতিতে প্রতিফলিত হচ্ছে, কোন শুক্রবারে ১৩ তারিখ পড়লেই সেই নাইটদের দুর্ভাগ্যের স্মৃতিচারণ করে পাশ্চাত্যের দেশ গুলোতে এখন ও পর্যন্ত বলা হয় – ফ্রাইডে – দ্য থার্টিন ! এক ভয়ংকর, ভয়াবহ ট্রাজেডির দিন!

বিষয়: বিবিধ

১৩৯৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

168820
২৮ জানুয়ারি ২০১৪ সকাল ১১:২৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ধন্যাবদ সুন্দর পোষ্টটির জন্য। টেম্পলার নাইটদের মুলত পোপ এর সহযোগি শক্তি হিসেবে গড়ে তুলা হয়েছিল কিন্তু তাদের প্রতিপত্তি এতা বেড়ে যায় যে তারা পোপের প্রতিদন্দি হয়ে দাড়ায়। এর কিছু অংশ এখনও টিকে আছে।
176055
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০৪:২৫
তিমির মুস্তাফা লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File