নিরপেক্ষতা !
লিখেছেন লিখেছেন তিমির মুস্তাফা ১৮ নভেম্বর, ২০১৩, ১১:০৬:৫০ রাত
আপনার দুই প্রতিবেশী। একজন গ্রামের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সাহেবের দক্ষিন হস্ত, রোদে বৃষ্টিতে চেয়ারম্যান সাহেবের সাথে থাকলে, তিনিই ছাতা ধরে চেয়ারম্যান সাহেবকে ‘বৈরী আবহাওয়ার আক্রমণ থেকে হেফাজত করেন। তার আছে দুই ষাঁড়, এ বাগানে- সে মাচানে- ঘাসের বদলে ‘সব্জি খেয়ে খেয়ে তাদের গা থেকে যেন ‘তেল চুইয়ে পড়ছে !
আরেক প্রতিবেশী – ‘গড বক্স হু কুইন টি টোয়েণ্টি ডাজ’- অর্থাৎ খোদাবক্স (পাশের হাইস্কুলে) কেরানীর চাকুরী করে- নেহায়েত ছাপোষা মানুষ। একদিন প্রচণ্ড চিৎকার চেঁচামেচির আওয়াজে আপনার সকালের ‘মধুঘুম ভেঙ্গে গেল। গিন্নির কাছে ঘটনা শুনে বুঝে গেলেন, ষাঁড়ওয়ালার ষাঁড়, খোদাবক্সের মাচানের কচি লাউয়ের গাছ, যখন নাকি কেবল লাউ ধরা শুরু করেছে- তা সাবাড় করেছে। এ নিয়ে খোদাবক্স প্রতিবাদ করতে গেলে ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা,- উল্টে মাচানকে বেড়া দিয়ে ঘিরে রাখার পরামর্শ দিচ্ছে ষাঁড়ওয়ালা! নাহলে আরও যে সব গাছ আজ বেঁচে গেছে, তা সাবাড় করার হুমকী দিচ্ছে। যেন বেড়া না দিয়ে লাউ গাছের চাষ করাটাই অন্যায়, ষাঁড় তো লাউ গাছ খাবেই!!
আপনাকে এ বিচারের সাক্ষী মানতে আসতেই পারে বিধায় আপনি গিন্নীকে বলছেন, “আরে জানালাটা তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দাও’। এই ‘ক্যাচালের মধ্যে ঢুকে – চেয়ারম্যানের ‘ছত্রধর কে চটানোর কোন ইচ্ছাই নেই আপনার । আপনি নিরপেক্ষ থাকতে চান- যে কোন মুল্যে!
শুধু আপনি নন, গোটা দেশেই আজ আপনার মত লোকের সংখ্যাধিক্য । অত্যাচারী জালিমের জুলুমে দেশ ভরে গেছে, ক্ষমতাশালীদের ক্ষমতার দাপটে বিচারের বানী নিভৃতে কাঁদারও সাহস পায় না-শুধু গুমরে মরছে । আপনি আমি এক নিরপেক্ষতার আবরনে গা ঢাকা দিয়ে বসে আছি। যেন কিছুই হয় নি – কিছুই আমাদের ‘ঠুলি আঁটা চোখের মণিতে ছায়া ফেলতে পারছি না – পৈতৃক প্রানের হেফাজত করতে ন্যায় অন্যায় – ভাল মন্দের সব বিচার শক্তি গুলে রুহ আফজার সরবত বানিয়ে গিলে ফেলেছি ! গুন্ডা মাস্তান রাজনীতিক পুলিশ মায় বিচারক পর্যন্ত একই খুরে মাথা মুড়ালেও আমরা নিশ্চুপ । নিরপেক্ষ!
আমাদের মত ছা-পোষা লোকের জন্য ঐ সব অপকর্মের প্রতিবাদ করার সময় কোথায় ! আমরা রুটি রুজির চক্করে মহা ব্যাস্ত। প্রতিবেশীর মেয়েকে হাত ধরে টান দিয়েছে পাড়ার উঠতি মাস্তান- আজ দেখেও না দেখার ভান করে পাড়ার মোড় ছাড়িয়ে কাজে গেলাম। নির্যাতিতা মেয়েটার চোখের জল কিছুক্ষন পীড়া দিল, এরপর ভুলে গেলাম। কাল যখন আমার বোন বা মেয়েকে তারা উঠিয়ে নিয়ে যাবে তখন কি হবে? আমার প্রতিবেশী কি তখন চোখ বুজে থাকবে না? কালকে চেয়ারম্যানের ছত্রধরের ষাঁড় যখন আমার বাগানের গাছ খাবে? নিজে জুলুমের শিকার না হলে কি বুঝা যায় না তার ব্যাথা কোথায় গিয়ে বাজে?
ন্যায় আর অন্যায়, ভাল আর মন্দের মধ্যে যখন দ্বন্দ্ব শুরু হয়, সত্য আর মিথ্যার মধ্যে যখন সংঘাত শুরু হয় – তখন বিবেকবান মানুষের জন্য নিরপেক্ষ থাকার কোন সুযোগ নেই। তাকে পক্ষ নিতেই হবে, অবশ্যই ন্যায়ের পক্ষে, সত্যের পক্ষে । অন্যায়ের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে মৃত্যু বরণ করলে – সে মৃত্যুও হবে বীরের মৃত্যু।
ইতিহাস সাক্ষী - তার পরেও কেউ কেউ এই সময়ে ‘নিরপেক্ষ থাকতে চাইবে- হয় তারা মুনাফিক, তাদের মন জানে কোনটা ভাল আর কোনটা মন্দ, কিন্তু তাদের মুখ তা প্রকাশ করে না ; নয় তারা কাপুরুষ- তারা মরে বার বার, তাদের এ বেঁচে থাকা, তাদের এ জীবন অতি গ্লানিময়, পূতিগন্ধময়।
এই নিরপেক্ষ জীবদের জন্য বেঁচে থাকা কোন সমস্যা নয়- এরা বেঁচে নয়, টিকে থাকে- যেমন করে অতিকায় হস্তি মরে গেলেও তেলাপোকা টিকে থাকে – বর্জ্য আবর্জনা খেয়ে ! তারপরেও, তাদেরও একদিন মৃত্যু আসবে- নিয়তির অমোঘ টানে।
নরকের গভীরতম অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকা সংরক্ষিত রয়েছে তাদের জন্য, যারা ভাল আর মন্দের সংঘাতের সময়ে নিরপেক্ষ থাকে! কথাটা আমার নয়!
বিষয়: বিবিধ
১১১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন